বাংলাদেশের পলিটিক্স এমনই সোজা যে আমার মতোন গাল-গল্প আর আড্ডাবাজ নাদান ব্লগারও সেটা নিয়ে 'বিশ্লেষনী' ব্লগ লেখার সাহস দেখাতে পারে। বাংলাদেশের রাজনীতি সোজা এই কারনে যে এখানে রাজনীতি করতে হলে রাজনৈতিক দলকে অর্থনৈতিক এজেন্ডা নির্ধারন করা লাগে না, সামাজিক নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলা লাগেনা এবং এগুলি নিয়ে কোন নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও তৈরী করা লাগেনা। এমনকি দিনের পর দিন দেশে অবরোধ ডেকে বসে থাক যায়, যার জন্য কোন দায়বদ্ধতা থাকেনা। এই রাজনীতিকে কঠিন করে তোলা সম্ভব যদি এই রাজনীতিতে অর্থনীতি সহ রাষ্ট্রের উন্নয়নের পলিসি ও মৌলিক চরিত্রের সম্মিলন ঘটানো যায়, যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সে অবস্থায় যেতে আরো কিছুটা সময়ের প্রয়োজন। বর্তমান সরকারের পলিসিতে বাংলাদেশ যে পথে হাঁটছিল, তাতে সে অবস্থায় যেতে খুব বেশী বেগ পাওয়ার কথাও নয় অবশ্য। নেতৃত্বের ভিশন থাকলে রাষ্ট্র এগিয়ে যাবেই, যদিও যে বিষয়ে আলোচনার জন্য এই লেখা নয়। রাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবরোধ? বিএনপি কি কোন এজেন্ডা জনগনের সামনে তুলে ধরেছে? তারা দেশের অর্থনীতির চাকাকে থামিয়ে দিয়ে কিসের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান? সাধারন মানুষকে পুড়িয়ে মারা কি কোন আন্দোলন নাকি সন্ত্রাসী কার্যক্রম? বিএনপি দাবী করছে যে, এইসব জ্বালাও পোড়াও আওয়ামীলীগের কাজ, তাহলে সমীকরনটা কি দাঁড়ালো? বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট অবরোধ ডাকবে আর আওয়ামীলীগ ও এর নেতাকর্মীরা বাসে, ট্রাকে, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে আতঙ্ক তৈরী করে সেই অবরোধ-হরতালকে সফল করে তুলবে? বিএনপি নেতা কর্মীদের উপর হত্যাকান্ডের দায় চাপিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই যদি সরকার এজেন্ট দিয়ে সাধারন মানুষকে পুড়িয়ে মারে তাহলে সেই দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেয়ে আন্দোলনের সফলতার রাজনৈতিক ওজন বেশী বলেই ধরে নেওয়া যায়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মুখ থেকে এক রকম জোর করেই আন্দোলনের ঘোষনা আদায় করে নেন সংবাদকর্মীরা, একটি রাজনৈতিক দল কতটা দ্বায়ীত্বহীন না হলে একটি অনিশ্চিত আন্দোলনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে পারে সেটি এই আন্দোলন না দেখলে বোঝা যেতোনা। আন্দোলনের উদ্দেশ্য কি, এই প্রশ্ন খুঁজে বের করার আগে এটি নির্দিষ্ট হওয়া প্রয়োজন যে এটি আদতে কোন আন্দোলন কী-না। বিএনপি বাংলাদেশের দুটি বড় দলের একটি, সেই দল অবরোধ-হরতাল আহবান করলে তা এমনিতেই পালিত হয়ে যাওয়ার কথা, দলটির নিজস্ব কর্মী, সমর্থক গোষ্ঠী এবং বর্তমান সরকারের উপর নাখোশ শ্রেনী অবরোধ হরতাল পালন করলেই অবরোধ হরতাল পালিত হয়ে যাওয়ার কথা। অবরোধ ডাকা হলো, আর নির্বিচারে মানুষ পুড়িয়ে মারার উতসব শুরু হলো। সাধারন মানুষকে হত্যা করে কোন আন্দোলন হয়না। এসএসসি পরীক্ষা শুরু হলো, আবরোধের সাথে যুক্ত হলো হরতাল (অথচ খালেদা জিয়ার নিজের নাতীদের পরীক্ষার জন্য মালয়েশিয়ায় ঠিকই পাঠিয়ে দেওয়া হলো)। এটা কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন না, তবে এটা অবশ্যই দাবী আদায়ের জন্য বিএনপি-জামায়াতের বেছে নেওয়া একটি কৌশল। এই কৌশল সাধারন নিতে দেখা যায় তাদেরই যারা জিম্মী করেন, হামলার হুমকী দিয়ে থাকেন তারা, এবং এই কৌশলকে বিশ্বব্যাপী কোথাও স্বীকৃত উপায় বলে ধরা হয়না। এই কৌশল কার্যকরী কী-না সে বিতর্কের আগে আরেকটি ব্যাপার থাকে সেটি হচ্ছে এই কৌশল গণতান্ত্রিক কী-না। প্রথমত বলা যায় এটি কোন গণতান্ত্রিক আন্দোলন নয়, যদিও তাদের ভাষায় এটি গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন; সেই 'গণতন্ত্র মুক্তি'র আন্দোলন নিজেই গণতান্ত্রিক নয়। এটি আন্দোলন বটে, তবে এটি একটি ফ্যাসীবাদী ও গণবিরোধী আন্দোলন। বিএনপি-জামায়াত ঘরানার অনেকে বলে থাকেন যে সরকার ২০ দলীয় জোটকে প্রতিষ্ঠিত ও স্বীকৃত কোন গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলনের সুযোগ দিচ্ছেনা বলেই তারা চরম পন্থায় গিয়েছেন, এটি বলে তারা কিন্তু স্বীকার করেই নিচ্ছেন যে ২০ দলীয় জোটই এইসব পেট্রোল বোমা আন্দোলন করছেন। গণতন্ত্র মুক্তির নামে একটি গোষ্ঠী নিরপরাধ মানুষদের পুড়িয়ে মারবেন, এটিতো রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনার সামিল। এখন রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ ঘোষনা করলে রাষ্ট্র কার্যকরী ব্যাবস্থা নেবে সেই আশাই করা হয়ে থাকে। এখানে স্বীকার করা হচ্ছে যে গণতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ থাকার কারনে ২০ দলীয় জোট অগণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রবিরোধী অন্দোলন করছে, সেখানে ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা রাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতান্ত্রিক ব্যাবস্থা আশা করেন কিভাবে!
বর্তমান কালের অবরোধ কেনো এতো সহিংস?
১) এই সরকার তার মেয়াদ পূর্ন করে ফেললে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হয়ে যাবে, অস্তিত্বের সংকটে পড়বে জামায়াত তাই তাদের জন্য ডু অর ডাই হচ্ছে এই আন্দোলন। জামায়াত শিবির এদেশের মানুষদের কখনোই আপন জানেনি, এখনো জানেনা। তাই এদেশের মানুষের জানমালের ক্ষতি তাদের কাছে কোন ক্ষতি নয় তাই তারা এই নাশকতায় উঠে পড়ে লেগেছে।
২)লন্ডন থেকে সরাসরি থানা পর্যায়ের নেতাদের কাছে নির্দেশনা আসছে, নাশকতা করার জন্য, একারনে সেইসব থানা পর্যায়ের ছাত্রদল, যুবদলের নেতারা বেপরোয়া হয়ে গেছে, কেননা এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে ২১শে আগষ্ট বোমা হামলার রায় হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন বা দীর্ঘ মেয়াদে সাজা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে এবং ফাঁসি না হলে লন্ডন থেকে দেশে ফেরত পাঠানোয় কোন ঝামেলা থাকবেনা। লন্ডনের আরাম আয়েশ ছেড়ে জেলে যাওয়ার ভয় এবং সাজা প্রাপ্ত হলে রাজনীতিতে ক্ষতির সম্ভাবনা মাথায় থেকে বিএনপির হাই কমান্ড তাদের এই নাশকতা সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করেছে।
৩) বর্তমান সরকার সামাজিক উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে যেগুলি বাস্তবায়িত হয়ে গেলে আওয়ামীলীগের জনপ্রিয়তা বাড়বে এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের নির্বাচনে ফের নির্বাচিত হওয়ার জন্য জনপ্রিয় কর্মসুচী গ্রহনের মাধ্যমে বিএনপি অস্তিত্বের সংকটে পড়বে, তাই বিএনপি মরিয়া হয়ে এই সকল নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে।
৪) ৫ জানুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেছে, এটি সরকারের দুর্বলতার একমাত্র দিক এটিকে কাজে লাগিয়ে দেশকে অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে ক্ষমতা দখল করার সুযোগ হিসাবে বিএনপি এটিকে দেখছে। তাই তারা মরিয়া হয়ে নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে।
বলা হচ্ছে ৫ জানুয়ারী ২০১৫ সমাবেশ করতে না দেওয়াই এই সন্ত্রাসকে উস্কে দিয়েছে, ৫ জানুয়ারী বিএনপির লক্ষ্য ছিলো অরাজকতা শুরু করা, সেটা তারা শুরু করেছে, ৫ জানুয়ারী সমাবেশ করতে দিলে সন্ত্রাস শুরু হতো ঢাকা থেকেই, সেটি করতে দেওয়া হয়নি বলেই সংগবদ্ধ সন্ত্রাসের রুপটা দেখেনি বাংলাদেশ। ৫ তারিখের আগে ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশে অনেকগুলি সমাবেশ হয়েছে, যেগুলিতে সরকার বাঁধা দেয়নি, আর এক ৫ তারিখের সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বাহানায় টানা অবরোধ আর মানুষ হত্যার এই উৎসব শুরু হলো! বিএনপির এই নাশকতার মহোতসবের লক্ষ্য ক্ষমতা দখল, কিন্তু নির্লজ্জ তারা, জনগনকে পুড়িয়ে সে লক্ষ্য পূরন করতে চায়। বিএনপির এই 'আন্দোলনের' কোন এক্সিট রুট নেই, তারা চাইছে তাদের এই বিরামহীন সন্ত্রাসে মানুষ সরকারের উপর বিরক্ত হয়ে রাস্তায় নেমে আসবে, কিন্তু এমনওতো হতে পারে জনগন রাস্তায় নেমে এসেছে বিএনপি জামায়াত খুঁজতে। বিএনপি চায় রাষ্ট্র ক্ষমতা, জামাত টিকিয়ে রাখতে চায় তার অস্তিত্ব আর এই দুই এর মিলনে তারা দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্র বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাদের 'আন্দোলন' এখন পেট্রোল বোমা, বিবৃতি, ফেইসবুক আর বিভিন্ন পত্রিকার কমেন্ট সেকশনে। তারা তাদের 'আন্দোলন' চালিয়ে যাচ্ছে, যেহেতু তাদের ভাষায় এটি গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন, তাই তাদের ছোঁড়া ঐসব পেট্রোল বোমা হচ্ছে গণতান্ত্রিক পেট্রোল বোমা। দেশের এই অবস্থায় আপনি আমি কেউই নিরাপদ নই, আসুন আমরা দল বেঁধে গণতান্ত্রিক পেট্রোল বোমায় পুড়ে অঙ্গার হোই নতুবা একে প্রতিরোধ করি।