somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাহাজী রূপকথা /:)

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছি, বউ আমার মাথার লম্বা চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, “তোমার চুলে কেমন নোনা নোনা ঘ্রান!”



আমি চোখ না খুলেই বললাম, "সাগরের বাতাসে নুন উড়ে, সে নুন চুলে এসে জমে। যখন সুর্যের আলো চুলে পড়ে সে চুল চিক চিক করে!”



সে এবার আমার চুল টেনে দিয়ে বললো, “ সময় শেষ! এবার উঠো! এবার আমার পালা!”





আমি বিছানায় উঠে বসলাম, বউ এবার শুয়ে তার মাথাটা আমার কোলে ফেলে চোখ বুঝলো! নারীদের সম অধিকারের যুগ চলছে! এক ঘন্টা তার কোলে মাথা রাখলে পরের এক ঘন্টা আমার কোলে সে মাথা রেখে গল্প করবে!



তার সাড়া শব্দ না পেয়ে যখনই ভাবছি বউটা ঘুমিয়ে পড়েছে তখনই বউ আহ্লাদী গলায় বলে উঠলো, “এই একটা গল্প শোনাও না! সাগরের গল্প!”



আমার হাত তখন বউয়ের ঢেউ খেলানো চুলে, যেন সাগরের ঢেউ তার মাথার চুলে। আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, “একবার সাগরে ঝড় উঠেছে, তোমার চুলের ঢেউয়ের মতো বিশাল বিশাল ঢেউ”।



বউ বললো, “সাগরে ঝড় উঠেছে কেন?”



বললাম, “সমুদ্র সম্রাট তখন তার সম্রাজ্ঞীর সাথে ভালোবাসায় লিপ্ত! সেই ভালোবাসার কম্পনে গভীর সাগরে ঝড় উঠেছে। সমুদ্রের মাঝে সমুদ্র সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর ভালোবাসা, সে তো আর সহজ ব্যাপার নয়! গভীর রাত, গভীর সমুদ্র, সে কি বিশাল ঢেউ, যেন একটা ঢেউ আরেকটা ঢেউয়ের সাথে পাল্লা দিচ্ছে কে কার চেয়ে বেশি উপরে উঠতে পারে! বাতাসের সে কি বেগ, যেন সমুদ্র সম্রাটের গরম নিঃশ্বাস ছুটে যাচ্ছে এপাড় থেকে ওপাড়!”



বউ জিজ্ঞেস করলো, “তারপর?”



“সেই গভীর সমুদ্র দিয়ে যাচ্ছিলো এক পাল তোলা জাহাজ, সাগরের ঢেউয়ে আর বাতাসের তোড়ে জাহাজীরা সব নাস্তানাবুদ। বাতাসের ধাক্কায় জাহাজের এক যুবক নাবিক পড়ে গেলো সাগরের পানিতে, আর পড়া মাত্রই তাকে জাহাজ থেকে দূর বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে গেলো সাগরের ঢেউ। স্রোতের পাকে পড়ে ডুবে গেলো সে, আর গিয়ে পড়লো সম্রাট সম্রাজ্ঞীর মধ্যখানে, আরেকটু সুক্ষভাবে বলতে গেলে সম্রাজ্ঞীর কোলে, যেমন মায়ের কোলে শুয়ে থাকে সদ্য প্রসূত সন্তান!”



“যাহ! এটা কিরকম হলো!!”



“হু তারপর কি হলো শোনই না, মিলনে ব্যাঘাত ঘটায় সম্রাট সেই নাবিককে অভিশাপ দিলো। সমুদ্র সম্রাটের অভিশাপে সে নাবিক হয়ে গেলো এক কাঠের নৌকা! সম্রাট বলে দিলো, “যতদিন তুই মাটির কোলে না ভিড়তে পারবি ততদিন তুই এরকম থাকবি! এ বলে এক ফুঁ দিলেন সম্রাট! ডিঙ্গি নৌকাটা উড়ে গিয়ে গভীর সমুদ্র থেকে আরো গভীরে পড়লো! সে নৌকায় বৈঠা নাই, মাঝি নাই। সাগরের স্রোত তাকে একবার এদিকে নেয় তো, সাগরের বাতাস তাকে নেয় ঐ দিকে! নাবিক কাঁদে, এই অকূল পাথার আর পাড়ি দেওয়া সম্ভব না। সারাজীবনের জন্য বন্দী হয়ে গেলো সে!"



“তারপর?”



“তার আর পর নাই, গল্প এখানেই শেষ!”



বউ রাগ করে বললো“না না না, আরো আছে, আমাকে বলো। নাবিকটা এভাবে সারাজীবন সাগরে সাগরে ভাসতে থাকবে?”



“আচ্ছা শোন, ঐ দিকে হলো কি, নাবিকটা যখন সম্রাজ্ঞীর কোলে এসে পড়লো তখন সম্রাজ্ঞীর মাঝে মাতৃ স্নেহ জেগে উঠলো! সে ভাবতে লাগলো, আহা! আমার কোল জুড়ে যদি একটা সন্তান থাকতো তাহলে কতই না ভালো হতো! কিন্তু সম্রাট যখন নাবিককে অভিশাপ দিলেন তখন তার ভারী মন খারাপ হলো। কিন্তু সমুদ্রের সম্রাট অনেক রাগী, তার সমুদ্র শাসনের ব্যাপারে সম্রাজ্ঞী কখনো হস্তক্ষেপ করেন না। তাই তিনি একটা কৌশল নিলেন!”



বউ আগ্রহী হয়ে উঠলো, সে চোখ খুলে আমার দিকে ফিরে তাকিয়ে বললো, “সেটা কি?”



আমি মুচকি হেসে বললাম, “সম্রাজ্ঞীর সেবার জন্য সমুদ্রে অনেক মৎস্য কন্যা আছে, তিনি তার প্রিয় এবং সব চাইতে সুন্দরী মৎস্য কন্যাকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাকে বললেন, “তুমি আমার চুলে খোঁপা বেঁধে দাও। কন্যা যখন সম্রাজ্ঞীর চুল বেঁধে হাঙ্গরের কাঁটা গুঁজে দিচ্ছিলো তখন হটাত সম্রাজ্ঞী ব্যাথায় “উহ” করে উঠলেন। কন্যা ভয়ে টতস্থ হয়ে গেলো, সে বুঝি সম্রাজ্ঞিকে ব্যাথা দিয়ে ফেলেছে! ব্যাথায় ককিয়ে উঠে সম্রাজ্ঞী সেই মৎস্য কন্যাকে অভিশাপ দিলেন, “তুই যতদিন মাটির ছোয়া না পাবি ততদিন তুই মনুষ্যরূপ ধারন করে থাকবি।" এ বলার সাথে সাথে সেই মৎস্য কন্যার ন্যাজ খসে গেলো, মানুষের মতো পা বেরিয়ে গেলো তার! ন্যাজ হারিয়ে যাওয়ায় মৎস্য কন্য সাগরে খাবি খেতে লাগলো, কারন সে ন্যাজ ছাড়া সাতার দিতে জানে না!”



“তারপর”?



“তারপর সম্রাজ্ঞী তাকেও সবেগে ধাক্কা দিলেন, সে এসে পড়লো সেই কাঠের নৌকার পাশে, অতি কষ্টে সে নৌকায় উঠে বসলো। মৎস্য কন্যাকে দেখে ডিঙ্গি নৌকারুপি নাবিক আশার আলো ফিরে পেলো, সে তাকে সব খুলে বললো, তারপর বললো, যদি তুমি আমাকে কোন দ্বীপ বা সাগর পাড়ে চালিয়ে নিয়ে যেতে পারো তাহলে তুমিও বাঁচলে, আমিও বাচবো, আমাদের অভিশাপ খন্ডন হবে!”



তারপর?



“কিন্তু সমস্যা হলো নৌকা বাইবার জন্য বৌঠা কই পায় এই মাঝ সাগরে! নাবিক বললো, তুমি আমার শরীর থেকে এক টুকরো কাঠ খুলে নাও। মৎস্য কন্য বললো, তুমি ব্যাথা পাবে যে! নাবিক বললো, তা পাই, কিন্তু তোমার জীবন বাচবে যে!”



বউ দুখী গলায় বললো, “আহারে!”



“তারপর, কন্যা নৌকার একটা কাঠা ভাংলো, ভাংগার সময় নাবিক সেই কন্যার সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো, এতো সুন্দর মুখ দেখে পৃথিবীর যে কোন ব্যাথা ভুলে থাকা যায়, তাই নাবিক একটু উহ আহ শব্দও করলো না! তারপর কতোদিন কন্য বৈঠা বেয়ে চললো তার হিসেব নেই। একটা সময় নাবিক বোধ করলো, সে সারাজীবন তার বুকে চেপে বসা দেবীকে নিয়ে সাত সমুদ্র ঘুরে বেড়াতে পারে তার কোন ক্লান্তি লাগবে না, মানুষ রুপে ফিরে যাওয়ার জন্য কোন দিন বিন্দু মাত্র আফসোস লাগবে না!





ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পেরে বউ শিউরে উঠলো, আমি তার শরীরের কম্পন টের পেলাম।



আমি বলেই চলেছি, “একটা সময় হটাত এক দ্বীপ দেখতে পেলো কন্যা! সে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো! সে চিৎকার যেন নাবিকের বুকে শত সমুদ্রের ঢেউ হয়ে আঘাত করলো! এখন কন্যা মাটির ছোঁয়া পেলে আবার মৎস্য কন্যা হয়ে যাবে, এখনি তো সে আবার আগের নাবিক হয়ে যাবে! তারপর যে যার যায়গায় ফিরে যাবে! আর হয়তো কোন জীবনে এই কন্যার দেখা যে পাবে না! তার সুন্দর মায়াভরা মুখখানি দেখতে পাবে না!”



“যখন দ্বীপের কাছাকাছি নৌকাটা আসলো আর কন্যা উৎসাহী হয়ে লাফ দিতে যাবে তখনই দেখলো নৌকাটা কাঁদছে অঝোরে, নাবিক বললো, “কন্যা, আমার বুকে সমুদ্রের নোনা জল ছাড়া আর কিছুকেই কখনো ঠাই দেইনি, সেখানে নোনা জলের পাশাপাশি ভাগ বসালে তুমি। তুমি চলে গেলে এ শুন্য বুক আর কখনো ভরবে না, সারাজীবন খালি থাকবে, সাত সাগরের সব জল সেঁচে সব নুন এক বুকে জমা করলেও এই নাবিকের তৃপ্তি আসবে না। তুমি যেও না!



তারপর সমুদ্রকন্যা একটু ভাবলো, তারপর বৈঠা ঘুরিয়ে আবার ফিরে চললো গভীর সাগরের দিকে। কারনে, সেও যে নাবিককে ভালোবেসে ফেলেছে!



“তারপর কি হলো?”



আমি বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললাম, “তারপর আর সত্যিই জানি না, তবে শুনেছি সম্রাজ্ঞী ভালো করে তার স্বামীকে বলে দিয়েছেন, তারা দুজন যে সাগর ধরে যায় সেখানে যেন ঝড় না উঠে। এখনো চাঁদনী রাতে জাহাজীরা যখন গভীর সমুদ্রে থাকে তারা হটাত দেখতে পায় একটা ছোট নৌকায় চড়ে এক অপরূপা সুন্দরী দেবী স্রোতের টানে ভেসে যাচ্ছে, থেকে থেকে সে কন্যার হাসিতে সাগরের উপরে পানিতে মৃদু কম্পন উঠে, জাহাজীরা সে দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে থাকে যতক্ষননা সেই নৌকা হারিয়ে যায় গভীর সাগর থেকে আরোও গভীরে!
২০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×