আমার নাম বাসুরী,এই নাম টা আমার খুব প্রিয় এই নাম প্রিয় হবার কারন এইটা আমার মা তার ডায়রীতে লিখে রেখেছিলো।
ছেলে হোক আর মেয়ে হোক ডাক নাম বাসুরী হবে।তাই আমি এই নাম টা রেখে দিলাম আর এই নাম টা আমার এত প্রিয়।
আর তার চেয়ে বড় কথা আমি আমার মাকে দেখি নাই বা তার কোন ছবি ও নেই আমার কাছে দেখতাম যদি বাবা থাকতো।
কিন্তু দূরভাগ্যের বিষয় বাবা কে ও দেখি নাই।আমি জন্মের পর হতে বাবা মা বিহীন বড় হয়েছি।আর কোথায় লালিত পালিত
হয়েছি সেটা আগে ও একবার বলেছি।আমি ভাবতাম আমার কেউ নেই এই পৃথিবীতে আমি এতিম পথ শিশু।
আবার মাঝে মাঝে কেউ কেউ বলতো আমি নাকি থাক সে কথা মনে করতে চাই না।
কিন্তু সব ধারনা একদিন মুছে গেল দাদী কে দেখে যাক আমার তাহলে পরিবার আছে। লোকে যা বলে আমি তা নই।
আমি একা একা লালিত পালিত হয়েছি সেটা তো বললাম।অনেক পরে আমি দাদীর কাছে আসলাম।
আর তখন হতে আমি ছন্নছাড়া ভবঘুরে ছিলাম,আমার যেহেতু পরিবার কেউ নেই দাদী ব্যাতিত তাই আমাকে কেউ
শাসন করার মত ও ছিলো না আমি নিজের মর্জি মত চলতাম।আমি যখন ক্লাস ৮ পড়ি তখন এক বন্ধুর থেকে হুমায়ন আহমেদ স্যারের
এবং হিমু উপন্যাস টা নিয়েছিলাম পড়ার জন্য।আর যখন আমি বই টা পড়ি তখন হতে আমার ভেতর হিমু হবার ইচ্ছা জেগেছিলো।
আর আমি আগে হতে রাত বিরাত ঘুরতাম।এবং হিমু পড়ার পর আমি চিন্তা করলাম আরে আমার তো হিমু হওয়া একদম সোজা
হিমুর কোন পরিবার নেই,আমার ও তো নেই।হিমু ভবঘুরে রাত বেরাত ঘুরে আমি ও তো ভবঘুরে রাত বেরাত ঘুরি।
হিমুর বাবা হিমুর শিক্ষক আর আমার শিক্ষক হিমুর বই। হিমু মহাপুরুষ হতে চাই আমি ও চাই,কারন আমার জন্মের পর যখন বুঝতে শিখলাম তখন আমার যে
ব্যাকগ্রাউন্ড শুনলাম তাতে আমার এই জীবনে কোন মেয়ে বা তার পরিবার আমাকে গ্রহণ করাতো দূরে থাক ফিরেও তাকাবে না।তাই সব বাদ দিয়ে হিমু হবার প্লান করলাম
মহাপুরুষ সব মায়া মমতা ভালোবাসার বিহীন এক মানব।
ব্যাস যেই ভাবা সেই কাজ হয়ে গেলাম হিমু চরিত্রের উপর পুরোপুরি ক্রাস।আর তখন হতে আজ পর্যন্ত আমি হিমু সিরিজের এমন কোন বাদ নেই যে পড়ি নাই।
আর বই টা পড়ার পর পুরোপুরি হিমু হয়ে গেলাম,দিনে ঘুমাতাম রাতে ঘুরতাম তবে সেটা সব সময় না স্কুল বন্ধের আগের দিন রাতে আমি হিমু হতাম।
এই ছিলো আমার প্রথম হিমু হবার পদক্ষেপ,অনেক চেষ্টা করেছি সব সময়ের জন্য হতে কিন্তু পরিবেশ,পরিস্থিতি,সমাজ ব্যাবস্থা আমাকে হিমু হতে বাধা সৃষ্টি করেছে।
কিন্তু আমি দমে যাইনি একটু বন্ধ রেখেছিলাম,সমাজ ব্যাবস্থা দেখে আবার ভেবেছিলাম স্বাভাবিক জীবন যাপন করে দেখি কেমন হয়।
তো স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে গিয়ে একজনের মায়া জড়িয়ে গেলাম মানে প্রেমে পড়লাম,আর তখন হিমু হবার চিন্তা পুরোপুরি মাথা হতে ঝেড়ে রঙিন স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।
আহ কি সুন্দর না দিন গুলো ছিলো কত রঙিন স্বপ্ন ঘর বাধার স্বপ্ন।থাক সেই রঙিন স্বপ্নের কথা আর একদিন বলবো আজ না।
কিন্তু ঐ যে বললাম আগে যে আমার জন্মের পর যে ব্যাকগ্রাউন্ড মাশাআল্লাহ আর সেই ব্যাকগ্রাউন্ডই আমার জীবনে অভিশাপ নেমে আসলো।
আর আগে তো এমনি অভিশপ্ত ছিলো।ভালোবাসার প্রিয় মানুষ টা দিলো ছ্যাকা,সমাজ ব্যাবস্থার নিয়মে আমি তার যোগ্য নই।
আমি আগেই ভেবেছিলাম কিন্তু মন তো আর মানে নাই তাই মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছিলাম।
কিন্তু সেই মায়া বেশীদিন টিকে নাই,আর তারপর হতে আবার আমার ভিতর হিমু হবার বাসনা পুরোপুরি জেগে উঠলো।
আমি আবার হিমু হবার চেষ্টায় লিপ্ত হলাম,এইবার আর কিছুর পরোয়া নেই,আর কোন মায়া নেই,
তাই পুরোপুরি হিমু হবার জন্য ভবঘুরে হয়ে গেলাম।রাতে ঘুরে বেড়ায় আর দিনে ঘুমায়।
আমাদের দেশে রাতে ঘুরে বেড়ালে অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়,আর সবচেয়ে বেশি হতে হয় পুলিশি ঝামেলায়।
আমি অনেক বার পড়েছি,শুধু বুদ্ধির জোরে বেঁচে গেছি।
অনেক তো আমার কথা বললাম,এইবার গল্পের কথা বলি।
এমনিতে আমার রাতে ঘুম আসে না,তারওপর আমার হিমু হতে হবে,তার উপর নিজের জীবনের কষ্টের বোঝা সব মিলিয়ে আমি চরম হতাশ,তাই রাতে ঘুরে বেড়ায়।
আর ঢাকা শহরে দিনে বেলা একরকম রাতে বেলা আরেক রকম,এইটা অনেকে অবগত।
বিচিত্র রাত রাস্তা দিয়ে হাঁটলে দেখা যাই,কেউ নেশা করে বুদ হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে তো কেউ অন্ধকার গলির ভেতর দাঁড়িয়ে অসহায় মানুষের সর্বশ কেড়ে নিচ্ছে।
আর কেউ কেউ বেঁচে থাকার জন্য তাদের দেহ বিক্রি করার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে খদ্দের খুঁজছে,আর এই সব মানুষের একটা নাম আছে নিশিকন্যা।
এইভাবে এক রাতে ঘুরছি,তো হেঁটে যেতে যেতে ২-৪ জন নিশিকন্যা আমাকে তাদের খদ্দের ভেবে ডাকা ডাকি করছে।আমি প্রথম পাত্তা না দিয়ে আমার মত হেটে বেড়াচ্ছি।
আর আমার মহাপুরুষ হবার ধ্যানে মনোনিবেশ করছি,একটু পর অনুভব করলাম আমার পিছন পিছন কেউ একজন হেঁটে আসছে।আমি পাত্তা না দিয়ে আমার মত হাটছি,অনেক দূর হেঁটে আসার পর
বুঝতে পারলাম আমার পেছনের হেঁটে আসা মানুষটি আমার সাথে সাথে হেটে যাচ্ছে।আমি দাঁড়ালাম সে ও দাঁড়ালো,তারপর আমি পিছনে ফিরে তাকালাম দেখলাম মাথায় উড়না দিয়ে একটু বড় করে
ঘুমটা দেয়া একটি মেয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে,আমি তার সামনে গিয়ে বললাম কি চাই,আমার পিছন পিছন হাঁটছেন কেন সমস্যা কী ?আমি ঐ টাইপ না আপনি যেমন টা ভেবে আমার পিছন পিছন হাঁটছেন।
আপনি অন্য কোথায় যান গিয়ে খদ্দের খুজুন।একদমে কথা গুলো বলে আমি আবার আমার হাঁটা শুরু করলাম।হাটছি হঠাত ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় দেখলাম পিছনের মেয়েটি আবারো আমার পিছনে পিছনে আসছে।
এইবার আমার মেজাজ টা বিগড়ে গেল আমি এইবার পিছনে ফিরে একদম তার সামনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে সমস্যা কী,
আপনাকে না বললাম আমি ঐ টাইপ নই,তারপর ও কেন পিছন পিছন হেটে আসছেন ? আমার পিছনে না হেঁটে খদ্দের খুজেন কাজে দেবে আর কাল পেটে ভাত ঢুকবে।বুঝলেন যান।
এত কথা বললাম মেয়েটির মুখ দিয়ে একটি শব্দ ও বের হল না,বুঝতে পারলাম মেয়েটি কাঁদছে তার ফোপানোর শব্দ পেলাম আর একটু পর পর কেপে উঠছে।
আমার এই টা দেখে কেমন জানি সন্দেহ লাগলো,সত্যি কি কোন বিপদে পড়েছে নাকি মেয়েটা না প্রতারক টাইপ কেউ যারা এই রকম প্রতারনার ফাদ পেতে অসহায় মানুষের সর্বশ কেড়ে নেই।
তবে আমার তেমন চিন্তা নেই মনে মনে বললাম আমার আমি ছাড়া আর কিছু নেই,আর বড় জোর এক প্যাকেট সিগারেট আর একটা কাঠি ম্যাচ পাবে তা ও সিগারেটের পুরোপ্যাকেট নেই ৯-১০ আছে মনে হয়।
তাই আর প্রতারনার চিন্তা মাথা হতে ঝেড়ে ফেলে আমি ফুটপাতে বসলাম আর সেই মেয়েটিকে বসতে বললাম।সে বসলো আমার থেকে একটু দূরত্বে,এইবার আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপনার কাদছেন কেন ?
কি সমস্যা আমাকে বলেন,অনেকক্ষন চুপ থাকার পর মেয়েটি অস্পষ্ট স্বরে বললো আমাকে একটা উপকার করতে পারবেন ?
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম কি করতে হবে বলেন সাধ্যের ভেতর থাকলে অবশ্যই করবো।
মেয়েটি বললো আমাকে চট্টগ্রামের বাসে তুলে দিতে পারবেন?আমার যাওয়ার মত কোন টাকা নেয়। আমি বাড়ি যাবো।
কথা গুলো বলে হু হু করে কাঁদা শুরু করলো,আমি তার কান্না দেখে তাকে থামতে বললাম।
তারপর জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে আপনি কাদছেন কেন?আর এইখানে কিভাবে আসলেন।
আমাকে বলেন আর আমি কাদবেন না চিন্তা ও করবেন না আমি আপনাকে বাসে তুলে দেব।
তারপর জিজ্ঞেস করলাম কিছু খেয়েছেন রাতে?এই কথা বলার পর আবার কান্না।
আমার তখন মেজাজ বিগড়ে গেল আমি ধমক দিয়ে তাকে বললাম চুপ একদম কাদবেন না।
কি হয়েছে সেটা বলেন আর আপনার এই কান্নার রহস্য কী আর এই খানে বা কিভাবে আসলেন বলেন।
তারপর মেয়েটি বললো আমার নাম মিথিলা,আমি চট্টগ্রামের মেয়ে এইবার ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
আমার পরিবারে আমার বাবা আর সৎ মা আর সৎ ভাই আছে।আমি যখন ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি তখন যে তিন মাস ছুটি থাকে
সেই সময় আমার মামা আমাকে একটা মোবাইল উপহার দিয়েছিলো,সেই নতুন মোবাইল পেয়ে আমি তো খুব খুশী।
তো একদিন আমার এক বান্ধবীর কথায় মোবাইলে নতুন নতুন নাম্বার বানিয়ে মিসকল দিয়ে মজা করি। ও এই রকম মজা করে আর ওর সাথে এইভাবে একটা ছেলে প্রেম হয়ে গিয়েছিলো।
মেয়েটি কথা বলে যাচ্ছে আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি।একটা কথা ও বলছি না দেখে মেয়েটি বললো আপনি কি শুনছেন আমার কথা।
আমি তখন বললাম হুম শুনছি আপনি বলেন।তারপর মেয়েটি আবার বলতে শুরু করলো। এইভাবে একদিন নতুন নাম্বার বানিয়ে মিসকল দিলাম।
অপর প্রান্ত হতে সাথে সাথে কল ব্যাক করলো,আমি ভয়ে কল রিসিভ না করে আমার বান্ধবীর হাতে ধরিয়ে দিলাম। ও কল টা রিসিভ করে কথা বলা শুরু করলো।
ওদের ভেতর অনেক কথা হলো আমি শুধু শুনলাম,আমি কথা বলি নাই,তবে ছেলেটার কন্ঠ টা খুব সুন্দর ভরাট কন্ঠ। সেদিন ওরা দুজনে অনেক কথা বললো।
এক পর্যায় কল কেটে দেওয়ার আগে আমার বান্ধবী বললো আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন সেটা আমার বান্ধবীর নাম্বার।ও ভয়ে কথা বলেনি তাই আমি বললাম।
তখন ছেলেটা বললো তাকে একটু দেন তো কথা বলি,আমার বান্ধবী আমাকে ফোন টা দিলো আমি ভয়ে ভয়ে হ্যালো বলে কল কেটেদিলাম।
আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।কি বলবো চিনি না যানি তাই কেটে দিয়েছি।কিন্তু ছেলেটা বার বার কল করেই যাচ্ছিলো।
আমি একবার ও ধরি নাই,পরে ফোন বন্ধ করে দিয়েছিলাম,আর তার থেকে বড় ভয় পাচ্ছিলাম,আমার বাবা আর সৎ মা যদি জানতে পারে আমাকে মেরে ফেলবে।
সেদিনের মত আমি আর ফোন ওপেন করি নাই।তারপর দিন সকালে বান্ধবীর বাসায় গেলাম ওদের বাসা আর আমাদের বাসা পাশাপাশি।সেখানে গিয়ে ফোন টা ওপেন করলাম ওপেন করার সাথে সাথে
দেখলাম অনেক মেসেজ।সব গুলো মেসেজ পড়লাম।আর তার কিছুক্ষন পরে সেই ছেলেটি কল দিলো।এইবার আমি রিসিভ করলাম আর তার সাথে কথা বলা শুরু করলাম।
ছেলেটি আমার নাম জানতে চাইলো,আমার সব কিছু জানতে চাইলো আমি তাকে বললাম,তারও সব কিছু আমাকে জানালো। তার নাম সিহাব, সে লেখাপড়া করে কলেজে।তার পরিবারে সে আর তার বাবা মা।
এইভাবে তার সাথে আমার পরিচয়,আর কথা বলা শুরু,তারপর আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করলো ছেলেটাকে,তারপর ভালোবেসে ফেললাম।
একবার ছেলেটা চট্টগ্রামে গিয়েছিলো আমার সাথে দেখা করতে। সেদিন অনেক ঘুরলাম তাকে নিয়ে।তারপর আমি কলেজে ভর্তি হলাম।আমাকে আমার সৎ মা পড়াতে চাইনি।
আমি জোর করে বিষ খাবো ফাঁসী দেব এই ভয় দেখিয়ে বাবা কে ভর্তি করাতে বাধ্য করলাম।কলেজ ভালো চলছিলো তার সাথে সিহাবের সাথে প্রেম,খুব ভালো যাচ্ছিলো।
তার ভেতর একদিন আমার সৎ মা জেনে গেলো আমি মোবাইলে কার সাথে যেন রাতে কথা বলি।আর সেটা জেনে আমার ফোন কেড়ে নিলো আর আমাকে অনেক মারলো।
আমাকে আটকে রেখেছিলো ঘরে,আর বাবা কে বলেদিলো,সাথে এইটা ও বললো আমি নাকি কি সব করে বেড়ায়।আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে বলল তার বোনের ছেলের সাথে।
সেই ছেলের নেশা করে,আর আগে একটা বিয়ে হয়েছিলো সেই বউ কে অনেক মারতো তাই সেই বউ পালিয়ে গেছে।আমাকে সেখানে বিয়ে দেবে।
আমি সব শুনলাম দরজার সাথে কান পেতে।বাবা বলল তুমি যা ভালো মনে করো তাই করো।আমার কিছুই বলার নেই।আমি এই কথা শুনার পর
অনেক কেঁদেছিলাম,একবার মনে হয়েছিলো ফাঁসী দিয়ে মরে যাই,পরে সিহাবের কথা চিন্তা করে একটু মনোবল পেলাম ও বলেছিল,আমাকে ঢাকা পালিয়ে চলে আসতে।
ও আমাকে বিয়ে করবে।আমি তখন না করে ছিলাম বলেছিলাম আমার পরীক্ষা শেষ হলে তুমি বাসায় প্রস্তাব দিও,তারপর রাজী না হলে দেখা যাবে।
আমার তখন এই চিন্তা মাথায় ঘুরছিলো কিভাবে সিহাবের সাথে যোগাযোগ করা যাই।পরদিন সকালে মা এসে বললো রেডি হতে আমাকে আংটি পড়াতে আসবে তার বোন।
আমি তখন তার কথা মত রাজী হলাম,আর নিজেকে শক্ত করে তার কথা মত চলতে লাগলাম।আমাকে আংটি পরিয়ে গেল।আমি হাসি খুশী ভাবে রইলাম।তারপর আমার মোবাইল টা ও
আমার মা খুশী হয়ে দিয়ে দিলো সে কিছুই বুঝতে পারলো না আমি যে অভিনয় করছি।মোবাইল টা হাতে পেয়ে আমি যেন জান ফিরে পেলাম।আমি সাথে সাথে সিহাব কে কল করলাম।
ও তো রিসিভ করে অনেক প্রশ্ন শুরু করলো,আমি তাকে শুধু বললাম সব বলবো আগে শুনো আমি আজ এখনই ঢাকা আসছি তুমি আমাকে বাসস্ট্যান্ডে নিতে আসবে।
ওকে এখন রাখি আমার এখানে অনেক ঝামেলা।ও বলল আচ্ছা তুমি চলে আসো।আমি মাকে বললাম আমি একটু বান্ধবীদের বাসায় যাচ্ছি।মা তো মনে করলো সব ঠিক আছে।
তাই যেতে দিলো আমি আমার জমানো কিছু টাকা আর আমার মায়ের কিছু গয়না নিয়ে বের হলাম,সোজা বাসষ্ট্যান্ড এসে ঢাকার বাসে চড়ে বসলাম।
আর সিহাব কে কল করলাম করে বললাম আমি আসচ্ছি। ও বলল আচ্ছা আসো আমি বাসষ্ট্যান্ডে অপেক্ষা করবো।আমি ঢাকায় আসলাম ও আমাকে রিসিভ করলো।
খুব ভালো লাগছিলো তখন ওকে দেখে।ও আমাকে এক হোটেলে খাইয়ে বলল আমি তো এখন বাসায় নিতে পারবো না,তোমাকে আমার এক বান্ধবীর বাসায় নিয়ে রাখতে হবে।
তুমি ঐখানে কিছুদিন থাকার পর আমি আমার মাকে বলে তোমাকে বাসায় নিয়ে আসবো কেমন।আমি ওর কথা গুলো বিশ্বাস করে ওর সাথে এক ফ্ল্যাট বাসায় গেলাম।সে খানে আমার মত আরো ৪টা মেয়ে কে দেখলাম।
তারা আমাকে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।তাদের ভেতর একটা মেয়ে নীলা নাম তাকে বলল সিহাব ও এইখানে থাকবে ওকে দেখে রাখিস।
এই বলে আমাকে রুমে নিয়ে বসিয়ে সিহাব বলল তুমি কি টাকা পয়সা কিছু এনেছো আমার না হাত একদম খালি আর বাবা মার কাছে এখন নিতে পারবো না।কয়দিন আগে পরীক্ষার জন্য টাকা দিয়েছে।
তোমার জন্য তো কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে।এই কথা বলল,আমি ওকে ভালোবাসি আর বিশ্বাস করি,তাই ওকে বললাম আমি আমার জমানো হাজার পাঁচেক টাকা আর এই আমার মায়ের কিছু গহনা এনেছি।
তুমি এই গুলা রাখো,ও প্রথমে টাকা নিয়ে বলল আচ্ছা টাকা গুলো নেয় গহনা গুলো থাক তোমার মায়ের স্মৃতি,এই টাকায় চলবে আর দেখি আমি কারো কাছে ধার করে পাই কিনা।
আমি এই ধারের কথা শুনে ওকে বললাম তোমার ধার করতে হবে না,তুমি এই গুলো সব নিয়ে যাও।আমার মানে তো তোমার আর তোমার মানে আমার।
ও একটা হাসি দিয়ে বলল হুম আচ্ছা তুমি যখন এত করে বলছো না নিয়ে তো পারছিনা। বলে নিয়ে চলে গেল,আর বলে গেল তুমি থাকো আমি তোমার জন্য জামা -কাপড় কিনে নিয়ে আসচ্ছি।
ও চলে যাবার সময় নীলা কে কি কি জানো বলে গেল।ও চলে যাবার পর নীলা আমার রুমে আসলো আর
এসে জিজ্ঞেস করলো নাম কী কোথায় হতে এসেছি।এই লাইনে কত দিন।আমি নীলা কে নাম বললাম কোথা হতে এসেছি সেটা ও বললাম।
কিন্তু এই লাইনে কত দিন সেটা বুঝিনাই তাই উত্তর ও দিতে পারি নাই।ওকে জিজ্ঞেস করলাম এই লাইনে বলতে কি বুঝাতে চাইছো বলো।ও আমার কথা শুনে হেসে দিলো আর বলল কিছু না।
তারপর ও আমাকে ভাত খেতে দিলো,আমি ফ্রেস হয়ে ভাত খেলাম।আর খুব ক্লান্ত লাগছিলো সিহাবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম,হঠাত ফিসফিসানির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল
সিহাবের কন্ঠ শুনলাম নীলা কে কি জানো বলছে।আমি একটু শোনার চেষ্টা করলাম শুধু এইটুকু শুনতে পেলাম,পাখী আপনা আপনি জালে ধরা দিছে,এই টাকে দিয়ে অনেক টাকা কামানো যাবে।
একদম ইনটেক,আমি এই কথা শুনে মনের ভেতর ভয় ঢুকে গেল,পেপারে পড়েছিলাম এই ভাবে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের ধরে নিয়ে আসে আর তাদের দিয়ে জোর করে দেহ ব্যাবসা করায়।
আমি তখন এই সব মনে করে চুপসে গেলাম,আর ভয় পেতে শুরু করলাম।আর নিজেকে নিজে সান্তনা দিতে লাগলাম না সিহাব আমাকে ভালোবাসে সে আমার সাথে এমন করবে না।
একটু পর সিহাব আমার জন্য ২টা ত্রিপিস নিয়ে আসছে।আর এসে বলল কি ঘুমিয়েছিলে,ঘুম ভেঙ্গেছে।আচ্ছা তুমি ঘুমাও আমি আজ মায়ের সাথে কথা বলবো কাল সকালে আবার আসবো কেমন।
আমি ওর কথা সুনে শুধু মাথা নাড়ালাম,আমি বুঝতে দেয় নাই আমি যে ভয় পাচ্ছি,আর ওকে ও জিজ্ঞেস করি নাই আমি যা কিছু শুনেছি।ও চলে যাবার পর নীলা আসলো।
নীলা কে আমি জিজ্ঞেস করলাম আমি যা কিছু শুনেছি সেই গুলো নীলা প্রথমে হেসে হেসে বললো আরে ধুর বোকা কিছুনা,এই গুলা অন্য একটা কাহিনী নিয়ে কথা হয়েছিলো।
এইবার আমি কেঁদে দিয়ে ওর পা জড়িয়ে ধরে বললাম প্লিজ তুমি বল আমি যা শুনেছি সত্যি কিনা,তুমি ও তখন আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে আমি এই লাইনে কতদিন। প্লিজ তুমি বল প্লিজ।
আমি এক জাহান্নাম হতে বেঁচে এসে আরেক জাহান্নামে পড়লাম,আমি কেঁদে যাচ্ছি আর নীলা পা জড়িয়ে রেখেছি,নীলা আমাকে উঠিয়ে বসালো আর আমার কান্না থামাতে বলল,
তারপর বলল তুমি যা শুনেছো সব সত্যি কথা,সিহাব তোমাকে এতদিন যা কিছু বলেছে সব মিথ্যা,ও এই সব প্রতারনা করে মেয়েদের জালে ফাসিয়ে তাদের দিয়ে দেহ ব্যাবসা করায়,
আমি ও ওর এই প্রতারনার স্বীকার,প্রথম প্রথম আমিও তোমার মত কেঁদেছিলাম কিন্তু তখন কেউ ছিলোনা আর শোনে নি,এখন আমার সয়ে গেছে।কিন্তু আমি তোমাকে এই জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেব।
তুমি চিন্তা করো না আমার মত তোমার সর্বনাশ হতে দেবো না।তুমি এখন বাড়ি যেতে পারবে।আমি তোমাকে ঘর থেকে বের করে দেয়।তুমি এখনি পালিয়ে যাও।
আমি তার কথা শুনে একটু অভয় পেলাম,আর তাকে বললাম আমার কাছে তো কোন টাকা নেই আর আমি তো রাস্তা ঘাট কিছু চিনি না।
আমি সব ওকে দিয়ে দিয়েছি।নীলা বলল টাকা নিয়ে চিন্তা করো না,আমি দিচ্ছি তুমি যাও এখনি। আর রাস্তা ঘাট চিনতে হবে না,তুমি বাড়ি থেকে বের হয়ে সোজা একটা সিএনজি অথবা একটা ট্যাক্সি নিয়ে বাসষ্ট্যান্ড যাবা,
ঐখান হতে বাস ধরে চলে যাবে।আর পথে সমস্যা হলে মানুষ দের বলবে , কেমন ভালো থেকো বোন যাও,আর আমার জন্য ভেবো না ,আমাকে ও মেরে ফেলবে না।
তুমি যাও।আমি বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটা শুরু করলাম,খুব দ্রুত হেঁটে বড় রাস্তায় উঠলাম,কিন্তু কিছুই পাচ্ছিলাম না এত রাতে।তাই যে দিকে গাড়ি যাচ্ছে সেই দিকে হাঁটা শুরু করলাম।
আমার এই সীমানা হতে পালাতে হবে।ধরা পড়লে আমার সব শেষ।আর হাঁটতে হাঁটতে একটা রিক্সা পেলাম তাকে বললাম আমাকে বাসষ্ট্যান্ড নিয়ে যেতে সে আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলো পথে,
ছিনতাই কারী আমার টাকা নিয়ে গেল আর টাকা নেই বলে বাধ্য হয়ে রিক্সা ও ছেড়ে দিতে হলো।আর তখনই আপনাকে দেখলাম আপনি যখন ঐ মেয়েদের বলছিলেন আমি ঐ টাইপ না।
তখন আপনাকে ভালো মানুষ ভেবে আপনার পিছন পিছন হাঁটা শুরু করেছিলাম।
আমি এতক্ষণ চুপচাপ এই ঘটনা শুনছিলাম আর সিগারেট খাচ্ছিলাম। একটা কথা ও বলি নাই। আমি আসলে বুঝার চেষ্টা করছিলাম,মেয়েটার কথার ভঙ্গি দেখে ঘটনা টা কি সত্যি কিনা।
এখন মনে হচ্ছে ঘটনা সত্যি কারন সে প্রতারক হলে এতক্ষণ তার দলে লোকজন চলে আসতো আর আমার সর্বশ কেড়ে নেবার চেষ্টা করতো,যেহেতু এসে নাই সেহেতু মেয়েটিকে বিশ্বাস করা যাই।
তাই আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম আপনি কোন চিন্তা করবেন না।আমি আপনাকে নিরাপদে বাসে তুলে দেবো,আর তাতে ও যদি না হয় আমি নিজে আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌছায় দিয়ে আসবো।
এখন বলেন আপনি যাবেন কোথায় ?আর চলুন আগে কিছু খাবেন। আর আমাকে কি বিশ্বাস হয়।যদি হয় তবে কান্না থামিয়ে নির্ভয়ে আমার সাথে চলেন।
মিথিলা তার ঘুমটা সরিয়ে ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে যাওয়ার সময় তার মুখ খানা দেখলাম খুবই সুন্দর আর মায়াবী একটা চেহারা যে কেউ দেখলে প্রথম দেখায় তার প্রেমে পড়ে যাবে।
কিন্তু আমি হিমু হতে চাই তাই ঐ চিন্তা মাথা হতে বাদ দিলাম,তবে আমার অবচেতন মন বলছিলো এমন একটা মেয়ে জীবন সঙ্গিনী হলে আর কিছু চাওয়ার নেই।
আমি কি সব হাবিজাবি চিন্তা করছি নিজে কে নিজে ধমক দিলাম। আর তাকে নিয়ে হাঁটা ধরলাম,আমার পরিচিত হোটেলে নিয়ে গেলাম,
সেখানে তাকে খাওয়ালাম আর হোটেল মালিকের থেকে কিছূ টাকা নিয়ে তাকে বাসষ্ট্যান্ডে নিয়ে গেলাম।আর যাওয়ার সময় তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি যাবেন কোথায় ?
বাসায় যাবেন না অন্য কোথাও ? মেয়েটি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বললো জানি না মাথায় কিছু আসছে না,বাড়িতে ফিরে যাবোনা।মামার বাড়ি যাবো।
আমি তখন মনে মনে বললাম তুমি যেও না আমার সাথে থেকে যাও,আমাকে বিশ্বাস করতে পারো আমি প্রতারক নই। আমি এই রকম একজন মায়াবতী কে খুঁজছিলাম।
তুমি থাকলে আমার হারানো স্বপ্ন গুলো আবার ফিরে পাবো।আর আমি স্বাভাবিক জিবন-যাপন করা শুরু করবো।
কিন্তু আবার নিজেকে ধমক দিয়ে বললাম এই আমি কী ভাবছি আমি না মহাপুরুষ, আবেগ, মায়াহীন হিমু হবো।
আমি তো সাধনা ক্রছি,আমার এই সাধনা নষ্ট হতে দেয়া যাবে না।এই ভেবে আমি আবার আগের মত ভাবলেশহীন হয়ে পড়লাম।
আর তাকে নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে গিয়ে বসে রইলাম সকাল হবার অপেক্ষায়। অবশেষে ভোরের আলো ফুটলো,আমি তার জন্য টিকিট কেটে তাকে বাসে বসিয়ে দিলাম।
আর তার জন্য কিছু শুকনো খাবার কিনে আর অবশিষ্ট টাকা গুলো তাকে দিয়ে,বাস থেকে বিদায় নিয়ে নেমে পড়লাম,তারপর আবার তার জানালার কাছে গিয়ে।
তাকে শুভকামনা জানালাম,আর বললাম এইভাবে আর অপরিচিত কাউকে বিশ্বাস করবেন না।আর এই রকম ভুল সিদ্ধান্ত নেবেন না।আপনার ভাগ্য ভালো আমাকে পেয়েছেন।
না হলে আল্লাহ জানে আপনার কি হতো।ভালো থাকবেন।কথা গুলো বলার সময় বার বার আটকে যাচ্ছিলো।খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো। থেকে গেলে কী হয় না।
আমি আপনাকে অনেক গুলো ভালো সময় দেবার চেষ্টা করবো।কিন্তু আমি হিমু হবার পরিকল্পনা আছি তাই বলতে গিয়ে ও বলতে পারলাম না।
আর সে ও ছল ছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো,সে ও মনে হয় বলতে চেয়েছিলো আমাকে কিছু কিন্তু আমার ভাবলেশহীনের জন্য বলতে পারে নাই।
শুধু এই টুকু বললো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে সাহায্য করার জন্য,ভালো থাকবেন আপনিও।
বাস চলা শুরু করলো আমি দাঁড়িয়ে রইলাম আর তাকিয়ে থাকলাম বাসের দিকে।একবার মন বলে দৌড়ে গিয়ে বাসে উঠে বলি এই তুমি কি আমায় বিশ্বাস করো ?
যদি করো তাহলে আমার সাথে বাকী টা জীবন পার করতে পারবে ?কিন্তু না আমি পারলাম না।আমি হিমু হতে চাই মিথিলা তাই আমি বলতে পারি নাই।
আমি তোমার মায়া জড়াতে পারি নাই।শুধু এইটুকু বলি যেখানে থাকো ভালো থেকো অনেক শুভকামনা।আর বোকামি করবে না।
আর এইভাবে বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবে না।আর অপরিচিত কাউকে এত বিশ্বাস ও করবে না।
মনে মনে কথা গুলো বললাম আমি।না সকাল হয়ে গেছে।আমার এখন ঘুমাতে হবে।হিমুরা সকালে জেগে থাকে না।যাই ঘুমায়।