মা হওয়ার আকুতি
উৎসর্গঃ সকল জননীকে।পৃথিবীর সকল জননীর প্রতি রইল অপরিসীম শ্রদ্ধা।
.
রুবিনা ডাক্তার বলছে, তোমার মা হওয়ার ক্ষমতা নেই।
রুবিনা আবিদের কথা শুনে বলল, আবিদ হয়ত ভুল রির্পোট আসছে।
আবিদ বলল, রুবিনা দেখো, এ নিয়ে তিনবার পরিক্ষা হল। একবার ভুল আসতে পারে, দুইবার আসতে পারে; তাই বলে তিনবার আসতে পারে না।
আবিদের কথা শুনে রুবিনা খাটে বসে পড়ল।
আবিদ রুবিনার কাছে এসে রুবিনাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল, দেখো আমি কখনো বাবা ডাক শুনতে পারব তাতে কিন্তু আমার একবিন্ধু আক্ষেপ নেই; রুবিনা তুমি থাকলেই আমার চলবে।
রুবিনা আবিদের কথা শুনে বলল, আমি কখনো মা ডাক শুনতে পারব না?
আবিদ রুবিনার কথাই কোনো জবাব দিতে পারল না, শুধু আগের থেকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।
রুবিনা আর আবিদ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তাদের দুইজনের চার চোখ দিয়ে ঝর্ণার মত একাধারে পানি পড়ছে।
.
তিন বছর পূর্বে
.
সবার মত রুবিনা তিন বছর আগে লাল শাড়ি পড়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিল। বাসর রাতে তার সাথে যে মানুষটি ছিল তার নাম আবিদ। বাসর রাতের আগে আবিদকে ঠিকভাবে চিনতও না। শুধু আবিদের মা যেদিন রুবিনাকে পছন্দ করে আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেছিল সেদিন এক নজর দেখেছিল।
বাসর রাতে আবিদ কাচুমাচু হয়ে রুবিনাকে বলেছিল, আমার কাছ থেকে আপনি কিছু চাওয়ার থাকলে চাইতে পারেন; আমার সামর্থ্য থাকলে আমি পূরণ করব।
তখন রুবিনা খুশি হয়ে বলে উঠেছিল, আপনার ভালোবাসা আর দুইটা পাখির মত ছেলে মেয়ে।
আবিদ রুবিনার কথাশুনে কিছুক্ষনের জন্য থতমত খেয়ে গেল; তুবও সেদিন মুখে বলেছিল, ঠিক আছে।
.
সেদিন শুরু হয়েছিল আবিদ আর রুবিনার এক পবিত্র বন্ধন। যে বন্ধনে রয়েছে অগনিত ভালোবাসা, যে ভালোবাসায় হাসি দুষ্টামি, রাগ, অভিমান সব রয়েছে। তিন বছরেও সে বন্ধনে ভালোবাসার কোনো কমতি হল না। শুধু জন্ম নেওয়া বাকি রয়ে গেল দুইটা পাখির মত ছেলেমেয়ে।
.
বর্তমান
কিছুদিন পর আবিদ একদিন অফিস থেকে ফিরে এসে দেখল, ঘরে ধূপের ধোঁয়া উড়ছে। আবিদ খেয়াল করে দেখল, ঘরের মাঝখানে একটি অগ্নিস্তূফ। একপাশে লাল আলখেল্লা পড়া এক লোক বসে বসে কি যেন পড়ছে আর অন্যপাশে রুবিন আর পাশের ফ্লাটের মিলি ভাবি চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছে।
.
এসব কর্মকান্ড দেখে আবিদ বুঝে গেল কি হচ্ছে। আবিদ এগিয়ে গিয়ে রুবিনাকে থাপ্পড় দিয়ে দিল, সঙ্গে সঙ্গে অগ্নিস্তূপের অন্যপাশে বসা কথিত লোক চিৎকার দিল।
রুবিনা সঙ্গে সঙ্গে চোখ খুলে স্বামীকে দেখে বলল, তুমি কি করছ…? বাবা রাগ করবে তো!!!
আবিদ রুবিনাকে বলল, এসব ভন্ড বাবার কথা বাদ দেও। এর আগেও মাজার সহ কত বাবার কাছে গেছিলে? কি লাভ হল? আর আজকে এসব জফতফ করতে তোমাকে কে বলছে?
আবিদ রুবিনার ঝগড়ার মাঝে হঠাৎ কথিত বাবা বলে উঠল,
অনর্থক!! ঘোর অনর্থক!! তুই আমার মন্ত্রে বাধা দিলি, তুই কখনো বাবা হতে পারবি না।
কথিত বাবার কথা শুনে আবিদের মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে গেল। সে কথিত বাবাকে উল্টোপাল্টো অনেক কথা বলে খেদিয়ে দিল।
পাশের বাসার মিলিভাবি আবিদের কর্মকান্ড দেখে আবিদকে বলে উঠল, এ জন্যই তো আপনি বাবা হতে পারলেন না!!!
মিলির ভাবির কথা শুনে আবিদের মেজাজ চরম উতরে বলে উঠল তাই গরম হয়ে বলে ফেলল, আপনি তো মা হয়েছেন। আমাদের অনেক আগে অনেক আগে বিয়ে হয়েছে। আপনার ছেলে মাশাল্লাহ ক্লাস সেভেনে পড়ে। আপনার সেভেন পড়ুয়া ছেলেকে ঐদিন দেখলাম রাস্তার মোড়ে বিড়ি টানে। মাঝে মাঝে বাসা থেকে বাহির হওয়ার সময় আপনার বাসার থেকে শুনি আপনার ছেলে টাকার জন্য আপনার সঙ্গে চিৎকার দিচ্ছে।
আবিদের কথা শুনে মিলিরও মেজাজ প্রচন্ড গরম হয়ে গেল। তিনি রুবিনাকে বলা শুরু করলেন, এ জন্যই তো মানুষের উপকার করতে নেই। উপকার করতে আসলেই উল্টো সমস্যা।
রুবিনা পরিস্থিতি শান্ত করতে তাড়াতাড়ি বলল, ভাবি রাগ করবেন না। আসলে ও এসব সহ্য করতে পারে না তো তাই।
মিলি ভাবি কি যেন বলতে গেল কিন্তু আবিদ জোরেই বলে ফেলল, আপনি আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে যান।
আবিদের কথাশুনে মিলি মুখে উল্টা পাল্টা বলতে বলতে ঘর থেকে বহির হয়ে গেল। পিছন থেকে অবশ্য রুবিনা মিলিভাবিকে আটকানোর চেষ্টা করল।
মিলি ভাবি চলে যেতেই রুবিনা আবিদের কাছে এসে বলল, তুমি এমন করলে কেন??
আবিদ রুবিনাকে পাল্টা চিৎকার দিয়ে বলল, যা অসম্ভব তা করতে গেলে কেন? আমাদের বাচ্চার প্রয়োজন নেই।
রুবিনা আবিদের কথা শুনে কিছু বলল না, একদম চুপ করে রইল।
স্ত্রীকে চুপ করে থাকতে দেখে আবিদ বলে উঠল, আচ্ছা তোমার কাছে আমি কোনোদিন বাচ্চা চেয়েছি??
রুবিনা জানে আবিদ কোনোদিন তার কাছে বাচ্চার কথা বলে নি তাই সে চুপ করেই থাকল।
স্ত্রীকে কিছু না বলতে দেখে আবিদ কপট রাগ দেখিয়ে ফ্রেশ হওয়ার জন্য প্রস্থান করল।
আবিদ ফ্রেশ হয়ে এসে খাটে শুয়ে থাকল। রুবিনা আবিদকে শুয়ে থাকতে দেখে বলল, টেবিলে খাবার দিয়েছি, এস খাবে…………………
আবিদ খাট থেকে উঠে রুবিনার হাত ধর। রুবিনা স্বামীর আচরণ দেখে মাথা নিচু করে রইল। আবিদ রুবিনাকে বলল, আমার দিকে তাকাও।
রুবিনা স্বামীর কথায় মাথা উপর করে স্বামীর দিকে তাকাল। স্ত্রীকে মাথা উপর করতে দেখে আবিদ বলে উঠল. আমাদের কোনোদিন বাচ্চা লাগবে না, যা হওয়ার নই, তা নিয়ে ভেবে কি লাভ? দেখবে আমরা দুইজনে মিলে সুন্দর করে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারব।
আবিদের কথা শুনে রুবিনা কাঁদতে শুরু করে দিল। অতপর রুবিনা মুখে শুধু বলল, হুম।
আবিদ আবার বলল, দেখো না কতজনের সন্তান নাই কিন্তু তাদের দুঃখ নেই। সুন্দর করে জীবনটা কাটিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকের সন্তান আছে, দেখা যাচ্ছে বড় হয়ে বাবা মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে। কিছুদিন আগেই তো তুমি টিভিতে দেখলে মেয়ে বাবামাকে খুন করছে। যদি আমাদের সন্তান খারাপ হয় তাহলে ঐ সন্তান দিয়ে কি লাভ?? এর থেকে সন্তান না হওয়ায় ভালো।
রুবিনা এবারও মুখে নাড়িয়ে সহমত প্রকাশ করল। আবিদ রুবিনাকে বলল, তাহলে তুমি কথা দেও আর কোনোদিন সন্তানের জন্য মাজার, হুজুর, পীর, ভন্ডবাবা এসবের কাছে যাবে না। শুধু আল্লাহর কাছে বলবে আমরা সারাজীবন একসাথে সুখে থাকতে পারি।
রুবিনা কাঁদতে কাঁদতে বলল, ঠিক আছে।
স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে আবিদ স্ত্রীর চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিল। পানি মুছে দিতে দিতে বলল, চল খাবে।
রুবিনা স্বামীকে নিয়ে টেবিলে চলে গেল।
.
এরপর অনেকদিন আর রুবিনা মা হওয়ার জন্য জেদ ধরল না। একদিন আবিদ বাজার বাজার থেকে এসে দেখল, তার ঘরে অনেক মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে সোফার দিকে খেয়াল করে দেখল রুবিনা একটা বাচ্চাকে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে কোলে রেখে দিয়েছে। কিছুক্ষন পর পর বাচ্চাটাকে চুমু দিচ্ছে।
আবিদ রুবিনার কার্য্কলাপ দেখে কিচুক্ষনের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। কিছুক্ষনের মধ্যে নিজেকে ঠিক করে নিয়েই রুবিনার কাছে গিয়ে বলল, এ বাচ্চাটা কার??
রুবিনা স্বামীর কথাই কোনো মনোযোগ দিল না। সে বাচ্চার কান্না বন্ধ করতে মনোযোগ দিল।
আবিদ আবার বলল, বাচ্চাটা কার??
রুবিনা এবারও জবাব দিল না। পাশ থেকে এক মহিলা এসে বাচ্চার কথা বলতে লাগল। মহিলার ভাষ্যমতে ঘটনা হলঃ
সকালে দারোয়ান গেট খুলতে গেলে কলোনির ডাস্টবিন থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। দারোয়ান ডাস্টবিনে গিয়ে দেখল সেখানে একটা বাচ্চা কাঁদছে। কিচুক্ষনের মাঝে সেখানে ভিড় ঝমে গেল। ডাস্টবিনে বাচ্চার ঘটনা মূহূর্তেই সারা কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ল। রুবিনাও ঘটনা জানতে পেরে বাচ্চাকে দেখতে যায়, আর ডাস্টবিনের ভিতরে বাচ্চাকে কাঁদতে দেখে শাড়ির আঁচলে করে ডাস্টবিন থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসে। ঘরে এসে বাচ্চাকে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে নিজের দুধ খাইয়ে শান্ত করেছে।
.
আবিদ ঘটনা শুনে কিছু বলতে পারল না। সে চুপ করে রুবিনার দিকে তাকিয়ে রইল। সে আজ রুবিনার মাঝে দেখতে পারল একটা মেয়ের মা হওয়ার আকুতি।
.
কিছুক্ষন পর আবিদ রুবিনাকে বলল, রুবিনা, কার না কার বাচ্চা। চল থানায় দিয়ে আসি।
রুবিনা আবিদের কথা শুনে চিৎকার দিয়ে বলল, না!! আমি আমার সূর্য্ কে কাউকে দিব না।
রুবিনার কথা শুনে আবিদ চমকে উঠল, বাচ্চাটাকে কিছুক্ষনের মধ্যে রুবিনা অনেক আপন করে নিয়েছে। তাই সে বলল, তুমি অজানা বাচ্চাটার নামও দিয়ে দিয়ছ?
রুবিনা তার র্সূযকে বুকে জড়িয়ে ধরিয়ে বলল, হ্যাঁ। ও আমার র্সূয। আমার র্সূয আমার কাছে থাকবে, আমি কাউকে দিব না।
.
আবিদ অনেক চেষ্টা করেও রুবিনাকে থানায় নিতে পারল না, তাই সে নিজেই কলোনির কয়েকজন গন্যমান্য ব্যাক্তিকে নিয়ে থানায় গিয়ে রির্পোট করে আসছে। তদন্তের জন্য থানার অফিসার ইনচার্জ নিজেই তাদের সাথে কলোনিতে আসল। অজ্ঞাত বাচ্চার প্রতি রুবিনার ভালোবাসা দেখে অফিসার ইনচার্জ আবিদকে বলল, বাচ্চা আপনাদের কাছেই ভালো থাকবে; চাইল্ডহোমে তেমন ভালো থাকবে না। আমার মনে হয় বাচ্চার প্রকৃত মা বাচ্চাকে নিতে চাই না বলে ডাস্টবিনে ফেলে গেছে, তবুও যদি বাচ্চার আসল অভিভাবক পাওয়া যায় তাহলে বাচ্চাকে আমরা আসল অভিভাবকের কাছে পৌঁছে দিব।
রুবিনার দিকে তাকিয়ে আবিদ অফিসার ইনচার্জের কথা মেনে নিল।
.
দুইদিন পর।
গভীর রাতে রুবিনা আবিদকে ডাকছে, এ উঠ…….উঠ…..
আবিদ চোখ কচলাতে কচলাতে বলল, কি হয়েছে?
রুবিনা তখন আবিদকে বলল, দেখো না; আমার র্সূযটা কেমন যেন করছে।
আবিদ চোখ মেলে দেখল বাচ্চার মুখ থেকে লালা বেরোচ্ছে, আর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট লাগছে।
আবিদ স্ত্রীকে বলল, তুমি ওকে ভালোভাবে তোয়ালে দিয়ে পেঁচাও। আমি ডাক্তারকে ফোন দিচ্ছি।
আবিদ খাট থেকে উঠে ডাক্তারকে তিনবার ফোন নিয়ে পেল না। তাই রুবিনাকে বলল, ডাক্তার ফোন ধরছে না। মনে হয় বাচ্চাটাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হবে।
স্বামীর কথাশুনে রুবিনা বলল, চল। বাবুকে হাসপাতাল নিয়ে চল।
অতপর দুইজনে মিলে বাচ্চাটাকে নিয়ে হাসাপাতালে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হল।
.
হাসপাতাল নিয়ে যেতেই ডাক্তাররা র্সূযকে জরুরি বিভাগে নিয়ে গেল। কিছুক্ষন পর এক ওর্য়াড বয় একটা ফরম নিয়ে আসল।
ওর্য়াডবয় আবিদকে বলল, আপনি তো বাচ্চার বাবা; ফরম পূরণ করে সাক্ষর করে দিন।
আবিদ স্বাক্ষর করবে কিনা চিন্তা করতে লাগল। কিছুক্ষর পর আবিদ স্বাক্ষর দিতে গেল, কিন্তু রুবিনা আবিদের হাত থেকে ফরম নিয়ে স্বাক্ষর করে দিতে দিতে বলল আমার র্সূযকে ভালো করে দিন।
.
প্রায় এক ঘন্টা পর ডাক্তাররা বের হয়ে এল। ডাক্তররা রুবিনাকে বলল ঠান্ডা লেগেছে, এ জন্যই এ অবস্থা। রুবিনাকে আরো সর্তক হওয়ার পরামর্শ দিল। ডাক্তার চলে যেতেই রুবিনা আর আবিদ জরুরি বিভাগের রুমে গিয়েই দেখল, র্সূযকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছে। রুবিনা নিজেকে শান্ত রাখতে পারল না, সে সূর্যকে চুমু দিতে দিতে লাগল। চুমু দিতে দিতে বলল, বাবা তুই আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যাবি না, আমি তোকে খুব আদর করব, খুব ভালোবাসব। কোনোদিন তোর প্রতি একটু অযত্ন মেনেও নিব না।
.
ছয় মাস পর।
আবিদ অফিস করছে। হঠাৎ আবিদের মোবাইলে ফোন আসল। সে মোবাইল খুলে দেখল, রুবিনা ফোন দিয়েছে। সে কল রিসিভ করল-
-হ্যালো, রুবিনা। বল…
-তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো
-কেন, রুবিনা!! কি হয়েছে???
-কিছু হয়নি। তোমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছি।
-দেখো রুবিনা, আমার কিছুক্ষন পর একটা জরুরি মিটিং আছে। আমি মিটিং শেষ করে আসব।
-তোমার কাছে আমি বেশি নাকি তোমার মিটিং বেশি।
-আহা!! রুবিনা!! ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করো না।
-তোমাকে তাড়াতাড়ি আসতে বলছি। আসো……
আবিদ কিছু বলার আগেই রুবিনা কল কেটে দিল। আবিদ মিটিং বাদ দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে বাড়িতে রওনা দিল।
.
আবিদ ঘরে এসে দরজা নক করল। রুবিনা দরজা খুলে দিল। রুবিনা দরজা খুলে আবিদকে দেখে বলল, জানো আজ কি হয়েছে??
আবিদ বলল, কি হয়েছে??
রুবিনা সঙ্গে সঙ্গে বলল, আজ র্সূয আমাকে মা ডেকেছে…………….
আবিদ রুবিনার কথা শুনে বলল, মিথ্যা বলছ…………….। র্সূয প্রথমে বাবা বলে ডাকবে তারপর মা ডাকবে।
রুবিনা আবিদের কথা শুনে বলল, কি!! আমি মিথ্যা বলছি!! চল….চল….তুমি নিজে গিয়ে নিজ কানেই শুনবে।
আবিদ বলল, চল……………………..
.
ও আপনাদের বলা হয় নি। র্সূযকে এখন আবিদ প্রচন্ড ভালোবাসে। রাতে রুবিনা ঘুমিয়ে গেল আবিদ সারারাত জেগে জেগে র্সূযকে পাহারা দেয়। দুইজনে মিলে র্সূযকে কাঁদতে দেয় না বলে চলে। অনেক খুঁজেও র্সূযের আসল বাবামাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, অবশ্য পাওয়া গেলেও আবিদ আর রুবিনা র্সূযকে ফিরিয়ে দিত কিনা সন্দেহ আছে। তাই আইনি ঝামেলা দূর করতে রুবিনা আদালত থেকে র্সূযকে দত্তক নিয়েছে। তবে সে প্রতিজ্ঞা করেছে সে কখনো র্সূযকে তার আসল পরিচয় জানতে দিবে না।
.
দুইজনে খাটে এসে দেখল র্সূয চোখ খুলে তাকিয়ে রয়েছে আর এদিক সেদিক হাত পা ছুঁড়ছে। আবিদকে দেখতে পেয়ে হাত পা ছোঁড়া আরো বেড়ে গেল। রুবিনা র্সূযের কাছে গিয়ে বলল, মা বল………মা বল…………..
আবিদ আরেকপাশ থেকে চিৎকার দিয়ে বলল, না………..বাবা বল…………………
র্সূয দুইজনকে দেখে হাসতে হাসতে বলল, মা……………মা…………………….মা…………………
র্সূযের কথা শুনে রুবিনা খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেল, সে র্সূযকে কোলে নিয়ে বলতে লাগল, তুই আমার প্রাণ।
আবিদ হাসতে হাসতে বলল শেষ পযর্ন্ত তুমি জিতে গেলে। রুবিনা র্সূযকে আবিদের কোলে দিল। অতপর দুইজনে মিলে র্সূযকে একসাথে জড়িয়ে ধরল।
.
কিছু কথাঃ প্রথমে সকলকে বিশ্ব মা দিবসের শুভেচ্ছা। প্রত্যেক মায়ের কাছে প্রত্যেক সন্তান প্রিয়, ঠিক তেমনি প্রত্যেক সন্তানের কাছে তার মা খুব প্রিয়। কিন্তু প্রায় দেখা যাচ্ছে আমাদের মায়েদের স্থান হচ্ছে বৃদ্ধাশ্রমে। যা সত্যি মানতে কষ্ট লাগে। গল্পটা পড়ে নিশ্চয়ই বুজতে পেরেছেন একজন মায়ের মা ডাক শোনার আকুতি কতটুকু। আমি আশা করি আমাদের মায়ের স্থান আর বৃদ্ধাশ্রম হবে না, আমাদের মায়ের স্থান হবে আমাদের শ্রদ্ধাশ্রমে। আর সেই শ্রদ্ধাশ্রম হবে আমাদের শ্রদ্ধায় ভরা, ভালোবাসাই ভরা।
.
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:২৪