ছবি - bdnews24.com
প্রকৃতপক্ষে দেশে মিনিকেট নামে কোন ধান নেই। সরু মিনিকেটের ক্ষেত্রে জিরাশাইল, শম্পাকাটারি এই দুই রকমের ধানটাই বেশি। এমনকি নাজিরশাইল নামে কোন ধান নেই বলে জানিয়েছেন মাননীয় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।(Dailyjanakantha ডিসেম্বর ২১, ২০২১)।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, " মিনিকেট বা নাজিরশাইল নামে কোনো ধান নেই। যে সরু চাল খাওয়া হচ্ছে, সেটা হল জিরাসাইল, শম্পা কাটারি- এ দুই ধরনের ধান থেকেই বেশি হচ্ছে। ব্র্যান্ড তারা মিনিকেট বলে চালাচ্ছে। বিআর২৮-কেও মিনিকেট বলে চালায়, ২৯-কেও মিনিকেট বলে চালায়, আর আমরাও মিনিকেটই খুঁজি"।
আন্তর্জাতিক নিউট্রিশন অলিম্পিয়াড উপলক্ষে সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, " আপনারা লিখুন- এই সাদা চকচকে চালে কোন পুষ্টি নেই। লাল চাল খান"।
মাননীয় মন্ত্রী আরো বলেন, " চাল কেটে ছোট করা হয়- এটা ঠিক না। আপনাকে মিলে যেতে হবে, পর্যবেক্ষণ করতে হবে। চালকে কাটতে কাটতে কিন্তু ছোট করে না। ছোট করলে তার ওয়েট লস হবে, ওয়েট লস হলে তার পোষাবে না। তারা পলিশ করে, পলিশে ওজন কমে না। মোটা চাল কেটে মিনিকেট বানায় এটা কিন্তু ঠিক না। আমাদের সবার একটা ভুল ধারণা যে, চাল কেটে ছোট করে। ঘটনা কিন্তু তা নয়"।
ছবি - ছবি - bdnews24.com
এদিন খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন,"আমরা ইতোমধ্যে একটা রিসার্চ ওয়ার্ক করেছি। এটা সত্যি বাজারে মিনিকেট নামে চাল বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু মিনিকেট নামে ধান নেই বললেই চলে।চাল ছাঁটাই করে বাজারে ‘মিনিকেট’ নাম দিয়ে বিক্রি বন্ধ করার লক্ষ্যে বস্তার ওপর ধানের জাতের নাম লেখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি "।
খাদ্য সচিব আরো জানান, সাধারণভাবে ধানের সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ ছাঁটাই করা যায়, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ৩০ ভাগ পর্যন্ত ছাঁটাই করে মিনিকেট নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে পুষ্টিঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।“আমরা এখন চেষ্টা করব, ব্র্যান্ডিং আপনি যে নামেই করেন না কেন, আপনাকে মূল ধানের সোর্স লিখতে হবে। যেমন - যদি গরুর মাংস বিক্রি করা হয়, তাহলে লিখতে হবে গরু। মহিষের মাংস গরু লিখে বিক্রি করতে পারবেন না; সে কাজটা কিন্তু আমরা করছি। চাল ছাঁটাই করে বাজারে ‘মিনিকেট’ নাম দিয়ে বিক্রি বন্ধ করার লক্ষ্যে বস্তার ওপর ধানের জাতের নাম লেখা ‘বাধ্যতামূলক’ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মিনিকেট জাত নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রণালয়ের সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম জানান,এ বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন,"আমরা একটি গবেষণা করেছি, সেখানে আমরা পেয়েছি ধান কেটে যে চালই উৎপাদন করা হচ্ছে, তার নাম দেওয়া হচ্ছে মিনিকেট। এ কারণে আমরা একটি ছাঁটাই নীতিমালা করছি "।
ছবি - dainikpurbokone.net
এখন মূল যে কৌতুহল বা প্রশ্ন , যদি মিনিকেট নামে কোন ধান চাষ বাংলাদেশে না হয় তাহলে বাজারে এত এত ব্র্যান্ডেড (রশিদ, মোজাম্মেল ইত্যাদি) মিনিকেট চাল আসছে কোথা থেকে?
মিনিকেট নামের এই চাল বাজারে আসে কোথা থেকে ?
এই প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, মিনিকেট চাল তৈরী হয় কারখানায় কৃষকের খামারে (মাঠে) নয়।
দেশী জাতের ধান (মোটা চালের) চাল কলে আসার পর শুরু হয় তেলেসমাতি কারবার সেই মোটা ধানকে ঘিরে। প্রথমে ধানের খোসা (তুস) ছাড়ান হয়। সব ধরনের চালের খোসা ছাড়ানোর পর চালের অকৃত্রিম-ন্যাচারাল রঙে কিছুটা খয়েরি-বাদামি আভা থাকে। এরপর কেমিক্যাল ও হোয়াইটনার ব্যবহার করে মেশিনের মাধ্যমে চালের খয়েরি-বাদামি আভার আবরণটিকে আলাদা করা হয়। এই আবরণটিকে বাদ দেওয়ার পর কাটার এর সাহায্যে চাল কিছুটা সরু ও সাদা করা হয়। এখানেই শেষ নয়, তারপর পলিশার মেশিনের মাধ্যমে পলিশ করলেই হয়ে গেল মিনিকেট চাল।
এখানে একটি প্রশ্ন আসতে পারে বা যে কেউ বলতেই পারেন - মোটা চাল প্রসেস করে মিনিকেট বানিয়ে বিক্রেতা একটু বেশী লাভ করলে ক্রেতার ক্ষতি কি?
ক্ষতি হচ্ছে ক্রেতা চিকন চালের দামে মোটা চাল কিনছেন, অর্থাৎ কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত ঠকছেন। বড় ক্ষতি হলো কেজিতে ১৫ থেকে ২০টাকা বেশী দিয়ে মিনিকেট চাল নয়, ক্রেতা কিনছেন মোটা চালের আবর্জনা। কারণ, প্রসেস করার মাধ্যমে চালের উপরি আবরণ (bran অর্থাৎ pericarp, seed coat, aleurone layer, embryo) বা পুষ্টিকর অংশ বাদ দেওয়া হয়। পরে সেগুলো রাইস ব্রান অয়েল মিলে চলে যায়।
উল্লেখ্য, চালের সর্বমোট ৮৫ ভাগ ভিটামিন B3 থাকে pericarp - এ, প্রোটিন আর ফ্যাট থাকে Aleurone layer - এ, খনিজের ৫১ ভাগ ও মোট আঁশের ৮০ ভাগ থাকে bran - এ, ভিটামিন B1 ও ভিটামিন E থাকে embryo - তে। চালের সব পুষ্টিকর উপাদান রাইস ব্রান তেলের মিলে বিক্রির জন্য প্রসেস করে আলাদা করার পর চাল আর চাল থাকেনা, হয়ে যায় চালের আবর্জনা। মোটা চালকে মিনিকেটে রূপান্তর করার বিভিন্ন পর্যায়ে সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড, সোডিয়াম হাইড্রোক্লোরাইড + টুথপেস্ট +এরারুটের মিশ্রণ, সোয়াবিন তেল, ফিটকারি, বরিক পাউডার ব্যবহার করা হয়। আর তারপর তা হয়ে যায় দেখতে ঝকঝকে ফর্সা-সুন্দর । আর তাই আমরা কিনে নিয়ে আসি মনের আনন্দে বাজার থেকে বেশী দাম দিয়ে।
চাল দীর্ঘদিন ঘরে রাখলে বা থাকলে তাতে পোকা (কেরি) ধরে তবে মিনিকেট চালে কখনো পোকা ধরেনা , আপনি যতদিনই তা সংরক্ষণ করে রাখেন না কেন। কারণ পোকাও জানে এই চাল খাওয়ার যোগ্য নয়, এতে কোন পুষ্টিগুণ নেই।
অথচ দেখতে সুন্দর এই অখাদ্যকে আমি আপনি আমাদের পরিবার কে নিশ্চিন্তে খাওয়াচ্ছি এবং নিজেরাও খাচ্ছি বেশী দামে কিনে।
তথ্যসূত্র - দৈনিক সংবাদপত্র (২০শে ডিসেম্বর ২০২১)
==============================================================
পূর্বের পোস্ট -
"কৌতুহল - ২ / ২ " - " ডারউইনের বিবর্তনবাদ " - মানুষ কি এপ-প্রাইমেট (বানর) থেকে এসেছে বা পৃথিবীতে মানুষের শুরু কিভাবে হয়েছে? এ ব্যাপারে ধর্ম ও বিজ্ঞানেরই বা কি অভিমত ?
Click This Link
"কৌতুহল - ২ / ১ " - " ডারউইনের বিবর্তনবাদ " - মানুষ কি এপ-প্রাইমেট (বানর) থেকে এসেছে বা পৃথিবীতে মানুষের শুরু কিভাবে হয়েছে? এ ব্যাপারে ধর্ম ও বিজ্ঞানেরই বা কি অভিমত ?
Click This Link
"কৌতুহল -১ "- আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা ২০ জানুয়ারি কেন শপথ নেন? Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩৯