রাস্তা দিয়ে হাঁটি আর পাশের যুবক-যুবতীদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলি একসময় আমিও একসময় তোমাদের মত ছিলাম। আজ না হয় আমার বয়স ৬০ পেরিয়েছে, তাই বলে কি একটু সম্মান দিতেও পার না। সম্মান তো দেওয়াই না, উল্টো দ্রুত যাওয়ার জন্য দুই-একটা ধাক্কা দিয়ে যাও। কুমিল্লার এ রাস্তা একসময় আমার প্রতিদিনের রাস্তা ছিল, কিছু বছর হল প্রতিদিন আর আসা হয় না এ রাস্তায়। না আসার সেই কারন অবসর, দুই বছর হল চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছি। অবশ্য অবসরের কয়েকবছর আগেই মনিরা আমাকে একা রেখে চলে গেছে। ও মনিরা হল আমার ধর্মপত্নী, তবে বন্ধু বলা যায়। মনিরা চলে যাওয়ার পর আমি একাই থাকি। থাকব না কেন ছেলেটা যে বউকে নিয়ে আমেরিকা চলে গেছে আর মেয়েটা জামাইকে নিয়ে ঢাকায় থাকে। ছেলে আর ছেলের বউ ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, মেয়েটা জামাই আর নাতী-নাতনীদের নিয়ে ব্যস্ত। তাদের ব্যস্ত জীবনে আমাকে মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে স্মরন করে। ছেলেটা অবশ্য আমেরিকা নিয়ে যেতে বলেছে, কিন্তু শেষ বয়সে নিজের দেশ আর মনিরার স্মৃতিগুলো ছেড়ে যেত মন চাইল না। মনে চায় ছেলেটাকে বলি দেশে চলে আসতে, কিন্তু ছেলেটা ফোন দিলে আর বলা হয় না। আমি কি করে ছেলেটাকে আসতে বলে ছেলেটার উজ্জ্বল ভবিষ্যত নষ্ট করি। মেয়েটাও কম না, ফোন করলেই বলে মেয়েটার বাসায় চলে আসতে। কিন্তু আমি তো সমাজের নিয়ম-কানুন কিছু বুজি, কি করে কুটুমের বাড়িতে গিয়ে থাকি। তাই ফোনে বলি, আসব মা আসব। মেয়েটা বছরে নাতি-নাতনিদের নিয়ে একবার এসে আমাকে দেখে যায়। যাওয়ার সময় মেয়েটা আমাকে ধরে অনেক কান্নাকাটি করে। আামর আবার কান্নাকাটি একদম পছন্দ না।মনিরা মারা যাওয়ার পর সবাই কান্না করেছে, আমি কান্না করি না। কারন আমি তো জানি মনিরার দেহ আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, মনিরা স্মৃতিতো আর আমাকে ছেড়ে চলে যায় নি। মনিরার স্মৃতিগুলো আজ আমার বাঁচার অবলম্বন। প্রতিদিন আমি নিজেই রান্না করে খাই। মাসে এক বা দুইবার বাজার করি। মাঝে মাঝে রান্না করতে ভালো লাগে না তখন না খেয়েই থাকি। মনিরার রান্না খুব মিস করি। আমি অনেক চেষ্টা করি মনিরার রান্নার স্বাদ আমার রান্নায় ফুঁটিয়ে তুলতে। কিন্তু আমি প্রতিবারই ব্যর্থ হই, তবুও চেষ্টা করি। প্রতিদিন বাড়ি থেকে বের হই না। বের হলে এ রাস্তায় হাঁটা আর মসজিদ। বাড়িতে থাকা সময়গুলো বই পড়তে কাঁটিয়ে দি আর আযান দিলে নামায পড়ি। বই পড়ার মাঝে অন্যরকম আনন্দ, অবশ্য এ অভ্যাসটা মনিরার কারনেই। মনিরা বই পড়তে খুব ভালোবাসত। মনিরা কখনো আমার উপর রাগ করে থাকলে আমি তাকে একটা বই দিলে সব রাগ ভেঙ্গে যেত। উফ এ শহরের গাড়ির হর্ণ সহ্য হয় না আর, ভাবনাগুলো নষ্ট করে দেয়।
ঐ যে আমার ঘরটা চলে এসেছে। বিদায় রাস্তা।
.
কিছুদিন পর
হাবিব খেয়াল কর তার পাশের বাড়ির বৃদ্ধের ২দিন হল কোনো সাড়াশব্দ নেই। সে এগিয়ে গেলে; দেখবে বৃদ্ধ কেমন আছে। অবশ্য সে কখনো বৃদ্ধের খোঁজ-খবর নেয় নাই। মাঝে মাঝে শুধু রাস্তায় দেখত। বৃদ্ধের দরজায় গিয়ে দেখল দরজা বন্ধ। অনেকক্ষন চেঁচামেচি করেও বৃদ্ধের সাড়া না পেয়ে হাবিব কয়েকজনকে ডেকে দরজা ভেঙ্গে ফেলল। ভিতরে গিয়ে পুরো বাড়িতে বৃদ্ধকে খুঁজতে লাগল। কিন্তু শেষে বেডরুমে গিয়ে দেখল বৃদ্ধ খাটে শুয়ে আছে, হাতে বই ধরা। মাছি ভোঁ ভোঁ করছে। হাবিব বুজতে পারল ব্যাকটেরিয়া অনেক আগেই তার কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে।
.
কিছু কথাঃ আমাদের আশেপাশে অনেক বৃদ্ধ, বৃদ্ধা থাকে। অনেকের একাকিত্ব জীবন। তাদের বুজতে শিখুন, খেয়াল রাখুন। তাদের বন্ধু হোন।
.
মন্তব্য জানাতে ভুলবেন না। আপনার মন্তব্য পরবর্তী গল্প লিখতে উৎসাহিত করবে।
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০১৭ রাত ৮:৩৬