অত্যাধোনিক কবিতা এক্সপেরিমেন্টাল কবিতা । এখানে পুরনো বোধগম্য কবিদের আপগ্রেড করার সাহায্যার্থে অত্যাধোনিক কবিতার একটি বিজ্ঞান সম্মত ফ্রেমওয়ার্ক (বা রেসিপি)র বর্ণনা দেয়া হল।
ট্রেডিশনাল কবিতার মত কবিতার গুণে ভক্ত সৃষ্টি না হয়ে এখানে কবিতা লেখার আগে ভক্ত নিশ্চিত করতে হয়। ললিপপ সরস শব্দ বিন্যাসের মত ললিপপ সরস প্রোফাইল আছে কিনা জেনে নিন।ভক্ত না থাকলে নতুন ধাঁচের এসব কবিতা সফল হয় না, কবিও হীট না পেয়ে স্বাভাবিক কবিতায় নির্বাসিত হয়ে যেতে পারেন।
উপকরণ
সার্থক চলচ্চিত্রে যেমন ড্রামা, একশন সাসপেন্স থাকা ফরজ, এ ধরণের কবিতায়ও তেমন কন্ট্রাস্ট, এটাকিং, গলাগলি মিল এবং পাঠকের মনে ভূমিকম্প তৈরীর উপাদান থাকতে হবে। টিভিতে প্রদর্শিত উকুনের শ্যাম্পুর আমলকি, হরিতকি, বয়রার নির্যাসের মত অত্যাধোনিক কবিতার কাঠামোর মূল হল পাঁচ পাঁচটি উপাদান
ক. লজ্জাহীন শব্দের সমাহার । ১৮+ শব্দের তালিকা করুন। চটি পত্রিকার গ্রাহক হলে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিছু শব্দের উদাহরণ:
কৃমি, যোনি (কুঞ্জ), শিশ্ন, স্তনমূল, উলান, কাশি, বীর্য, মুত্র, পোঁদ (ভাঁজ), স্তন, নিতম্ব, চুম্বন(?), নিতম্ব খাঁজ, উরু(?), বিবস্ত্র
খ. প্রতিক্রিয়াশীল ক্রিয়া পদ: দুধে কাশি মেশানো বা উরু দিয়ে ঘুড়ি ওড়ানো জাতীয় কিছু বিখাউজ ক্রিয়া পদ উদ্ভাবন করতে হবে । নারীর মাতৃ অঙ্গের পারভার্ট ব্যবহার কবিতায় ভিন্ন মাত্রা জুড়ে দেবে ( তবে হকিংসের মাত্রায় গেলে সময় লস )। উদাহরণ:
ঘাই দেয়া, দুগ্ধ পান, কাশি ঝাড়, মুত্র পান, কৃমি ওড়া, স্তন বেয়ে নামা ইত্যাদি।
গ. আবাল পতঙ্গ এবং জন্তু: জন্তু জানোয়ার থাকলে সার্কাস দেখাতে সুবিধা। কৃমি, মাছ, তক্ষক, সাপ, জন্তু(সন্তান), আনাকুন্ড, ভাইরাস, ছত্রাক এগুলো কোনটাই বাদ দেবেন না। কারণ যদি লাইগা যায় এই তত্বে বিশ্বাস করুন। নিজেই চিন্তা করুন যদি বলেন বাঘিনীর পিঠে ঘুম যায় রবীন্দ্রনাথ কেমন ফাটাফাটি লাগবে না?
ঘ.অপমানের উদ্দেশ্য নির্বাচিত ব্যক্তি, জাতি বা পবিত্র স্হান: মোটর সাইকেল নিয়ে যেমন নায়ককে চলচ্চিত্রে ঝাপ দিয়ে দর্শকের মনোরঞ্জন করতে দেখা যায়। তেমনি বিখ্যাত কাউকে দিয়ে নোংরামি করাতে হবে। বুঝতেই পারছেন গান্ধীর শিশ্ন বা লেনিনের বগল বললে কমেন্ট করার জন্য লোকে কবিতা পড়বে। শ্রদ্ধাযোগ্য যে কোন শব্দই বাদ দেয়া মত নয় । যেমন: গান্ধী, মুজিব, তালাত মাহমুদ, ঈশ্বর, ভগবান, রাম, অর্জুন, নারী, মানুষ, পুরুষ, মসজিদ, গীর্জা ইত্যাদি।
ঙ. কিছু জীবনানন্দীয় স্হান যাতে নিন্দুকেরা ঢিল কম ছোড়ে। যেমন প্রাচীন গুহা, ইলোরা, প্রত্নভূম, মাজার, প্রার্থনাস্হল, পাহাড়।
এবার অত্যাধোনিক কবিতার প্রস্তুত প্রণালী:
প্রথমে সামুতে প্রকাশিত কবিতার উদাহরণটি দেখে নিন । পাচকদের প্রায় সবাই দেখে দেখেই শেখে। কবিতার নামটি দিন এমন যেন মনে হয় ড্রয়িং রুমে বসে বস্তিবাসীদের খিস্তি শুনছেন । খনার বচন আছে না, গলি থেকে হয় রাজপথ, গালি থেকে হয় উন্নত কবিতার টাইটেল।
১. শুরুতেই কৃমি বা (বেশী ইমোশনাল হলে) ব্যাঙ কে উড়তে দিন এবং তার শব্দের বর্ণনা দিন। প্রথম লাইনেই যত দ্রুত সম্ভব ১৮+ বিশেষ্য বা বিশেষণ ব্যবহার শুরু করুন। যেমন নিতম্বের ভাঁজে কদবেল গাছ গজাতে পারেন অথবা কুঁচকিতে বাইসন জাতীয় একটি প্রাণী লেলিয়ে দিতে পারেন । ( এতে অন্ধ সমঝদারদের ব্যাপক হাত তালি পাবেন)।
২. শুরু থেকে স্যান্ডউইচ করুন পরিচিত বা মহান কারো প্রতি অশালীন ইঙ্গিত যাতে বিপ্লবী ভাব প্রকাশ পায়। যেমন জিন্নাহর প্রজনন তন্ত্রের উপর অত্যাচার করতে পারেন । মোড়ের সস্তা মেডিকেল টেস্ট সেন্টারের সাইনবোর্ডের মত এখানে ওখানে কাশি, মুত্র, বীর্য ইত্যাদি লিখে রাখুন। প্রাচীন গুহা, মাজার, গীর্জা, জঙ্গল এসব স্হানের নাম যুক্ত করুন যদি স্হান থাকে । মনে রাখবেন পাবলিকের মনে কাব্যভাব জাগ্রত করারজন্য কবিকে মল মুত্র ভক্ষণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নিউটনের সু্ত্র যেমন কোয়ান্টাম জগতে অচল, তেমনি সনাতন কাব্যসৌন্দর্যের বেল নেই এখানে ।
৩. যদি ঘুম আসে তো কোন অশ্লীল অঙ্গের বর্ণনা দিয়ে বা প্রতিক্রিয়া দিয়ে চাঙ্গা করে নিন । কন্ট্রাস্টের অভাব পড়লে বলুন "নীল চায়ের রঙ রতক্রিয়া বা "বেগুনী স্তনের ওপর পারদের ওঠানামা" ইত্যাদি! বাস্তব অবাস্তব ভাববে পাঠক। আপনি যদি শিশ্ন থেকে কফি নির্গত হচ্ছে বলেন তবুও কিছু ভক্ত না বুঝে বলবে ওয়াও !
৪. প্রথম দিকে দুর্লভ গুপ্তাঙ্গের কু শব্দের আধিক্যে ক্লান্ত হতেই পারেন । যে কোন ভদ্র লোক হবেই। সুতরা শেষের দিকে এসে ঘুড়ি ওড়ান বা হাত পা মুখ উরু যে কোনটিকে মাঞ্জার সুতা বা নাটাই বানিয়ে বিশ্রাম নিন।
মিনিট দশেক জিরিয়ে নিয়ে সামু ব্লগে আপডেট করুন।
মনে রাখুন নাম নাই যার দাম নাই তার। প্রোফাইলের জন্য উপযুক্ত নাম না খুঁজে পেলে টিভির নাটক দেখতে থাকুন । যে কোন নাটকের নাম নিক করে নিন। আর তবুও পাঠক না পেলে সরাসরি এক লোলবর্ধক ছবি প্রোফাইলে সংযুক্ত করে লগ আউট করুন।
----
অট: কবি এবং কবিতা নিয়ে আমার সীমিত জ্ঞানের কারণে ফ্রেমওয়ার্কের প্রথম ভার্শনটি কারো কারো ভাল নাও লাগতে পারে । আপনার কোন মতামত থাকলে প্রয়োজনে একে আপডেট করবো।
----
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০০৯ রাত ১:৫৯