মধ্যপ্রাচ্যে আজ ঈদ। আরবের ঘরে ঘরে আনন্দ। রাস্তায় রাস্তায় খুশির জোয়ার। শপিংমলে কেনা কাটা শেষে এখন অনেকটাই ফাঁকা। লাখো মানুষের পদচারণায় পিষ্ট এই শপিংমলকে ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করতে করতে চোখ জলে টলমল করে উঠে রফিক মিয়ার।
গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়া চোখের জল মিশে যায় তীব্র গরমে গা থেকে বেরিয়া আসা দুর্গন্ধময় ঘামের সঙ্গে। মনে কেবল একটাই যাতনা এত কষ্টের পরও ছেলেমেয়েদের ঈদের কাপড় কিনেই টাকা শেষ। তিন ঈদ চলে গেলও মায়ের জন্য কিনতে পারেনি কিছুই। ঠিক এমন সময় দেশ থেকে ফোন আসে। ফোনে ওপার থেকে মা জিজ্ঞেস করেন, বাজান কি কর? চোখ মুছতে মুছতে আবেগ সামলে রফিক মিয়া বলেন মা, সব বন্ধু বান্ধব মিলা সেমাই খাই। এটাই হলো মধ্যপ্রাচ্যে বাঙ্গালিদের ঈদ। -
ব্যতিক্রম যে নাই তা নয়। যারা একটু পুরাতন, বাড়িতে টাকার চাপ যাদের একটু কম, যাদের কপাল একটু ভাল তারা অনেকে ঈদে বেশ মজাও করেন। রান্না করেন সেমাই পোলাও উটের গোস্ত। গায়ে জড়ান নতুন জামা। আরবদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঈদগাহে ঈদের নামাজও আদায় করে থাকেন।
তবে মিশরে বাংলাদেশিদের অবস্থা কিছুটা ব্যতিক্রম। এখানে সাধারণত দুই শ্রেণির বাংলাদেশি আছেন। ছাত্র এবং গার্মেন্টস কর্মী। ছাত্রদের হাতে টাকা পয়সা কম থাকলেও তারা মোটামুটিভাবে ভালই ঈদ উৎযাপন করে থাকেন।
যারা হোস্টেলে থাকেন তারা বিভিন্ন দেশের বন্ধুদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন। খাওয়া দাওয়া সব শেয়ার করেন। নতুন জামাকাপড় পরেন। আর যারা বাসা ভাড়া করে থাকেন তারা অনেকে আগের রাতেই কিছু রান্না করে রাখেন। ভোরে নামাজ আদায় করে এসে কিছু খেয়ে ঘুম দেন। দুপুরে উঠে বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে দেখা করে আড্ডা দেন। সন্ধ্যায় ছাত্র সংগঠনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন তারপর রাতভর আড্ডা অথবা নীলনদের পাড়ে ঘুরতে যান।
অপরদিকে গার্মেন্টস কর্মীরা ঈদে তিন চারদিন ছুটি পান। তারা সাধারণত এক সঙ্গে অনেকজন থাকেন। কাজেই তাদের ঈদ আনন্দটা একটু বেশিই। খাবার আয়োজনেও তারা বেশ মনযোগী। পাঁচ সাত জন মিলে মিলে রান্না করেন। দুপুরে বিভিন্ন জাগায় ঘুরতে যান। সন্ধ্যায় অনেক সময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন। একসঙ্গে গান গান ও মজা করেন। রাতে শুরু হয় দেশে ফোন করার প্রতিযোগিতা। কারণ পরের দিন বাংলাদেশে ঈদ। সারাদিন যতই উৎফুল্ল থাকুক রাতে দেশে কথা বলতে গিয়ে সবাই আবেগী হয়ে ওঠেন। পাওয়া না পাওয়া হিসেব মিলাতে না পেরে সবাই প্রায় একই মুখস্ত উত্তর দেয়, অনেক কিছু খাইছি অনেক মজা করছি আমি ভাল আছি আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না।