এইতো মাত্র কিছু দিন আগে মিয়ানমারের সরকার ঘোষনা দিয়েছে রোহিঙ্গারা সে দেশের নাগরিক নয় ইতিহাস কিন্তু ভিন্ন কথা বলে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম যে ক’টি এলাকায় মুসলিম বসতি গড়ে ওঠে, আরাকান তথা রাখাইন প্রদেশ তার অন্যতম। মোঃ বিন কাসেমের সিন্ধু অভিযানের মাধ্যমে সিন্ধু নদের তীর ও আশে পাশের অঞ্চল গুলোতে ইসলাম বিস্তার লাভ করে। মাঝে বিশাল ভূগন্ড বাদ দিয়ে চট্রলা ও আরাকানে ইসলামের বিস্তার ঘটে। ইতিহাসে এর কারন হিসেবে সামুদ্রীক যাতায়াত সুবিধার কথাই চিহৃত করে, মূলত এই অঞ্চলে সমুদ্র পথে আরব বনিকদের আগমনেই ইসলাম বিস্তারের মূল ভূমিকা রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় এক সময় আরাকানে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৪৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শাসন ২০০ বছরেরও অধিক কাল স্থায়ী হয়। ১৬৩১ সাল থেকে ১৬৩৫ সাল পর্যন্ত আরাকানে ব্যাপক দুর্ভি হয়। এরপর মুসলিম শাসনের অবসান ঘটে। ইতিহাস বলে আজকের রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায় কোন ভিন দেশ থকে উঠে আসেনি তারা আরাকানেরই অধিবাসী।
বৌদ্ধধর্মের আসল শিক্ষাই হচ্ছে, ‘জীবে দয়া করো’, ‘জীব হত্যা মহাপাপ’, ‘অহিংসা’ ইত্যাদি। কোনো মানব তো দূরের কথা, কোনো জীবজন্তু-পশু-প্রাণীও হত্যা করা বৌদ্ধ ধর্মে নিষিদ্ধ। যুগ যুগ ধরে বৌদ্ধ ধর্মের লোকজন সুনামের সাথে সারা বিশ্বে ধর্ম প্রচার করে আসছে। তাদের সাথে অন্য কোনো ধর্মের মানুষের সাথে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব আছে বলে আমাদের জানা নেই। বিশেষ করে মুসলমানদের সাথে কখনো তাদের কোনো বিরোধ ছিল না। কিন্তু মিয়ানমার সরকার ও রাখাইন প্রদেশের বৌদ্ধরা মুসলমানদের সাথে যে আচরণ করছে, তা বৌদ্ধধর্মের আসল শিক্ষাকে সারা বিশ্বে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মিয়ানমার সরকার মুসলমানদের ওই দেশের নাগরিকও মনে করে না। ওই দেশের সংবিধানে মুসলমানদের কোনো পরিচয় বা স্বীকৃতি নেই। রোহিঙ্গা মুসলমিরাই বিশ্বের মধ্যে একমাত্র কোনো রাষ্ট্রের নাগরিকবিহীন জনগণ! মিয়ানমারে যখন বৌদ্ধরা মুসলমানদের নিধনে ব্যস্ত, তখন সে দেশের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন বললেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলিমরা তার দেশের নাগরিক নয়, তারা অন্য কোনো দেশে চলে গেলে এ সঙ্কটের সমাধান হতে পারে।’ মিয়ানমারে মুসলিম জাতি এখন মারাত্মক অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। ওখানকার মুসলিমরা আজ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। গত ১ নভেম্বর জাতিসঙ্ঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূত টমাস কুইনটানা ও জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকারবিষয়ক তদন্তকারী দলের পক্ষ থেকে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতেও এই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। তারা বলেছে, ‘মিয়ানমারের চলমান সহিংস পরিস্থিতিকে যেন রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা না হয়’ (দৈনিক আমার দেশ, ২ নভেম্বর)।
এমনি ভাবে দেখা যায় রাজা মিনডন মিন ১৮৫৩ থেকে ১৮৭৮ পর্যন্ত তিনি রাজা ছিলেন তিনি বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী হিসেবেই পরিচিত। ব্রিটিশ চক্রান্ত সত্ত্বেও মিয়ানমারের শেষ স্বাধীন সম্রাট হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায়। বাংলার শেষ নবাব হিসেবে সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্যবিপর্যয়ের পরেও ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে মিয়ানমারের স্বাধীনতার সলতে জ্বলছিল। ৭০ বছর বয়সে আমাশয়ে ভুগে রাজা মিনডনের মৃত্যুর মাত্র আট বছর পরে ১৮৮৬ সালে তৃতীয় ইঙ্গ-বর্মি যুদ্ধের মধ্য দিয়ে মিয়ানমার স্বাধীনতা হারায়। তখন রাজা ছিলেন তাঁরই ছেলে থিব। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশ্চিহ্ন করার ঘটনা অতীত ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাহলে স্বভাবতই প্রশ্ন আসে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আরাকানে বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়কে নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হবার কারন কি?
আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে রয়েছে রাখাইন প্রদেশের সাথে সীমান্ত এবং বেশ কয়েক যুগ ধরে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান জেলা গুলোতে চলছে খ্রিষ্টান মিশনারীদের কার্যক্রমের আড়ালে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীকে খ্রিষ্টান বানানোর কাজ। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা নিয়ে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের ন্যায় একটি খ্রিস্টান আদিবাসী রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু এই তিনটি জেলার সাথে সমুদ্র পথের কোন সংযোগ নেই, তাই এই প্রকল্পে কক্সবাজারের কিছু অংশ সংযোগের কাজও চলছে। আর কক্সবাজারের কিছু অংশ যদি যোগ করা না যায় তবে বিকল্প হিসেবে আরাকান প্রদেশের সমুদ্র বন্দর নিয়ে আরাকানের কিছু অংশ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা নিয়ে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমুরের ন্যায় একটি খ্রিস্টান আদিবাসী রাষ্ট্র। আগামীর সুপার পাওয়ার হলো চীন ও ভারত, এই অঞ্চলে এদের উপর খবরদারী ও মিয়ানমারের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কব্জা করাই হলো এর মূল লক্ষ্য।
উপজাতিদের আকর্ষণ করার জন্য চট্টগ্রামের ডুলা হাজরায় অতি উন্নতমানের হাসপাতাল কেন্দ্রিক কার্যাবলী অতি সতর্ক এবং সুদূরপ্রসারী চিন্তা ধারায় ফলপ্রসূ হয়ে উঠছে। ডুলা হাজরায় একটি খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার ছত্রছায়ায় খ্রিস্টান এনজিও প্রভাব ক্রমশই বৃদ্ধি করা হচ্ছে। একই সাথে চট্টগ্রামে পাহাড়ী, বাঙ্গালী, আরাকানী রোহিঙ্গা বাঙ্গালী দ্বন্ধ সৃষ্টি করা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা বাঙ্গালী স্বার্থের অনুকূলে নয়। বরং পাশ্চাত্য সামরাজ্যবাদী মোড়লদের স্বার্থের অনুকূল।