আজ কল্পবিজ্ঞানী,অভিযানপ্রিয় জুলভার্ণ আর আমার পড়া জুলভার্ণের কয়েকটি বই সর্ম্পকে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
মানুষ আজীবন কল্পনাপ্রবন। আর বিভিন্ন মানুষের কল্পনা তার কাঙ্কিত গন্তব্যে পৌঁছে গেছে। এমনিই একজন কল্পবিজ্ঞানী জুলভার্ন যার লেখায় পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কারের পূর্বইঙ্গিত পাওয়া যায় এবং কিছু কল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে।
ফরাসী এক দুর্গম দ্বীপ ‘‘নানতেস’’। এ দ্বীপে ১৮২৮ থ্রিষ্টাব্দের ৮ই ফ্রেবুয়ারী জুলভার্ণের জন্ম। জুলভার্নের পুরো নাম জুল গাব্রিয়েল ভার্ন দ্বীপেই তিনি পড়ালেখা শুরু করেন। একসময় তিনি তার বাবার ইচ্ছানুযায়ী ল কলেজে ভর্তি হন এবং একজন দক্ষ আইনজীবী হয়ে ল কলেজ থেকে বের হন। তিনি আদালতে নিয়মিত যাত্রা শরু করেন। অল্প কয়েকদিনে আইনব্যবসায় তার যশ খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু আইনের রসহীনতা আর মক্কেলদেন ধৃষ্টতায় তার মনপ্রাণ বিষিয়ে উঠল। যেহেতু ছোটবেলায় থেকেই তিনি কল্পনাপ্রবন ছিলেন এবং প্রত্যেক কল্পনায় নতুন নতুন কল্পিত বৈজ্ঞানিক যন্ত্র আনতেন। তিনি আইনের উর্দি খুলে নিলেন, হাতে নিলেন কলম। জুলভার্ণ ১৮৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকায় যান এবং সেখানে তিনি সাহিত্য জীবনের অধিকাংশ সময় কাটান। ১৯০৫ সালের ২৪ শে মার্চ জুলভার্ণ মৃত্যুবরন করেন।
জুলভার্ণের কয়েকটি বই:
১। টুয়েন্টি থাউজ্যান্ড লিগস আন্ডার দ্য সি: এ উপন্যাসে জুলভার্ণ ‘‘নোটিলাস’’ নামে একটি ডুবোজল যানের কথা উল্লেখ করেন। আর পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিকরা সাবমেরিন আবিষ্কারের মাধ্যমে তার কল্পনাকে বাস্তব প্রমান করলেন। তিনি এ বইতে প্রথম প্রমান করেন সমুদ্রের তলদেশের পাহাড়,সামুুদ্রিকপ্রানী,প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য ভান্ডার যা দিয়ে পৃথিবীর মানুষ হাজার বছর ক্ষুধা মেটাতে পারে।
২। মিস্টিরিয়াস আইল্যান্ড: ‘‘যেখানে কিছু নেই সেখানে যে সব আছে দুই চোখের আড়ালে’’ তা এ বই পড়লে প্রমানিত হয়। এ বইয়ে জুলভার্ন প্রমান করেছেন অমূলক সামগ্রী দিয়ে জীবনের অত্যাবশ্যক সামগ্রী তৈরি করা যায়।
৩। ব্ল্যাক ডায়মন্ড: এ উপন্যাস পড়লে বিশ্বাস করতে হয়, একজন মানুষের র্দীঘদিন কয়লাখনির সাথে সর্ম্পক থাকলে রহস্যবৃত কয়লাখনির যাবতীয় পরিবেশ ও পরিস্থিতি নিখুঁত ছবি মনে আকা সম্ভব। আমরা যদি আমাদের ঘরকে র্দীঘদিন ধরে ভালোবাসি তাহলে ঘরের প্রতিটি বিন্দু আমাদের চোখের মধ্যে মনের মধ্যে নিখঁত ছবি আকা সম্ভব্
৪। এ রাউন্ড দ্য ওয়ার্ল্ড ইন এইটটি ডেজ: এ ভ্রমনকাহিনীতে তিনি তৎকালীন সময়ে যে ৮০ দিনে বিশ্ব ভ্রমন করা সম্ভব তা প্রমান করেছেন। এ ছাড়া এ বইতে ভারতের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, কুসংস্কার প্রথা সর্ম্পকে সুন্দরভাবে বলা আছে। একবার ভাবুন যে ব্যক্তি কখনো এশিয়ায় আসেননি সি ব্যাক্তি কিভাবে ভারতের পুরো চিত্র বইতে ফুটিয়ে তুলে ধরেছেন।
৫।ফাইভ উইকস ইন এ বেলুন: এ বইতে তিনি মানুষ যে চাদঁ ভ্রমন করবে তার চিত্র তুলে ধরেছেন। যুগ যুগ ধরে মানুষ পাখির মত আকাশে উড়ার মত স্বপ্ন দেখেছে। তিনিও কল্পনা করেছেন আকাশে উড়ার। যার বাস্তব রূপ ঘটেছে তিনি যে বছর মৃত্যুবরন করেছেন সে বছর।
৬। রাউন্ড দ্যা মুন: এ বইটিতে জুলভার্ণ মানুষকে চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। তার এ কাহিনীও সত্যি হয় পৃথিবির মানুষ চাঁদ জয় করেছে আজ।
৭। দ্য সিক্রেট অব দ্য আয়ল্যান্ড: এ উপন্যাসে তিনি উপহার দিয়েছেন অ্যাংলো স্যকসন জাতি একের পর এক সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে কিভাবে উপনিবেশ পত্তন করে নিজেদের ধৈর্য্য, নিষ্ঠা, অভিজ্ঞতাও তৎপরতার পরিচয় দিয়েছেন।
৮। সিটি ইন দ্য সাহারা: এ উপন্যাসে সাহারা মরুভূমিতে মানুষের অাবাসস্থল গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি। আশা করা যায় একদিন বিজ্ঞানীরা সাহারা মরুভূমিতে মানুষের আবাসস্থল গড়ে তুলবে।
এছাড়া তিনি জার্নি টু দ্য সেন্টার অব দ্য আর্থ, স্টিম হাউস, অফ এন এ কমেট, দ্য স্কুল ফর রবিনসন্স, এ ফ্লোটিং সিটি, দ্য গ্রিন ফ্ল্যাশ সহ মোট ৩৩ টি বই লিখেছেন। আশা করি সবাই বইটি পড়েছেন। বাজারে ৭১৮ পৃষ্টার বাংলা অনুবাদ জুলভার্ণ রচনাসমগ্র পাওয়া যায়। বইটির দাম ২০০টাকা থেকে ২৫০টাকা। যারা পড়েননি তারা পড়ে নিবেন।
সকলকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৩৭