একবার তার পদত্যাগের গুজব রটেছিল। সে গুজবকে আজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বলেছিলো, কোন এক অখ্যাত ওয়েবসাইট এই গুজব ছড়িয়েছে; পদত্যাগ করেননি এই অফিস ফাঁকি দেয়া মন্ত্রী। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ওই গুজব সত্য হলেই ভাল হতো। তার মত মন্ত্রী না থাকাই ভাল।
মন্ত্রীত্ব একটি সাংবিধানিক মর্যাদা; সংবিধানে সংযোজিত শপথবাক্য পাঠ করেই এ পদে আসীন হতে হয়। এই পদে যারা আসীন হন তাদের দায়িত্ব থাকে প্রজাতন্ত্রের মঙ্গলের জন্য অবিরাম কাজ করে যাওয়া; প্রজাতন্ত্রের মান-মর্যাদা রক্ষা করা। এ কাজটুকু যে করতে না পারে তার এই পদ আঁকড়ে থাকার কোন অধিকার নেই। সে এ পদের অযোগ্য। অধিকন্তু, দেশ চালাবার এই গুরু দায়িত্ব নিয়ে কেউ যদি সে দায়িত্ব পালনে অপারগতা বা অনাগ্রহ প্রকাশ করে তবে তো কথাই নেই; সে মহাঅযোগ্য। আমাদের এলজিআরডি মন্ত্রী তেমনই একজন।
সীমান্তে কত কয়েক দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশবাসীর মধ্যে যে অসন্তোষ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে তা মন্ত্রী পাড়ার কারোরি অজ্ঞাত নয়। কিন্তু সৈয়দ আশরাফ যে ভাষায় সেই উদ্বেগ-উৎকন্ঠাকে উড়িয়ে দিলেন তা দেশবাসীর গালে থাপ্পর মারার মতই। সীমান্তে বিএসএফ এর গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিক খুন হওয়া প্রসঙ্গে আমাদের মান্যবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একবার নির্দেশ জারি করেছিলেন, কোন বাংলাদেশীই যাতে রাতের বেলায় সীমান্তের কাছে ঘুরঘুর না করে। ভাবটা এমন, তুমি রাত-বিরাতে এদিক ওদিক ঘুরাফেরা করবা আর বিএসএফ তোমাকে গুলি করবে না তা কেমন করে হয়। আর এই ক্ষণে সেই বক্তব্যের বাকি অংশ প্রকাশ করে বাক্য পূর্ণ করলেন সৈয়দ আশরাফ। অতীতে মরেছো, এখনো মরছো আর ভবিষ্যতেও মরবা। তার ভাবখানা এমন যে, সীমান্তে থাক আর বিএসএফ গুলি করবে না তা কী করে হয়! সুতরাং মর। মানুষ মাত্রেই তো মরণশীল।
শুধু কী মরার প্রেসক্রিপশনই তিনি দিলেন? মোটেই না। তিনি সোজা বলে দিলেন, এসব নিয়ে ভাবনা করার সময় (ও সম্ভবত সাহস) তার ও তার সরকারের নেই। কাজকাম ফেলে এনিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা অকাট মূর্খতা। তার আরো অনেক কাজ আছে। তা তো বটেই! তিনি একজন কর্মব্যস্ত মানুষ। ব্যস্ততার কারণে রাত দশটার পরে লাল টেলিফোনেও তাকে পাওয়া যায়না, কাজের চাপে তিনি সকালে অফিসে যাবার সময় পাননা। তিনি এতই ব্যস্ত থাকেন যে, ফাইল সই করাতে মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদেরকেও তার বাসায় এসে ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করতে হয়। তার কর্মতালিকা এতোই দীর্ঘ যে, নিজ এলাকায় গিয়ে জনগণের সুখ-দুঃখ দেখার সময়ও পান না। এমন কর্মব্যস্ত মন্ত্রীর পক্ষে কী আর এইসব গরু চোরদের (!) মরা-বাঁচার খোঁজ নেয়ার সময় আছে? থাকেই বা কী করে?
সৈয়দ আশরাফ সাহেব, এতোই যদি ব্যস্ততা তবে মন্ত্রীত্বটা ধরে রেখেছেন কেন? যে কাজ পারবেন না সে কাজের জন্য বেতন নিচ্ছেন কেন? আপনার বেতনÑভাতা আর মর্যাদার রসদ তো এইসব গরুচোরদের (!) কাছ থেকেই আসে। দয়া করে মন্ত্রীত্বটা ছেড়েদিন। আমাদের আঙুলচোষা মন্ত্রীর দরকার নেই। আপনি মন্ত্রী থাকার অযোগ্য।