বার্মা। বর্তমান নাম মিয়ানমার। সামরিক বাহিনী জনমতের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে একদা দেশটির নাম পরিবর্তন করেছিল। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
যদিও বর্তমানে বার্মা কেবল আমাদের প্রতিবেশীই নয়, বিরাট এক উদ্বেগের নামও বটে। বার্মাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের মানুষও। আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র ভারত, নেপাল বা ভুটান সম্পর্কে আমরা যতটা জানি ততটা আমরা বার্মা সম্পর্কে জানি না। বার্মার ভেতরে কী হচ্ছে–আমরা জানি না। কেন দেশটির অভ্যন্তরে এত রক্তপাত ও বৈরিতা?
অথচ যে কোন রাষ্ট্র ও নাগরিকদের উচিত তাঁর প্রতিবেশী রাষ্ট্র, ইতিহাস ও রাজনৈতিক চরিত্র সম্পর্কে জানা। এবং এটি ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়ন ও গ্রহনে সহায়তা করে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালে ২১ মার্চ বার্মা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়, যা প্রথম দিকের স্বীকৃতি দেওয়া দেশগুলোর একটি। এবং ভারতের বাইরে বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর করা দ্বিতীয় দেশ ছিল বার্মা। এরপরও দু'দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রত্যাশিত মাত্রায় বিকশিত হয় নি।
এক্ষেত্রে অবশ্য বার্মায় দীর্ঘ সময়ে সামরিক শাসন, আন্তর্জাতিক অবরোধ, গণতন্ত্রহীনতা এবং উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ অনেকাংশেই দায়ী।
সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার আগমনে নতুন করে বার্মা'র প্রসঙ্গটি এদেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে। বার্মা সরকার এদের 'বাঙালি' বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে থাকে এবং সাধারণভাবে নাগরিকত্ব দিতেও অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে চলেছে। এ কারনে বর্তমানে অন্যতম রাষ্ট্রবিহীন জনগোষ্ঠী বলা হয় রোহিঙ্গাদের।
যদিও পুরো বার্মা জুড়েই সেনাবাহিনী সাথে অন্যান্য নৃগোষ্ঠী কিংবা জাতি গোষ্ঠির সাথে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চলে আসছে। তবে তাদের কে দেশ থেকে বিতাড়িত হতে হয় নি, বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী যুদ্ধ বিরতি চুক্তি করতে রাজি হয়েছে।
বার্মায় গত কয়েক দশক ধরে চলা এসব জাতিগত সংঘাত ও তার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গবেষক আলতাফ পারভেজ লিখেছেন এ বইটি।
এথনো-পলিটিক্স ইন সাউথ এশিয়া সিরিজের তৃতীয় বই এটি। এর পূর্বে কাশ্মিরের আজাদী সংগ্রাম ও শ্রীলংকার তামিলদের নিয়ে এই সিরিজের দুটো বই লিখেছেন।
আলোচ্য বইটিতে লেখক ৩৮ ভাগে বার্মার ইতিহাসের ছোট ছোট প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গগুলোর চুম্বক তথ্য এমনভাবে হাজির করেছেন যা নতুন পাঠককেও দেশটির এথনো-পলিটিক্সের একেবারে গভীরে নিয়ে যায়। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির বিশাল ক্যানভাসে এখানে উঠে এসেছে বার্মার পলিটিক্যাল ইকোনমির প্রায় পুরো চিত্র।
উঠে এসেছে বার্মাকে ঘিরে ভারত, চীন, রাশিয়া ও পশ্চিমাদের স্বার্থের রাজনীতি। প্রায় পুরো দুনিয়া প্রকাশ্যে বা গোপনে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে চাইছে। এর কারণ হলো, দেশটিতে রয়েছে বিপুল প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ। এত দিন চীন এগুলো সস্তায় ভোগ করেছে। অবরোধ উঠে যাওয়ার পর এখন অন্যরাও ভোগ করতে চাইছে।
বার্মার রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস, এর অভ্যন্তরীন এথনো-পলিটিক্স এবং এথনো-হিস্ট্রি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে রাজনীতি ও ইতিহাস সচেতন পাঠকদের তৃষ্ণা অনেকটাই পূরণ করবে বইটি।
-
বইয়ের নামঃ বার্মা : জাতিগত সংঘাতের সাত দশক
লেখকঃ আলতাফ পারভেজ
প্রকাশকঃ ঐতিহ্য
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ৯৬
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৭০ টাকা।