ষড়যন্ত্রপিষ্ট বাংলাদেশের রক্তঝরা হৃদয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সন্ত্রাসবিরোধী প্রলম্বিত বিশ্বযুদ্ধের অভিযানগুলোতে অনিয়ম ও অপব্যয়ের বোঝা এবং বিশ্ব পুঁজিব্যবস্খায় অনাচারের উভয় সঙ্কট একক পরাশক্তির বিশ্ব নেতৃত্বকে বিব্রতকর অবস্খায় ফেলেছে। দানা বেঁধেছে নানা ভূরাজনৈতিক জটিলতা, আবহাওয়া পরিবর্তনের বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া এবং জনজীবনের মৌলিক চাহিদা মোকাবেলায় বিশ্ববাজার সঙ্কট। ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বেড়ে চলা, মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব ও জনকল্যাণের ব্যয় সঙ্কোচ ভূমধ্যসাগরীয় ইউরোপীয় দেশগুলোতেও প্রবল অস্খিরতার জন্ম দিয়েছে। সাবেক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যমণি যুক্তরাজ্যেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ সঙ্কোচে রাজপথে সংঘর্ষ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন সচরাচর ঘটে থাকে। আরব দেশগুলোতে কোথাও অহিংস, কোথাও সহিংস ইন্তেফাদার বিস্তার দ্রব্যমূল্য- বেকারত্বজনিত আর্থসামাজিক বিক্ষোভকে গণবিমুখ আত্মসেবী শাসকদের অপসারণের রাজনৈতিক-ভূরাজনৈতিক অ্যাজেন্ডায় পরিণত করেছে।
অন্য দিকে তেলসমৃদ্ধ আরব দেশগুলোতে অস্খিরতা বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে চলেছে। প্রতিক্রিয়ায় পণ্যের দাম আরো ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। আবহাওয়া বিপর্যয়পীড়িত খাদ্যমূল্যে তার অনিবার্য প্রভাব বর্তাচ্ছে সর্বত্র। অগ্রসর অর্থনীতির জি-২০ গ্রুপের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে ফরাসি দেশের কৃষিমন্ত্রী ব্রুনো লে মেয়ার এ নিয়ে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব বান কি মুনের সাথে পর্যালোচনা করেছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, খাদ্যসঙ্কটের ঝুঁকি আর কৃষিপণ্যের ক্রমবর্ধমান অস্খিরতায় অনেক দেশে ভুখাদাঙ্গা ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ইতোমধ্যে বিশ্ববাজারে চালের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু এ দেশে বেড়েই চলেছে। বিদ্যুৎ ঘাটতির বিপাক মাথায় নিয়েই কৃষককে শুরু করতে হয়েছে বোরো ধানের আবাদ। সরকারি খাদ্যনীতি বিভ্রাট প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে এবারের বাম্পার আলু ফসলের দুর্গতিতে। ন্যায্যমূল্য দূরের কথা, উৎপাদন মূল্যের সিকিভাগও পাচ্ছে না আলুচাষি। পর্যাপ্ত কোল্ড স্টোরেজ কিংবা রফতানি সহায়তার কোনো কর্মসূচি নেই সরকারের, অথচ আলু বিকল্প প্রধান খাদ্য হয়ে চালের ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে। ওদিকে নীতিবিভ্রাট ও সিদ্ধান্তহীনতায় চালের বাজার, আলুর বাজার, শেয়ারবাজারেও যে বড় ধরনের কেলেঙ্কারি সরকার বাধিয়ে বসে আছে, তাতে শহুরে আত্মকর্মসংস্খান প্রার্থী তরুণ প্রজন্মের অনেকেই পথে বসেছে। প্রচণ্ড বিক্ষোভ দানা বেঁধেছে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মনে। দ্রব্যমূল্য খাদ্যমূল্যের চাপে নাগরিক দুর্ভোগ অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
এ প্রেক্ষাপটে ঘুরে এসেছে দু’বছর আগের মর্মান্তিক পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বার্ষিকী। জালে পড়া মাছের মতো একঝাঁক সেনা কর্মকর্তাকে জিম্মি করে নৃশংস হত্যাযজ্ঞের সেই দু:সহ স্মৃতির কীট এ দেশের সার্বভৌমত্ব ও শাসনশৃঙ্খলার অবকাঠামোকে অদ্যাবধি দংশন করে চলেছে। বিভিন্ন মহলে গভীর সন্দেহ রয়েছে ওই হত্যাযজ্ঞের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটিত হতে দেয়া হয়নি, দায়সারা তদন্তের শর্ত ও সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে, যথাযথ বিচারের কাজও একেবারেই এগোয়নি। বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের যে বিভাগীয় বিচার ও শৃঙ্খলাভঙ্গের শাস্তিবিধান হচ্ছে, মোটা দাগে তারই প্রচারবাদ্য জোরেশোরে বাজিয়ে চলেছে সরকার। তাতে সেনাবাহিনীর সদস্যদের কিংবা বিদ্রোহী বর্বরতার শিকার যেসব সেনাপরিবার, তাদের মনের ক্ষত শুকাবে কি?
সেনাশহীদদের রক্তবন্যাসিক্ত ওই কালো দিবসটিকে স্মরণ করতে এ নিয়ে সাম্প্রতিক ও অতীতের কিছু সংবেদনশীল সুচিন্তিত মন্তব্য উদ্ধৃত করব। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় বিএসএফ’র গুলিতে নিহত বাংলাদেশী পঞ্চদশী ফেলানীর ঝুলন্ত লাশকে উপলক্ষ করে প্রবাসী বাংলাদেশী সংবাদভাষ্যকার মনজুর আহমদ ২৩ জানুয়ারি, ২০১১ তারিখে নিউইয়র্ক থেকে লিখেছেন : ‘সীমান্তে ভারত নানা ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত, যেগুলো সরাসরি বাংলাদেশের স্বার্থে আঘাত হানছে। বিডিআর বরাবরই বিএসএফ’র এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, তাদের প্রতিহত করেছে। শেখ হাসিনার বিগত শাসনামলে সীমান্তে এক বড় ধরনের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএসএফ এবং বিডিআর। এতে বিএসএফ’র ভূমিকা ছিল আক্রমণকারীর এবং তারা বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে অবস্খান নেয়। বিডিআর সাহসিকতার সাথে তাদের প্রতিরোধ করে এবং তাদের প্রতিরোধে বিএসএফ’র বহু জওয়ান নিহত হয়।
বাংলাদেশের কাছ থেকে এত বড় আঘাত ভারত কখনোই মেনে নিতে পারেনি। সীমান্তে তারা তাদের বৈরী তৎপরতা জোরদার করেছে। নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা, তাদের অপহরণ-নির্যাতনে তারা মেতে উঠেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্খা অধিকারের হিসাব মতে, সীমান্তে বিএসএফ প্রতি চার দিনে গড়ে একটি করে বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এরই পাশাপাশি তারা সুযোগ খুঁজেছে প্রতিপক্ষ বিডিআরকে ঘায়েল করার। সে লক্ষ্য তাদের অর্জিত হয়েছে। নানা চক্রান্তের পাঁকে-চক্রে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী বিডিআর’র অস্তিত্ব আজ বিলুপ্ত। বিডিআর’র বদলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এবং নিয়তির পরিহাস এটাই যে, এ বর্ডার গার্ড গঠনে বুদ্ধি-পরামর্শ নেয়া হচ্ছে ভারতের কাছ থেকে। তাদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহায়তা দেবে বিএসএফ।
তাহলে এই বর্ডার গার্ডের কাজ কী হবে? তাদের দায়িত্বই বা কী হবে, ভূমিকাই বা কী হবে? বিএসএফ’র কাছে প্রশিক্ষণ নেয়া এবং ভারতের মদদে গঠন করা বর্ডার গার্ডের পক্ষে কি সেই ভূমিকা পালন কখনোই সম্ভব হবে? বাস্তবতা এটাই যে, প্রশিক্ষক বিএসএফ’র কাছে অধীনস্খ বশংবদ হিসেবে বর্ডার গার্ডকে নতজানু হয়েই থাকতে হবে। এ যদি হয় অবস্খা তাহলে বর্ডার গার্ড গঠনের দরকারইবা কী? বিডিআর ম্যাসাকারের পর অনেক দিন পর্যন্ত তো সীমান্তে বাংলাদেশের কোনো প্রহরা ছিল না। অরক্ষিত সীমান্ত তখন নাকি এককভাবে সামাল দিয়েছে বিএসএফ। সামাল দিয়েছে এবং সঙ্গতভাবেই বলা যায় সীমান্তে একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। যার পরিণতিতে আজ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে তাদের বেপরোয়া অনুপ্রবেশ।
জার্মানিতে গবেষণারত প্রাবসী বাংলাদেশী মোকাররম হোসেন সংকলিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড পরবর্তী কিছু ‘টুকরো খবর’ নিহাল পাবলিকেশন কর্তৃক ২০০৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত হয়েছিল। তার কিয়দংশ উদ্ধৃত করছি : বিডিআর সদর দফতরে নিহত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আবদুল বারী, কর্নেল মুজিবুল হক, কর্নেল মো: আনিসুজ্জামান, কর্নেল জাহিদ, লে: কর্নেল আবু মুসা মো: কায়সার, লে. কর্নেল এনায়েত এবং মেজর মিজানের জানাজা বাদ আসর ঢাকা সেনানিবাসের সেনা কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা এবং নিহত সেনাকর্মকর্তাদের আত্মীয়স্বজন অংশ নেন। এ ঘটনায় রাজনীতিবিদদের ভূমিকার সমালোচনা করে কয়েকজন তাদের সামনের সারিতে রেখে জানাজা পড়তে অস্বীকৃতি জানান। সাবেক সেনাকর্মকর্তারা তাদের কাছে এই প্রশ্ন রাখেন, কেন সেনাবাহিনীকে পিলখানায় সময়মতো ঢুকতে দেয়া হলো না। কেন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যদের পালানোর সুযোগ দেয়া হলো। তারা এমনও বলেন, সরকারের এসব লোকজনকে জানাজায় অংশ নিতে দিয়ে আমরা আমাদের সহকর্মীদের লাশের অমর্যাদা হতে দেবো না। কয়েকজন সেনাকর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর জন্যই যেন মিডিয়া সেখানে হাজির হয়েছিল। এসব ঘটনায় জানাজা কিছুটা বিলম্বিত হয়। আসরের নামাজের আগ মুহূর্তে মসজিদ প্রাঙ্গণে উপস্খিত হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রাজ্জাক। এ সময় কয়েকজনের আপত্তির মুখে তারা পেছনের সারিতে চলে যান।
“২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ ভারতের সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আউটলুকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্খা ‘র’-এর সাবেক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা বি. রমন বাংলাদেশের বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে এক নিবন্ধ লিখেছেন। ওই নিবন্ধে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলসকে একটি ভয়ানক বাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।”
২০০৯ সালের মে মাসে প্রকাশিত ‘রক্তাক্ত পিলখানা’ পুস্তিকায় লন্ডনভিত্তিক একটি সাপ্তাহিকের প্রধান সম্পাদক ও কমিউনিটি নেতা আবু তাহের চৌধুরী লিখেছেন : “পৃথিবীর ইতিহাসের এক বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল পিলখানায়। বিদ্রোহী বিডিআর সদস্য ও তাদের দোসরদের হাতে নৃশংসভাবে প্রাণ দিতে হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্নেল, মেজর, লেফটেন্যান্ট কর্নেল র্যাংকের বাঘা বাঘা অফিসারকে। পৈশাচিক কায়দায় তাদের হত্যা করে ম্যানহোল, ড্রেন আর গণকবরে চাপা দেয়া হয়। কোনো কোনো লাশকে পুড়িয়ে পর্যন্ত ফেলা হয়। বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমদকে স্ত্রীসহ হত্যা করা হলো নৃশংসভাবে।”
দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সাবেক সম্পাদক আমানুল্লাহ কবির ওই সালের মার্চ মাসে লিখেছিলেন : “২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের পর ১ মার্চ সেনাকুঞ্জের দরবার হলে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষুব্ধ সেনা অফিসারদের অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে প্রশ্ন উঠেছে সময়মতো সেনাবাহিনীকে বিডিআর হেডকোয়ার্টারে অপারেশন করতে দিলে তাদের অনেক অফিসার বেঁচে যেতেন। কিন্তু সেনাবাহিনীকে অপারেশন করতে দেয়া হলো না কেন? এমন প্রশ্নও উথাপন করা হয়, ‘সর্বোচ্চ আসনে থেকে যদি আপনি কাউকে সাহায্য করতে না পারেন, তাহলে এই ইনস্টিটিউশনের দরকার কী? এই দেশ অন্য কাউকে লিজ দিয়ে দিন।’ (ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের) ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া মন্তব্য এবং অডিওতে এ ধরনের আরো বহু প্রশ্নেরই উল্লেখ করা হয়েছে।
“বিডিআর বিদ্রোহের পেছনে দেশী-বিদেশী যে শক্তিই কাজ করুক না কেন, সময়মতো বিদ্রোহ দমনে ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব এককভাবে সরকারকেই নিতে হবে।”
অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামসুদ্দিন আহমেদ একই সময়ে লিখেছেন : “২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহ, যার ফলে ওই এক দিন ৬০ থেকে ৬৫ জন খুবই চৌকস, মেধাবী ও সম্ভাবনাময় সেনা অফিসারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তা এই দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে সংঘটিত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরই একটি বড় দুর্ঘটনা। হত্যাকারী বিডিআর বিদ্রোহীরা সেনা কর্মকর্তাদের পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় শুধু যে হত্যা করেছে তা নয়, তারা সেনা কর্মকর্তাদের বাড়িতে ঢুকে বেশ কিছু কর্মকর্তার স্ত্রীদের লাঞ্ছিত করে ও পরে হত্যা করে। বাড়িঘর থেকে মূল্যবান আসবাবপত্র, নগদ অর্থ ও সোনার অলঙ্কার লুটপাট করে। মৃতদেহগুলো ভূগর্ভস্খ পয়:নালীর মধ্যে ফেলে দেয় এবং গণকবরের আকৃতিতে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। এমন পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড কোনো আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা করতে পারে তা কল্পনার অতীত। এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের পেছনে বিরাট ষড়যন্ত্র আছে বলেই প্রতীয়মান হয়। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য ছিল অবশ্যই সেনাবা
“বিডিআর বিদ্রোহ ঘটনানো হয়েছে। এটা এমনিতেই ঘটেনি। যে ইস্যুগুলোকে ফলাও করে বিদ্রোহের কারণ হিসেবে বিদ্রোহের দিন মিডিয়াতে তুলে ধরা হয়েছিল তা যদি সত্য হতো তাহলে এ বিদ্রোহ অনেক আগেই হতে পারত। এই বিদ্রোহের সাথে ১৯৭৫ সালের সেই উত্তাল দিনগুলোর মিল রয়েছে। তখনো সেনাবাহিনী ও জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেনাবাহিনীর মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণের দোহাই দিয়ে।
“এ সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা (শত্রু পক্ষের) সহযোগীরা এ ব্যাপারে বিডিআর বিদ্রোহের আসল নায়কদের সহায়তা করেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।”
আর তৎকালীন সেনানেতৃত্বের চরিত্রবল নিয়েও প্রকারান্তরে প্রশ্ন উথাপন করেছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঞ্জুর রশিদ খান। লিখেছেন : “বিডিআর সদর দফতরে নিরাপত্তার বড় ধরনের ঘাটতি ছিল বা ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কৌশলে ঘাটতি সৃষ্টি করেছিল, এমন অসতর্কতা তো অকল্পনীয়। তাদের নিজস্ব একাধিক স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্খা না থাকার তো কথা নয়। আরো বড় ঘাটতি ছিল গোয়েন্দা খবরদারির। বিডিআর’র নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট ছাড়া জাতীয় স্তরের গোয়েন্দা সংস্খাগুলোর চরম ব্যর্থতা এখন আর রাখঢাকের বিষয় নয়। এ পর্যন্ত যা জানা যায় তা খুবই মর্মান্তিক। প্রাথমিক পর্যায়ে তাৎক্ষণিক দ্রুত কোনো ছোট ফোর্স নিয়ে এগিয়ে এলে সুফল প্রায় নিশ্চিত। শোনা যায়, র্যাব থেকে সদ্য বিডিআরে বদলি হওয়া কর্নেল গুলজার তার র্যাবের সহকর্মীদের অনুরোধ করেছিলেন, তাদের সাহায্যে দু’টি বা তিনটি প্লাটুন পাঠালেই যথেষ্ট। সে সাহায্য তিনি পাননি। এর চেয়ে নির্মম দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে?
“যুদ্ধ পরিস্খিতি মোকাবেলার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিশেষ করে সেনাবাহিনীকেই অগ্রণী ভূমিকায় থাকতে হয়। এখানে বহিরাক্রমণের মতো যুদ্ধ পরিস্খিতি না হলেও সেনাবাহিনীকেই মূল ভূমিকায় রাখার বিকল্প নেই। জানি না, রাজনৈতিক বা আইনি জটিলতার বিবেচনায় সেনাবাহিনীর কোনো দলকে দ্রুত পাঠানোয় কোনো বাধা ছিল কি না। আশা করি তদন্তে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হবে।”
সে বিষয়ে তদন্তের কোনো সুযোগই দেয়া হয়নি, আলোকপাত হয়নি। আর সরকারের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বুঝে বা না বুঝে এখনো সামরিক স্পর্শকাতরতার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে চলেছে। খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী সামরিক শিক্ষাপ্রাপ্ত নবীনদের গত মাসে একটি প্যারেডে বলেছেন, তিনি পিলখানার বিদ্রোহীদের সাথে আলোচনায় না বসলে ওই দিন সারা দেশে রক্তগঙ্গা বয়ে যেত। আর সামরিক কমান্ডারদের একটা বৈঠকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি বলেছেন : “কর্মকর্তা ও সৈনিকেদের সম্পর্কের মধ্যে এখনো অনেক ব্যবধান রয়েছে, যা কমিয়ে আনতে হবে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে কর্মকর্তা ও সৈনিকদের মধ্যে যেন বৈষম্যের সৃষ্টি না হয় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।”
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।
এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন