ছবি - unsplash.com
"সৃষ্টি থেকে শেষ অবধীর কেন্দ্রে রয়েছে নারী
হাজার রূপ একটি নারীর, যেন রহস্যের ভান্ডারী,
কখনো মা, বোন, নানী বা প্রিয়তমা স্ত্রী
তাদের জন্যই সুন্দর ধরনী, স্রষ্টার করিগরী"।
নারী স্রষ্টার এক বিস্ময়কর সৃষ্টি। যদিও " নর-নারী " - এ দুয়ের মিলিত রুপই সুন্দর ও সাফল্যময় এই পৃথিবী। উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টাতেই পৃথিবী আজকের এই অবস্থানে এসেছে। মহান স্রষ্টা উভয়কে সৃষ্টি করছেন পারস্পরিক এবং দুনিয়াবাসীর কল্যাণের জন্য এবং উভয়ের মাঝের সম্পর্ক করে দিয়েছেন সহযোগীতামূলক। যদিও স্রষ্টা প্রথমে আদি মানব হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করছিলেন। হজরত আদম (আঃ) সৃষ্টির পর এক দীর্ঘ সময় পর্যন্ত একাকী জীবনযাপন করতে থাকলেন। কিন্তু তিনি জীবনযাপনে এবং সুখ ও শান্তিতে এক ধরনের নির্জনতা ও একাকীত্ব অনুভব করছিলেন। দেখা গেলো, তাঁর স্বভাব ও প্রকৃতি কোনো সঙ্গী ও সাথীর অন্বেষণ করছে। তাই আল্লাহপাক হজরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন। হযরত আদম (আঃ) নিজের জীবনসঙ্গী পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করলেন।ইসলাম ধর্মমতে, হজরত হাওয়া (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে হজরত আদম (আঃ) এর পাজরের হাঁড় দিয়ে। হযরত হাওয়া (আঃ) সৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেন, " যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন, আর বিস্তার করেছেন তাদের দু'জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী"।(সুরা নিসা, আয়াত ১)।
ছবি - parenting.firstcry.com
হজরত হাওয়ার সৃষ্টি প্রসঙ্গে অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, "তিনিই তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে সে তার কাছে শান্তি পায়। তারপর যখন সে তার সাথে সংগত হয় তখন সে এক হালকা গর্ভধারণ করে এবং এটা নিয়ে সে অনায়াসে চলাফেরা করে। অতঃপর গর্ভ যখন ভারী হয়ে আসে তখন তারা উভয়ে তাদের রব আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, যদি আপনি আমাদেরকে এক পূর্ণাঙ্গ সন্তান দান করেন তাহলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকব"। (সুরা আরাফ,আয়াত ১৮৯)।
হযরত হাওয়া (আঃ) সৃষ্টি সম্পর্কে হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা সূত্রে ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন, " নবী করিম (সাঃ) বলেছেন , " তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও, কারণ নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। পাঁজরের মধ্যে উপরের হাড্ডি সবচেয়ে বেশী বাঁকা, যদি তা সোজা করতে চাও ভেঙ্গে ফেলবে, ছেড়ে দিলেও তার বক্রতা যাবে না। অতএব নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামী হও।(বুখারি শরীফ, হাদিস নং - ৩৩৩১, মুসলিম শরীফ - হাদিস নং ১৪৭০)।
অর্থ্যাৎ, আল কোরআন ও হাদীস অনুসারে নারীর সৃষ্টি হয়েছে পুরুষেরই অংশ থেকে উভয়ের জন্যই উভয়েরই নিকট শান্তি-কল্যাণ ও মংগল নিহিত রেখেছেন।
স্রষ্টার পরিষ্কার ঘোষনা থাকার পরেও দুনিয়ার বেশীরভাগ নর-নারী নিজেদের পারস্পরিক সম্পর্ককে সহযোগীতা মূলক না ভেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভাবে এবং উভয়ে উভয়কে শান্তি-কল্যাণের সংগী হিসাবে না পেয়ে , নারী পুরুষকে পেয়ে থাকে শোষণ নির্যাতনের মূর্তিমান আতংক হিসাবে আবার পুরুষ নারীকে বিবেচনা করে থাকে শুধুমাত্র ভোগের অনুষংগ ও সেবাদাসী হিসাবে। অথচ আমরা যদি খুব সাধারন ভাবে আমাদের পরিবার সমাজের দিকে একটু গভীরভাবে নজর দেই তাহলে যে সব নারীদের আমরা দেখি , তা হলো -
ছবি - parents.com
১ । দাদী / নানী - " দাদী - বাবার মা এবং " নানী - মায়ের মা " কিংবা পরিবারের সবচেয়ে বয়জ্যেষ্ঠ কিংবা সম্মানীয় নারী যার কথাই সবার শেষ কথা। পরিবারের ছোটদের সব দাবী-দাওয়া পূরণের ও গল্প বলার এক জীবন্ত কিংবদন্তী।
২। বোন - বড় / ছোট - পরিবারের বড় বোন , মায়ের পরেই যার স্থান আর ছোট বোন - যে ভাইদের প্রাণ । যাদের একটু হাসি-খুশির জন্য ভাইয়েরা যে কোন কঠিন কাজ করতেও পিছপা হয়না ।
৩। চাচী / খালা - উভয় পরিবারেরই সম্মানীয় এবং ভালবাসার জন।
৪। মা - এ দুনিয়াতে একজন সন্তানের জন্য তার সব কিছু । তার জন্ম-বেঁচে থাকা- বেড়ে উঠা-আদর-ভালবাসার ও ভরসার স্থান। আর তাইতো মহান আল্লাহপাক মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত নির্ধারিত করে রেখে নারীকে করেছেন চূড়ান্তভাবে সম্মানীত।
৫। স্ত্রী - পরিণত বয়সের একজন পুরুষ এবং একজন নারীকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহনের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবন শুরু করে এবং সেই (স্ত্রী) হয়ে উঠে তার জীবনের সবচেয়ে কাছের জন-ভালবাসার-ভরসার জন এবং পারিবারের প্রাণকেন্দ্র - কেন্দ্রস্থল বা নিউক্লিয়াস। যাকে কেন্দ্র করেই পুরো পরিবার এবং সাফল্য আবর্তিত হয় । যে হাসলে পুরো পরিবার হাসে, যার মন খারাপ থাকলে পুরো পরিবারেই তার প্রভাব পড়ে এবং যার সহযোগীতার ফলেই একটি পরিবার ও তার সদস্যগণ পেতে পারেন দুনিয়াতে বেহেশতের শান্তি। আবার যার একটু খারাপ আচরনেই যে কারো জীবন ও পরিবার হয়ে উঠতে পারে নরকের আধার ।
ছবি - shutterstock.com
৬। কন্যা - মায়ের নাড়ী ছেড়া ধন বাবার চোখের মনি ও রাজকণ্যা (সকল বাবাদের কাছেই তার কন্যা রাজকণ্যা হিসাবে বিবেচিত তার রাজ্য থাকুক কিংবা আর্থিক অবস্থা যাই হোক না কেন) যে হাসলে পুরো পরিবার হাসে আর যে কাঁদলে পুরো পরিবার দুঃখে ভাসে।
৭। শাশুড়ি (ছেলের / মেয়ের ) - ছেলের শাশুড়ি তথা শশুরবাড়ী মধুর হাড়ী তথা আদর-ভালবাসার-খাবার দাবারের অফুরান উৎস হলেও মেয়ের শাশুড়ি মানে হলো বিধি-নিষেধের বেড়াজাল,পারিবারিক অশান্তি ও কূটকচালীর মূল কারন যার মূল লক্ষ্যই থাকে কি করে ছেলের বউকে কষ্টে রাখা যায় এবং ছেলে-ছেলে বউয়ের মাঝের সম্পর্ককে তিক্ত করে তুলা যায় (এর ব্যতিক্রম ও আছে)।
আমাদের পরিবার-সমাজ ও আশে-পাশের এ নারীদের বাইরেও আরো কিছু নারী সম্পর্ক আছে এবং যুগে-যুগে,কালে-কালে সে সকল নারীকে একেক জন একেক ভাবে মূল্যায়ণ করেছে। যেমন - রাজা-বাদশা-জমিদারদের কাছে ও তাদের হেরেম শরীফে নারীদের মূল্যায়ণ করা হতো শুধুমাত্র ভোগের সামগ্রী হিসাবে। তাদেরকে ডাকা হত নর্তকী-বাঈজী-রক্ষিতা- উপপত্নী হিসাবে । যেখানে তাদের মানবিক মূল্যায়ণ না হয়ে ভোগের সামগ্রী হিসাবেই মূল্যায়ণ হত বেশী।
কালের পরিক্রমায় রাজা-বাদশা-জমিদারী প্রথা বিলোপ সাধন হলেও এবং মানুষ আধুনিক কালে অনেক বেশী শিক্ষিত ও সচেতন হলেও এখনো কারো কারো কাছে নারীর অবস্থানের খুব বেশী পরিবর্তন হয়নি। আর তাইতো এখনো জীবনের জটিলতায় নারীকে দেখা যায় নর্তকী-রক্ষিতা-তালাকপ্রাপ্তা সহ নানা নির্যাতিত-নিপিড়ীত রূপে।এখনো কেউ কেউ নারীকে খুজে পান লোভী-ছলনাময়ী এবং বিশ্বাসভংগকারী হিসাবে আবার কেউ পান দেবী হিসাবে। আর তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন ,
" নারী নাহি হতে চায় শুধু একা কারো,
এরা দেবী,এরা লোভী, যত পুজা পায় এরা চায় তত আরো,
ইহাদের অতিলোভী মন
একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়,
যাচে বহুজন ------------------ "
এই যে কবি বলেছেন , " নারী লোভী " আবার অনেকে বলেছেন, "পদার্থ বিদ্যা-রসায়ন বিদ্যা ও আরো কঠিন কঠিন বিষয় বুঝা সহজ কিন্তু নারীকে বুঝা বা নারীর মন বুঝা সহজ নয়" - নারী কি আসলেই এতটা দূর্জ্ঞেয়-দূর্বোধ্য ? এগুলি কি নারীর প্রতি পুরুষের আসলেই সঠিক ধারনা না নারীর প্রতি একধরনের অপবাদ ?
এই যে একেক জনের একেক রকম মুল্যায়ণ !!!!!!!!! (নারী দেবী/ নারী লোভী) এ পুরুষদেরই নিজেদের স্বার্থে এবং তাদের প্রয়োজনেই এসব উপাধি নারীকে দিয়েছে তখনই - যখন যেটাতে তার বা তাদের (পুরুষদের) সুবিধা হয়েছে। নারী নিজেকে কখনোই না দেবী হিসাবে দেখতে চায় না কারো পুজা চায় । আবার কোন নারীই চায়না লোভী হিসাবে নিজেকে কল্পনা করতে ও দেখতে । সে সাধারন ভাবেই আপনজন, পরিবারের বাকী সদস্যদের নিয়ে মিলে-মিশে-ভালবেসে বেঁচে থাকতে চায় । এর বাইরে যদি আমরা নারীর বাকী অবস্থান (লোভী-ছলানময়ী-নর্তকী-রক্ষিতা) এর পিছনের কারন অনুসন্ধান করি তাহলে দেখতে পাব যে প্রতিটা নারীর এ করুণ অবস্থান ও কাহিনীর পিছনে একজন বিশ্বাসঘাতকের হাত রয়েছে । আর সেই বিশ্বাসঘাতক একজন পুরুষ, যে সেই অসহায় নারীকে আজকের এই অবস্থান নিয়ে আসার পেছনের মূল কারিগর।অথচ সে থেকে যাচছে পর্দার আড়ালে আর কাজের ভূক্তভোগী হচছে নারী। একজন নারী যতটা কঠিন পরিস্থিতিরই মুখোমুখি হউক না কেন কখনোই তার আপনজনদেরকে,তার পরিবারকে ছেড়ে যেতে চায়না, না চায় কোন খারাপ কাজে জড়াতে কিন্তু লোভী পুরুষ এবং তার লোভের শিকার হয়ে যখন একজন নারী অসহায় হয়ে কোন অন্যায়ে জড়িয়ে পড়ে তখন নারীকেই দোষ দেয়া হয় অথচ যে বা যারা তাকে এ পথে চলতে বাধ্য করেছে তারা থেকে যায় ধরা-ছোয়ার বাইরে।
আসুন দেখি নারী আসলে কি -
ছবি - keckmedicine.org
১। নারী বংশগতির ধারক-বাহক -
এ দুনিয়াতে নতুন প্রাণের জন্ম এবং মানব জাতির বংশগতির ধারক-বাহক ও মানুষের ধারাবাহিকতা রক্ষা হয় নারীর মাধ্যমে। সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নারী এ দুনিয়াতে মানব জাতির ধারাবাহিকতা করে চলছে পৃথিবীর শুরু থেকে । নারী যদি সন্তান জন্মদান না করত তাহলে বহুপূর্বেই এ দুনিয়া থেকে মানব জাতি বিলীণ হয়ে যেত।আর এ সন্তান জন্মদান করতে গিয়ে নারী অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা পোহায় হাসি মুখে।
২। নারী ভালবাসার লোভী -
প্রকৃতিগত ভাবে নারী আসলেই খুব বেশি লোভী কিংবা স্বার্থপর নয় । কারন, সৃষ্টিকর্তা তাদের সৃষ্টিই করেছেন একটি কোমল মন দিয়ে। তবে তাদেরকে একটু ভালবাসার জন্য লোভী বলা যেতে পারে। তাদের ভালোবাসার প্রতি একটু লোভ থাকে সবসময়। এ দিকটা ঠিকঠাক হলে তাদের ভুলিয়ে রাখা যায় সারা দুনিয়া থেকে এবং তাদেরকে পাওয়া যায় সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু-সহযোগী-ভালবাসার মানুষরুপে । তবে ভালবাসার জায়গায় অভাব রেখে জীবনে বাকী সব কিছুর পাহাড় বানিয়ে দিলেও তাদের পোষ মানানো যায় না। তারা শুধু একজায়গায়ই দূর্বল ও লোভী - তা হলো ভালবাসায় । বাকী সবজায়গায় তারা পুরুষের কাছে অজেয়-দূর্জ্ঞেয়-স্বার্থপর।
৩। নারী দুঃখবিলাসী ও অভিমানী -
নারীরা একটু দুঃখবিলাসীও হয়। প্রিয় মানুষটার দেওয়া হালকা আঘাতেই চোখের কোনে বৃষ্টি নামাতে তারা খুব একটা দেরী করে না এবং পারদর্শীও। তারা অভিমান প্রিয়ও হয়। তারা চায় দিনের মধ্যে কয়েকশো বার কেউ তাদের অভিমান ভাঙ্গাক। তারা এও চায় কেউ তাদের কারনে-অকারনে খুব বেশি হাসাক। জোর করে হাসাক এবং তাদের বুঝোক,বুঝার চেষ্টা করুক । তাদের রাগটাকে সম্মান করুক,মানিয়ে নিক। আবার তাদের রাগী চোখ দুটিকে কিছুটা ভয়ও পাক । তাদের অভিমানী কন্ঠস্বরকে কেউ খুব বেশি ভালো বাসুক আগলে রাখুক এবং তাদের ভেজা কন্ঠ শুনে কেউ দুঃখে অস্থির হয়ে পরুক , এতে তাদের হয়তো কিছুটা আনন্দও হয়।
৪। নারী আহ্লাদী -
কিছু মানুষের কাছে নারীর চোখের পানি-অভিমান এসব আচরণ বিরক্তিকর, ন্যাকামি বলে মনে হতে পারে। তবে যারা এগুলিকে যত্নসহকারে গ্রহণ করে এবং প্রবল আহ্লাদে মেনে নেয় নারী তার সারা জীবন এমন কাউকেই খুঁজে ফেরে এবং যদি এমন কারো দেখা তার জীবনে মিলে তবে নারী তার জন্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ আর্শিবাদ রুপে আর্বিভূত হয়।
৫। নারী অবুঝ একটি বাচচা যার রয়েছে একটি কোমল মন -
একজন নারী সারাজীবনই বহন করে চলে একটি সহজ-সরল-নিষ্পাপ কোমল একটি মন বয়স যাই হোক না কেন। যদিও সংসারের নানা ঘাত-প্রতিঘাতে ও সময়ের সাথে সাথে এর অনেকটাই পরিবর্তন হয় তবে বেশীরভাগ সময়েই তারা কিছুটা বাচ্চাদের মতোই রয়ে যায়।বড় হয়ে গেলেও বাচ্চামোটা তাদের ছাড়ে না। বাচ্চা যেমন তার মায়ের কোলে চুপটি করে থাকে ঠিক তেমনি একটা সময়ে তারাও প্রিয় মানুষটির বুকে সেভাবেই মুখ লুকাতে চায়। তারা চায় মায়ের মতো করেই কেউ হোক, যে কি না শুধু তাদের ভালোটাই চাইবে। যেখানে সেই ছোট্টবেলাটার মতোই সব কিছু জমা রাখা যাবে একটা বিশ্বস্ত জায়গায় বিশস্ত বুকে।
ছবি - usatoday.com
৬। নারী অফুরন্ত বায়না, অভিমান ও ভালবাসার উৎস -
নারী হেসে ওঠার আগে পৃথিবী ছিলো অন্ধকার-বিষণ্ণ, বাগান ছিলো জঙ্গল, আর পুরুষ ছিল সন্ন্যাসী। নারী হেসেছে তার সাথে সাথে প্রকৃতি হেসেছে ও পৃথিবী হয়েছে আলোকময় আর পুরুষ হয়েছে সংসারী।নারী এমনই একজনকে চায় - যার চোখে তার জন্য খুব স্নেহ মিশে থাকবে,সে ঘুমিয়ে গেলে তার ঘুমন্ত মুখটি দেখে যে অজান্তেই হাসবে এবং বলবে পাগলিটা সারাদিন কত বায়নাই না ধরে,কত ছুটাছুটিই না করে।অকারনেই কত হাসে, কত কাঁদে। প্রিয় মানুষটি অজান্তেই ডুবে যাবে তাকে নিয়ে ভাবনার জগতে ঠিক যেমনটা করে মায়েরা। যা কিছুই হয়ে যাক, মায়েরা যেমন কখনো জেনে বুঝে ক্ষতি করবে না কষ্টও দিবে না ঠিক তেমনি তারা এমন ই ভরসা রাখতে চায় তার পাশের মানুষটির উপর , তার ভালবাসার মানুষের কাছে । এদিক থেকে দেখলে তারা একটু বোকাও এবং তারা এরকম বোকাই থাকতে চায় যদিনা পরিবেশ ও পরিস্থিতি তাদের পরিবর্তন হতে বাধ্য করে । যদি কখনো তাদের এ ভরসার বিশ্বাসটুকু হারিয়ে ফেলে তখনই তারা একান্ত অসহায় হয়ে পরে ।
আবার রাগ-অভিমানের দিক দিয়ে তারা একটু বেশীই স্বার্থপর । এ সুযোগটা তারাই বেশি পেতে চায় সবসময় আপনার ভালবাসার মানুষের জন্য ও তার সাথে । সব সময়ই সে আশা করে সে ছোট-খাট বিষয়েও রাগ করবে , অভিমানের পাহাড় চুড়ায় উঠে বসে থাকবে আর তার ভালবাসার জন ভালবেসে আদর করে তার রাগ-অভিমান ভাংগাবে। এ ক্ষেত্রে দোষ যদি তারও হয় তবুও সে তাই আশা করে।
নারী কি দানবী ? নারী কি ধ্বংসের উৎস -
নারী মানেই সহজ-সরল একটু কোমল, শান্ত এটা সবসময় সঠিকও নয়। যদিও নারীদের বলা হয়ে থাকে কোমলতা, ভালবাসা ও শান্তির প্রতীক। প্রকৃতিই তাদের এই বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়েছে। কিন্তু এর ব্যতিক্রমও কম নেই। পরিবেশ - পরিস্থিতি অনেক সময়ই সেই কোমল নারীকেই করে তোলে হিংস্র ,ভয়ংকর। আর এসবই হয় যখন নারী তার ভালবাসা-বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে কিংবা আপনজনদের কাছ থেকে প্রতারিত হয়।
যদিও দুনিয়ার অনেক বড় বড় ঘটনা-দূর্ঘটনা নারীকে কেন্দ্র করে এবং তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়েছে তবে এটাও ঠিক এসবের পিছনে সেই নারী থেকে পুরুষের স্বার্থপরতা-লালসা ও ভোগবাদী মানষিকতাই দায়ী ছিল বেশী। আমরা যদি " হেলেন অব ট্রয় বা ট্রয়ের যুদ্ধ " এর ইতিহাস আর মিথোলজি দেখি , উভয় মাধ্যমই ট্রয় নগরী ধ্বংসের জন্যে হেলেনকেই দায়ী করে থাকে। ট্রয়ের যুদ্ধ এবং এর ধ্বংসের ঘন মেঘের দায় বরাবর গিয়ে পড়ে হেলেনের ওপর। কিন্তু কেনো?
হেলেন অস্বভাবিক রকমের সুন্দরী ছিলেন এটা তার অপরাধ ছিল নাকি ভালোবেসে ছিলেন এক সুঠামদেহী সুদর্শন যুবককে ও পালিয়েছিলেন প্রেমিকের হাত ধরে,এটাই কি তার অপরাধ ? তার প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপের পূনরাবৃত্তি ঘটেছিলো বারবার। এটাও কি তার অপরাধ? ট্রয় ধ্বংসের দায় কি শুধু নারীর/হেলেনের ? ৩ হাজার বছর আগে গ্রীক নৃপতিরা কি নীল সাগরে ১ হাজার তরী ভাসিয়েছিল শুধুমাত্র এক হেলেনের জন্য ? রাজ্য জয়ের লোভ কি তাদের ছিলনা ? দৃষ্টির অন্তরালে হেলেনের নারী মানসের অব্যক্ত অন্তর্বেদনার কথা কেনো উঠে আসে নি ইতিহাসের পাতায়? ইতিহাস কি এখানে একচোখা আচরণ করেনি?
আবার , উপ মহাদেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা " লংকা কান্ড তথা রামায়ন " এর জন্য সীতাকেই দায়ী করা হয় । এখানেও সীতা সুন্দরী ছিলেন এটা তার অপরাধ ছিল ? এই যে রাম-সীতার বনবাস - এর পিছনে কি সীতার হাত না রাজনীতি দায়ী ? না সুপুরুষ,সুগঠিত রাবন রাজার লোভই ঘটনার পিছনের মূল কারন ছিল ? অথচ ইতিহাস এত বড় ঘটনার জন্য সীতাকেই দায়ী করে থাকে । আবার সবশেষে সেই অপহরীত সীতাকেই দিতে হয় সতিত্বের অগ্নিপরীক্ষা । এর পরেও মানুষের কথায় রাম সকলের সম্মুখে সীতাকে পুনরায় অগ্নিপরীক্ষা দিতে বললে অপমানিতা সীতা মাতা ধরিত্রীকে আহ্বান জানান ,মাটি বিদীর্ণ হয়। দেবী ধরিত্রী উঠে এসে সীতাকে নিয়ে পাতালে চলে যান। এই যে বলিদান , এতে সীতার দায় কতটুকু ? এর পুরো ভূক্তভোগী সীতাই অথচ সীতাকেই দায়ী করা হয় লংকা কান্ডের জন্য।
এদিকে আবার কিছু প্রেমিক পুরুষ এই নারীকে ভালবেসেই তাদের অমর করার চেষ্টা করেছেন। যেমন - মোঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজের প্রতি ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ নির্মাণ করেন তাজমহল । এই তাজমহল যতটা না মমতাজকে অমর করেছে তার চেয়ে বেশী প্রচার হয়েছে শাহজাহানের। একই ঘটনা রাজলক্ষী-শ্রীকান্ত, শিরী-ফরহাদ, লাইলী-মজনু র ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।
ছবি - unsplash.com
নারীরা কখনোই চায়না তাকে ভালবেসে কেউ যুদ্ধ বাঁধাক, লংকা কান্ড ঘটাক কিংবা তাজমহল নির্মাণ করুক । এসবই প্রেমিক পুরুষের তার প্রেমিকার প্রতি আবেগের-স্বার্থপরতার বহিঃপ্রকাশ। নারী দুনিয়ার সবার কাছে পরিচিত হতে চায়না ,চায়না সারা দুনিয়ার সবার ভালবাসা । বেশীরভাগ নারীই চায় শুধু একজনকে ভালবাসতে , এমন একজনকে যে তার আবেগকে মূল্য দিবে ,সুখে-দুঃখে সারাজীবন আগলে রাখবে বুকের মাঝে এবং রক্ষা করবে সকল প্রতিকূলতা থেকে আর থাকবে সারাজীবন বিশ্বস্ত তার প্রতি ।
কেউ যদি কোন নারীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকে তাহলেই আমৃত্যু সেই নারীও সেই পুরুষের নিকট থাকবে ততটাই বিশ্বস্ত যতটা থাকে একটি প্রভুভক্ত কুকুর তার মালিকের প্রতি, যে কিনা জীবন দিয়ে হলেও মালিক কে রক্ষা করতে চেষ্টা করে সবসময়। আর জীবনে তা সে নারী কিংবা পুরুষ যেই হোক না কেন সে যদি বিশ্বস্ত না হয় তবে সে সাপের চেয়েও খল হায়েনার চেয়েও ভয়ংকর। কারন , এ দু প্রাণীকে যেমন কখনোই বিশ্বাস করা যায়না ঠিক তেমনি অবিশ্বস্ত সংগী-সংগীণিও ভয়ংকর এবং কখনো বিশ্বাসযোগ্য নয় ও সর্বদা পরিতাজ্য - তা যতই ভালবাসার জনই হোক না কেন ।
ছবি - patheos.com
কাজেই , যখনই নারী কোন পুরুষকে ভালবেসে , আকড়ে ধরে বাঁচতে চাইবে এবং কোন পরিবারের ভালবাসার সেই পুরুষও সেই নারীকে তার বিশ্বস্ততার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ভালবাসার চাঁদরে তাকে মুড়িয়ে দিবে এবং উভয়েই উভয়ের প্রতি ত্যাগ-সহযোগীতা-সহমর্মিতা ও ভালবাসার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে তখনই সে পরিবার হয়ে উঠবে এ দুনিয়ায় বেহেশতেরই এক টুকরা তথা শান্তির আবাস ও সমাজ-দুনিয়া হবে হানাহানি সংঘাতমুক্ত। পুরুষ পাবে শান্তি আর নারী পাবে স্বস্তি ও ভালবাসা।আর এসব কিছুই যার ফলে সম্ভব তা হলো বিশ্বস্ততা ও ভালোবাসা। পুরুষের একটু সহমর্মিতা ও ভালবেসে বাড়িয়ে দেয়া হাতের ফলেই নারী পেতে পারে ভরসা, হয়ে উঠতে পারে সুন্দর পৃথিবী বির্নিমাণে পুরুষের সাথে সহযোদ্ধা।
নারীর এত সব পজেটিভ দিক থাকার পরেও আজ এ একবিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীকে নির্যাতিত-নিগৃহীত হতে হয় তার পরিবারে।সমাজে করা হয় নারীর অবমূল্যায়ণ, নারীকে হতে হয় এসিড সন্ত্রাস কিংবা ধর্ষনের শিকার। এখনো নারী হয় যৌতুকের বলি । আর তাইতো কবি বলেছেন, "নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার, কেন নাহি দিবে অধিকার, - হে বিধাতা "?
এর সাথে মিলিয়ে বলতে মন চায়, " নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার, কেন নাহি দিবে অধিকার - হে পুরুষ"?
তথ্য সূত্র : উইকিপিডিয়া, হাদীস এবং আল কোরআন ও প্রজন্ম ফোরাম।
=========================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ২২ -" স্ত্রী / সংগী অদল-বদল করে যৌনসহবাস" Click This Link
মানব জীবন - ২১ -"পরকীয়া ও লিভ টুগেদার " Click This Link
মানব জীবন - ২০ -"সমকামীতা বা সমকামী বিয়ে" Click This Link
মানব জীবন - ১৯ - " আত্মসম্মান-নীতি-নৈতিকতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৮ - " ধর্মহীনতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৭ - " ধৈর্য " Click This Link
মানব জীবন - ১৬ -" সততা " Click This Link
মানব জীবন - ১৫ - " লজ্জা " Click This Link
মানব জীবন - ১৪ - "পর্দা " Click This Link
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link