হায়দার সাহেব আজ খুব খুশি। আজ তার একমাত্র ছেলে রাসেলের বিয়ে আজ। ছোটবেলায় রাসেলের মা মারা যায় তারপর থেকেই তিনিই কোলেপিঠে করে মানুষ করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ছেলে কিছুদিন আগে এসে মিলি নামে এক মেয়ের কথা বলেছিল আর হায়দার সাহেবও খুশি হয়ে ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে মেয়ের বাড়িতে গেছিলেন।
.
বিয়ের পরেরদিন
.
নাস্তার টেবিলে হায়দার সাহেব ছেলে আর ছেলের বউ বসে রয়েছেন।
হায়দার সাহেব: বউমা
বউমা: জ্বি বাবা
হায়দার সাহেব: তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল
বউমা: জ্বি বাবা বলুন
হায়দার সাহেবঃ ছোটবেলায় রাসেলের মা মারা যায় তারপর থেকেই আমার কাছে বড় হয়েছে। সামনে আমি আর কয়দিন বাঁচব জানি না। তুমি মা রাসেলকে দেখো রেখো। ও যেন কোনোদিন কোনো অন্যায় করার সাহস না করে। রাসেলকে তুমি সবসময় দেখো রেখো। ও যেন কোনোদিন কোনো অন্যায় করার সাহস না করে। রাসেলকে তুমি সবসময় সঠিক ও সৎ পরামর্শ দিবে।
বউমা: জ্বি বাবা আমি সবসময় ওকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব্
হায়দার সাহেব: এবার আমি শান্তিতে মরতে পারব।
বউমা: বাবা এসব বলবেন না এখন খাওয়াটা খেয়ে নিন
.
কিছুদিন পর
.
হায়দার সাহেব বাজার থেকে বাড়িতে ফিরলেন। দরজায় ঢোকার সময় ভিতর থেকে বউমা আর তার ভাই আনিসের কথা শোনা যাচ্ছে
বউমা: তুই হোস্টেলে না থেকে আমাদের বাড়িতেই তো থাকতে পারিস
আনিস: কি যে বল আপু তোমাদের বাড়িটা এমনিতে খুব ছোট
বউমা: তা ঠিক বলেছিস বাড়িটা খুব ছোট। এজন্য বাইরের কোনো আত্মীয়কে এসে থাকতে বলতে পারি না।
আনিস: আচ্ছা তোমার বুড়ো শুশুর তো এ বাড়িতেই থাকে উনাকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিলেই তো পারো তাহলে এক রুম খালি হয়ে যায়
বউমা: যা , চল খেতে চল
আনিস: না আপু খাবো না আজ আরেকদিন খাব
বউমা: ঠিকআছে শরীরের যত্ন নিস
আনিস: ঠিক আছে আপু বাই
.
হায়দার সাহেবের সেদিন থেকে ভয় শুরু হতে থাকল। কখন তার ছেলে আর ছেলের বউ এসে বলে এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে। কিছুদিন আগে তার বন্ধু রিপনের ছেলে আর ছেলের বউ রিপনকে আর রিপনের স্ত্রীকে নারায়নগন্জের এক বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে। সেদিন রিপন আর রিপনের স্ত্রী তার কাছ থেকে চোখ দিয়ে পানি ফেলে বিদায় নিয়েছিল। আজ তারও ভয় হচ্ছে কখন না তাকে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমে পাড়ি জমিয়ে বিদায় নিতে হয়।
.
দুইদিন পর
.
হায়দার সাহেব জ্বরে কাতারাচ্ছেন। তার মাথায় পানি দিচ্ছে ছেলের বউ মিলি। পাশে বসে রয়েছে রাসেল। হায়দার সাহেব কিছুক্ষন পর পর অঘোরে বলছেন বাবা আমি তোদের সাথে থাকব, বউমা আমাকে কোথাও রেখে এস না।
.
সকালে হায়দার সাহেবের জ্বর কমে গেল। রাতেই রাসেল ডাক্তার এনেছিল। ডাক্তার রাসেলকে বলে গেছেন হায়দার সাহেব মানসিকভাবে আঘাত পেয়েছেন। উনাকে রেস্টে আর চিন্তা মুক্ত রাখার জন্য বলে গেছে।
.
রাসেল: আচ্ছা তুমি বাবাকে কিছু বলছ
মিলি: না আমি বাবাকে কিছু বলি নি
রাসেল: তাহলে বাবা হঠাৎ কি নিয়ে চিন্তা করছেন আর বাবা কাল কোথায়বা তাকে রেখে আসতে না বলছে
মিলি: রিপন আঙ্কেলের কথা মনে করে হয়তবা চিন্তা করেছেন। বাবা ভাবছেন হয়ত আমরাও রিপন আঙ্কেলের ছেলের মত উনাকে রেখে আসব
রাসেল: ঠিক বলছ এটা হতে পারে
মিলি: ঐ দিন না আনিস বাবাকে এ বাড়িতে না রেখে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে বলেছে বাবা হয়ত ঐ কথাগুলি শুনেছে
রাসেল: তুমি আনিসের কথা শুনে কিছু বল নি কেন
মিলি: সরি আসলে ও ছোট মানুষ যা বলে আমি হ্যাঁ হুম বলি
রাসেল: উচিত হয়নি তোমার একদম বকে দিতে পারতে। আর আমি তোমাকে বিয়ের আগেই বলেছিলাম আমার বাবা সারাজীবন আমাদের সাথেই থাকবে কখনো বাবাকে আলাদা হতে বলতে পারবে না
মিলি: সরি ভুল হয়ে গেছে
রাসেল: এখন কি করা যায় সেটা বল
মিলি: চল আমরা বাবাকে বোঝায় উনি সারাজীবন এ বাড়িতে থাকবেন
.
রাত ১০টা
.
হায়দার সাহেব, রাসেল আর মিলি খাবার টেবিলে বসে রয়েছে।
মিলি: বাবা আপনি আমাকে ক্ষমা করে দেন
হায়দার সাহেব: কেন
মিলিঃ বাবা ঐদিন আনিসের কথা শুনে আমাদের উপর রাগ করেছেন।আনিসের ঐ দিন ভুল বলেছিল, আর আমিও ওর কথায় সায় দিয়ে খুব ভুল করেছি
রাসেল: জ্বি বাবা আপনি আমাদের ক্ষমা করে দেন
হায়দার সাহেব: কি বলিস তোরা আমি কি তোদের উপর রাগ করতে পারি
রাসেল: বাবা তুমি কি রিপন আঙ্কেলের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো
হায়দার সাহেব: হ্যাঁ বেচারা সারাজীবন যাদের জন্য পরিশ্রম করেছে শেষ বয়সে তারা তাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিল
রাসেল: তুমি ঐসব নিয়ে চিন্তা করো না। আর আমরা তোমাকে কখনো কোথায়ও রেখে আসব না। তুমি সারাজীবন আমাদের সাথে থাকবে
মিলি: হুম বাবা তুমি থাকবে আমাদের শ্রদ্ধাশ্রমে। যেটা হবে শ্রদ্ধার আশ্রম, বৃদ্ধদের আশ্রম নয়। সম্মানের ঘর, ভালোবাসার ঘর।
হায়দার সাহেব: সত্যি মা..
মিলি: জ্বি বাবা তোমার স্থান শ্রদ্ধাশ্রমে।
.
শেষ কথা: আমাদের বাবা মা স্থান আমাদের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার ঘরে, কোনো বৃদ্ধাশ্রমে নয়। আশা করি প্রত্যেক বাবা মার স্থান হবে তার সন্তানদের শ্রদ্ধাশ্রমে।
.
ধন্যবাদান্তে: ##বাপ্পি##
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০৪