ধর্ম এবং অধর্ম। দুটোর পার্থক্য সহজেই অনুধাবনীয়। যুগে যুগে, কালে কালে মানুষের জন্য বহু ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে। সব ধর্মের একটা দিক থেকে মিল আছে। সেটা হচ্ছে- মানুষকে শৃঙ্খলিত করা। কয়টা ধর্মের নাম বলব?
পড়েন তবে- ১. ইসলাম ২.খ্রিস্ট ৩ ইহুদি ৪. দ্রুজ, ৫. মান্দাই, ৬. ভারতীয়, ৭. হিন্দু ৮. বৌদ্ধ ৯. জৈন ১০. শিখ ১১. শাক্ত ১২. জরথুস্ত্র ১৩. বাহাই ১৪. ইয়াজিদি ১৫. মাজদাক ১৬. আল ই হক, ১৭. কনফুসিয় ১৮. শিন্তো ১৯. তাওবাদ, ২০. জেন ২১.হোয়া হাও ২২. ক্যাও দাই ২৩. প্রাচীন মিশরীয় ২৪. আর্য ২৫. সামারিতান ২৬. প্রাচীন গ্রিক।
উফ্, হাঁপিয়ে গেলাম ২৬টা ধর্মের নাম লিখতে গিয়ে। কিন্তু ধর্ম আরও আছে। ধারণা করা হয়, পৃথিবীতে এ পর্যন্ত ৪,৩০০ ধর্মের আবির্ভাব ঘটেছে। এরমধ্যে অসংখ্য ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ ধর্ম হিসেবে ইসলামই আছে। বলা হয়- ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে শান্তি ও ভারসাম্যের ধর্ম। এ ধর্মে সমাজের-দেশের সব স্তরের মানুষকে সমান মর্যাদা দান করেছে। অবলা জীবজন্তুর প্রতিও সম্মান প্রদর্শন করেছে ধর্মটি।
ওদিকে আছে আবার নাস্তিক্যবাদও। আপাতত এ দিকটায় যাচ্ছি না।
শুরুতে বলছিলাম, ধর্মের মৌলিক চরিত্র মানুষকে শৃঙ্খলিত করা। অর্থাৎ ধর্মের বিধান মানলে মানুষ শৃঙ্খলিত জীবন-যাপন করতে যতটা সক্ষম, ততটা সক্ষম নয় ধর্মের বিধান না মানলে বা অমান্য করলে। ধর্ম একটা জীবিত আইনও বটে। কোনো ধর্ম একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী, কোনো ধর্ম একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী নয়, যেটাই হোক, শৃঙ্খলাকে বাদ দিয়ে নয়। যে যার সৃষ্টিকর্তার মন জয় করার চেষ্টায় নিয়োজিত হন শৃঙ্খলিত ধর্মীয় নিয়মের মধ্য দিয়েই তো। নাকি?
বলছিলাম- ধর্ম মানলে তথা চর্চা করলে শৃঙ্খলিত ও নিরাপদ জীবন-যাপন করা সম্ভব। এই ধর্ম আছে বলেই বুঝি শৃঙ্খলা আজও আছে, শৃঙ্খলা আছে বলে পৃথিবীটা আজও টিকে আছে। অথচ দেখা যাচ্ছে, ধর্ম চর্চা যত কমছে, শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি তত ঘটছে।
পৃথিবীর যত দেশে, যত শহরে, যত সমাজে, যত এলাকায় ইত্যাদিতে যত আইন প্রণয়ন হয়েছে, তত আইন করার লক্ষ্য ছিল এই শৃঙ্খলাই প্রতিষ্ঠিত করা। অথচ ধর্মগুলোতেই তো ছিল শৃঙ্খলার কথা। তবে কিছু আইন আছে, যা বিভিন্ন ধর্মীয় বিধানকে অনুসরণ করে তৈরি করা কিছুটা আপডেট করে। কিন্তু ধর্মের গন্ধটা রয়েই গেল।
বাংলাদেশের কথাই বলি। আজকে হোক সামরিক বাহিনী, হোক আধা-সামরিক, বেসামরিক বাহিনী- সবকিছুতেই রয়েছে শৃঙ্খলার পুরুস্তর। শৃঙ্খলা ছাড়া কোনোকিছুই সম্ভব নয়। সড়ক যোগাযোগ বলেন, সেখানেও আছে কড়া আইন। নয়ত মানুষ মোটর সাইকেল নিয়ে উঠে পড়বে ফুটপাথে, হেলমেট রাখবে না মাথায় বা পেছনের যাত্রীর জন্য। অথবা কোনো চালকই রাখবেন না ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ আনুসাঙ্গিক রাষ্ট্র স্বীকৃত কাগজপত্র।
পৃথিবীতে আজ শৃঙ্খলার প্রকট অভাব। মোড়ল দেশ আমেরিকা ব্যস্ত কোন দেশের উপর মোড়লগিরি করবে, কীভাবে করবে, কতটা বোমা ফেলতে হবে, কী পারমাণবিক অস্ত্র লাগবে, কোন কথা বললে প্রতিপক্ষ করা যাবে একটি দেশকে এবং সেই দেশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে বিজয়ী হয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যাবে। চীন ব্যস্ত পৃথিবীর উপর অর্থনৈতিক প্রভাব সৃষ্টিতে, রাশিয়া ব্যস্ত মোড়লগিরি নিয়ে ইত্যাদি।
একসময়কার সুলতানী শাসন, মুঘল শাসন, বৃটিশ শাসন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো খামখাই আসেনি। হিরোশিমার নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা খামখাই আসেনি। যাদের মাধ্যমে যে উদ্দেশেই হোক, প্রত্যেকের বেশিরভাগ কোনো না কোনো ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। অথচ ধর্মের শৃঙ্খলার শিক্ষা কেউ গায়ে মাখেননি। এর খেসারতও কম দিতে হয়নি মানবজাতিকে, এই পৃথিবীকে।
পৃথিবী আজ ক্ষুব্ধ, প্রতিশোধপরায়ণ, বিশৃঙ্খলতারভারে পৃথিবী ফুঁসে আছে। প্রতিশোধ নিতে প্রকৃতি হয়ে আছে উন্মুখ। আজ প্রতিশোধ নেয়া হচ্ছে করোনা ভাইরাস দিয়ে। এরপর আসবে কোন ভাইরাস?
পশুর বিবেক নেই, কিন্তু মানুষের বিবেক আছে, তাই পৃথিবীর একমাত্র জীব মানুষ, যে সৃষ্টির সেরা জীব। পৃথিবীজুড়ে মানুষ তার শ্রেষ্ঠত্যের প্রমাণ যে কতদিক দিয়ে দিয়েছে তার হিসাব করা কারও পক্ষেই সম্ভব না।
বিপরীতে আছে, মানুষ সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্টতম জীব হিসেবেও। বিবেক-মনুষ্যত্ববোধ থাকা সত্বেও। পৃথিবীতে এমন বহু ঘটনা আছে, যা দিয়ে মানুষ তার নিকৃষ্টতার প্রমাণ দিয়েছে। এই মানুষই শৃঙ্খলা দিয়ে পৃথিবীটাকে করল সুন্দর, এই মানুষই বিশৃঙ্খল করে পৃথিবীটাকে করল অসুন্দর।
মানুষই শৃঙ্খলা দিয়ে পৃথিবীটাকে টিকিয়ে রেখেছে বহুকাল ধরে। এই মানুষই বিশৃঙ্খলতা দিয়ে পৃথিবীটাকে ধ্বংস করবে কোনো এককালে। সব মানুষের কৃতকর্মেরই ফসল। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী- পৃথিবী ধ্বংসের পূর্বে মানুষ পাপাচারে লিপ্ত হবে ব্যাপকভাবে, ভাল কাজ বলতে কোনোকিছু থাকবে না, দেশে-সমাজে থাকবে পাপীদের রামরাজত্ব ইত্যাদি। থাকবে পাপের তুমুল প্রতিযোগিতা। কে কার চেয়ে কত বড় পাপ করতে পারে, সে প্রতিযোগিতায় সবাই মগ্ন থাকবে।
ক্রমাগত হচ্ছেও তাই। পৃথিবী এগুচ্ছে ধ্বংসের দিকে। এখনও হয়ত এমন পাপ পৃথিবী দেখেনি, যা সব যুগের পাপের চরিত্র-সীমাকে অতিক্রম করবে।
পৃথিবী চায় শৃঙ্খলা, প্রকৃতি চায় স্বাধীনতা। এই শৃঙ্খলা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ পৃথিবী-প্রকৃতি কোনোদিন মেনে নেবে না। কোনোদিন ক্ষমা করবে না মানুষকে। করোনা দিয়ে পৃথিবী-প্রকৃতি মানুষকে ঘরে বন্দি করে রেখেছে, যেমনটা বন্দি করা হয় চিড়িয়াখানায় জীবজন্তুকে। এই জীবজন্তুরা আজ স্বাধীনভাবে ঘুরছে তাদের জগতে আর মানুষবন্দি বাসগৃহ-লোকালয় নামক খাঁচাতে। হয়ত এই জীবজন্তুরা ভাববে- কোথায় অসভ্য মানুষগুলো, যারা আমাদের বাসস্থান, আমাদের ধ্বংস করতে সারাদিন ঘোরাফেরা করত? আমরা আমাদের ধর্ম নিয়ে যে দিনকাল সুখে কাটাতাম, সে দিনকালে মানুষ দিতো কালোথাবা। তারা কী পৃথিবী থেকে চলে গেল? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জীবজন্তুরা হয়ত একদিন লোকালয়ে দেখতে আসবে কী ভয়াবহ পরিণতিতে আছে পাপীষ্ঠ-অত্যাচারী মানুষগুলো।
পৃথিবী চায় শৃঙ্খলা, প্রকৃতি চায় স্বাধীনতা।
*আজ আর নয়*
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ ভোর ৫:৪৮