ঐক্য নাকি বরাবরই ভালো জিনিস, জাতির জন্য পুষ্টিকর। প্রবাদ আছে “একতাই বল”। ঐক্য ইতিবাচক। ঐক্যর ভালো দিক বেশী। ঐক্য নিয়ে ছেলেবেলায় লাঠি ভাঙ্গার গল্পটি শোনেননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। অন্যদিকে বিভাজন বা অনৈক্য বরাবরই পরিত্যাজ্য। অনৈক্য শব্দটি নেতিবাচক। আমরা কেউই অনৈক্যের পক্ষে নই।
গল্পটি আরেকবার বলি, এক বৃদ্ধের পাঁচ ছেলে। তারা পরস্পর ঝগড়া বিবাদে মেতে থাকে সবসময়। তিনভাই চায় সকালে রূটি খেতে, দুই ভাই ভাত। য়াবার তিন ভাই দুপুরে ভাত খেতে চায়, দুই ভাই রুটি। এমনতর হাজারো ব্যাপারে তাদের ভিন্ন মত। বৃদ্ধ ভাবলেন, এদের কে শিক্ষা দেওয়া উচিত। একদিন তিনি সকলকে তার ঘরে ডাকলেন, প্রত্যেককে একটা করে লাঠি দি্যে সেটাকে ভাঙ্গতে বললেন, সকলেই মট মট করে ভেংগে ফেললো। এরপর তিনি একই রকমের দেখতে পাঁচটি লাঠি একত্রে আটি বেঁধে দিলেন, বললেন ভাঙ্গতে। কেউই সেটা ভাঙ্গতে পারলোনা। বৃ্দ্ধ এবার বললেন দেখলেতো বাছারা, একই গাছের লাঠি আলাদা আলাদা ভাবে কত সহজে ভেঙ্গে ফেলা, কিন্তু আটি বাঁধা অবস্থায় ভাঙ্গা কঠিন। তোমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে তোমরা শক্তিশালী থাকবে আর কলহ করে আলাদা আলদা থাকলে দূর্বল হয়ে থাকবে। কাজেই একতাবদ্ধ থেকো। গল্পটি এখানেই শেষ নয় পরে বাকী টুকু বলছি।
বাংলাদেশে ২০০৭ জানুয়ারীর পরে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতাদের দূর্নিতির দায়ে আটক করেছিলো। সারা দেশে দূর্নিতির বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করা এই সরকার জনগনের আশা জাগিয়ে তুলেছিলো কিছুদিনের জন্য হলেও। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটিও নোটুন করে সামনে চলে আসলো। সামনে চলে আসলো আরেকটি কথা জাতিকে বিভক্ত করারা জন্যই নাকি যুদ্ধাপরাধী ইস্যু তোলা হয়েছে। এমন কি একজন সাবেক বিচারপতি(জে আর মোদাচ্ছির) পর্যন্ত বলেন, “এখন স্বাধীনতার চেতনার নাম দিয়ে জাতিকে বিভাজন না করে সুন্দর দেশ গড়ার জন্য কাজ করতে হবে”। (সমকাল, ১২ জুলাই ২০০৮) কিসের বিভাজন? তারা (রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীর) আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ ছিলো কবে? মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের সাথে বিভাজিত অবস্থায় ছিলো। সেই বিভাজন স্বত্ত্বেও আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। তারা আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ ছিলো কবে যে, বিভাজনের প্রশ্ন এলো?
গল্পটি শেষ করি, বৃদ্ধ লাঠির আটিটি তার খাটের নীচে রেখে দিয়েছি্লেন, কয়েক মাস পর তিনি আবারো তার ছেলেদের ডাকলেন। আটিটি বের করে ভাঙ্গতে বললেন। বড় ছেলে আটিটি ভাঙ্গার চেষ্টা করতেই ভেঙ্গে গেলো , অনায়াসে। বৃ্দ্ধ বললেন, তিনি যে পাঁচটি লাঠি দিয়ে আটি বেঁধেছিলেন, তারমধ্যে একটি ছিলো ঘুনে ধরা, সেই ঘুনে ধরা লাঠিটির সাথে অন্যগুলি থাকাতে, সেগুলিতেও ঘুন লেগেছে। তাই আটিটি এত দূর্বল হয়ে পড়েছে। যা কিনা একটা লাঠির চেয়েও অনায়াসে ভেঙ্গে ফেলা গেছে। তাই ঐক্য সবসময় ভালো নয়। আর ভালো লাঠির সাথে ঘুনে ধরা, পঁচা লাঠির ঐক্য কখনো নয়। সেগুলি ছুঁড়ে ফেলো। আমরা একাত্তুরে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, কিছু কুলাঙ্গার বিভাজিত ছিলো। আজ আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী করি, তারা এখনো বিভাজিত। গত ৩৮ বছরে এইসব কুলাঙ্গারদের সাথে ঐক্যের নামে অনেকেই আমরা এক আঁটিতে বাঁধা থেকেছি, ফল কি হয়েছে? আমাদের ভেতরেও লেগেছে ঘুন। আর আমরা নিদারুন লজ্জায় বয়ে চলেছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হওয়ার কলঙ্ক।আজ স্বাধীনতা দিবসের শপথ হোক সেই কলঙ্ক মুছে, আগাছা-জঞ্জাল-দেশদ্রোহী দের বাদ দিয়ে, ছুঁড়ে ফেলে ঐক্যবদ্ধ জাতির কলঙ্ক মোচনের, আজ শপথ হোক সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:০২