জীবন চলে তার নিজের গতিতে।আজ বাপ্পির বিয়ে।পাত্রীর নাম ফারিয়া।আজ তার জীবনের ভাগ নিতে একজন চরে এসছে।মেয়েটির মুখ হাত পায়ের সাথে মিকল নেই।মেয়েটির হাত-পা সাদা মেঘের মত মুখ কালো মেঘের মত।তার বাবা মা টাকার জন্যে এ কালো মেঘের সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়েছে।আজ বাপ্পির বাবা মায়ের উপর রাগ হচ্ছে। কেন যে এই কালো মেঘের সাথে তার বিয়ে দিয়েছে।হয়ত বা মেয়েটির বাবা দেশের একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী তার একমাত্র মেয়ে সে।কিন্তু সে কিশে কম,সেওতো একটা বেসরকারি ব্যংকের একাউন্টিং ম্যানেজার ।যা হোক সে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিল,কারণ অন্ধকারে কে সাদা,কে কালো।
ফারিয়ার বাবা জানে এ পৃথিবিতে কালো মেয়ের কোনো দাম নেই ।কালো মেয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠে।যদি মেয়ের টাকা পয়সা থাকে তাহলে হয়ত কোনো ছেলে তাকে টাকার লোভে বিয়ে করে ।কিন্তু যে মেয়ের টাকা পয়সা নেই তার জীবন হয়ে উঠে পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বিষহ মানবীর জীবন পালন করে।
বাপ্পি অবশ্যই ফারিয়াকে মনে প্রানে মেনে নিতে পারে নি।বাপ্পি্ আগের চেয়ে বেপোয়ারা জীবন পালন শুরু করেছে।সে এখন ঘরের চেয়েও বেশি বাইরে সময় দেয়।সে এখন ঘরে ফিরে রাত ১২ টা বা শেষ রাতে।সে সময়ও অপেক্ষা করে থাকে একমাত্র ফারিয়া। কখনো খাবার টেবিলে বসে থাকে আবার কখনো খাবার টেবিলে অপেক্ষা করতে ঘুমিয়ে পড়ে।বাপ্পি ফারিয়াকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায় না।এমনকি ফারিয়াকে নিয়ে তার বাবার বাড়িতেও যায় না।ফারিয়ার বাবা ব্যাপার বুজতে পারলেও কখনো কিছু বলেন না বাপ্পিকে,কারণ তার মেয়ে ফারিয়া চায় না। এ নিয়ে ফারিয়ার কজিন আর বান্ধীবীরা হাসাহাসি করে।ফারিয়া সব বুজতে পারলেও কখনো কিছু বলে না,শুধু গোপনে কাদেঁ।বাপ্পি ঘরের থেকে বেশি সময় দেয় তার বন্ধু-বান্ধবীদের । ফারিয়া কোনো কিছু বললে বাপ্পি রেগে যায়।গালমন্ধ করে,বিভিন্ন খোঁটা দেয়। ফারিয়া বাপ্পিকে বোজানোর চেষ্টা করে জগতে কালো আছে বলেই সুন্দরের এত দাম্, যদি সবাই সুন্দর হত তাহলে সুন্দরের কোনো দাম থাকত না।এ সব কথায় বাপ্পির কোনো ভ্রক্ষেপ ঘটে না।
বাপ্পির বাবা মা ফারিয়াকে নিয়ে ভীষন খুশি । ফারিয়া সংসারের এসেই দ্বিতীয় দিনই বলে দিয়েছে এখন থেকে মা কোনো কাজ করতে পারবে না। রান্না বান্না থেকে শুরু করে ঘরের সব কাজ ফারিয়া নিজে করে।ফারিয়া বাবা-মার সারাক্ষণ সেবা করে।মা-বাবা ভাবে ঘরে যদি সুন্দর বউ আনত তাহলে হয়ত টিভি সিরিয়াল আর বিউটি পার্লার নিয়ে সময় কাটাত।হয়ত বা তাদের ছেলেকে নিয়ে আলাদা হয়ে যেত পারত।
হঠাৎ করে ব্যাংকের বিভিন্ন একাউন্ট থেকে টাকা ছুরি হল। দায়ি করা হল বাপ্পিকে।প্রথমে পুলিশ বাপ্পিকে ধরে নিয়ে গেলেও পরে প্রমানের অভাবে ছেড়ে দেয়।ব্যাংক থেকে বের করা দেয়া হয় বাপ্পিকে।এতদিন যে বন্ধুদের হাজার হাজার টাকা ব্যায় করে পার্টি করে খাইয়েছে,অথচ আজ তারা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করে,চুর বলে দূর করে দেয়।এ সময় তার পাশে এসে দাড়াঁল কালো মেঘ ফারিয়া।একমাত্র সেই বিশ্বাস করল বাপ্পি চুরি করে নি।আজ ফারিয়া বাপ্পিকে ঘৃণা করে না বাপ্পিকে ঘুরতে নিয়ে যায়।বাপ্পি বুজতে পারে সে জীবনে কতবড় ভুল করেছে ফারিয়াকে কষ্ট দিয়ে,ফারিয়া কতটা ভালোবাসে সে আজ বুজতে পারে।
এক মাস পর
হঠাৎ করে ব্যাংকের হেডঅফিসে ডাকা হল বাপ্পিকে। বাপ্পি যথাসময়ে হাজির হল হেডঅফিসে। সেখানে গিয়ে জানতে পারল সে যে ব্যাংকের চুরির জন্য দায়ী নয় প্রমানিত হয়েছে।দায়ী তার কলিগ মাসুম আর আরিফ। তারা দুইজন মিলে টাকা সরিয়েছে,গতকাল আবার টাকা সরাতে গিয়ে ধরা পড়েছে।বাপ্পির কাছে ব্যাংকের চেয়ারম্যান মাফ চেয়ে তাকে ব্যাংকের শাখা ম্যানেজার করে চাকরি ফিরিয়ে দিয়েছে।বাপ্পি আজ খুব খুশি।সে সঙ্গে সঙ্গে ফারিয়াকে ফোন দিল…………
বাপ্পিঃ হ্যালো ফারিয়া
ফারিয়াঃ হ্যাঁ বল
বাপ্পি: আজকে একটা সুখবর আছে
ফারিয়া: হ্যাঁ বল কি সুখবর
বাপ্পি: আমি যে টাকা চুরি করিনি আজ প্রমানিত হয়েছে…………………………..
আর কিছু বলার আগে ফোন কেটে গেল।বাপ্পি আর ফোন দেওয়ার চেষ্টা করল না।বাপ্পি বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল।পথে গাড়ি থেকে নেমে এক তোড়া ফুল আর একটা সুন্দর নীল শাড়ী কিনল।বিয়ের পর সে ফারিয়াকে কোনো গিফট দেয় নি।আজ বাপ্পি ঠিক করল বিকেলে ফারিয়াকে নিয়ে ঘুরতে যাবে।ভাবতে ভাবতে বাপ্পি বাড়ী পৌঁচে গেল। সারাবাড়ী তন্ন তন্ন করে খোঁজেও ফারিয়াকে পাওয়া গেল না। আজ বাবা-মা খালার বাসায় বেড়াতে গেছে, বিকেলের আগে ফিরবে না।কিন্তু ফারিয়া গেল কোথায়…………….।ফারিয়াকে খোজতে খোজতে খাওয়ার টেবিলে পাওয়া গেল একটা চিঠি…………………………………….
প্রিয় বাপ্পি
আজ আমি সবচেয়ে বেশি খুশি কারন তুমি আজ মিথ্যা অপবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছ।গত একমাস আমি আমার জীবনের সেরা দিনগুলো কাটিয়েছি।তুমি হয়ত এখন আবার আগের জীবনে ফিরে যারে যা আমি হয়ত সহ্য করতে পারব না , তাই আমি চলে যাচ্ছি । ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছিলাম।বাবা ব্যবসার কাজে ভীষন ব্যাস্ত থাকতেন ।আমার আত্মীয়রা আমাকে কালো বলে ঘৃনা করত ।বাবার সামনে অবশ্য কখনো ঘৃনা দেখাত না ,সবাই তখন আমাকে ভালোবাসার মিথ্যা অভিনয় করত।বান্ধবীরা আমার সঙ্গে তেমন মিশত না।যখন তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ছ তখন ভেবেছিলাম তোমার কাছে হয়ত কিছুটা সুখ পাব।প্রথমে সুখ না পেলেও গত একমাস যে সুখ পেয়েছি তাতে আমি খুশি।আমি জানি তুমি আমাকে টাকার জন্য বিয়ে করেছে সে জন্য আমি বাবার কাছ থেকে অর্ধেক সম্পত্তি তোমার নামে লিখে নিয়েছি।দলিলটা আলমারিতে রাখা আছে।শুধুমা্ত্র তোমার একটা জিনিস আমি নিয়ে যাচ্ছি সেটা তুমি চেয়ো না,সেটা চাইলে আমি যে ভিখারি হয়ে যাব।আমার গর্ভে তোমার সন্তান।
ইতি তোমার কালো বধূ
বাপ্পি চিঠি পড়ে কাদতে লাগল । সে বলল না ওকে ছেড়ে ফারিয়া যেতে পারে না।সে আজ নিজে গিয়ে ফিরিয়ে আনবে ফারিয়াকে।
----------------------------------------------------
খাবার টেবিলে বসে রয়েছে বাপ্পি ,ফারিয়া,বাবা মা ।বাপ্পি ফারিয়া বার বার একে অপরের দিকে তাকাচ্ছে আর হাসছে।
মা: কি রে তোরা আজকে এত হাসছেস কেন?
ফারিয়া: না মা কিছু না…………………………….
মা: কি রে মায়ের কাছে কি লুকাচ্ছিস………………
বাপ্পি: আসলে মা তোমার বউ মা বলতে লজ্জা পাচ্ছে তোমরা দাদা-দাদি হতে যাচ্ছে………………………………….
মা আর কিছু না শোনে খাবার ফেলে নাচতে লাগল।বাবাও তাদের আনন্দে যোগ দিল।আর আমি টেবিলে বসে বসে হাসছি আর ভাবছি আজ আমার কালো মেঘ তার ঘরকে হাসিতে ভরিয়ে দিয়েছে।
অতএব বন্ধুরা ঘরে সুন্দর বউ এনে লাভ কি যদি তার মন কালো হয় ।
**এ গল্পের সঙ্গে বান্তব জীবনের মিল নেই**
ধন্যবান্তে: ##বাপ্পি##+
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫