পবিত্র কুরআনের শুরা ফীল একটি বহুল পঠিত শুরা!এই শুরাতেই বর্ণিত হয়েছে আবরাহার হস্তিবাহীর মর্মান্তিক পরিণতীর কথা যে আবরাহা ধ্বংস করতে চেয়েছিলো পবিত্র কাবাঘর!শেষ পর্যন্ত নিজেই চূড়ান্তভাবে ধ্বংস হয়েছিল ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহা তার সম্পূর্ণ দলবল সহ!ইসলাম বিরোধীরা হয়তো ভাবতে পারে এ নিছক ধর্মীয় আবেগে রচিত কল্পকাহিনী!আসলেই কি তাই?আসুন দেখি ইতিহাস কি বলে?উইকিপিডিয়ায় ফীল লিখে সার্চ করলেই যে পেজটি পাওয়া যায় তার বর্ননা নিম্নরুপঃ
হাবশা (বর্তমান ইথিয়োইপিয়া )
সম্রাটের কাছ থেকে যখন ইয়ামনের
একজন সরদার ইয়ামনের গভর্ণর হবার
পরোয়ানা হাসিল করে,তখন হাবশী
সৈন্যরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু
করে। তারা আবরাহাকে তার জাগায়
গভর্ণর পদে অধিষ্ঠিত করে। আবরাহা
ছিল হাবশার আদুলিস বন্দরের একজন
গ্রীক ব্যবসায়ীর ক্রীতদাস। নিজের
বুদ্ধিমত্তার জোরে সে ইয়ামন
দখলকারী হাবশী সেনাদলে ব্যাপক
প্রভাব সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। হাবশা
সম্রাট তাকে দমন করার জন্য
সেনাবাহিনী পাঠায়। কিন্তু এই
সেনাদল হয় তার সাথে যোগ দেয়
অথবা সে এই সেনাদলকে পরাজিত
করে। অবশেষে হাবশা সম্রাটের মৃত্যুর
পর তার উত্তরাধিকারী তাকে
ইয়ামনে নিজের গভর্ণর হিসাবে
স্বীকার করে নেয়। (আবরাহা সম্ভবত
হাবশী উচ্চারণ কারণ আরবীতে এর
উচ্চারণ ইবরাহীম।) পরে সে ধীরে
ধীরে ইয়ামনের স্বাধীন বাদশাহ
হয়ে বসে। ৫৪৩ খৃষ্টাব্দে সদ্দে
মাআরিব এর সংস্কার কাজ শেষ করে
সে একটি বিরট উৎসবের আয়োজন করে।
এই উৎসবের বিভিন্ন দেশ থেকে লোক
আসে। সদ্দে মাআরিবে আবরাহা
স্থাপিত শিলালিপিতে এ সম্পর্কিত
পূর্ণ আলোচনা সংরহ্মিত রয়েছে।
সে ইয়ামনের রাজধানী সান্আ'য়
একটি বিশাল গীর্জা নির্মাণ করে।
আরব ঐতিহসিকগণ একে 'আল কালীস' বা
'আল কুলীস' অথবা 'আল কুল্লাইস' নামে
উল্লেখ করেছেন। মুহাম্মদ ইবনে
ইসহাকের বর্ণনা মতে, একাজটি সম্পন্ন
করার পর সে হাবশার বাদশাহ্কে
লিখে জানায়, আমি আরবদের হজ্জকে
মক্কার কা'বার পরিবর্তে সানআর
গীর্জার দিকে ফিরিয়ে না দিয়ে
হ্মান্ত হবো না। সে মক্কা আক্রমণ
এবং কুরাইশদেরকে ধ্বংস ও সমগ্র
আরববাসীকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে দিতে
সফলকাম হতে পারবে বলে মনে
করছিল। আবরাহার কাছে যখন এ
রিপোর্ট পৌঁছুল যে, কাবার ভক্ত
অনুরক্তরা তার গীর্জার অবমাননা
করেছে তখন সে কসম খেয়ে বসে,
কা'বাকে গুঁড়িয়ে মাটির সাথে
মিশিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমি স্থির
হে বসবোনা।
তারপর ৫৭০ বা ৫৭১ খৃষ্টাব্দে সে ৬০
হাজার পদাতিক, ১৩টি হাতি (অন্য
বর্ণনা মতে ৯টি হাতি) সহকারে
মক্কার পথে রওয়ানা হয়। পথে প্রথমে
যু-নফর মানক ইয়ামনের একজন সরদার
আবরদের একটি সেনাদল সংগ্রহ করে
তাকে বাধা দেয়। কিন্তু যুদ্ধে সে
পরাজিত ও ধৃত হয়। তারপর খাশ'আম
এলাকায় নুফাইল ইবনে খাশ'আমী তার
গোত্রের লোকদের নিয়ে তার পথ
রোধ করে। সেও পরাজিত ও গ্রেফতার
হয়ে যায়। সে নিজের প্রাণ
বাঁচাবার জন্য আবরাহার সেনাদলের
পথ প্রদর্শনের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ
সেনাদল তায়েফের নিকটবর্তী হলে
বনু সকীফ অনুভব করে যে এত বড় শক্তির
মোকাবিলা করার হ্মমতা তাদের
নেই এবং এই সংগে তারা এ আশংকাও
করতে থাকে যে, হয়তো তাদের লাত
দেবতার মন্দিরও তারা ভেঙে
ফেলবে। ফলে তাদের সরদার মাসউদ
একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আবরাহার
সাথে দেখা করে। তারা তাকে
বলে, আপনি যে উপাসনালয়টি ভাঙতে
এসেছেন আমাদের এ মন্দিরটি সে
উপাসনালয় নয়। সেটি মক্কায় অবস্থিত।
কাজেই আপনি আমাদেরটায় হাত
দেবেন না। আমরা মক্কার পথ
দেখাবার জন্য আপনাকে পথ প্রদর্শক
সংগ্রহ করে দিচ্ছি। আবরাহা তাদের
এ প্রস্তাব গ্রহণ করে। ফলে বনু সাকীফ
আবু রিগাল নামক এক ব্যক্তিকে তার
সাথে দিয়ে দেয়। মক্কা পৌঁছতেই
যখন আর মাত্র তিন ক্রোশ পথ বাকি তখন
আলমাগান্মাস বা আল মুগান্মিস নামক
স্থানে পৌঁছে আবু রিগাল মারা
যায়। আরবরা দীর্ঘকাল পর্যন্ত তার
কবরে পাথর মেরে এসেছে। এরপর সে
মক্কাবাসীদের কাছে নিজের একজন
দূতকে পাঠায়। তার মাধ্যমে
মক্কাবাসীদের কাছে এই মর্মে
বাণী পাঠায়ঃ আমি তোমাদের
সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি
এসেছি শুধুমাত্র এই ঘরটি (কাবা)
ভেঙে মাটির সাথে মিশিয়ে
দিতে। যদি তোমরা যুদ্ধ না করো
তাহলে তোমাদের প্রাণ ও ধন-
সম্পত্তির কোনো ক্ষতি আমি
করবোনা। তাছাড়া তার এক দূতকেও
মক্কাবাসীদের কাছে পাঠায়।
মক্কাবাসীরা যদি তার সাথে কথা
বলতে চায় তাহলে তাদের সরদারকে
তার কাছে নিয়ে আসার নির্দেশ
দেয়।
আবদুল মুত্তালিব (রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) -এর
দাদা ) তখন ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বড়
সরদার। দূত তাঁর সাথে সাহ্মাত করে
আবরাহার পয়গাম তাঁর কাছে পৌঁছয়ে
দেয়। তিনি বলেন, আবরাহার সাথে
যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। এটা
আল্লাহ্র ঘর তিনি চাইলে তাঁর ঘর
রহ্মা করবেন। দূত বলে, আপনি আমার
সাথে আবরাহার কাছে চলুন। তিনি
সম্মত হন এবং দূতের সাথে আবরাহার
কাছে যান। তিনি এতই সুশ্রী,
আকর্ষণীয় ও প্রতাপশালী ব্যক্তিত্ব
ছিলেন যে, আবরাহা তাকে দেখে
অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ে। সে
সিংহাসন থেকে নেমে তার সাথে
এসে বসে। সে তাঁকে জিজ্ঞেস করে,
আপনি কি চান? তিনি বলেন, আমার
যে উটগুলি ধরে নেয়া হয়েছে
সেগুলি আমাকে ফেরত দেয়া হোক।
আবরাহা বলল, আপনাকে দেখে তো
আমি বড় প্রভাবিত হয়েছিলাম। কিন্তু
আপনি নিজের উটের দাবী
জানাচ্ছেন, অথচ এই যে ঘরটা আপনার ও
আপনার পূর্ব পুরুষদের ধর্মের কেন্দ্র সে
সম্পর্কে কিছুই বলছেন না, আপনার এ
বক্তব্য আপনাকে আমার দৃষ্টিতে
মর্যাদাহীন করে দিয়েছে। তিনি
বলল, আমি তো কেবল আমার উটের
মালিক এবং সেগুলির জন্য আপনার
কাছে আবেদন জানাচ্ছি। আর এই ঘর।
এর একজন রব-মালিক ও প্রভু আছেন। তিনি
নিজেই এর হেফাজত করবেন। আবরাহা
জবাব দেয়, তিনি একে আমার হাত
থেকে রহ্মা করতে পারবেনা। আবদুল
মুত্তালিব বলেন, এব্যাপারে আপনি
জানেন ও তিনি জানেন। এ কথা বলে
তিনি সেখান থেকে উঠে পড়েন।
আবরাহা তাকে তার উটগুলো
ফিরিয়ে দেয়।
আবরাহা সেনাদল কাছে থেকে
ফিরে এসে আবদুল মুত্তালিব
কুরাইশদেরকে বলেন, নিজেদের
পরিবার পরিজনদের নিয়ে
পাহাড়ের ওপর চলে যাও, এভাবে
তারা ব্যাপক গণহত্যার হাত থেকে
রহ্মা পাবে। অতপর তিনি ও
কুরাইশদের কয়েকজন সরদার হারম
শরীফে হাযির হয়ে যান। তারা
কাবার দরজার কড়া ধরে আল্লাহ্র
কাছে এই বলে দোয়া করতে থাকেন
যে, তিনি যেন তাঁর ঘর ও তাঁর
খাদেমদের হেফাজত করেন। সে সময়
কাবা ঘরে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। কিন্তু
এই সংকটকালে তারা সবাই এই
মূর্তিগুলির কথা ভুলে যায়। তারা
একমাত্র আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা
করার জন্য হাত ওঠায়। ইতিহাসের
বইগুলিতে তাদের প্রার্থণা বাণী
গুলি বিভিন্ন উদ্ধৃত হয়েছে, তার
মধ্যে একটি হল নিন্মরূপঃ
“ হে আমার রব! তাদের মোকাবিলায়
তুমি ছাড়া কারো প্রতি আমার আশা নেই,
হে আমার রব! তাদের হাতে থেকে
তোমার হারমের হেফাজত করো।
এই ঘরের শত্রু তোমার
শত্রু, তোমার জনপদ ধ্বংস করা থেকে
তাদেরকে বিরত রাখো। ”
এ দোয়া করার পর আবদুল মুত্তালিব ও
তার সাথীরাও পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয়
নেন। পরের দিন আবরাহা মক্কায়
প্রবেশ করার জন্য এগিয়ে যায়। কিন্তু
তার বিশেষ হাতি মাহমুদ ছিল সবার
আগে, সে হঠাৎ বসে পড়ে। কুড়ালের
বাঁট দিয়ে তার গায়ে অনেকক্ষণ
আঘাত করা হয়। তারপর বারবার
অংকুশাঘাত করতে করতে তাকে আহত
করে ফেলা হয়। কিন্তু এত বেশী
মারপিট ও নির্যাতনের পরেও সে
একটুও নড়েনা। তাকে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব
দিকে মুখ করে চালাবার চেষ্টা
করলে সে ছুটতে থাকে কিন্তু মক্কার
দিকে মুখ ফিরিয়ে দিলে সংগে
সংগেই গ্যাঁট হয়ে বসে পড়ে।
কোনো রকমে তাকে আর একটুও
নড়ানো যায় না। এ সময় ঝাকে
ঝাকে পাখিরা ঠোঁটে ও পাঞ্জায়
পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে। তারা
সেনাদলের ওপর পাথর বর্ষণ করতে
থাকে। যার ওপর পাথর কণা পড়তো
তার দেহ সংগে সংগে গলে যেতে
থাকতো। ইবনে আব্বাসের (রাঃ)
বর্ণনা মতে, যার ওপরই পাথর কণা
পড়তো তার সারা গায়ে ভীষণ
চুলকানি শুরূ হতো এবং চুলকাতে
চুলকাতে চামড়া ছিঁড়ে গোশত ঝরে
পড়তে থাকতো। আবরাহা নিজেও এই
অবস্থার সম্মুখীন হয়। তার শরীর টুকরো
টুকরো হয়ে খসে পড়তো এবং যেখান
থেকে এক টুকরো গোশত খসে পড়তো
সেখান থেকে রক্ত ও পুঁজ ঝরে পড়তে
থাকতো। বিশৃংখলা ও হুড়োহুড়ি
ছুটাছুটি মধ্যে তারা ইয়ামনের
দিকে পালাতে শুরু করে। খাশ'আম
এলাকা থেকে যে নুফাইল ইবনে
হাবীব খাশ'আমীকে তারা পথ প্রদর্শক
হিসাবে নিয়ে আসে তাকে খুঁজে
পেয়ে সামনে নিয়ে আসা হয় এবং
তাকে ফিরে যাবার পথ দেখিয়ে
দিতে বলা হয়। কিন্তু সে সরাসরি
অস্বীকার করে বসে। আবরাহা খাশ'আম
এলাকায় পৌঁছে মারা যায়।
এই হলো উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত ঐতিহাসিক ঘটনা!এটি পড়ে ইয়েমেনের বাদশাহ আবরাহার অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্দেহের আর কোনো অবকাশই থাকেনা!এমনকি তার কাবা আক্রমণ এবং তার উদ্দেশ্য,স্বার্থও সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত!এরপরও কেউ সন্দেহ করলে তার কাছে প্রশ্ন সেসময় রোম এবং আবিসিনিয়ার সমর্থনপুস্ট আবরাহার বাহিনী নিঃসন্দেহে আরবদের চেয়ে শক্তিশালী ছিলো।তাহলে আবরাহা কাবাঘর ধ্বংস না করেই ফিরে গেলো কিসের ভয়ে?এটি মাত্র ৫৭০ সালের ঘটনা!কোনো প্রাগৈতিহাসিক ঘটনা নয়!তাহলে আবরাহা তার বাহিনীসহ ধ্বংস হলো কিভাবে,যেখানে আরবরা যুদ্ধ করা তো দুরের কথা বরং পাহাড়ে লুকিয়ে ছিলো?
পবিত্র কুরআনের শুরা ফীলের ভাষায়ঃ
১) তুমি কি দেখনি তোমার রব
হাতিওয়ালাদের সাথে কি
করেছেন?
২) তিনি কি তাদের কৌশল
ব্যর্থ করে দেননি?
৩) আর তাদের ওপর ঝাঁকে ঝাঁকে
পাখি পাঠান।
৪) যারা তাদের ওপর নিক্ষেপ
করছিল পোড়া মাটির পাথর।
৫) তারপর তাদের অবস্থা করে
দেন পশুর খাওয়া ভূষির মতো।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৪