Click This Link
আতিকুল ভাইয়ের পোষ্টে মুজতবা আলির পাদটীকা গল্পের তুলনা টেনেছেন বুয়েটের শিক্ষক ড. কায়কোবাদ এবং আশরাফুলের রানের মাধ্যমে।
আতিকুল ভাইয়ের বক্তব্যের সার যদি হয় দেশের শিক্ষা ব্যবস্হার দৈনতা তবে তার সঙ্গে একমত । সবাই একমত হবেন যে আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্হাতে ব্যাপক উন্নয়ন দরকার।মাদ্রাসা, ইংলিশ মিডিয়াম এবং বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষাকে ঢেলে একটি বিজ্ঞান মুখী শিক্ষা ব্যবস্হা দরকার। মীগ ২৯ কিনে বা সামরিক আতশবাজির মত অপ্রয়োজনী খাতে বাজেটের বড় অংশ ব্যয় না করে শিক্ষা খাতে অধিক অংশ ব্যয় করা দরকার । বুয়েট কিংবা মেডিক্যাল অথবা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভাল শিক্ষকদের দরকার । যাতে শিক্ষকতায় তারা মনোযোগী হতে পারে সেজন্য তাদের বেতনভাতা যথেষ্ট করা দরকার ।
কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বেতনের তফাৎ রয়েই যাবে । কর্পোরেট সামাজিক ব্যবস্হার সমালোচনা যতই হোক এর বাস্তবতা অস্বীকার করার উপায় নেই। ঐশ্বরিয়ার এক দিনের উপার্জন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মাসের আয়ের চেয়ে বেশী হতে পারে। তাই বলে ভুলেও কেউ বলে নি যে ঐশ্বরিয়া , ভারতের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে উপরের স্তরের নাগরিক
শুরুতেই হোচট খাই যখন বৃটিশ আমলের পন্ডিত মশাইয়ের ও বড় লাটের কুত্তার ঠ্যাং এর প্রেক্ষাপট কে বুয়েটের একজন জনৈক শিক্ষকের সঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন খেলোযাড়ের বেতনের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে মিলানো হয়।
প্রথমত: তুলনা হলে এক দিকে তুলনা করা ঠিক নয়। ক্রিকেটের সঙ্গে জাতীয় আবেগ বা উত্তেজনা দারুন ভাবে জড়িত। একটি দরিদ্র দেশের প্রচন্ড হতাশার মাঝে একজন মাশরাফিরে দুর্দান্ত ক্যাচে আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয় অথবা শেষ বলে পাইলটের রানে আইসিসি জয় তীব্র উচ্ছাসে ভাসিয়ে দেয় চায়ের দোকান থেকে কৃষকের এক ব্যান্ড রেডিওতে। টেষ্ট স্ট্যাটাসের মানের ক্রিকেট খেলা সহজ নয়, মান ধরে রাখার রাখার জন্য ক্রিকেটারদের অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। দেশের শত শত ক্রিকেটার থেকে থেকে যাচাই বাছাইয়ের পর মেধাবীরা এ প্লাস শ্রেণীতে আসে । এখন এই ক্রিকেটের মেধাবী সন্তানদের একটি উপনিবেশী বড়লাটের অপ্রয়োজনী কুকুরের সঙ্গে তুলনা করা অস্বস্হিকর।
বুয়েটের একজন শিক্ষকটির বেতন যথেষ্ট না, এটা অনেক ভাবেই বোঝানো যেত। কিন্তু আশরাফুলের রান সংখ্যার সঙ্গে বুয়েটের শিক্ষকের বেতনের তুলনা করার মত হালকা যুক্তি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। ম্যারাডোনার একটি পায়ের মাসিক ইনস্যুরেন্সের খরচ যদি প্রেসিডেন্ট ওবামার মাসিক বেতনের পাঁচগুন হতো, ওবামাকে কি ম্যারাডোনার নখের সমান দাবী করতেন?
একেক পেশার বেতন একেক রকম। একই সমান বা অধিকতর পড়াশোনা করে মৃত্তিকা বিদ্যার একজনের কাঠ খড় পুড়িয়ে ১৫,০০০ টাকা বেতন পেলেও ফার্মেসীর একজন হয়তো ছাত্র অবস্হায় ২৫,০০০ টাকা আয় করে। চাহিদার কারণে টেক্সটাইল ইনজিনিয়ারের বেতন বেড়েছে কয়েকগুণ কিন্তু নানান কারণে কম্পিউটারের লোকজনের বেতন উল্টো অর্ধেক হয়ে গেছে। ফুটবল, কাবাডি খেলায় একই পরিশ্রম হলেও ক্রিকেট খেলায় যে পরিমান বিনিয়োগ হয় তা সবাই জানে। কয়েক বছর আগে ভারতের একেকজন টপ ক্রিকেটারদের বেতন ছিল ৫ মিলিয়ন রুপী । সেই তুলনায় আমাদের ক্রিকেটারদের যে বেতন একজন সরকারী বেতনের স্কেলের তুলায় অনেক হলেও অস্বাভাবিক কিছুও নয়। ভারতের নামকরা ইউনিভার্সিটি যেমন আইআইটির শিক্ষকেরা কত বেতন পান সেটি জানতে পারলে ভাল হতো।কিন্তু এটুকু আন্দাজ করা যায় ক্রিকেটারদের বেতনের চেয়ে তা ঢেড় কম ।
কায়কোবাদ স্যারের মত কিছু নীতিবান শিক্ষক সরকারী বেতন দিয়েই চলে । তাদের ত্যাগের কাছে মাথা নত হয়ে যায়। কিন্তু চাঁদের উল্টোপিঠে একাধিক শিক্ষককে জানি যার বছর বছর বিদেশে শিক্ষকতা করেও বেতন নিতো প্রতিমাসে। সৎ শিক্ষকদের অনেককে দেখেছি সপ্তাহে চারদিন একাধিক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস নিয়ে যাচ্ছে, কনসাল্টেন্ট নামে পয়সা কামাচ্ছে, একাধিক গাড়ি সহ বিলাসী জীবন যাপন করতে।
আরেকটি কথা হল, বেতন বাড়ালেই শিক্ষকরা মনোযোগী হয়ে রিসার্চ কোয়ালিটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেবে তা আংশিক সত্য। এটি শুধু অর্থ নয়, নিজের নীতিবোধের বিষয়টি এর সঙ্গেও সম্পৃক্ত। শফিক রেহমানের ডেমোক্রেসি ওয়াচে কায়কোবাদ স্যারের নাম দেখছি । জানিনা তিনি কি সেখানে স্বেচ্ছাসেবক কিনা ।কেউ কেউ অর্থাভাবে বাধ্য হলেও, অনেক শিক্ষককে দেখেছি অধিকতর উপার্জনের নেশায় নিজের প্রতিষ্ঠান বাদ দিয়ে বেশী বেতনের বেসরকারী ইউনিভারসিটিতে ব্যস্ত থাকেন, কখনো বাইরের প্রতিষ্ঠানে কনসালটেন্সি করে পয়সা বানিয়ে ফেলেন। নর্থ সাউথের শিক্ষক হয়ে ভাল বেতন পাওয়া সত্ত্বেও ড. হা**জ্জামান কে ইউএসএইডের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠানে কাজ করতে দেখেছি প্রায় পুরো সপ্তাহ।
লেখকের একটি প্রাসঙ্গিক বক্তব্য ছিল, যথাযোগ্য বেতনা সুবিধা পাচ্ছেনা বলে বিদেশে চলে যাচ্ছে মেধাবীরা । মনে হয়েছে বেশী বেতন দিলেই ব্রেন ড্রেইন বন্ধ হবে তারা দেশে ফিরে এসে দেশ সেবা করতে থাকবে । আমি এই তত্ত্বটিকেও মেনে নিতে পারছিলাম না। ( ব্রেনড্রেইন ঠেকানো আসলে একটি ভিন্ন বিস্তৃত আলোচনার বিষয় বস্তু হতে পারে। এখানে বেশিদুর না যাই)। অনেকে ঢাকায় যথেষ্ট ভাল বেতন উপার্জন করছিল (হয়তো শিক্ষক নয়, অন্য পেশায়), তারপরও উন্নত জীবনের হাতছানির কাছে ম্লান হয়ে গেছে দেশপ্রেম। যতই বলি না কেন, দরিদ্র একটি দেশের পক্ষে তো ডলারের দামে বেতন দেয়া যাবে না ,... নিরাপত্তা, চিকিত্সা, খাদ্য, বিনোদনের সুবিধাগুলোর কথা বাদই দিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০০৯ সকাল ১০:৫৩