ছবি - rohaniways.com
মানুষের জীবনে নিরাপদ যৌনতা, জন্মের পবিত্রতা কিংবা বংশানুক্রমিক ধারাবাহিকতা রক্ষার অন্যতম মাধ্যম হলো বিবাহ। বিবাহ হলো এমন একটি মাধ্যম ,যার ফলে মিলে দুটি নর-নারীর একসাথে থাকার, নিরাপদ যৌনতার , বংশ রক্ষার সামাজিক ও ধর্মীয় স্বীকৃতি। সকল ধর্মে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানেও বিকৃত যৌনচার , বহুগামীতা এবং বিবাহপূর্ব যৌনসম্পর্ক পাপ এবং ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তার পরেও কিছু মানুষ তাদের বিকৃত মানষিকতার কারনে বা সংগদোষে নানা রকম পাপকার্যে জড়িয়ে পড়ে । আর এই পাপাচারের পথে কেউ করে পরকীয়া, কেউ যায় পতিতালয়ে বা কেউ জড়িয়ে পড়ে নানা রকম অনৈতিক- অস্বাভাবিক যৌনসম্পর্কে । আর এ জাতীয় কাজের সর্বশেষ সংযোজন হলো একের সংগী / স্ত্রীর সাথে অন্যের ( স্ত্রী/সংগী অদল-বদল করে ) যৌনসহবাস-যৌনাচার। যেখানে একটা পশুও তাদের সংগী-সংগীনিদের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে থাকে আজীবন এবং তাকে রক্ষার জন্য অবলীলায় জীবনও বিলিয়ে দেয়, সেখানে মানুষরুপী কিছু নরাধম তাদের পাশবিকতা চরিতার্থের জন্য এ জাতীয় কাজ যে কতটা ঘৃন্য ও মানব জাতীর জন্য কতটা জঘন্যতম ক্ষতিকর এ অমানুষরা মোটেই তা না ভেবে তারা ব্যস্ত তাদের বিকৃত মানষিকতা চরিতার্থ করতে ।
যথাযথ ও স্বাভাবিক যৌন শিক্ষা / ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা না থাকায় বর্তমানে তরুণ-তরুণীদের কাছে যৌনশিক্ষার একমাত্র মাধ্যম হয়ে উঠছে পর্নোগ্রাফি । সেখান থেকেই তারা শিখছে বিকৃত যৌনাচার । এমনটাই মনে করছেন মনোবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীরা । পাশাপাশি মাদকের সহজলভ্যতা ও ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার না হওয়াকেও এজন্য তারা দায়ী মনে করছেন । মাদকের সহজলভ্যতা, সঠিক যৌনশিক্ষা না পাওয়া এবং ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার না হওয়ার কারণে তরুণদের মধ্যে বিকৃত যৌনাচারের প্রবণতা বেড়ে গেছে ব্যাপকহারে । এধরনের মানুষেরা এমনকি বিয়ের পরও তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনা । তাদের নানা রকম উদ্ভট বিকৃত যৌনাচার ও মানষিকতা থেকে তাদের স্ত্রীরাও রেহাই পায়না। যৌন ফ্যান্টাসি (উদ্ভট কল্পনা) তে ভূগে তারা নানারকম উদ্ভট বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হয় । আর তাইতো কেউ কেউ স্বাভাবিক যৌনমিলন তৃপ্ত থাকলেও অনেকই বিকৃত আনন্দ খুজে অঙ্গুলিসঞ্চালন, পায়ুলেহন, মুখমৈথুন, পায়ুসঙ্গম, যোনিলেহন বা সমকামিতায় । আর এই বিকৃত মানুষদের আরেক বিকৃত সংযোজন হলো সঙ্গী-সঙ্গীনি (স্ত্রী/স্বামী ) অদল-বদল করে যৌনসহবাস-যৌনাচার।
সম্প্রতি ভারতের কেরালায় সঙ্গী-সঙ্গীনি (স্ত্রী/স্বামী ) অদল-বদল করে যৌনসহবাস-যৌনাচারের বিশেষ সম্পর্কে জড়ানোর একটি চক্রের খোঁজ পেয়েছে দেশটির রাজ্য পুলিশ। এই অভিযোগে ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত সাতজনকে আটক করা হয়েছে।
দেশটির পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গী অদল বদল করে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হওয়া চক্রের সঙ্গে জড়িত সাত জনকে রবিবার (০৯/০১/২০২২) কেরালার কারুকাচাল থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক সাত জনের মধ্যে এক নারীর স্বামীও আছেন। ওই নারী থানায় অভিযোগ করেছেন, তাকে তার স্বামী জোরপূর্বক বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই নারীকে অন্য পুরুষের সঙ্গে বিকৃত যৌন সম্পর্কে বাধ্য করা হয়। ওই নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঐ চক্রের ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তদন্তের সময় আমরা জানতে পারি, ওই নারীর স্বামী অন্য লোকের সঙ্গে তাকে জোর করে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। এরপরে আরো তদন্ত করতে গিয়ে আমরা ওই চক্রের সন্ধান পাই। ওই চক্রটি যোগাযোগের জন্য টেলিগ্রাম এবং মেসেঞ্জার অ্যাপ ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের আলাপুঝা, কোট্টায়াম, এর্নাকুলামের জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। চক্রটির গ্রুপে রয়েছে হাজারো সদস্য। এনিয়ে আরো তদন্ত হবে।
দেশটির আরেক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, পুলিশের ধারণা, কেরালা রাজ্যজুড়ে চক্রটি ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত সমাজের ধনী এবং অভিজাত সমাজেই এ প্রবণতা মহামাড়ির মত ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, অন্তত কয়েক হাজার নারী-পুরুষ এই চক্রে জড়িত।
কিভাবে মানুষের এ ধরনের বিকৃত যৌন জীবন তথা যৌন আচরন নিয়ন্ত্রিত করা যায় -
জীব মাত্রই যৌনতা আছে । যৌনতা ছাড়া কোন কোন জীব নেই এবং এর মাধ্যমেই মানুষের বংশরক্ষা হয়। কোন ব্যক্তির যৌন অভিমুখিতা অন্য ব্যক্তির প্রতি তার যৌন আগ্রহ ও আকর্ষণকে প্রভাবিত করতে পারে। একেক জন মানুষ একেক ভাবে তার যৌনতা প্রকাশ বা উপভোগ করে। যার মধ্যে মানুষের চিন্তা-কল্পনা-কামনা-বিশ্বাস-দৃষ্টিকোণ-মূল্যবোধ-আচরণ-প্রথা ও সম্পর্ক অন্তর্গত। এই বিষয়গুলো তাদের জৈবিক-আবেগীয়-সামাজিক অথবা আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরে যা সে পরিবার-সমাজ থেকে অর্জন করে। সঠিক যৌনতার জন্য মানুষের পারিবারিক শিক্ষা , ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, জৈবিক ও দৈহিক চাহিদার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার , পারিবারিক সুস্থ পরিবেশ,নৈতিকতা ও শালীনতা মূল্যবোধের সৃষ্টি-চর্চা, ছেলে সন্তানদেরকে মেয়েদেরকে সম্মান করার শিক্ষা, মেয়েদের প্রতি ছেলেদের-সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভংগীর পরিবর্তন, নির্মল আনন্দদায়ক খেলাধুলা,সুস্থ সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের চর্চার মাধ্যমে মানুষের যৌন জীবন তথা যৌন আচরন নিয়ন্ত্রিন করা সম্ভব।
মানুষের যৌন আচরন ব্যাপকভাবে মানব প্রজনন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত, যার অন্তর্গত হল মানব যৌনতার সাড়াদান চক্র এবং মৌলিক জৈব তাড়না যা সকল প্রজাতির মধ্যেই বিদ্যমান থাকে সকলেরই তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করা উচিত । মানুষের যৌনতার দৈহিক এবং আবেগীয় বৈশিষ্ট্যের মূল বিষয়বস্তু হল বিভিন্ন ব্যক্তির মাঝে বন্ধন যা গভীর অনুভূতি অথবা প্রেম- বিশ্বাস এবং পরিচর্যার দৈহিক বহিঃপ্রকাশের মাধ্যমে প্রদর্শিত হয়। কোন সমাজের সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলোও ব্যক্তির যৌনতার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়াও মানুষের জীবনের যৌনতা সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-আইনগত-দার্শনিক-নৈতিক-নীতিশাস্ত্রীয় এবং কেউ কেউ ধর্মীয় বৈশিষ্ট্যের দ্বারাও প্রভাবিত হয় এবং এগুলোকে প্রভাবিতও করে।
অনিয়ন্ত্রিত অবাধ যৌনতার খারাপ দিকগুলি কুফল -
নারী পূরুষের অবাধ মিলনের ফলে বর্তমানে সমাজে ছড়িযে পড়েছে মারাত্মক সব রোগ। সিফিলিস, প্রমেহ, গনোরিয়া, এমনকি মারাত্বক রোগ এইডস । এইডস রোগের ভাইরাস এর নাম এইচ আই ভি। এ ভাইরাস রক্তের শ্বেত কনিকা ধ্বংশ করে। ১৯৮১ সালে প্রথম এ রোগ ধরা পড়ে এবং ১৯৮৩ সালে একজন ফরাসী বিজ্ঞানী এইচ.আই.ভি ভাইরাসকে এ রোগের কারন হিসেবে দায়ী করেন। অনুমান করা হয় বানর থেকে এ রোগের ভাইরাস মানব দেহে প্রবেশ করেছে। তাহলে মানুষে পশুতে যৌন মিলন কি এ রোগের প্রার্দূভাবের কারন? কখনও কি বিকৃত মনের কোন নর-নারীর বানরের সাথে যৌন সংগমের পরিনতিতে এ ভাইরাস আজ মানুষের দেহে ?
মানুষের কিছু যৌন আচরনের কারণে যৌন সংক্রামক রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। যদি কেউ অন্য অনেকের সাথে যৌন সঙ্গম করে থাকে তবে এ ক্ষেত্রে অপর সঙ্গীরও যৌন রোগ তৈরীর সম্ভাবনা হয়। একজন ব্যক্তির সাথে যৌনাচারণ করাটাই অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। যদি একজন ব্যক্তি যৌন ভাবে অনেক সঙ্গীর সাথে সঙ্গমে সক্রিয় থাকে তবে নিয়মিত চিকিৎসকের দ্বারা যৌন কোনো রোগ আছে কি না,তা পরীক্ষা করা উচিত এবং এমন সংগী - সংগীনি নিজের ভালর জন্যই এড়িয়ে চলা উচিত।
যৌন অভিমুখিতা যাই হোক না কেন, অরক্ষিত যৌনাচার / পায়ু যৌনাচার খুবই বিপজ্জনক। পায়ু যৌনাচার - স্ত্রী যোনি সঙ্গমের তুলনায় অনেক বেশি ঝুকিঁপুর্ণ কারণ পায়ু ও রেকটামের (মলদ্বার) পাতলা টিস্যু অনেক সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর সেখানে হালকা ক্ষতও ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটাতে পারে, এইচআইভি ছড়াতে পারে। একগামী অথবা বহুগামী, উভয়েরই যৌন রোগের প্রকোপে থাকতে পারে।কারণ, তাদের সঙ্গী-সঙ্গীনি যদি অবিশ্বাসযোগ্য হয়, বা বিভিন্ন ড্রাগ যা ইনজেকশনের মাধ্যমে নেওয়া হয় , সেসব ব্যবহার করে তবে তাদের যৌন রোগ থাকার একটা আশঙ্কা থাকে। আর যারা বহুগামী, তাদের যৌনসঙ্গী বাছ বিচার না করে নির্বাচন করা উচিত নয়। তাদের যৌন সঙ্গীর পরিমাণ কমানো উচিত। তাহলেই এসটিআই হবার সম্ভবনা হ্রাস পায়। একই সাথে তাদের সাথেই সঙ্গমে লিপ্ত হওয়া উচিত, যারা বিশ্বাসযোগ্য।
পরিশেষে, ধর্ম ও চিকিৎসাবিজ্ঞানেও বহুগামীতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং নিরাপদ যৌনতার জন্য সংগী- সংগীনির প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে বলা হয়েছে , যা পরিবার-সমাজ ও মানবজাতির কল্যানের সাথে সাথে নিজেদের কল্যাণও নিশ্চিত করে। বিবেকবান মানুষ মাত্রই / আমাদের সকলকে এ জাতীয় পাপাচার থেকে বেচে থাঁকার চেষ্টা করা উচিত।
তথ্যসূত্র - এনডিটিভি ও দৈনিক ইত্তেফাক (১১/০১/২০২২)।
===============================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -
মানব জীবন - ২১ -"পরকীয়া ও লিভ টুগেদার " Click This Link
মানব জীবন - ২০ -"সমকামীতা বা সমকামী বিয়ে" Click This Link
মানব জীবন - ১৯ - " আত্মসম্মান-নীতি-নৈতিকতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৮ - " ধর্মহীনতা " Click This Link
মানব জীবন - ১৭ - " ধৈর্য " Click This Link
মানব জীবন - ১৬ -" সততা " Click This Link
মানব জীবন - ১৫ - " লজ্জা " Click This Link
মানব জীবন - ১৪ - "পর্দা " Click This Link
মানব জীবন - ১৩ - "ধর্ম " Click This Link
মানব জীবন - ১২ " সহ শিক্ষা " Click This Link
মানব জীবন - ১১ " শিক্ষা " - Click This Link
মানব জীবন - ১০ "পরিবার " - Click This Link
মানব জীবন - ৯ "বিবাহের পরে" - Click This Link
মানব জীবন - ৮ " মানব জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য " - Click This Link
মানব জীবন - ৭ " তালাক " - Click This Link
মানব জীবন - ৬ "দেনমোহর - স্ত্রীর হক" - Click This Link
মানব জীবন - ৫ "বিবাহ" - Click This Link
মানব জীবন - ৪ " মাতৃত্ব " - Click This Link
মানব জীবন - ৩ Click This Link
"নারী স্বাধীনতা বনাম নারী(জরায়ু)'র পবিত্রতা "
মানব জীবন - ২ " মাতৃগর্ভ (জরায়ু)"- Click This Link
মানব জীবন - ১ "মানুষের জন্ম প্রক্রিয়ার ইতিকথা"- Click This Link