somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টাকা দিলে ঢাবি, বুয়েট, মেডিকেল সব সার্টিফিকেটই মেলে নীলক্ষেতে!!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০০৯ ভোর ৫:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাজধানীর নীলক্ষেত এলাকায় দিনেদুপুরে টাকা দিলেই মিলছে নামীদামি প্রতিষ্ঠানের সনদ। ৩০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এসব সনদ।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করেছেন রফিকুল ইসলাম (ছদ্মনাম) ঢাকায় এসেছেন চাকরির খোঁজে। বর্তমানে চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় বায়োডাটা জমা দিচ্ছেন তিনি। তবে বেশিরভাগ চাকরিতে কম্পিউটারের ওপর দক্ষতা প্রয়োজন। কিন্তু তার কোনো কম্পিউটারের অভিজ্ঞতা নেই। এ পরিস্থিতিতে চাকরি পেতে কম্পিউটারের একটা সার্টিফিকেট খুবই প্রয়োজন রফিকুলের। পরে এক বন্ধুর কাছে জানতে পেরে তিনি দৌড়ান ঢাকার নীলক্ষেত এলাকায়। নীলক্ষেত এলাকার বাকুশাহ সুপার মার্কেট থেকে মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে তিনি সংগ্রহ করেন তার কাক্সিক্ষত কম্পিউটারের সার্টিফিকেট।

এ ঘটনার সূত্র ধরে গতকাল শুক্রবার বাকুশাহ সুপার মার্কেটে গিয়ে যা দেখা যায় তা কল্পনাকেও হার মানায়। সার্টিফিকেটের ক্রেতা সেজে ওই মার্কেটের একাধিক দোকানির সঙ্গে কথা বলে যা জানা যায় তা বিস্ময়কর ও ভয়ানক। প্রথমে কথা হয় বিছমিল্লাহ বুক হাউসের এক বিক্রেতার সঙ্গে। এসএসসি ও এইচএসসির সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে কি না জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন কবে প্রয়োজন? আজই প্রয়োজন। এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘আজ লাগলে দুইটার জন্য ৫ হাজার টাকা লাগবে। আগামীকাল নিলে ৩ হাজার টাকা।’ এরপর দরকষাকষির একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ভাই নেয়ার সময় দেখা যাবে।’

পাশের গলিতে একইভাবে কথা হয় সান কম্পিউটারের বিক্রেতার সঙ্গে। কম্পিউটারের ওপর সার্টিফিকেট হবে কি না জানতে চাইলে ওই দোকানি বলেন, কত দিনের কোর্সের প্রয়োজন। কিছু বলার আগেই তিনি বলতে শুরু করেন, ৩ মাসের কোর্সের সার্টিফিকেট নিতে হলে ৩০০ টাকা লাগবে। আর ডিপ্লোমা কোর্সের জন্য লাগবে ১ হাজার টাকা। একটা নমুনা কপি দেয়া যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি ৫ টাকার বিনিময়ে অফসেট পেপারে ধানমন্ডির ইনস্টিটিউট অব গ্রাফিক্স ডিজাইন অ্যান্ড অপারেটিং সিস্টেমের একটি নমুনা সনদ দেখান। পরে তিনি আরো জানান, অরিজিনালটা নেয়ার সময় ফোর কালারে বোর্ডের কাগজের মতো একই ধরনের সার্টিফিকেট দেয়া হবে। এ ছাড়া তার কাছ থেকে ডেফোডিল, বীকন, ভূঁইয়া কম্পিউটারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট নেয়া যাবে বলে ওই দোকানি জানান।

একই ঢংয়ে কথা হয় টাচ্ কম্পিউটার পয়েন্টের বিক্রেতার সঙ্গে। কিছু বলার আগেই তিনি বলেন, ‘ভাই কিছু লাগবে’। আমার একটা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর অনার্স সার্টিফিকেট প্রয়োজন এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে ওই দোকানের বিক্রেতা বলেন, কারটা দরকার ঢাকা, বুয়েট নাকি প্রাইভেট। প্রাইভেট দিলেই চলবে। এটা শোনার পর তিনি বলেন, ৩ হাজার টাকার কমে হবে না। একইভাবে নীলক্ষেত এলাকার বাকুশাহ মার্কেটের একাধিক দোকানে ক্রেতা সেজে এ ধরনের জাল সনদ বিক্রির অসংখ্য প্রমাণ পাওয়া যায়।

সরেজমিন ওই মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানের ব্যবসার একটি বিরাট কারবার হলো জাল সনদ বিক্রি। স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সব প্রতিষ্ঠানের সনদই এখানে পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া এ মার্কেটে জাল নাগরিক সনদ, জাল নিবন্ধন সনদসহ যাবতীয় ভুয়া কাগজপত্রের এক বিপুল সমারোহ। নানা ধরনের জাল কাগজপত্রের জন্য কেবল ঢাকা শহরেই নয়, সারাদেশেই এ মার্কেটের পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই এ মার্কেটে জাল কাগজপত্রের ক্রেতারা ভিড় জমান। জাল সার্টিফিকেট ক্রয় করতে আসা আবদুর রহমানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ‘আগামী দুদিনের মধ্যে আমার একটা কোম্পানিতে ইন্টারভিউ রয়েছে। সেখানে আমাকে কম্পিউটারের ওপর শর্ট কোর্সের একটা সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। কম্পিউটারের ওপর একটু-আধটু জানি। সার্টিফিকেটের জন্য এখানে এসেছি।’ এর আগেও এ মার্কেট থেকে তিনি এইচএসসির সার্টিফিকেট ক্রয় করেছেন বলে জানান। এ মার্কেট ঘুরে এবং সার্টিফিকেট নিয়েছেন এমন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ মার্কেটে জাল সনদ এমনভাবে তৈরি করা হয় যা দেখতে অরিজিনাল সার্টিফিকেটের মতোই। এখান থেকে জাল সনদ ক্রয় করে অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছেন। ওই মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রাম তাদের কম্পিউটারে সংরক্ষিত আছে। এ ছাড়া এখানে বিভিন্ন সরকারি অফিসারের নামসংবলিত ভুয়া সিলও বিক্রি করা হয়। এ সময় একাধিক জাল সার্টিফিকেটের ক্রেতাকে সেখানে দেখা যায়।

এ ব্যাপারে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, আমাদের টিম সব সময় এ বিষয়ে সতর্ক (!!??)। এ ধরনের কাজ নীলক্ষেতে হয় এটাও সত্য। মাস ছয়েক আগে একজন অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেছিল। আমরা মামলার সূত্র ধরে তদন্ত করে এর সত্যতা পেয়েছি এবং তার চার্জশিটও দিয়েছি। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তেমন আসে না। যারা এসব সার্টিফিকেট নেয় তারাও বিষয়টি গোপন করে। প্রতারকরা আরো বেশি চালাক। ফলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। আর কার কম্পিউটারে কী হচ্ছে সেটা দেখাও মুশকিল। পেছনে যাওয়ামাত্রই তারা তা ডিলেট করে দেয়। তবে কেউ আমাদের সহযোগিতা চাইলে পুলিশ দিয়ে হলেও এ ব্যাপারে সহযোগিতা দেবো।

দৈনিক ডেস্টিনি থেকে.......
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সকাল ১১:২৯
৩৯টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×