ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে পড়ব। কিন্তু এই পোস্ট সেই ঘুম কেড়ে নিল। আমার ঘুম ঘাতক পোস্ট।
ছবিটি পোস্ট করে একজন আপু ইংরেজিতে লিখেছেন, নাথিং টু সে'
এটাই আমার ঘুমকে পুরোপুরি খেয়ে নিল এক্কেবারে চেটেপুটে।
এটা নিশ্চিত যে, এই পোস্টটির মাধ্যমে বেগম জিয়াকে খাটো করা হয়েছে বা বিদ্রুপ করা হয়েছে অথবা নেগেটিভ অর্থে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে। যাই বলি না কেন, নেগেটিভ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে- তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এবার আসছি মূল প্রসঙ্গে। যে আপু পোস্টটি দিয়েছেন এবং যে আপুবৃন্দ পোস্টে বেগম জিয়াকে নিয়ে লেখা এ পোস্টে নগ্ন নেগেটিভ বা সাধারণ নেগেটিভ মন্তব্য করেছেন অনেকেই- তাদের জন্যই এ লেখা।
প্রকৃতগতভাবে কিছু নারী সুন্দর, খুবই সুন্দর। কেউ মেকআপ করে নিজের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতেই পারেন। কিংবা মেকআপ করে কেউ নিজের সৌন্দর্য ফুটিতে তুলতে নাইবা চাইলেন। সমস্যা নেই।
কথা হচ্ছে পোস্টকারিনী ও কমেন্টকারিনীরা প্রত্যেকে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারবেন, আপনারা মুখে আটা ময়দা সুজি অর্থাৎ মেকআপ ব্যবহার করেন না? নিশ্চই করেন, অন্ততঃ চোখে কাজল বা ঠোঁটর লিপস্টিকটা বাধ্যতামূলক ঘষামাজা করেন, দরকারে বা বিনা দরকারে। কেউ কেউ আছেন- ঘরের পাশাপাশি পার্লার নামক লন্ড্রিতে গিয়েও মুখমণ্ডল ইস্ত্রি করে আসেন। এমন ইস্ত্রি করেন- তখন আপনাদের কারও কারও রূপকে মুরগির কোরমার মতন লাগে।
বেগম জিয়ার মেকআপ কক্ষ নিয়ে- কেন এ পোস্ট বা নেগেটিভ মন্তব্য আসলো?
কারণ পরিষ্কার।
১. যে আপু ও আপুরা পোস্ট-নেগেটিভ কমেন্ট করেছেন, তারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত, কম নয়তো বেশি।
২. বেশিরভাগ নারী অন্য নারীর সমৃদ্ধি বা ভালদিক সহ্য করতে পারেন না।
৩. আপনারা যে রাজনৈতিক দলই করেন না কেন,
নির্ঘাৎ আপনি, আপনার রাজনৈতিক দলে নারীর মর্যাদা সম্পর্কে যা বলা আছে, নিঃসন্দেহে তা পজিটিভ। আপনি ও আপনারা সেই মর্যাদা ভেঙে ভেজাল দলকারী হিসেবে নিজের পরিচয় তুলে ধরলেন।
খালেদা জিয়ার মেকআপ রুম? ওরে বাবা, সেকি কাণ্ড? খালেদা জিয়া যে মানের, যে লেভেলের, এমন মেকআপ কক্ষ তার থাকবে- নাকি আপনার থাকবে আপু ও আপুবৃন্দ? বাবা-মা, বড় ভাই-স্বামী-বয়ফ্রেন্ড-সেক্স পার্টনার ইত্যাদি- কতজনের পয়সায় মেকআপ করছেন জীবনে, গুণে গুণে দেখেন, রংচটা করেননি, বুঝলাম, হালকা হলেও করেছেন এবং ধীরে ধীরে নিজের মেকআপ স্টাইলকে হাইব্রিড করে তুলছেন, কেউ কেউ তুলে ফেলেছেনও বটে।
আগে করতেন ঘরে, পরে যাওয়া শুরু করলেন পার্লারে, আগে যেতেন ৫০০ টাকার পার্লারে, পরে শুরু করলেন হাজার টাকা দামের পার্লারে।
কি বলবেন- বাবা-মা, বড় ভাই-স্বামী-বয়ফ্রেন্ড-সেক্স পার্টনার ইত্যাদি কারও টাকায় নয়, নিজের টাকায় করি!
বাহ্, বেশ তো আপুবৃন্দ! তাদের উপার্জিত টাকা দিয়ে জীবনেও ঘষাঘষি করেননি? নিজের কামানো টাকা দিয়ে ঘষাঘষি করে কয়জন টাকা উড়ান? খুব কম সংখ্যক।
আসছেন খালেদা জিয়ার মেকআপ রুম নিয়ে নেতিবাচক কথা বলতে। খালেদা জিয়া মেকআপ করলে দোষ কী? তার স্ক্রিন সেটা ডিমান্ড করে। নারীরা যে যার সাধ্যমত সেজেগুজে থাকতে ভালবাসেন। খালেদা জিয়াও করেন, সমস্যা কোথায় আপনাদের?
এখন খালেদা জিয়ার বিরোধী দল সমর্থিত রাজনৈতিক দলের আপুরা বলবেন- কোথায় আমাদের দলের প্রধান শেখ হাসিনা তো এভাবে সাজুগুজু করেন না? তাতে কী হইছে, উনার ইজ্জত কী চলে গেছে?
কথা সেটা নয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার মতো কেন সাজতে যাবেন? তিনি তার মতন করে রূপচর্চা ঠিকই করেন। সেটা হয়তো খালেদা জিয়ার মতন চোখে পড়ার মতন নয়, তার মতন ব্যয়বহুল না-ও হতে পারে। কিন্তু করেন এটা নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রী তার মতো করে করেন, তার স্ক্রিন বেগম জিয়ার স্ক্রিনের মতো মেকআপ ডিমান্ড করে না।
বেগম জিয়ার মুখমণ্ডল মেকআপে খুব অভ্যস্ত হয়ে গেছে। ভেবে দেখুন পোস্ট ও কমেন্টকারী আপুরা- আপনাদের কারও কারও অবস্থাও তেমন। আর আপনারাই বেগম জিয়ার মেকআপ নিয়ে সামালোচনা করছেন? আপনি আপনার দলকে বুঝিয়ে দিলেন, আপনি সত্যিকারের কর্মী, সমর্থনকারী?
বেগম জিয়ার মেকআপ রুম একটা নয়, ১০টা থাকতে পারে। তার থাকবে না তো আপনাদের থাকবে নাকি?
ওই যে কথা একটাই- এক নারীর সমৃদ্ধি বা মঙ্গল বা ভাল কিছু আরেক নারী সইতে পারে না। আপনাদের যদি এমন মেকআপ রুম বানানোর ক্ষমতা থাকতো, ঠিকই করতেন।
শোনেন, নারী হয়ে নারী সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আরেক নারীর সম্মানহানিকর কিছু করবেন না। এই যে অধিকার নিয়ে গলা ফাটান, ঢালাওভাবে পুরুষদের দোষারোপ করেন- কী লাভ এতে? আমি কিন্তু ধর্ষক-নির্যাতনকারী পুরুষের সাফাই বা তাদের পক্ষ নিচ্ছি না।
আপনারা আপনাদের ইজ্জত দিতে শিখেন, অধিকার দিতে শিখেন। বাংলাদেশের পুরুষ নারীদের অনেক অনেক সম্মান করে থাকে। কিন্তু আপনারা তাতে সন্তুষ্ট নন। এটা আপনাদের একটা অভ্যাস, শুধু নাই নাই, হয় নাই হয় নাই করেন।
বলবেন পুরুষ ধর্ষণ করে, এসিড মারে ইত্যাদি ইত্যাদি পশুর কাজ করে। হুম ঠিক আছে। কোনো নারীও কিন্তু পরের সুখের সংসারে আগুন জ্বালিয়ে অর্থনৈতিক স্বার্থ আদায় করে কেটে পড়ে ইত্যাদি।
ওইসব পুরুষ অপরাধীদের সংখ্যা দেশে খুব নগণ্য। যদি না হতো, প্রতিদিন ধর্ষণ হতো কমপক্ষে ৫০০, এসিড মারতো কমপক্ষে ১০০০ ইত্যাদি।
ওইসব নগণ্য পুরুষ নির্মূল হোক এবং আপনারা নিজেরা নিজেদের ইজ্জত দিতে শিখেন, আবারও বলছি, নিজেরা নিজ লিঙ্গকে ইজ্জত দিতে শেখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেগম জিয়ার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু আপনারা পারেন না।
আপনারা নারী হয়ে নারীকে ইজ্জত দিন, সম্মান করতে শেখেন, কে খালেদা জিয়া, কে শেখ হাসিনা না ভেবে- নারী হিসেবে দেখতে শেখেন। দেখবেন- নারীদের অধিকার আরও কতো বেশি আদায় হয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮