somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাত বেধে নামায আদায় করা, ও একটি বিদআত

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুসলমানদের বিখ্যাত পাঁচটি মাযহাব হচ্ছে হানাফি, শাফেঈ, হাম্বালী, মালেকি ও জাফারি। আর এদের মধ্যে আহলে সুন্নতের চারটি ও একটি হল শীয়া। নামাযের সময় দুই হাতকে কিভাবে রাখতে হবে, এ নিয়ে পাঁচটি মাযহাবের মধ্যে দৃষ্টিগত পার্থক্য রয়েছে। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের তিনটি মাযহাব অবশ্য হাত বেঁধে নামায পড়ে। আর সুন্নি একটি ও শীয়া, এই দু’টি মাযহাবের অনুসারিরা হাত ছেড়ে দিয়ে নামায আদায় করেন। কথা হল রাসুল(সা.) তো নামায আদায় করতেন এবং অবশ্যই সাহাবা কেরামদের তা দেখার এবং জানার কথা। নাউযুবিল্লাহ রাসুল(সা.) তো বে নামাযি ছিলেন না। আর লুকিয়েও নামায পড়ার কোন প্রয়োজন বা যুক্তি আমরা পাইনা। তবে এত প্রকার নামায পড়ার তয় তরিকা কোথা থেকে এল? মুসলমানদের এই সবচেয়ে বড় ইবাদতের বিকৃত করার পেছনে কোন ষড়যন্ত্র নেইতো? কেননা হাদীসে এসেছে:
إذا قبلت، قبلت ما سواها و إذا ردّت، ردّت ما سواها
অর্থ: “যদি নামায (খোদার দরবারে) কবুল হয়ে যায়, তবে অন্যান্য সব কর্মও কবুল হয়ে যাবে, আর যদি নামায গ্রহণীয় না হয় তাহলে (বান্দার) আর কোন কিছুই কবুল করা হবেনা”।
এতে বুঝা যায় যে, অবশ্যই কোন বড় রকমের ষড়যন্ত্র বা কোন অদৃশ্য হাত এর পেছনে রয়েছে। যে এই গুরুত্বপূর্ণ কাজকে যদি নষ্ট করে মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ততে ফেলে দেয়া যায় তাহলে অন্যান্য সব বিষয়ে অনায়াসেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। কারা করেছিল এ কাজটি?
এটা অবশ্য ঠিক যে, হাত বাঁধার ব্যপারে বিভিন্ন রকম দৃষ্টি ভঙ্গি রয়েছে। আর এই দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে যা নিয়ে ঐক্যের সৃষ্টি হতে পারে তা হল এই যে, কেউই এটাকে (হাত বাধা) ওয়াজিব বা অবশ্য করণীয় বলে দাবী করেনি। তাহলে একে অপরের জামাতে শরিক হয়ে ঐক্যের খাতিরে তাদের মত নামায পড়বোনা কেন? এতে « انما المؤمنون اخوة » ও “মুমিনরা একে অপরের ভাই ভাই” কথাটা দৃঢ়তর হয়। আর মুসলমানদের শত্রুর বিরুদ্ধে আমাদের করণীয় ও দায়িত্ব পরিস্কার হয়ে যায়। তাহলে মুসলমানদেরকে নিজেদের মধ্যে লেলিয়ে দেওযাতে লাভটি কার? অবশ্যই শত্রু পক্ষের। কিন্তু বিভ্রান্তিকর কথাগুলো বেশীরভাগ আমরা আমাদের মুসলমান ভাইদের মুখে শুনে থাকি। এরা দালাল কিনা জানিনা খোদা বলতে পারবেন। এমনকি মুসলমান একদল অপরদলকে কাফের বলতেও দ্বিধাবোধ করেনা। আর শুনেছি এসব ফতোবাজি যে আলেমরা করে, তার বেশীভাগ হয় সৌদির টাকায় রক্ত মাংশ করেছেন অথবা জামাতের লোক। যদি কথাটা সত্য হয় আল্লাহই তাদের হেদায়াত করুক। কমপক্ষে সুস্থমস্তিষ্কের লোকদের হুশিয়ার থাকা উচিৎ।
যাইহোক যা বলছিলাম তা হচ্ছে এই যে, শীয়ারা হাত বেঁধে নামায পড়াকে হারাম মনে করে এবং তাতে নামায বাতিল হয় বলে মত পোষণ করে। আর আহলে সুন্নতের কোন মাযহাবেই হাত বাঁধাকে ওয়াজিব বলা হয়নি। অবশ্য কেউ কেউ এটাকে মুস্তাহাব আবার একদল ওয়াজিব নামাযে এটাকে মাকরুহও বলেছেন। আর নবী করিম(সা.) ও প্রথম খলিফার সময়ে, সব সাহাবারা হাত ছেড়ে দিয়ে বা হাত খুলে নামায পড়তেন, দ্বিতীয় খলিফা পযর্ন্ত সময়ে এসে এই হাত বাঁধার বিদআত শুরু হয়।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের একজন বিখ্যাত আলেম ইবনে রুশদ কুরতুবি ওন্দোলুসি তার বিদায়াতুল মুজতাহীদ, ১’ম খন্ড, কেতাবুস সালাত, ২’য় অধ্যায়, পৃষ্ঠা: ১৩৬-১৯৩, ৫’ম বিষয়ে উল্লেখ করেন: হাতের উপর হাত রেখে (হাত বেঁধে) নামায আদায় করা সম্পর্কে (আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের) ওলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। মালেক ইবনে আনাস ওয়াজিব নামাজে এটাকে মাকরুহ ও নফল নামাজে জায়েজ বলে মনে করেন, বেশীর ভাগ লোক এটাকে মুস্তাহাব মনে করেন। আর এই মতপার্থক্যের কারণ হিসেবে যা আমরা পাই, তা হচ্ছে কিছু সহীহ হাদীস বা রেওয়ায়্যাত। যেখানে নবী করিমের(সা.) নামাযের বর্ণনা দেয়া আছে। কিন্তু সেখানে বর্ণনা করা হয়নি যে রাসুল(সা.) বাম হাতের উপর ডান হাতটি রাখতেন। অপরদিকে জনগণকে হাত বেঁধে নামায পড়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ দেনে ওয়ালা সম্মন্ধে কোন তথ্য নেই যে, কে এই নির্দেশ দিয়েছে বা কার পক্ষ হতে হুকুম এসেছে।
আর আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ভায়েরা যে বিশেষ দলীল প্রমানের উপর ভর করে এ কাজটি করে থাকেন তা হচ্ছে মাত্র দু’টো রেওয়ায়্যাত বা হাদীস:
১। সাহল ইবনে সা’দ হতে বুখারি বণর্না করেন যে, জনগণকে হাতের উপর হাত রেখে (হাত বেঁধে) নামায পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবু হাযেম বলেন: নবী করিমের(সা.) হুকুম না হলে (যা কোথাও নেই) এ হাদীসকে সহীহ বলে মনে করি না। (সহীহ বুখারি ১’ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৩৫।)
২। এ দ্বিতীয় হাদীসটি অবশ্য মুরসাল বা সব বণর্নাকারীর নাম উল্লেখ করা হয়নি; কেননা আলকামা ইবনে ওয়ায়েল তার বাবা থেকে যে সকল হদীস বণর্না করেছেন আহলে সুন্নত ওয়াল জামাত সেগুলোকে মুরসাল মনে করে আর বলে এসব হাদীস বিশ্বস্ত নয়।
কিছু কিছু রেওয়ায়্যাতের বণর্না মতে একদিন মাজুসের (অগ্নি পূজারী) কিছু বন্দী ওমরের(র.) কাছে আসে এবং সম্মানের উদ্দেশ্যে তাদের দুটি হাত বুকের উপরে ছিল। তার কারণ জিজ্ঞেস করাতে তারা বলল: আমরা বড়দের সম্মানের খাতিরে এ কাজটি করি। ওমরকে(র) এ কাজটি পছন্দ হল এবং নির্দেশ দিল যে, অধিক বিনয়ের উদ্দেশ্যে নামাযে এমনই করা হোক। (জাওয়াহিরুল কালাম, ১১’তম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৯; ভুল ধারণার অপনোদন, তাবাসি।।)
আর এই কারণে শীয়া মাযহাবের লোকেরা হাত বেঁধে নামায পড়াকে জায়েজ মনে করে না।
তাহলে কি কোরান ও হাদীসে রাসুল(সা.) যথেষ্ট ছিল না যে মাজুসের (অগ্ন পূজারক) কাছ থেকে ইসলামের তয়-ত্বরিকা গ্রহণ করতে হবে।! তাহলে কোনটি ঠিক? শীয়ারা যা করে সেটিই ঠিক নাকি আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ভায়েরা যেরুপ নামায পড়ে সেটা? আমাদের অবশ্যই জানতে হবে এবং নবী করিমের(সা.) ন্যায় সঠিক রুপে নামাজ আদায় করতে হবে।
فاسئلوا اهل الذکر إن کنتم لا تعلمون
অর্থ: “যদি তোমরা না জান তাহলে আহলে জিকিরের (যারা কোরান বিষয়ে জ্ঞানী) কাছে জিজ্ঞেস কর”।
২৬টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×