সারা দেশে আজ যে তান্ডব ঘটে গেল তা হয়তো বর্ণনা করা যাবে কিন্তু এই তান্ডব যে অশনি সংকেত দিয়ে গেল তা প্রকাশ করার ভাষা আমার আয়ত্বে নেই। শুধু বুঝতে পারছি, আমাদের কষ্টার্জিত গণতন্ত্রের ভাগ্যাকাশে অদূর ভবিষ্যতে গভীর অন্ধকার হানা দিতে যাচ্ছে আরো একবার। হয়তো এই অভাগা জাতিকে আবারো দেখতে হবে রাজপথের নিষ্ঠুরতা, রক্তপাত এবং হয়তো দেখতে হবে নতুন মোড়কে পুরনো অপশক্তির আবির্ভাব। আর এ সবকিছুই ঘটবে আমাদের বহুল চর্চিত ভুলে; আমাদের মেকি অহমিকার ফলে।
আজকে বিএনপির যে গণমিছিল হওয়ার কথা ছিল তার ঘোষণা এসেছিল এ মাসের গোড়াতে চট্টগ্রাম থেকে। অথচ এই কর্মসূচীর মাত্র কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগ ঘোষণা করলো পাল্টা কর্মসূচী। প্রচন্ড রাজনৈতিক বাক-বিতন্ডার মধ্যে এমন পাল্টা কর্মসূচী হঠাৎ করেই সহিংসতা ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। সেই সহিংসতার একটি নমুনা আজ আমরা দেখলাম। একই দিনে রাজপথে ৪ জনের মৃত্যু। রাজপথের সহিংসতা কতটা নিষ্ঠুর ও ভয়ানক হয় আজ আমার প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। মানুষ কিভাবে মানুষকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করতে পারে আজ নিজ চোখে আমি তার নমুনা দেখেছি। আমাদের এত অধঃপতন!
আজকের এই ঘটনার দায় বা দোষ কার? কাকে এর জন্য অভিযুক্ত করা যায়? আমি না হয় নাই বললাম কিন্তু আজকে যার সাথেই কথা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই বলেছে, আওয়ামী লীগ এসব কী করছে। কেন পায়ে পারা দিয়ে এই ঝগড়া! এটা অস্বীকার করা উপায় নেই যে, বিএনপির আন্দোলনে অন্যতম সহায়ক শক্তি হিসেবে যারা ভূমিকা পালন করছে তারা স্বাধীনতার চরম বিপক্ষ শক্তি। বিচার শুরু হবার কারণে তাদের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকীর মুখে। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতেই তারা ভর করেছে বিএনপির উপর, বেছে নিয়েছে চরম পন্থা। স্বাধীনতার এই বিপক্ষ শক্তিকে দমন করাটাও যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি দেশের প্রধান বিরোধী দলকে রাজপথের কর্মসূচী পালনে সহযোগিতা করাও সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। কারণ বিরোধী দল ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার নিঃস্ব এবং তার বৈধতাও প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ অত্যন্ত দুঃজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আন্দোলন প্রতিরোধ করার নামে আমাদের সরকার বিরোধী দলকে আরো চরম পন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের যারা পরামর্শদাতা কিংবা যারা সরকার চালান তারা কেন আন্দোলন প্রতিহত করার নামে এমন সহিংসতার দিকে নিজেদের ধাবিত করছেন তা বুঝা সত্যিই কষ্টকর। এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের পরিণাম কী হতে পারে তার স্পষ্ট নজির আছে কিন্তু দুঃখের বিষয় সরকারের কর্তব্যক্তিরা তা জেনেও না জানার ভান করছেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের প্রধান শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একটি প্রাচীনতম দল হিসেবে এই দলটিই নেতৃত্ব দিয়েছে এদেশের অধিকাংশ ও গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন সংগ্রামের। জনগণের আস্থা ও গণতন্ত্রের প্রতিশ্র“তি নিয়ে বহু ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে আজো টিকে আছে এই দলটি। এই দলের ইতিহাস ও পথচলার সাথে মিশে আছে জাতিরজনকের নাম। তারাই আজ ক্ষমতায়। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কোন কিছুর অভাব আছে বলে তো মনে হয়না। তাদের জনসমর্থন আছে, সংসদে সর্বাত্মক ক্ষমতা আছে। তাহলে তাদের এই আন্দোলন ভীতি কেন? বিএনপির একটি গণমিছিল কি তাদের ক্ষমতা কেড়ে নিতে সক্ষম? না। জনগণ না চাইলে কোন আন্দোলন দিয়েই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতচ্যুত করা যাবে না। আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতা দখল করেনি, পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতার মসনদ ছিনিয়ে নেয়নি। এদেশের অধিকাংশ ভোটারের বিপুল রায় নিয়েই দলটি ক্ষমতায় এসেছে।
এ কারণেই অসংখ্য দায়িত্বের বোঝা আওয়ামী লীগের কাঁধে। আর আমাদের কষ্টার্জিত গণতন্ত্র রক্ষা করার দায়িত্বও আওয়ামী লীগের। সে দায়িত্বের কথা ভুলে গেলে চলবে না। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ এমন কোন হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না যাতে দেশে চরম সহিংসতা সৃষ্টি হয় এবং এমন কিছু করবেন না যাতে সেই পুরনো অপশক্তি আবারো এদেশের গণতন্ত্র গ্রাস করার সুযোগ খুঁজে পায়। জনগণের প্রতি আস্থা রাখুন এবং জনকল্যানমূলক কাজে মনোযোগ দিন, জনগণ অবশ্যই আপনাদের পাশে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:২৮