একসময় প্রচুর গোয়েন্দা কাহিনী পড়তাম আর ভাবতাম বড় হয়ে মাসুদ রানা,জেমস বন্ড বা শার্লক হোমসের মতো দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা হবো!হয়তো মনের গহীনে এখনো সেসবের প্রভাব রয়েছে!তাই আজো যখন পত্রিকায় রহস্যময় কোনো চাঞ্চল্যকর অপরাধের ঘটনা পড়ি আর দেখি পুলিশ,প্রশাসন অবহেলা,দুর্বলতা অথবা অলসতা বা অদক্ষতার জন্য রহস্যের সমাধানে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে তখন মনে হয় তার চেয়ে বরং আমি যদি গোয়েন্দা হতাম তো উপন্যাসের সেসব চৌকস গোয়েন্দাদের মতোই অনায়াসে রহস্যের সমাধান বের করতে পারতাম!ঠিক উপন্যাসের গোয়েন্দা কাহিনীর মতোই একটি জটিল রহস্যময় অপরাধ ঘটে গেছে রাজশাহীতে যেদিন রাবির শিক্ষক রেজাউল করিম নিহত হলেন ঠিক তার আগের দিন শুক্রবারে হোটেল নাইস ইন্টারন্যাশনালে!চাঞ্চল্যকর এই জোড়া খুনের একজন ভিকটিম সুমাইয়ার বাবা নিজেই নাকি একজন ডিবির এসআই যিনি গাইবান্ধায় কর্মরত!আজ আটদিন হয়ে গেলেও নৃশংস এই জোড়া খুনের জট খোলেনি আজও!ঠিক যেমন তনু হত্যাকাণ্ডের জটও এখনো খুলতে পারেনি পুলিশ!আর রাজশাহীর এ ঘটনাটি আরো অবহেলিত হয়ে পড়েছে রাবি শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের প্রেসারে!আসলে বিচার তো দুরের কথা এদেশে ঘটনার প্রকৃত তদন্ত বা রহস্য উদঘাটনই হয়না!যাক সেকথা!সেসব আক্ষেপ করেও বা এখন লাভ কি?আজ দেখলাম দৈনিক শিক্ষা ডট কম ২৭শে এপ্লিল এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের একটি ফলোআপ রিপোর্ট তৈরি করেছে!আসুন দেখি তারা কি রিপোর্ট করেছেনঃ
রাজশাহীর হোটেল নাইস
ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃপক্ষের
যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয়
পড়ুয়া দুই শিক্ষার্থীকে হত্যা
করা হয়েছে বলে অভিযোগ
স্বজনদের। পরে গোপন দরজা
দিয়ে খুনিরা পালিয়ে যায়
বলে দাবি তাদের।
এদিকে দুই লাশ উদ্ধারের পর ৫
দিন পেরিয়ে গেলেও রহস্য
উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ।
গ্রেফতার হয়নি কেউ। তবে
রাজশাহী মহানগর পুলিশ
বলছে, রাবি শিক্ষকের খুনের
ঘটনায় সবাই ব্যস্ত। যে কারণে
এ মামলায় তেমন সময় দেয়া
সম্ভব হয়নি। তবে তদন্ত চলছে। খুব
শিগগিরই খুনিরা ধরা পড়বে।
স্বজনদের দাবি, হোটেলে
থাকা ক্লোজড সার্কিট
(সিসি টিভি) ক্যামেরার
ফুটেজ এখনো সংগ্রহ করেনি
পুলিশ। হোটেল কর্তৃপক্ষের
নিয়ন্ত্রণেই রয়ে গেছে
ভিডিও ফুটেজ। এগুলো সংগ্রহ
না করলে তা নষ্ট করা হতে
পারে।
ডিবি পুলিশও হত্যায় হোটেল
নাইসের যোগসাজশ থাকতে
পারে বলে ধারণা করছে।
ডিবি পুলিশ সূত্রমতে ও খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে,
হোটেলটিতে গুপ্ত কক্ষ
রয়েছে। এক কক্ষ থেকে আরেক
কক্ষে গোপনে নজরদারি
কিংবা প্রবেশের জন্য গুপ্ত
দরজারও সন্ধান পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার নাইস
ইন্টারন্যাশনালের ৩০৩ নম্বর
কক্ষ থেকে পাবনা বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী সুমাইয়া নাসরিন
(২০) ও রাবির ইসলামের
ইতিহাস ও সংস্কৃতি
বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের
ছাত্র মিজানুর রহমানের (২৩)
হাত বাঁধা ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
করা হয়। হোটেল মালিক
খন্দকার হাসান কবীর
সাংবাদিকদের কাছে
ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে দাবি
করেন। যা নানামুখী প্রশ্নের
জন্ম দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন,
মিজানের মরদেহ দুই হাত
বাঁধা অবস্থায় সিলিং
ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে
গলায় ফাঁস লাগানো ছিল।
প্রতিবন্ধী মিজানের পক্ষে
১২ ফুট উঁচুতে সিলিং ফ্যানে
ঝুলে আত্মহত্যা অসম্ভব। ওই ঘরে
সিলিং ফ্যানে ঝোলার জন্য
ছয় ফুট উচ্চতার তেমন কোনো
আসবাবপত্র ছিলো না।
মিজানকে হত্যার পর ফ্যানের
সাথে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে
এটিই প্রমাণ করে। মিজানের
পরনের প্যান্ট ছিল পা পর্যন্ত
খোলা।
নিহত সুমাইয়া নাসরিনের বড়
বোন মাহবুবাও দুজনকে অন্য
কেউ হত্যা করেছে বলে
দাবি করেন। তিনি বলেন,
সুমাইয়াকে মিজানুর খুন করতে
পারে না। পুলিশের ভাষ্যমতে
মিজানুর শারীরিক প্রতিবন্ধী
ছিল। তার এক পা খাটো।
সুমাইয়া উচ্চতায় ৫ ফিট ৪
ইঞ্চি ও শারীরিকভাবেও
শক্তিশালী। মিজানুর তাকে
সহজে বালিশ চেপে খুন করতে
পারে না। যদি তাই হয়ও তবে
সে আত্মহত্যা করবে; কিন্তু
তার হাত বাঁধা অবস্থায়
মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ
হত্যাকাণ্ডে অবশ্যই হোটেল
কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ রয়েছে।
নিহত মিজানুরের মামা ইউনূস
আলী বলেন, মিজানুর ও ওই
মেয়েকে খুন করা হয়েছে। কে
বা কারা কিভাবে কেন খুন
করেছে তা খতিয়ে দেখার
দায়িত্ব পুলিশের। সুমাইয়াকে
হত্যার পর মিজানুর আত্মহত্যা
করে এমনটাই সাজানোর
চেষ্টা চলছে।
এ পর্যন্ত মামলার অগ্রগতি হয়নি
বলে জানান মামলার তদন্ত
কর্মকর্তা বোয়ালিয়া থানার
ওসি (তদন্ত) সেলিম বাদশা।
তিনি বলেন, দুজনকেই হত্যা
করা হয়েছে এবং হত্যার আগে
মেয়েটির ওপর পাশবিক
নির্যাতন হয়েছে।