somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমামত ও খেলাফত

০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইমামত ও খেলাফতের বিষয় হচ্ছে বিভিন্ন মযহাবের দৃষ্টিভঙ্গিতে ধর্মের একটি মৌলিক বিষয় বা দ্বীনের স্তম্ভের (উসুলে দ্বীন) অন্তর্ভূক্ত যা না মানলে নয়।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে হলে আমাদেরকে তিনটি বিষয়ে গভীর ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে।
১। ইমামত উসুলে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত।
২। ইমাম অবশ্যই ১২ জন হতে হবে।
৩। ইমাম আল্লাহ কতৃক নির্বাচিত।

১। ইমামত উসুলে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত:
যে কোনো ধর্মের নীতিকে প্রধান দু’ভাগে ভাগ করা যায়। (ক) আকিদা বিশ্বাস ও (খ) হুকুম আহকাম।
আকিদা বিশ্বাসকে ইসলামি পরিভাষাতে উসুলে দ্বীন বা দ্বীনের স্তম্ভ বা মূল নীতি এবং হুকুম আহকামকে ফুরুয়ে দ্বীন বা শাখা নীতি বলা হয়ে থাকে। অবশ্য ধর্ম ও মাযহাব বিশেষে এ নীতিগুলোতে পার্থক্য হতে পারে। যেমন, কোনো মাযহাবে ইমামত হচ্ছে উসুলে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত কিন্তু কোনো মাযহাবে তা নয়। অবশ্য বলতে হয় বর্তমানে অনেক মাযহাবে নেই। কেননা রাসুল (সা.) এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মাযহাবের অনেকেই এ মত পোষণ করতেন যে, ইমামত হচ্ছে উসুলে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত।
আমরা যদি পবিত্র কোরানে দৃষ্টি দেই দেখতে পাবো যে, নবুয়্যতের মত খেলাফত ও ইমামত পদে নির্ধারণের দায়িত্বও খোদা নিজের হাতে রেখেছেন যার বর্ণনা বহুবার এসেছে।
إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْضِ خَلِيفَةً (سوره بقره/آيه30)
অনুবাদ: নিশ্চিত, ভূমিতে আমিই (খোদা) খলিফা নির্ধারণকারী। (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩০)
যেহেতু এ আয়াতে কালের কোনো উল্লেখ নেই তাই বলা যেতে পারে যে, অতীত, বর্তমান হোক কিন্বা ভবিষ্যত কাল হোক খলিফা নির্ধারণের দায়িত্ব একমাত্র আল্লাহ’র।
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ (سوره ص/آيه26)
অনুবাদ: হে দাউদ! আমি ভূমিতে তোমাকে খলিফা নির্ধারণ করেছি। (সুরা সাদ, আয়াত: ২৬)
হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন উল্লেখ করেছেন:
وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَاقَ وَ يَعْقُوبَ وَ كُلًّا جَعَلْنَا نَبِيًّا (مريم/49)
অনুবাদ: আমি ইসহাক ও ইয়াকুবকে তাকে দিয়েছি আর দুজনকেই নবী নির্ধারণ করেছি। (সুরা মরিয়ম, আয়াত: ৪৯)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইমামত সম্পর্কে পবিত্র কোরানে বর্ণনা করেন:
إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا (سوره بقره/آيه124)
অনুবাদ: নিশ্চয় আমিই (খোদা) তোমাকে জনগণের ইমাম নির্ধারণ করেছি। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৪)
অথবা হযরত মুসা (আ.) আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা করলেন:
وَ اجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي * هَارُونَ أَخِي (سوره طه/آيات30ـ 29)
অনুবাদ: আমার পরিবারের মধ্য হতে একজনকে আমার জন্য জাঁনশিন নির্ধারণ কর ; আমার ভাই হারুনকে। (সুরা তাহা, আয়াত: ২৯ ও ৩০)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন:
قَالَ قَدْ أُوتِيتَ سُؤْلَكَ يَا مُوسَي (سوره طه/آيه36)
অনুবাদ: আল্লাহ বলেন হে মুসা! তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেয়া হলো। (সুরা তাহা, আয়াত: ৩৬)
অতএব, উপরের আয়াতগুলো হতে আমরা উপলদ্ধি করতে পারি যে, ইমামত ও খেলাফত সম্পর্কে মোটামুটি কোরানে এসেছে।
মুসলমানদের মধ্যে সম্মানিত স্থানের অধিকারী সপ্তম হিজরি সনের বিখ্যাত কাজি আল কুজাত জনাব বাইযাউয়ি’র মত আহলে সুন্নতের অনেক মহান ব্যক্তিবর্গের মতে ইমামত হচ্ছে উসুলে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। উসুল ও ফুরুয়ে দ্বীন বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি সরাসরি বলেন:
و لا كفر و لا بدعة في مخالفتهما بخلاف الامامة. (المنهاج على منهاج الوصول إلى علم الأصول للبيضاوي ص75)
নামাজে ইকামত, ও বিসমিল্লাহ বলার কাজটি হচ্ছে ফুরুয়ে দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত। এর বিরোধিতা করলে কুফর ও বিদাত হবে না কিন্তু ইমামতের বিষয় এর বিপরীত। (বাইযাউয়ি, আল মিনহাজু আলা মিনহাজুল ওসুল ইলা ইলমিল উসুল, পৃষ্ঠা: ৭৫)
অর্থাত, যদি কোনো ব্যক্তি ইকামত ও বিসমিল্লাহ বলার ক্ষেত্রে তার বিরোধিতা করে সে কাফেরও হবে না আর তাকে বিদাত আঞ্জাম দিয়েছেও বলা যাবে না। কিন্তু ইমামতের বিষয়টা তার বিপরীত, যদি কেউ তার বিরোধিতা করে সে কাফের হবে এবং তাকে বিদাত গুজারে পরিগণিত হবে।
আরেকজন মহান ব্যক্তিত্ব ইমাম সাবুকিও বলেন:
بخلاف الإمامة فإنها من الأصول ومخالفتها بدعة ومؤثرة في الفتن. (الإبهاج ،ج 2، ص 296)
ইমামত তার বিপরীত কেননা ইমামত হচ্ছে উসুলে দ্বীন বা মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত; তার বিরোধিতা হচ্ছে বিদাত এবং ফিতনা ও বিশৃঙ্খলাতে পরার কারণ। (আল ইবহাজ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৯৬)
দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব বর্ণনা করেন:
حدثنا أَحْمَدُ بن زَيْدِ بن هَارُونَ الْقَزَّازُ الْمَكِّيُّ ثنا إِبْرَاهِيمُ بن الْمُنْذِرِ الْحِزَامِيُّ ثنا عبد اللَّهِ بن مُحَمَّدِ بن يحيى بن عُرْوَةَ عن هِشَامِ بن عُرْوَةَ عن أبيه أَنَّ مُطِيعَ بن الأَسْوَدِ قال سمعت عُمَرَ بن الْخَطَّابِ رضي اللَّهُ عنه يقول وَاللَّهِ لو عَهِدْتُ عَهْدًا أو تَرَكْتُ تَرِكَةً لَكَانَ أَحَبَّ إلي من أَنْ اجعلها إليه الزُّبَيْرُ بن الْعَوَّامِ فإنه رُكْنٌ من أَرْكَانِ الدِّينِ. (المعجم الكبير، ج1، ص 120)
খোদার কসম, আমি যদি কোনো প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করতাম অথবা আঞ্জাম দিতাম তা আমার জন্য যুবাইর বিন আওয়ামকে খেলাফত হস্তান্তর করার চেয়ে পছন্দনীয় হত; কেননা, খেলাফত হচ্ছে দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোর অন্যতম। (আল মুজামুল কাবির, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১২০)
জনাব হেইসামিও ঠিক অনুরূপ কথাই বর্ণনা করেছেন এবং বলেন যে, হাদিসটি তিবরানি বর্ণনা করেছেন। আর সনদ হচ্ছে হাসান বা নির্ভরযোগ্য। (মাজমাউয যাওয়াইদ, ৯ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৫১)
وعن مطيع بن الأسود قال سمعت عمر بن الخطاب رضي الله عنه يقول والله لو عهدت عهدا أو تركت تركة لكان أحب إلي أن أجعلها إلى الزبير بن العوام فإنه ركن من أركان الدين رواه الطبراني وإسناده حسن. (مجمع الزوائد، ج9، ص151)
এ ছাড়াও আরো অনেক রেফারেন্স রয়েছে যা প্রমাণ করে যে, ইমামত হচ্ছে উসুলে দ্বীন বা মৌলিক বিশ্বাসের অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু এ ইমাম কতজন হবেন তা আমরা পরবর্তীতে উল্লেখ করবো। ইনশা আল্লাহ।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×