অনেকদিন মিশরে থাকার ফলে মিশরীদের হিউমার হারে হারে ধরে ফেলছি। কাজেই যত বড় অফিসারই হোক একবার কথা বলার সুযোগ পেলে তামিম ইকবালের মতো খুব শহজেই পটাতে পারি।
- অনেকদিক আগে একবার এক 'সিআইডি' আমাকে ডেকে বলে আইডি দেখাও। আমি বল্লাম তুমি কে? সে বললো: আমি সিআইডি। আমি বললাম আগে তোমার আইডি দেখাও। সে বলে আমার আইডি দেখামু ক্যান? আমি বললাম: তুমি যে সিআইডি সেটা তুমাকে দেখে বুঝা যায় না, সো আমি যাকে তাকে আমার আইডি কেন দেখাবো? তুমি যদি তোমার আইডি দেখাইতে পারো তাহলে আমার আইডি দেখাবো, নচেৎ নহে।
একজন বিদেশীর মুখে আরবী বলা শুনে তার বেশ মজাই লাগছিল। তাই সেও আমার সাথে ফান শুরু করে বললো: দেখো, তোমার যদি আসলে আইডি না থাকে আমি কিছু বলমু না কিন্তু যদি আমি আমার আইডি দেখাই তারপর যদি তুমি তোমার আইডি না দেখাইতে পারো তাহলে কিন্তু থানায় নিয়ে যাবো।
আমি বল্লাম ঠিকাছে। সিআইডি তার আইডি বের করে আমাকে দেখিয়ে পকেটে রাখতে গেলে আমি বল্লাম, নো নো নো.... আমার হাতে দাও, তোমার ছবি চেক করবো। আমার হাতে সে তার আইডি দিলো। আমি দুই তিনবার আইডির ছবির সাথে তার চেহারা মিলাইয়ে বললাম: ছবির সাথে তো চেহারার মিল নেই, অনেক আগের তুলা ছবি মনে হয়।
সিআইডি বললো: হ্যা,,, প্রায় ১০ বছর আগের।
আমি বললাম: নাম কি?
- খালিদ।
আমি: বাবার নাম?
- আব্দুর রহমান।
আমি: জন্মস্থান কই?
- বনু সুইফ।
আমি: থাকো কই?
- হেলওয়ান।
সব ইনফো আইডির সাথে মিলিয়ে ছোটখাটো একটা ইন্টারভিউ নিয়ে বললাম, তুমি তো এই রোড দিয়ে এগিয়ে অনেকখানি সামনে যেয়ে ডান দিকে থাকো। সে বললো, হ- তুমিতো দেখি সবই চিনো। আমি কইলাম হ চিনি।
এবার সে বলে: তোমার আইডি দেখাও। আইডি দিলাম। সে ভাল করে চেক করলো।
পরে আরো অনেক মজা করলাম। আমার নাম্বার নিলো তার নাম্বার দিলো। আর বললো যে কোন সমস্যা হলে আমারে কল দিবা। তুমি আমার সাদিক। এরপর এলাকায় আসলেই আমাকে ফোন দিতো। একবার বাসায় দাওয়াত দিলাম। আসলো, খেলো। এরপর নিজে থেকেই ফোন দিয়ে বাসায় আসতো। এক সময় আমার পুলিশের দরকার হলো তাকে ফোন দিলাম সাথে সাথে বাসায় চলে আসলো এবং আমার সমস্যা সমাধান করে দিলো।
খালিদ মুলতো গ্রামের ছেলে, শহড়ে এসে চাকির নিছে। নতুন ফ্লাট নিয়ে বউ নিয়ে আসছে। একদিন ফোন দিয়ে বললো: আমার মেয়ে হইছে তুমি দেখতে যাইবা। অনেক দিন বলার পর একদিন রাজি হইলাম। হালকা গিফ্ট কিনে নিয়ে গেলাম খালিদ এর মেয়ে কে দেখতে। মেয়ে আমি দেখমু কি? আমাকে দেখতেই ভীড় জমাইছে অনেক মানুষ। সবই তার আত্মিয় স্বজন। সে সবাইকে বলেছে আমার এক ইন্ডিয়ান ফ্রেন্ড আসবে যার চুল অনেক সুন্দর। আন্ডা বাচ্চা সবাই ইন্ডিয়ান মানুষ এবং আমার চুল দেখার অপেক্ষায় ছিল। আমি গেলাম দেখা হলো কথা হলো। আমি খালিদকে জিজ্ঞাস করলাম: তুমার মেয়ের নাম রাখছো কি? খালিদ বললো: 'ইয়ারা'।
আমি বললাম: ''ইয়ারা''???
খালিদ বললো, হ্যা ইয়ারা। কোন সমস্যা?
আমি বললাম, ইয়ারা শব্দ দিয়ে একটা সুন্দর হিন্দি গান আছে। ইয়ারা ছিলি ছিলি... বিরহা কি রাত কা জ্বালনা (লতা মুঙ্গেসকারে গান).. আমি গানটা প্রায়ই শুনি।
উপস্থিত জনতা অতি উৎসাহের সাথে বলতে লাগলো: কই আমাগোরে শুনাও তো.........
আমি মুপাইল থেকে গান শুনাইলাম.... সবাই খুব মজা পাইলো... আমি তো আসলে তাগোরে মজা দিতেই চাইছিলাম.... পরবর্তিতে দীর্ঘদিন খালিদের মুবাইলে রিংটোন হিসেবে গানটা ছিলো। আজো আমার সাথে দেখা হইলে বা মুবাইলে কথা হইলে বলে,, ঐ পুলাপান গুলা তোমারে খুব মিস করে,,, তোমারে বার বার নিয়ে যেতে কয়।