মা'কে নিয়ে ছোট একটি গল্প অনুবাদ করে ব্লগে লিখেছিলাম অনেকদিন আগে। গল্পটি খুবই শিক্ষনীয় এবং বাস্তব জীবনের সাথে মিল থাকায় ফেসবুক এবং ব্লগার বন্ধুদের সাথে আবার শেয়ার করলাম।
গল্প:
- বিয়ের ১২ বৎসর পর আজ আমার স্ত্রী আমাকে বলল:
তুমি কাল এক মহীলাকে ডিনারে ইনভাইট করবে এবং মুভি দেখাতে নিয়ে যাবে।
সে আরো বলল: আমি তোমাকে ভালবাসি। কিন্তু আরেকজন মহীলা আছেন যিনিও তোমাকে ভালবাসেন এবং তোমার সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। তাহলে কেন তাকে তার এই ইচ্ছে থেকে বিরত রাখা!!
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কে সেই মহীলা যে আমার সাথে সময় কাটাতে চায় আর তুমি তাকে অনুমতি দিচ্ছো?
স্ত্রী বলল: তোমার 'মা'।
সত্যিতো, আমার দামি এই চাকরিটি পাওয়া তারপর বিয়ে তারপর একে একে তিন তিনটি বাচ্চা হওয়ায় আমি আমার ভূবনে এতই ব্যাস্ত হয়ে পরেছি যে বিশেষ অকেশন ছাড়া আমার মা কে সময়ই দেয়া হয় না।
অথচ এমন কিন্তু হবার কথা ছিল না। ''মা'' তাকে কেবল অকেশনেই সময় দেয়া কিংবা কেয়ার করা এটা অন্যরা করলে তাদের উপর আমার ভিষন রাগ হতো যখন আমি ছোট ছিলাম। আজ আমারও তো ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে তাহলে তারাও কি আমাকে খারাপ মানুষ ভেবে ভেবে বড় হয়ে উঠছে???
ভাবতে ভাবতে মাকে ফোনে রেষ্টুরেন্টে ডিনার এবং শহড়ের দামি সিনেমা হলে মুভি দেখানোর পরিকল্পনার কথা বললাম।
- মা: তোর কী হয়েছে? তুই কি ঠিক আছিস? বাসায় সবাই ভালোতো? এমন ছিল মার প্রথম এ্যক্সপ্রেশনস যেন গভির রাতে তাকে আমি কোন খারাপ খবর শুনালাম। (অথচ যখন আমি ছোট ছিলাম তখন মা আমাকে প্রতিদিনই ঘুরতে নিয়ে যেতেন) সব কিছু ঠিকই আছে বুঝানোর পর মা তার দরদি হৃদয়ের নিশ্বার্থ ভালবাসা প্রকাশ করে বললেন: ঠিক আছে, তুই তোর বউ আর ছেলে মেয়েকে নিয়ে ডিনারে যা, সিনেমায় যা এনজয় কর। আমি গেলে অযথাই অতিরিক্ত খরচ হবে। সেটা করে কি লাভ!!!
আমি বললাম: মা, কাল আমি আর তুমি ঘুরতে যাবো ঠিক ছোট বেলার মতো। সাথে আর কেহ থাকবে না।
অবশেষে তিনি রাজি হলেন।
পরেরদিন বিকেলে অফিস থেকে কিছুটা আগেই ছুটি নিয়ে মা'র বাসার সামনে গাড়ি পার্ক করলাম। নিজেকে কিছুটা নার্ভাস মনে হতে লাগল। গাড়ির শব্দ শুনেই দড়জা খুলে গেলো। মা'কে দেখে বুঝলাম তিনি নতুন কাপড় পরে অপেক্ষা করছিলেন। তাকে আমার চেয়েও বেশি নার্ভাস মনে হলো।
ঘরের ভিতর প্রবেশ করে বুঝতে পারলাম সে আজকের জন্য কত প্রস্তুতিই না নিয়েছেন। এই বয়সে হালকা মেকাপ ও চুল গুলোকেও কিছুটা রঙীন করেছেন। আমার দেয়া একটি পোশাকই পরেছেন। সোফার উপর তার প্রিয় কোর্টটি ও রাখা দেখলাম।
এক কাপ চা পান করেই আমি বললাম চলো বের হয়ে যাই। মা কোর্ট টি হাতে নিয়ে বললেন চলো। বের হবার সময় জিজ্ঞেস করলাম তোমাকে নার্ভাস মনে হচ্ছে কেনো>? মা বললেন, নার্ভাস না লজ্জা লাগছে কারন আজ আমার বন্ধু সবাইকে ফোন করে বলেছি যে আমার ছেলে আমাকে আজ ডিনারে নিয়ে যাবে তারপর সিনেমায়। সবাই বলল: তুমি খুব লাকী। ( )
আমরা মাঝারি ধরনের একটি রেষ্টুরেন্টে বসলাম। (কারন মা কিছুতেই দামি রেষ্টুরেন্ট পছন্দ করলেন না।)
আমাদের সামনে মেনু দেয়া হলো। আমি মার পছন্দের খাবারের নামের অপেক্ষায় রইলাম। কিন্তু মাকে কিছুটা চিন্তিত মনে হলো। মা বললেন, আমি বড় বড় লেখাগুলো ব্যতিত আর কিছুই পড়তে পারছি না। তুমি আমাকে পড়ে শুনাও। আমার মনে পরে গেল যখন আমি ছোট ছিলাম তখন এমনিভাবে মা আমাকে মেনু পড়ে শুনাতেন আর আমি খাবার পছন্দ করতাম। তার পরে হয়তো আজই প্রথম মাকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে আসা। সেদিন আমি পড়তে পারতাম না, আজ মা পড়তে পারছেন না।
খেতে খেতে আমরা অনেক কথা বললাম। কিভাবে আমরা আমাদের দিনগুলো পার করছি সেটাই ছিল আলোচনার বিষয়। মা'র কথা শুনে বুঝতে পারলাম মা আমাকে কত গভির ভাবে প্রতিদিন মিস করে।
মুভি দেখার সময় হলেও তার গুরু্ত্ব অনেকটাই কমে গেছে। মা আমার সাথে কথা বলতেই বেশি আনন্দ লাভ করছেন। অবশেষে আমরা মুভির অর্ধেকটা দেখে বাড়ি দিকে রওনা হলাম।
মা'কে বড়িতে নামিয়ে দিয়ে আসার সময় মা বললেন, তোমার সাথে কয়েকদিন পর আবার ডিনারে যাব। সেদিন আমিই তোমাকে দাওয়াত করব। আমি প্রমিজ করে আমার বাসায় চলে আসলাম।
- বাসায় আসার পর আমার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো: কেমন সময় পার করলা?
- আমি বললাম: অনেক ভাল। কল্পনার চেয়েও ভাল। কয়েকদিন পর মা আমাকে ইনভাইট করবে বলেছেন। আমি প্রমিজ করে আসছি। স্ত্রী বললেন, অনেক ভাল করেছ।
অল্প কিছুদিন পরে আমার মা হার্টফেইল করে মারা গেলেন। আমি তাকে বাচাতে কোন চেষ্টাই করতে পারলাম না। সবকিছু খুব দ্রুত ঘটে গেলো।
এরই কিছুদিন পরে আমি একটা খাম পেলাম। যাতে একটি হোটেলের মানি রিসিপ্ট যাতে দুইজনের ডিনারের অগ্রিম বিল পে করে সিট বুক দিয়ে আমাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে। রিসিপ্ট হাতে নিয়ে কান্নায় ভরা চোখে একটি নোট দেখতে পেলাম। তাতে লেখা:
- বাবা: আমি আমাদের দ্বিতীয় ডিনারের অগ্রিম বিল পে করেছি। জানিনা আদৌ আমি আজ বেচে থাকবো কি না, কিন্তু আমি দু জনের জন্যই সিট বুক করেছি। যদি আমি জীবিত থাকি তবে মনে করো আমি ঐ আগের রেষ্ট্যুরেন্টে তোমার অপেক্ষায় আছি। আর যদি বেচে না থাকি তবে তুমি দেরি করো না, তোমার স্ত্রীকে নিয়ে আমাদের ঐ প্লেসে চলে যাও।
ইতি
তোমার মা।
-------
নেট থেকে পাওয়া একটি গল্পকে কিছুটা নিজের ভাষায় লিখলাম।
-------
-
--
---
----
-----
------
-------
আমার কিছু কথা:
- প্রিয় ব্লগার বন্ধুরা: আসুন সবাই আমাদের পিতামাতাকে আরো ভালবাসি। তাদের আরো যত্ন নিই। মনে রাখতে হবে, তারাই পৃথিবীর বুকে একমাত্র মানুষ যারা আমাদের প্রত্যেকটি সাকসেসে আনন্দ পান এবং প্রত্যেকটি ব্যর্থতায় সমান কষ্ট পান।
- পিতামাতর জন্য অপ্রয়োজনীয় যেই কাজ গুলো অবশ্যই করবেন:
১) একবার হলেও চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, রমনা পার্ক, সংসদভবন যেই সমস্ত স্থানের কথা আমরা প্রায়ই বাসায় আলোচনা করি কিংবা টিভিতে বাবা-মা শুনে থাকেন ঐ সমস্ত স্থান দেখাতে নিয়ে যাবেন। সেক্ষেত্রে ভাল শপিং মল এবং ষ্টেডিয়ামে ও নেয়া প্রয়োজন মনে করি। কারণ, কোন একটি স্থান, বস্তু বা খাবারের নাম বার বার শুনলে সেটার প্রতি একটি ভাল লাগার সৃষ্টি হয় আর সেখান থেকেই ভালবাসার। বৃদ্ধ বাবা মা জীবনেও এইসব কথা বলবেন না, বা আপনি অফরা করলেও তিনারা রাজি হবেন না। তারপরও নিজে জোর করে নিতে হবে। ঘুরে আসার পর ঠিকই তাদের অনুভূতি আপনি বুঝতে পারবেন।
২) পিতা মাতা কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে থাকার জন্য নয়। কাজেই যারা তাদের পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসছেন তাদেরকে নিজে এবং তার আশেপাশের মানুষ দিয়ে শু-কৌশলে বুঝিয়ে বাসায় আনার ব্যবস্থা করুন।
৩) যে বয়সেরই হোক না কেন, অনেক ছেলে সন্তান আছে যারা পিতামাতার সাথে খারাপ ব্যবহার করে, পিতামাতার কথা শুনে না। আপনি তাদের বন্ধু হয়ে তাদের সময় দিন। এবং কৌশলে তাদের পিতামাতার প্রতি সন্তানে কর্তব্য বুঝানোর চেষ্টা করুন।
- উপরের গল্পটি আপনার হৃদয়ে কিছুটা টাচ করে থাকলে আমার রিকোয়েষ্টে হলেও প্লিজ প্রমিজ করুন অতিদ্রুত আপনার বাবা মা যারা জীবিত আছেন তাদের জন্য কিছু একটা করবেন যাতে তারা কিছুটা সময়ের জন্য হলেও নিজেদের একাকিত্ব ভূলে থাকেন। এবং এমন ঘটনা সবার সাথে শেয়ার করবেন।
আগের ব্লগ: Click This Link