ছবি - momjunction.com
মহান আল্লাহপাক মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন সমষ্টিগতভাবে নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে । নারী-পুরুষ মিলেই পূর্ণ হয়েছে মানবসভ্যতা। সৃষ্টিগতভাবে নারী ও পুরুষের মাঝে সামান্য কিছু পার্থক্য মূলতঃ কোনো বিভাজন নয় বরং সৃষ্টির পূর্ণতা ও মানুষের উৎকর্ষতার জন্যই একে অপরের পরিপূরক হিসেবে সৃজিত হয়েছে এ মানব জুটি। স্রষ্টার অপরুপ ও মমতাময়ী সৃষ্টি এ মানবজাতি। এ পৃথিবীতে মানুষ প্রেরণের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে স্রষ্টা প্রথমে আদি মানব হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করছিলেন। আর তাই হযরত আদম (আঃ) একাধারে মানবজাতির আদি পিতা,এই পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত খলীফা (প্রতিনিধি) এবং প্রথম নবী ও রাসূল। মানবজাতির এবং নবুওয়াত ও রিসালাতের সূচনা হয় তাহার মাধ্যমেই। তাঁহার বংশধর হিসাবেই মানুষকে আরবী, উর্দু, ফার্সী প্রভৃতি ভাষায় আদমী নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। নবী-রাসূলগণ যেহেতু শিষ্টাচার ও সভ্যতারই পয়গামবাহক, তাই আদম (আঃ) কে মানব সভ্যতারও পথিকৃতরূপে অভিহিত করা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত।
আদি মানব আদম (আঃ) এবং তার সংগী - মানবী বা হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টি -
হযরত আদম (আঃ) যে পৃথিবীর আদি ও প্রথম মানব এবং সমগ্র মানব জাতির আদি পিতা তাহা কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও মহানবী (সাঃ) এর হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত।যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন," নিশ্চয় আল্লাহর নিকট ঈসার দৃষ্টান্ত আদমের দৃষ্টান্ত সদৃশ্য।তিনি তাকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর তাকে বলেছিলেন,- হও, ফলে তিনি হয়ে যান"।(সুরা আল ইমরান, আয়াত - ৫৯)। অর্থাৎ আদম (আঃ) পিতা ও মাতা ব্যতীতই আল্লাহর কুদরতে সৃষ্ট, সরাসরি মাটি হইতে।
হযরত আদম (আঃ) সৃষ্টির ব্যাপারে আল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, " যিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে উত্তমরূপে সৃজন করেছেন এবং মাটি হতে মানব-সৃষ্টির সূচনা করেছেন"। (সুরা আস সাজদাহ , আয়াত - ৭)। এ ব্যাপারে আরো বলা হয়েছে, "আমি মানবকে পচা কর্দম থেকে তৈরী বিশুস্ক ঠনঠনে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। (সুরা হিজর,আয়াত - ২৬)। তাহলে দাড়াচছে, আদম (আঃ) একাই কেবল মাটি থেকে সৃষ্টি। বাকি সবাই পিতা-মাতার মাধ্যমে সৃষ্ট। এ ব্যাপারে আল কোরআনে আরো বলা হয়েছে, " অতঃপর তিনি তার বংশধর সৃষ্টি করেছেন তুচ্ছ পানির নির্যাস থেকে"। (সুরা আস সাজদাহ,আয়াত - ৮)। মানব জীবনের ধারাবাহিকতার ব্যাপারে বলা হয়েছে, "তিনিই পানি থেকে সৃষ্টি করেছেন মানবকে, অতঃপর তাকে রক্তগত, বংশ ও বৈবাহিক সম্পর্কশীল করেছেন। তোমার পালনকর্তা সবকিছু করতে সক্ষম। (সুরা ফুরকান,আয়াত - ৫৪)।
পুরুষ (আদম) এর সংগী ও প্রথম মানবী /স্ত্রী হাওয়া (আঃ) সৃষ্টির প্রসংগে মহান আল্লাহপাক বলেন, " তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর র্গভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব " । (সুরা আল আরাফ,আয়াত -১৮৯)।
আল কোরআনের অন্য আয়াতে তাঁহার স্ত্রী হাওয়াকে তাঁহারই দেহ হইতে সৃষ্টির উল্লেখ করিয়া আল্লাহ তাআলা বলেন, "হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবের তাকওয়া অবলম্বন কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের দুজন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দেন; আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে নিজ নিজ হক দাবী কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর রক্ত-সম্পর্কিত আতীয়ের ব্যাপারেও । নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক ''।(সুরা আন নিসা, আয়াত - ১)।
মহান আল্লাহপাকের মানুষ (আদম) সৃষ্টির উদ্দেশ্য -
কুরআন শরীফের সূরা বাকারায় সর্বপ্রথম যেখানে আদম (আঃ) সৃষ্টি প্রসঙ্গটি উল্লিখিত হইয়াছে সেখানেই তাঁহার সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলা সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করিয়াছেন। সেখানে মহান আল্লাহপাক বলেন, "আর স্মরণ করুন, যখন আপনার রব ফেরেশতাদের বললেন , নিশ্চয় আমি যমীনে খলীফা সৃষ্টি করছি', তারা বলল, আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে ফাসাদ ঘটাবে ও রক্তপাত করবে ? আর আমরা আপনার হামদসহ তাসবীহ পাঠ করি এবং পবিত্রতা ঘোষণা করি । তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি তা জানি, যা তোমরা জান না "।(সুরা বাকারা, আয়াত - ৩০)। আল কোরআনে মানুষ ও জিন সৃষ্টির উদ্দেশ্য সম্পর্কে আল্লাহপাক আরো বলেন, " আর আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা কেবল আমার ইবাদত করবে"।(সূরা জারিয়াত, আয়াত - ৫৬ )।
আল্লাহপাকের ইবাদতের ফলে মানুষ দুনিয়ার কল্যাণের সাথে সাথে পরকালে জান্নাতের আনন্দময় জীবন লাভ করবে। আল্লাহর প্রতি নিরঙ্কুশ আনুগত্য তথা তাঁর ইবাদত করলে পরকালে জান্নাতে বসবাসের নিশ্চয়তা রয়েছে। তবে বান্দার ইবাদতের লক্ষ্য নিছক জান্নাতপ্রাপ্তির জন্য হওয়া উচিত নয় বরং তা হওয়া উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এ ব্যাপারে আল কোরআনে বলা হয়েছে,"আপনি বলুন, আমার সালাত, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহর জন্য যিনি সমগ্র বিশ্বজাহানের মালিক"। (সূরা আনয়াম, আয়াত -১৬২)।
আল্লাহ মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য তৈরি করলেও বান্দাকে বুঝতে হবে ইবাদত করা না করার মধ্যে আল্লাহর কিছু আসে যায় না। তিনি মানুষ বা জিন সহ কারও ইবাদতের মুখাপেক্ষী নন। তবে মানুষ বা জিন ইবাদতের মাধ্যমে স্রষ্টার সন্তুষ্টি-বিধান করতে পারে। যেহেতু তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত করা সেহেতু তা পূরণের মাধ্যমে তারা নিজের কৃতজ্ঞতা তথা নিজের আনুগত্যের পরিচয় দিতে পারে। এ কারণে হজরত আলী (রাঃ) বলতেন, "হে আল্লাহ! আমি জাহান্নামের ভয়ে বা জান্নাতের লোভে তোমার ইবাদত করি না, আমি তোমার ইবাদত করি কারণ তুমি ইবাদতের যোগ্য"। আল্লাহ ইবাদতের যোগ্য এবং মানব জীবনের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য আল্লাহর ইবাদত হলেও এ দুনিয়াতে মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি আরও কিছু কাজ কর্ম করতে হয়। আর এসব করতে হয় দুনিয়াতে মানুষের বেঁচে থাকা ও টিকে থাকার জন্য। আর এসব কিছুই করতে হয় নর-নারী উভয়েকে এবং উভয়ে মিলে। যদিও তাদের করণীয় কাজে কিছুটা প্রার্থক্যও আছে।
পুরুষ ও নারীর মাঝে কি কোন পার্থক্য আছে -
বাহ্যিক আকৃতি ও দৈহিক বৈশিষ্ঠ্যের ভিত্তিতে সমগ্র মানব জাতিকে আমরা নারী ও পুরুষ হিসেবে ভাগ করে থাকি । নারী ও পুরুষ একই উপাদানে সৃষ্টি হওয়ার পরও দৈহিক দিক দিয়ে উভয়ের মাঝে রয়েছে কিছু পার্থক্য। পার্থক্য গুলো হলো -
১। মেয়েদের শরীর চুম্বকধর্মী আর পুরুষের শরীর বিদ্যুৎধর্মী।
২। মেয়েদের শরীর অম্লধর্মী পুরুষের শরীর ক্ষারধর্মী।
৩। রক্তের লাল কণিকা মেয়েদের চাইতে পুরুষের অনেক বেশি। পুরুষের এক কিউবিক মিলিমিটার রক্তে ৫০ লক্ষ রক্ত কণিকা থাকে এবং মেয়েদের থাকে ৪৫ লক্ষ।
৪। মেয়েদের হৃদপিন্ড পুরুষের হৃদপিন্ড হতে ওজনে ৬০ গ্রাম কম হয়ে থাকে।
৫। নাড়ীর হৃদস্পন্দন পুরুষের চেয়ে মিনিটে ৫টি বেশি।
৬। পুরুষের শরীর সামনের দিকে ভারী আর নারীর শরীর পেছনের দিকে ভারী। এজন্য নারীর মৃতদেহ পানিতে ভাসে চিৎ হয়ে আর পুরুষের মৃতদেহ ভাসে উপুড় হয়ে। আর এজন্য নারীরা হাইহিল জুতো পরে স্বাচ্ছন্দে হাটতে পারলেও পুরুষ হাইহিল পরতেই পারেনা।
ছবি - unsplash.com
তাছাড়া, সৃষ্টিগত ও জীব বিজ্ঞানের সুত্র অনুসারেও নারী পুরুষের মধ্যে কিছু জৈবিক পার্থক্য (Biological) আছে। যেমন -
১। নারী গর্ভ (সন্তান) ধারন করে, পুরুষ গর্ভ ধারন করেনা।
২। যৌন মিলনে পুরুষ সক্রিয়, নারী তুলনামূলকভাবে কিছুটা নিস্ক্রিয় ।
৩। পুরুষের দাঁড়ী গোঁফ হয়, নারীর হয়না।
৪। সন্তান ধারন ও লালনের জন্য নারীর কতিপয় আলাদা দৈহিক বৈশিষ্ট্য আছে, পুরুষের সেগুলো নেই।
নারী ও পুরুষের এই শারীরিক পার্থক্যগুলি সামাজিক ভাবে সৃষ্ট নয় বরং সৃষ্টিগত ও জৈবিক। নারী ও পুরুষের এই জৈবিক পার্থক্য বুঝাতেই সেক্স শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং পার্থক্য তাদের অর্জিত বা বিশেষ কিছু নয় বরং এসবই স্রষ্টা প্রদত্ত ও এতেই স্রষ্টার সৃষ্টির পূর্ণতা পায়।
ছবি - unsplash.com
সমাজে ও পরিবারে পুরুষের ভূমিকা বা পুরুষ কিসের ভিত্তিতে পরিবারের অভিভাবক হয়ে থাকে ?
পবিত্র কুরআনে নর-নারীর একে অপরের মাঝের সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী, "পুরুষ নারীর কর্তা। কারণ, আল্লাহ তাদের এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে পুরুষ (তাদের জন্য) ধন ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যময়ী নারীরা অনুগতা এবং পুরুষের অনুপস্থিতিতে লোক-চক্ষুর অন্তরালে (স্বামীর ধন ও নিজেদের ইজ্জত) রক্ষাকারিণী; আল্লাহর হিফাযতে (তওফীকে) তারা তা হিফাযত করে। আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার তোমরা আশংকা কর, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগতা হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সুউচ্চ, সুমহান"। (সুরা নিসা, আয়াত - ৩৪) ।
আলোচ্য আয়াতে নারীর উপর পুরুষের শ্রেষ্ঠত্ব-কর্তৃত্ব আল্লাহ প্রদত্ত, যাতে পুরুষদের কোন চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও বিশেষ কিছু অর্জনের নেই এবং এটা কেবল সৃষ্টিগত। পুরষকে যে শক্তি , চেষ্টা-তদবীরের ক্ষমতা, জ্ঞানের প্রশস্ততা, দৈহিক শক্তি এবং যোগ্যতা বিশেষ ভাবে প্রদান করা হয়েছে এ তারই ফল। আর এই সব নিয়ামত নারীদের কে প্রদান করা হয় নি। এই কারণে পুরুষদের কে এমন কতগুলো বৈশিষ্ট প্রদান করা হয়েছে যা নারীদের কে দেওয়া হয়নি। যেমন নবুয়ত, ইমামতি, জিহাদ ওয়াজিব হওয়া, জুমা ওয়াজিব হওয়া, দুই ঈদের নামাজ, আজান,খোতবা, জামাতে নামাজ ইত্যাদি।
আবার , মানব সমাজে প্রচলিত কিছু পদ ও টাইটেল শুধুমাত্র পুরুষদের জন্য সংরক্ষিত আছে। যেমন - রোমান ক্যাথলিক গির্জার পোপ এবং বিশপ পুরুষ ছাড়া কেউ হতে পারে না। ক্যাথলিক গির্জা ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের ধর্মগুরুদের ক্ষেত্রে একই বিষয় দেখা যায় যেখানে সব ঐশী বার্তাবাহক কিংবা নবী-রাসুল-ঠাকুর-পুরোহিত সবাই পুরুষ। অনেক দেশে রাজা হওয়ার সুযোগও শুধু ছেলেদেরই থাকে এবং উত্তরাধিকার সূত্রে বংশের সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ পুরুষ সন্তান পরবর্তী রাজা হয়ে থাকেন।
তাছাড়াও, সাধারনভাবে সৃষ্টির শুরু থেকে বা গুহাবাসী যুগ থেকেই মানব সমাজে এটা প্রচলিত ও মনে করা হয় যে, নারীদের থেকে পুরুষদের কিছু বেশী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা আছে। আর সেইসব ধারনার পিছনের কারন হিসাবে পুরুষদের শিকার ধরা, পোষ্য প্রাণী লালন-পালন করা, স্থায়ী নিবাস বা বসতি তৈরী-প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য পারিবারিক-সমাজিক কাজ যেখানে নারীদের চেয়ে পুরুষের চওড়া দেহ এবং শক্তিশালী দৈহিক আকৃতি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়। আবার কৃষি ভিত্তিক সমাজ,সরাসরি যুদ্ধ বিগ্রহ যেসব কাজে শারিরীক আকৃতির সাথে সাথে সাহস- শক্তির দরকার হত সেসব কাজে নারীদের থেকে পুরুষদের অংশগ্রহণ সবসময়ই বেশী ছিল। আবার কোন কোন নৃবিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে নারীদের তুলনায় পুরুষ জাতি অধিকতর দক্ষ ও নেতৃত্ব দানে সক্ষম আর তাই তাদের নারীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে। আর এসব কারনে ধর্মের বাইরেও মানব সমাজে প্রাকৃতিকভাবেই পুরুষের ভূমিকা সুনির্দিষ্ট করা ছিলো। পুরুষ তার সেই সুনির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করবে, এটাই ছিলো তার কাছে সমাজের প্রত্যাশা। পুরুষের জন্মই হতো একজন শিকারি ,যোদ্ধা এবং আক্রমণাত্মক প্রাণী হিসাবে। এসব কারনেই একই পরিবারের একজন নারী-পুরুষ থেকে স্বাভাবিকভাবে পুরুষ কর্তা হিসাবে ভূমিকা পালন শুরু করে আর নারী তার সহযোগী।
পুরুষ কি পরিবার-সমাজে অত্যাচারী,লোভী-ভোগী নাকি ভূক্তভোগী ?
পুরুষগণ আল্লাহ প্রদত্ত এক অশেষ নেয়ামত এ দুনিয়া-পরিবার ও তাদের আপনজনদের জন্য। কেননা,তারা তাদের স্বীয় জীবন ও যৌবনকে নিজ আপনজন-স্ত্রী-সন্তানদের জন্য কুরবান করে দেয় হাসিমুখে। তাদের পরিশ্রমের ফলেই এবং তাদের উপর ভর করেই পরিবারের বাকী সদস্যরা জীবনের সুখ-শান্তি ও অপার সৌন্দর্য উপভোগ করে থাকে। পুরুষ জাতি তো এমন এক স্বত্বা, যারা স্বীয় পরিবার ও সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য সর্বাত্মক পরিশ্রম করে থাকেন আমৃত্যু ।
তবে এমন কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের পরেও পুরুষের বিরুদ্ধে সমালোচনাও কম নয়। আর তাই, আপনজনদের সুখের জন্য সারা জীবন উজার করে দেবার পরও তাদের শুনতে হয় লোভী-ভোগী এবং কখনো জোটে অত্যাচারীর খেতাব। যা তাদের জন্য হতাশা এবং দুঃখ-কষ্টেরও। তবে এটাও ঠিক যে, সমাজে কিছু কিছু পুরুষ আছে লোভী-ভোগী এবং অত্যাচারী । আর এসব কারনেই নারী এখনো হয় পারিবারিকভাবে নির্যাতিত ও সহিংসতার শিকার , কিছু কামুক-বর্বর পুরুষের হাতে নারী হয় ধর্ষিত,যৌতুকের বলি হয়ে ভেংগে যায় অনেক নারীর সংসার । তবে এসব নীচু মানষিকতার পুরুষ সমাজ-সংসারে যদিও আছে তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম এবং গুটিকয়েক খারাপ পুরুষের জন্য সকল পুরুষকে একই অপবাদ দেয়াও যুক্তিসংগত নয়।
চলার পথে পুরুষকে যেসব অপবাদ দেয়া হয় বা তার সমালোচনা করা হয় , সেগুলো হল -
১। পুরুষ যদি একটু ফ্রেশ ও মনের প্রশান্তির জন্য ঘরের বাহিরে যায় বা বেশী সময় কাটায় তাহলে তাদের কে বলা হয় বে-পরওয়াহ বা সে কোন কিছুর পরোয়া করেনা,যা আদৌ ঠিক নহে। আবার পুরুষ যদি কোন কারনে বা কাজ-কর্মের অভাবে কিংবা স্বাভাবিকভাবেও কিছু বেশী সময় ঘরে বসে থাকে তাহলে তাকে বলা হয়, অলস ও অকর্মণ্য।
২। পুরুষ যদি সন্তানদের ভুলের জন্য শাসন করে তাহলে তাকে বলা হয়, নির্দয় ও হিংস্র। আবার যদি সন্তানদের শাসন না করে এবং তারা বিগড়ে যায় তাহলে বলা হয় বাবা হিসাবে সে সঠিক নয় এবং অসফল।
৩। পুরুষ যদি তার স্ত্রীকে চাকুরী করা থেকে বারণ করে তাহলে তাকে বলা হয় সেকেলে বা হীনমানষিকতা ধারী । আবার , চাকুরী করার পরও যদি কোন কারনে তার স্ত্রী থেকে টাকা পয়সা নেয় তাহলে বলা বউয়ের টাকায় চলা অর্কমণ্য। আর এ নিয়ে কিছু বললে জোটে অত্যাচারী (শারিরীক -মানষিক) র খেতাব।
৪। বিয়ের পরে পুরুষ যদি মায়ের সাথে সুসম্পর্ক রাখে তাহলে তাকে বলা হয় মা পাগল আবার যদি তার স্ত্রীর সাথে প্রেমময় আচরণ করে তাহলে তাকে বলা হয় বৌ পাগলা।
৫। পুরুষ যদি যৌনতায় বেশী সক্রিয় হয় তাহলে সে কামুক-ভোগী আবার যদি কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয় তাহলে সে নপুংশক।
পুরুষ এমন এক জীব,যাকে জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপেই দায়িত্ব-কর্তব্যের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয় অথচ পরিবারে তার যথাযথ মূল্যায়ণ হয়না বা পায়না বললেই চলে। এতকিছুর পরও একজন পুরুষ এমন একজন মানুষ , যে তার সন্তানদেরকে সর্বক্ষেত্রে নিজের চেয়েও বেশী-ভাল ও সুখী দেখতে চায়। একজন পিতা এমন এক রোবট, যিনি তার সন্তানদের নিকট থেকে সর্বদিক থেকে নিরাশ হওয়ার পরেও তাদের মন-প্রাণ উজাড় করে ভালোবাসে এবং সর্বদা তাদের মঙ্গলের জন্য দুয়া করেন। একজন বাবা এমন এক পুরুষ , যিনি স্বীয় সন্তানদের দেয়া সকল কষ্ট সহ্য করে নেন হাসি মুখে এবং তা তখন থেকে যখন সন্তান বাবার পায়ের উপর (শৈশবে) পা রেখে চলতে শিখে এবং তখনও, যখন বড় হয়ে বাবার বুকের উপর পা (যৌবনে) রেখে তাকে ছেড়ে চলে যায়। একজন বাবা পৃথিবীর এমন এক নেয়ামত, যিনি সারাজীবনের কষ্টার্জিত মহামূল্যবান সম্পদগুলো অকাতরে সন্তানদেরকে দিয়ে দেন। একজন মা তার সন্তানকে নয় মাস পেটে ধারণ করে থাকেন আর একজন বাবা সারাজীবন তাদের নিজের মাথার মধ্যে ধারণ করে চলতে থাকেন। একজন সন্তানের কাছে পৃথিবীটা ততক্ষণই সু্ন্দর ও উপভোগ্য মনে হয় যতক্ষণ বাবা নামক সত্মার ছায়া তার মাথার উপর বিরাজমান থাকে।
ছবি - parenting.firstcry.com
পরিবার-সমাজে নর-নারী (বাবা-মায়ের) তুলনামূলক ভূমিকা
নর-নারী উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টাতেই ও কিছু নিয়ম-নীতির অনুসরনের ফলেই পরিবার-সমাজ গঠিত হয়েছে এবং মানব জাতির ক্রমবিকাশ-উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে যেখানে উভয়কেই উভয়ের এলাকায় নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যকে সুচারুরুপে পালন করতে হয়। আর তাই আল্লাহ পাক নারীকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসাবে মানব জীবন পরিচালনার জন্য পারস্পরিক সহযোগী করেছেন।আবার উভয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রমেও রয়েছে ভিন্নতা (পার্থক্য)। আর এ দুয়ের আলাদা-আলাদা কাজের মিলিত রুপই পরিবার-সমাজের ভিত্তি,সুখ-সাফল্যের হাতিয়ার। যেমন -
১। মা একটি সন্তানকে ৯ মাস তার গর্ভে ধারন করেন অসীম কষ্ট ও ধৈর্য্যের সাথে । অপরদিকে সে সময়টা তার গর্ভবতী স্ত্রী ও তার গর্ভের সন্তানের জন্য যা যা দরকার তার যোগান দেন বাবা (স্বামী) এবং বাবা সন্তানের জন্মের পর থেকে আমৃত্যু সেই সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য বহন করে চলেন হাসিমুখে। এখানে বাবা-মা উভয়েই তাদের নিজ নিজ ভূমিকায় অনন্য এবং উভয়েই সন্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । কারন, মা না হলে সন্তানের জন্ম হতনা আবার বাবা না হলে সেই সন্তানের জীবন ভালভাবে গড়ে উঠত না।
২। যদিও সমালোচকরা অনেকেই সমালোচনা করে বলে থাকে যে, মা হল সারা জীবনের বিনা বেতনের কর্মচারী যে কোন পারিশ্রমিক ছাড়া সংসার চালায় অথচ এদিকে বাবা তার সারা জীবন সমস্ত বেতন-রোজগার সংসারের (মা ও সন্তানদের) জন্যই ব্যয় করেন। এখানেও উভয়েই তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব-কর্তব্যই পালন করে থাকেন ও উভয়েই সেরা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে । সুখী ও সফল পরিবারের জন্য উভয়ের প্রচেষ্টাই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং কেউ কারো থেকে ছোট নয় বা কমও নয়।
৩। একজন মা পরিবার-সন্তানেদের নিজ নিজ পছন্দ অনুযায়ী কাজ ও খাবার (ব্যবস্থা করা) তৈরী করেন আর বাবা এসব কিছু (ব্যবস্থা করা) করতে যা দরকার হয় সে সবের ব্যবস্থা করেন । এখানেও নর-নারী তাদের ভূমিকায় অনন্য ও পরিবার-সন্তানেদের জন্য তাদের উভয়ের ভালবাসা সমান।
৪। মানুষ যে কোন বিপদে-আপদে প্রথমেই মাকে স্মরণ করেন ও মায়ের সাথে কথা বলতে চান । আবার ,স্ত্রী-পরিবার-সন্তানেদের যে কোন কিছুর প্রয়োজন হলে তারা প্রথমে স্বামী-বাবাকেই মনে করেন কিন্তু বাবারা কখনও এই ভেবে মন খারাপ করেনা যে,স্ত্রী-পরিবার-সন্তানেরা শুধু প্রয়োজনেই তাকে মনে করে অন্য সময় মনে করেন না। ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে ভালবাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা প্রার্থক্য থাকলেও মা-বাবা উভয়েই নিজ নিজ জায়গায় পরিবার-সন্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
৫। চলার পথে মায়েদের সাধ-আহল্লাদের সব ধরনের জোগান দেন পুরুষ তথা স্বামী বা বাবারা। আর তাই মায়েদের-নারীদেের আলমারি ভরে যায় রঙিন শাড়ি-কাপড়ে আর বাচ্চাদের জামা-কাপড় দিয়ে কিন্তু এদিকে একজন পুরুষের-বাবার জামা হয় খুব কম, একটি কিংবা দুটি। তারা নিজেদের প্রয়োজনের তোয়াক্কা করেন না, সব সময়ই তাদের চেষ্টা থাকে পরিবার ও সন্তানদের খুশি-হাসিমুখ।এখানেও নিজ নিজ জায়গায় উভয়েই পরিবার-সন্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
৬। প্রতিটা পরিবারেই মায়েদের-স্ত্রীদের অনেক সোনার গহনা কিংবা অলঙ্কার থাকে কিন্তু বাবাদের তেমন কোন গহনাই থাকেনা। তাদের বড়জোর একটা আংটি থাকে যেটা তাদের বিয়ের সময় দেওয়া হয়েছিল। তবুও অনেক মা-স্ত্রী কম গহনা নিয়ে অভিযোগ করেন অথচ বাবারা সারা জীবনও এ নিয়ে কোন উচ্যবাচ্য করেন না। আবার যে কোন উৎসব পার্বনে মা নিজের জন্য একটি শাড়ি কিনার পাশাপাশি বাচচাদের জন্যও নতুন জামাকাপড়ের কথাও ভাবেন। আর বাবা তাদের চাহিদা পূরণের জন্য পরিশ্রম করেন হাসিমুখে ।
৭। বাবারা সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করেন পরিবারের সুখের জন্য এবং মায়েরাও তাদের পুরো জীবন ব্যয় করেন পরিবারের পিছনে তাদের যত্ন নেওয়ার জন্য। উভয়েই তাদের পুরো জীবন ব্যয় করেন পরিবার-বাচচাদের পিছনে এবং উভয়েই সমান সমান নিজ নিজ জায়গায়।
সারাজীবন মায়েরা সামনে থেকে সংসার সামাল দেন আর বাবারা পিছন থেকে সংসারের সব প্রয়োজনের জোগান দেন। বাবা (পুরুষ) পিছনে থাকেন কারণ তিনি পরিবারের মেরুদণ্ড। আর আমাদের মেরুদণ্ড তো আমাদের শরীরের পিছনেই থাকে। মেরুদণ্ডের কারণেই যেমন মানুষ শক্তভাবে নিজেদের মতো করে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে ঠিক তেমনি, যে পরিবারের বাবা নামক মেরুদণ্ড যত শক্ত ও মজবুত সেই পরিবারের মা-স্ত্রী -সন্তানরা ততটা নিরাপদ ও সুখী ।
ছবি - pixtastock.com
আধুনিক সমাজে ও পরিবারে পুরুষের ভূমিকা কেন কমে আসছে
আদিকাল থেকেই আমাদের সমাজে সাধারণত ছেলেরাই সংসার চালানোর অর্থনৈতিক দায়িত্ব নেয় তাই সে পরিবারের কর্তা বা পরিবারের প্রধান ভূমিকা পালনকারী। তবে সভ্যতার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন,যৌথ পরিবারের ভাংগন,আধুনিক যুদ্ধ-বিগ্রহে শারীরিক শক্তি থেকে আধুনিক অস্ত্রের ব্যবহার যেখানে শারীরিক শক্তি থেকে বুদ্ধি বেশী জরুরি এবং আধুনিক শিক্ষার প্রসারের ফলে কায়িক পরিশ্রম থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের সুযোগ বাড়ার ফলে সমাজে নর-নারীর ভূমিকায় পরিবর্তন আসছে। এখন অনেক পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারীও সংসারের মূল দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসছেন যদিও তা সংখ্যায় এখনো অনেক কম। আদিম সমাজে যেখানে পুরুষের শারীরিক শক্তিমত্তা, শিকারিসুলভ দক্ষতা সমাজের জন্য প্রবলভাবে কার্যকর ছিল কিন্তু আধুনিক সমাজে এসে যন্ত্রপাতি ব্যবহার শারীরিক শক্তিকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে। এখন পুরুষের দশা হয়েছে করুণ এবং এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী পুরুষ এখন দেখতে পাচছে আধুনিক সমাজে টিকে থাকার জন্য সঠিক এবং কার্যকর অস্ত্র তাদের হাতে নেই বললেই চলে এবং অনেক ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাচছে পুরুষদের থেকে ।
পুরুষদের পরিবারের প্রধান ভূমিকা প্রথম ধাক্কা খায় নারী শিক্ষার প্রসার ও বিংশ শতাব্দীর শিল্প বিল্পবের ফলে।এর ফলে যে শুধু পুরুষের ভূমিকাকেই চ্যালেঞ্জে ফেলেছে তা নয় বরং দীর্ঘকালব্যাপী সমাজে চলা নারীর ভূমিকা পরিবর্তনের সূচনাও করেছিল। এই সব পরিবর্তনের মাঝে নতুন করে এক বিতর্কেরও জন্ম হলো এই যে, সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা কতোখানি প্রাকৃতিক আর কতোখানি অর্জিত? " নারীর নারী বৈশিষ্ট্য সমাজসৃষ্ট, আদতে নারী এবং পুরুষের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই" - এ ধারনা নারীবাদী এবং আরো কিছু চিন্তাবিদদের কল্যাণে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিলো প্রায় তবে এটাও ঠিক যে, নারী-পুরুষের মধ্যে জৈবগত কিছু পার্থক্য আছে এবং সেটা মূলত জন্মগত,এসব নর-নারী কারো অর্জিত নয়।
সামাজিকভাবে পুরুষ আধিপত্যের চাপ সত্ত্বেও এখন নারীরা ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে ঘরে-বাইরে সর্বত্র। যদিও একজন নারীর জীবনের অভিজ্ঞতা আর একজন পুরুষের জীবনের অভিজ্ঞতা কখনো এক হয়না। আর তাই অভিজ্ঞতা ভিন্ন হওয়ার কারণে তাদের ব্যবহার এবং চিন্তাভাবনায়ও পার্থক্য আছে তারপরও এখন নারীরা নিজেদের যোগ্যতায় পুরুষদের পাশে জায়গা করে নিচ্ছে " বর্তমানে নারী-পুরুষের বৈষম্য কমে আসছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাবে - এমনটা যদিও অনেকে ভাবছেন তবে এটাও ঠিক যে, নারীরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে তবে পুরুষের আধিপত্য থেকেই যাবে পরিবারে সমাজে তা কখনো পুরোপুরি লোপ পাবেনা"।
আবার, এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে - কিছু কিছু কাজে পুরুষেরা নারীদের চেয়ে দক্ষ। শারিরীক পরিশ্রমের সকল কাজ এখনো পুরুষরাই করে এবং সভ্যতা যতই এগিয়ে যাক শারিরীক পরিশ্রমের কাজ কখনো একেবারে ফুরিয়ে যাবেনা। আবার শিকারি এবং খাদ্য সংগ্রাহক হিসাবে পুরুষ কোটি কোটি বছর ধরে কাজ করছে যা তাদের জেনেটিক কোডে এই বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমে বয়ে চলেছে। বয়ঃসন্ধির পরে মেয়েরা শারীরিকভাবে পরিপূর্ণতা ছেলেদের চেয়ে আগে পেলেও, ছেলেদের হৃৎপিণ্ড মেয়েদের চেয়ে বড়, মাংসপেশি সুগঠিত, ফুসফুসের সামর্থ্য বেশি, বিশ্রামের সময় হার্টবিট মেয়েদের তুলনায় কম। এগুলো পুরুষদের মেয়েদের তুলনায় অধিক শারীরিক পরিশ্রম করার সক্ষমতা দিয়েছে।
আধুনিক সমাজে নারীরা কিভাবে পরিবারের অভিভাবক হিসাবে এগিয়ে আসছে ?
আধুনিক কালে ও সমাজে পুরুষের ভূমিকা দিন দিন কমে আসছে এর বিপরীতে নারীরা এগিয়ে যাচছে এবং তারা লক্ষ্য করেছে আদিম সমাজে তাদের যেসব অদক্ষতার কারনে পুরুষেরা নারীদের অধীনস্থ করে রেখেছিলো , সেই অদক্ষতাই আধুনিক সমাজে নারীদের জন্য দক্ষতা হয়ে ফিরে এসেছে এবং তাকে পুরুষের চেয়ে অধিকতর সুবিধা দিচ্ছে। আদিম সমাজে পুরুষ যখন বল্লম, বর্শা নিয়ে খাবার জোগাড় করতে ঘরের বাইরে গেছে, নারী তখন ঘরে বাচ্চা-কাচ্চাদের যত্ন নিয়েছে। এর সাথে গৃহস্থালি কর্ম হিসাবে অসংখ্য কাজ তাদের করতে হয়েছে । ফলে, সে তার অসংখ্য কাজকে গুরুত্ব অনুসারে ভাগ করেছে এবং এর মাধ্যমে সে তার দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করার চেষ্টা করেছে। একই সাথে সামাজিক দায়িত্ব হিসাবে কথা বলার সক্ষমতাকে বা যোগাযোগের দক্ষতাকে সে উন্নত করেছে। আমরা জানি যে কথা বলায় মেয়েরা পুরুষের চেয়ে দক্ষ। একই ধরনের মৌখিক কাজ দেবার পর সমস্যা সমাধানের সময় নারীরা পুরুষের তুলনায় মস্তিষ্কের অনেক বেশি এলাকাকে ব্যবহার করে। মৌখিক যোগাযোগকে নারীরা যেভাবে সামাল দেয়, সেটা পুরোপুরি বায়োলজিক্যাল। এই পার্থক্য অর্জিত দক্ষতা থেকে আসে নাই এটা নারীদের জৈবিক দক্ষতা এবং এর সাথে বাচ্চাকাচ্চা ও অন্যদের যত্ন-আত্তি করার তাদের জন্মগত গুণাবলী যদি একত্রিত হয়, তবে সমাজ জীবনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়, আগে যেখানে পুরুষেরা আধিপত্য বিস্তার করে ছিলো, সেগুলো এখন নারীদের দখলে চলে যাবে এবং বাস্তবে হচ্ছেটাও তাই। পুরুষ তার আধিপত্য হারাচ্ছে, তার সাম্রাজ্য বেদখল হচ্ছে অন্যদিকে নারী হয়ে উঠছে অধিকতর কর্তৃত্বপরায়ন এবং তার হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে সুকঠিনভাবে সংকল্পাবদ্ধ।
আবার, নারীর শ্রবণেন্দ্রিয় পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী। সন্তান প্রতিপালনের জন্য খুব সম্ভবত এই দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষের তুলনায় নারীর শ্রবণ ক্ষমতা দ্বিগুণ বেশি। অস্পষ্ট বা দূরবর্তী শব্দকে পুরুষের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ বেশি চিহ্নিত করতে পারে নারী। শুধু শ্রবণেন্দ্রিয়ই নয়, নারীর স্পর্শানুভূতিও পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি বিকশিত। নারীর ত্বকে পুরুষের তুলনায় দশগুণ বেশি রিসেপ্টর রয়েছে এবং এই ত্বক স্পর্শে অনেক বেশি সংবেদনশীল। স্পর্শের সাথে সম্পর্কযুক্ত হরমোন অক্সিটোনিক এবং প্রোল্যাক্টিন এর উপস্থিতি তার স্পর্শ করার এবং স্পর্শকাতরতার চাহিদাকে বৃদ্ধি করে। এজন্য নারীরা ভালবাসার জনকে অনেক বেশি স্পর্শ করে থাকে, একই ভাবে তারাও ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে অহরহ স্পর্শ কামনা করে। পুরুষের ত্বকে রিসেপ্টর শুধু যে কম তাই নয়, চোখ মেলে তাকিয়েও সে নারীর তুলনায় কম তথ্য সংগ্রহ করে। বেশিরভাগ ছোটখাটো জিনিসই যেখানে পুরুষের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় সেখানে কিন্তু নারীদের শ্যেন চোখে সেগুলো মিস হয় না। পুরুষের শুধু দৃষ্টি নয়, তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের অবস্থাও করুণ নারীর তুলনায়। ময়লা থেকে আসা দুর্গন্ধ কিংবা বাথরুমে দুর্গন্ধের বিষয়ে তারা যে উদাসীন, সেটা আসলে নয়। আসল বিষয় হচ্ছে এই ঘ্রাণই তাদের নাকে সেভাবে যায় না, যেমনটা যায় মেয়েদের নাসারন্ধ্রে। পুরুষের বায়োলজিক্যাল প্রোগ্রামিং তাকে বাইরের জগতের জন্য ফিট করেছে, বাইরের বহু কিছু সে দেখে, যা এড়িয়ে যায় নারীর চোখে, কিন্তু স্বল্প গণ্ডীর এলাকাতে এলেই সে হয়ে ওঠে একজন অথর্ব মানুষ। তখন সূক্ষ্ণ বিষয়গুলো তার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, নারীর ক্ষেত্রে তা হয় না।
এটা নিশ্চিত যে, গড়পড়তায় পুরুষের মস্তিষ্ক নারীর চেয়ে অপেক্ষাকৃত বড়। তবে, এটাও মনে রাখা দরকার মস্তিষ্কের আকার বড় মানেই বেশি বুদ্ধিমান এমন নয়। জটিল কাজে, পুরুষেরা সাধারণত মস্তিষ্কের বাম দিকটাকে ব্যবহার করে। অন্যদিকে মেয়েরা মস্তিষ্কের দুটো অংশকেই ব্যবহার করে। মস্তিষ্কের দুই অংশ নারীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় সমানভাবে বিন্যস্ত। এর কারণে তাদের ভাষিক যোগাযোগ পুরুষের তুলনায় উন্নত মানের। পুরুষের বাম এবং ডান মস্তিষ্কের মধ্যে খুব অল্প সংখ্যকই ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ রয়েছে। এর ফলে মস্তিষ্কের দুই পাশের তথ্য এক পাশ থেকে অন্য পাশে যেতে পারে না। মানুষের আবেগের জন্য যে চিন্তা প্রক্রিয়ার জন্ম, সেটা ঘটে ডান মস্তিষ্কে। অন্যদিকে কথা বলার কেন্দ্র হচ্ছে বাম মস্তিষ্ক। এ কারণে পুরুষের পক্ষে আবেগের সুষ্ঠু প্রকাশ ঘটানো সম্ভব হয় না। এমনকি প্রি-স্কুলেও দেখা যায় বাচ্চা মেয়েরা বাচ্চা ছেলেদের তুলনায় তিন গুণ বেশি কথা বলে। এই অভ্যাস বয়সকালে গিয়েও পরিবর্তিত হয় না।
ছবি - istockphoto.com
নর-নারীর সম্পর্কে জটিলতা কেন তৈরী হচছে -
মানব সমাজের ইতিহাস (শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ) জুড়ে সমাজে নারী-পুরুষের ভূমিকা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং এখনো হচছে। আধুনিক সমাজে জ্ঞান অর্জন করা ও আত্মনির্ভরশীল হওয়া শুধু পুরুষদের নয় সকল নারীদেরও লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। আবার, আধুনিক সমাজে নারীদের সমানিধাকার (যা নারীদেরকে পুরুষের সমান অধিকার-মর্যাদা দেয়ার জন্য ও নর-নারী সবার জন্য যেন সমান সুযোগ দেয় তার স্বীকৃতি আদায়ের জন্য) আন্দোলনের ফলে সমাজে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়, যা আমাদের সমাজের প্রচলিত রীতি-নীতি ও অভ্যেসের কারণে ঘটে থাকে। অর্থনৈতিক পরিবর্তন ও নারীবাদী আন্দোলনের ফলে এখন দেখা যায় পুরুষরা কর্মক্ষেত্রে নারীদের সাথে প্রতিযোগিতা করছে, যেখানে ঐতিহ্যগতই ভাবে নারীর ভূমিকা আলাদা ছিলো। কিছু কিছু বড় কর্পোরেশনে দেখা যায় কাজ পাওয়ার শর্ত কর্মীর মেধা, সেখানে প্রচলিত লিঙ্গ বৈষম্য নেই। লিঙ্গ ভূমিকার কিছু ভালো ও কিছু খারাপ আমাদের সমাজের পুরুষদের কর্মক্ষেত্রের ওপর পড়ে ( মহিলাদের ক্ষেত্রেও একই, তবে ভিন্ন ভাবে)। একইভাবে সম-অধিকারের দাবীর ফলে শিক্ষা,স্বাস্থ্য-যত্ন, রাজনীতি, পিতৃত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে কিছু কিছু এলাকায় পুরুষ বিরোধী প্রবণতা প্রাধান্য পাচ্ছে, ফলশ্রুতিতে মেয়েদের জন্য কিছু কিছু জায়গায় বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচছে বা সে সুযোগ তৈরী করছে যা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলছে ।
ছবি - patheos.com
নর-নারীর এসব বৈষম্যে বা জটিলতা দূরীকরণে করণীয় কি -
নর-নারীর এই বৈষম্যের পদ্ধতি এক দিনে বা নিজে নিজেই সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে না। সেটাকে দূর করতে নর-নারী উভয়কে এক হয়ে কাজ করতে হবে। নারী-পুরুষ সভ্যতার অগ্রযাত্রায় সহযাত্রী। যত দ্রুত উভয়ে একসঙ্গে পা ফেলে এগোতে পারবে, তত দ্রুতই আমাদের সমাজ-পরিবার-দেশের জন্য মংগল হবে। তবে এটাও লক্ষ্যণীয় যে, একদিকে এই দেশেরই কিছু কুসংস্কারাছন্ন মানুষ এখনো নারীকে ভোগ্য পণ্য মনে করে এবং তারা নানাভাবে নারীর অগ্রযাত্রায় বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আবার অন্যদিকে বিশ্বায়নের পুঁজিবাদী চর্চা নারীকে পণ্যে রূপান্তরের চেষ্টা করছে তবে সেই বাঁধাকে জয় করছে নারীরা । কুসংস্কারের জাল ছিন্ন করে মানবিক সমাজ বির্নিমানে-উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে নারীরা এবং নিজেদের অধিকার নিয়ে সরব হচছে। সব প্রতিকূলতাকে জয় করে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে আপন যোগ্যতা ও মহিমায়। নিজেদের যোগ্যতায় নারীরা পুরুষের সঙ্গে নির্মাণ করছে সমতার সমাজ। আর নর-নারীর সেই সমতার সমাজ আমাদের নিয়ে যাবে শক্তিশালী মানবিক পৃথিবী নির্মাণের দিকে ৷আগামীর সুন্দর পৃথিবী নির্মাণে নর-নারীর ভুমিকা হবে সমানে সমান ।
নর-নারী একে অপরের প্রতিযোগী নয় সহযোগী। একের মাঝের কিছু দূর্বলতা-অপূর্ণতা অন্যের মাঝের কিছু সবলতা-পূর্ণতা তাকে পরিপূর্ণ করে তোলে। পুরুষ কঠিন আর তাই নারী কোমল । পুরুষ অস্থির আর তাই নারী স্থির। পুরুষ আগ্রাসী-আক্রমণাত্মক আর তাই নারী কুশলী-রক্ষণাত্মক ।এসব পারস্পরিক সুবিধা-অসুবিধা একসাথে মিলেই সৃষ্টিজগত পায় পূর্ণতা , গড়ে উঠে পরিবার-সমাজ ও তাতে মিলে সাফল্য। আর এসব কিছু তখনই সম্ভব হবে যখন সকল পুরুষ নারীর প্রতি তার বিশ্বস্ততার হাত বাড়িয়ে দিয়ে তাকে ভালবাসার চাঁদরে মুড়িয়ে দিবে এবং নর-নারী উভয়েই উভয়ের প্রতি ত্যাগ-সহযোগীতা-সহমর্মিতা ও ভালবাসার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে। এর ফলে দুনিয়া হবে শান্তির আবাস ও সমাজ-দুনিয়া হবে হানাহানি সংঘাতমুক্ত। পুরুষ পাবে শান্তি আর নারী পাবে স্বস্তি ও ভালবাসা।আর এসব কিছুই যার ফলে সম্ভব তা হলো নর-নারীর পারস্পরিক বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসা। পুরুষের একটু সহমর্মিতা ও ভালবেসে বাড়িয়ে দেয়া হাতের ফলেই নারী পেতে পারে ভরসা হয়ে উঠতে পারে সুন্দর পৃথিবী বির্নিমাণে পুরুষের সাথে সহযোদ্ধা।
পরিশেষে, রাসূল (সাঃ) বলেন, "তোমাদের মধ্যে উত্তম হলো ঐ ব্যক্তি, যে তার পরিবারের কাছে উত্তম। আমি আমার পরিবারের কাছে উত্তম।(তিরমিযী শরীফ , হাদীস নং- ৩৮৯৫)। আর উত্তম হওয়ার সবচেয়ে ভাল উপায় হচছে সবার সাথে ভাল আচরন।আলোচ্য হাদিসের মাধ্যমে আমরা সকলের সাথে ভাল আচরনের উপদেশ পাই। আর সেই ভাল আচরন আমাদের সকলের শুরু করতে হবে নিজ নিজ পরিবার থেকে এবং সকল নারীদের সাথেও। মানব সভ্যতা বিকাশে নারী-পুরুষের অবদান সমানে সমান। মানব সভ্যতা বিকাশে নারীর অবদান ও কৃতিত্বকে খাটো করে দেখার অবকাশ নেই । কারণ, এ দুনিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। আর তাই তাদের বাদ দিয়ে সামাজিক কাঠামো ও সামাজিক উন্নয়ন তথা মানবোন্নয়নের কোনোটিরই কল্পনা করা যায় না। নর-নারীর মিলনে সমাজের অগ্রযাত্রা অব্যহত থাকুক ,জয় হোক মানুষের-মানবতার , সুন্দর হোক পৃথিবী । জয়ী হোক পুরুষ ও নারী হউক সম্মানীত।
তথ্য সূত্র : আল কোরআন,হাদীস, নারী নিউজ ও Physiology of women ও উইকিপিডিয়া।
=========================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ২৪ - " নারীর প্রতি সদ্ব্যবহার / ভাল আচরন ও শিষ্টাচার " Click This Link
মানব জীবন - ২৩ - " নারী " Click This Link
মানব জীবন - ২২ -" স্ত্রী / সংগী অদল-বদল করে যৌনসহবাস" Click This Link
মানব জীবন - ২১ -"পরকীয়া ও লিভ টুগেদার " Click This Link
মানব জীবন - ২০ -"সমকামীতা বা সমকামী বিয়ে" Click This Link
মানব জীবন - ১৯ - " আত্মসম্মান-নীতি-নৈতিকতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৮ - " ধর্মহীনতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৭ - " ধৈর্য " Click This Link
মানব জীবন - ১৬ -" সততা " Click This Link
মানব জীবন - ১৫ - " লজ্জা " Click This Link
মানব জীবন - ১৪ - "পর্দা " Click This Link
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link