সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখচি আজ প্রায় ১ বছর ১ মাস হয়ে গেল! অনেকগুলো দিন!
আমার মনে আছে, ২০১০ সালের অক্টোবরের শুরুতে আমি মালায়শিয়ায় ছিলাম। জাহাজ নোঙ্গর করা ইনার এঙ্করে আর আমরা জাহাজে বসে অলস সময় কাটাচ্ছি। জাহাজে তখন থার্ড অফিসারের ল্যাপটপে ফেসবুক ইউজ করতাম। তখন ইন্টারনেট বলতে আমি শুধু ফেসবুক বুঝতাম।
হটাৎ এক সন্ধ্যায় ফেসবুক খুলে দেখি একটা পেজ একটা লিঙ্ক শেয়ার করছে। সেই লিঙ্কের সুত্র ধরে সামু দেশে আমার আগমন। তারপর মুগ্ধ চোখে ব্লগারদের অনেক লেখা পড়লাম। কাপাকাপা হাতে "জাহাজী পোলা" নিকটা রেজিঃ করালাম। তারপর ভুল বাংলা টাইপিং এ একটা ছোট পোষ্ট দিলাম। শুরুটা এভাবেই।
ব্লগে এসে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক মানুষের সাথে পরিচয় হয়েছে- সে অনেক কথা। তার ফিরিস্তি দিতে গেলে পুরা পোষ্ট শেষ হয়ে যাবে। তারচেয়ে অন্য একটা বিষয়ে চলুন আলোচনা করা যাক- "একজন ব্লগারের চোখ"।
আমরা জানি ব্লগ একটি উন্মুক্ত ফ্ল্যাটফর্ম। একজন ব্লগার ব্লগের বিধি মেনে যে কোন বিষয় আলোচনা, সমালোচনা কিংবা নিজের লেখা কবিতা, গল্প পোষ্ট করতে পারেন। বাংলাদেশে প্রচলিত দৈনিক পত্রিকাতে আমরা অনেক খবর পড়ি কিন্তু সেগুলো নিয়ে বাস্তব লাইফে আলোচনা করলে নিজের আশে পাশের পরিধির মাঝেই থাকে, কিন্তু ব্লগে এর আলোচনা করলে অনেক কিছু জানা যায় নিজের ভাবনাগুলো ছড়িয়ে দেওয়া যায়। এটা ব্লগের একটা বড় ভাল দিক। তাছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত তৈরি কিংবা অসুস্থ মানুষকে সাহায্যের জন্য ব্লগ অনেক উপকারি। ( ব্লগ প্রতারক রোজালিনের ব্যাপারটায় আমি হতাশ অনেক )
ব্লগের যে জিনিসটা আমার কাছে বেশি ভাল লাগে তা হল- ব্লগ একটি বড় উন্মুক্ত মিডিয়া। ধরেন আপনি একটা দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষি, কিন্তু আপনি চাইলেই আপনার ঐ সময়ের অভিজ্ঞতা কিংবা আপনার অনুভূতি কোন পত্রিকায় ছাপাতে পারবেন না, সে সময় আপনার ভরসা হচ্ছে ব্লগ! আর এখানেই ব্লগের সবচেয়ে বড় সার্থকতা।
প্রথম আলোর একটা এড এখন অনেক চোখে পড়ছে আর তা হল "উট পাখির জীবন চাই না"-এই এড টা। যদিও প্রথম কিছু ইস্যুতে প্রথম আলোর কাজ কাম উট পাখির মত তবুও তারা এই উদ্যোগের জন্য প্রশংসার দাবিদার। আমরাও চাই মানুষ সচেতন হোক। অন্যায়ের প্রতিবাদ করুক।
আর এই ক্ষেত্রে ব্লগাররা রাখতে পারেন বেশ ভাল ভুমিকা। আসুন দেখি এই নিয়ে কয়েকটা প্রতিবেদন।
☯ ☯ এক দিন হাইওয়েতে- অল্প কিছু দিন আগে চিটাগং থেকে একটা কোর্স শেষ করে রাতের বাসের ঢাকায় ব্যাক করছিলাম। রাত ১১৩০ এ বাস ছাড়ে। ভোর ৬ তার দিকে বাস তখন দাউদকান্দি। হটাৎ হাইওয়ে পুলিশ বাস থামিয়ে তল্লাশি শুরু করল। তল্লাশি শেষে একজন যাত্রিকে তার ব্যাগসহ বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে গেল। আমরা বুঝতে পারিনি ঐ যাত্রির কাছে পুলিশ কি পেয়েছে। পুলিশ বাস থেকে নামার সাথে সাথে বাস ড্রাইভার বাস ছেড়ে দিল।
হটাৎ একজন যাত্রি তার সিট থেকে উঠে দাঁড়ালেন, বাসের ড্রাইভারকে ডেকে বললেন- "যে লোকটাকে পুলিশ বাস থেকে নামিয়ে নিয়ে গেল, ঐ লোককে না নিয়ে চলে যাচ্ছেন ক্যান ? ওর কাছে যদি কিছু না পায় পুলিশ তাহলে সে কিভাবে ঢাকা ব্যাক করবে? এই মাঝ হাইওয়েতে সে তো বিপদে পড়ে যাবে।
বাসের সব যাত্রিরা ঐ লোকের কোথায় সায় দিল। তারপর ঐ বাস ড্রাইভারকে বাধ্য করা হল বাস আবার ব্যাক এ নিয়ে যাবার জন্য।
পুলিশের গাড়ির কাছে যাবার পরে আমরা সব বাস যাত্রি বাস থেকে নেমে ঐ পুলিশ ভ্যানের কাছে গেলাম। তারপর পুলিশকে সবাই মিলে জিজ্ঞেস করলাম যে ঐ লোকটার কাছে অবৈধ কিছু পেয়েছেন কিনা? পুলিশ ওর ব্যাগ খুলে দেখাল ওখানে শুধু কিছু বডী স্প্রে আর বার্মিজ বিড়ি আছে।
আমরা বললাম যে এগুলো তো অবৈধ না, তাহলে লোকটাকে ছেড়ে দেন, নাহলে পরে লোকটা যেতে পারবে না।
সচেতন মানুষ দেখে পুলিশ একটু ভয় পেয়ে গেল। পুলিশ জানালো ওদের কাছে ইনফরমেশান আছে, তবুও যেহেতু তার কাছে কিছু পায় নাই তাই তাকে থানায় নিয়ে সব সাহেবের সাথে কথা বলে তাকে ছেড়ে দিবে। দরকার হলে তাকে বাস স্ট্যান্ডে পৌছিয়ে দেওয়া হবে।
যাত্রিরা সবাই আশ্বস্ত হলে সবাই বাসে ফেরত আসেন।
ছবি---
১। বাস যাত্রি সবাই পুলিশকে ধরছে -
২। পুলিশের কোথায় সন্তুষ্ট হয়ে যাত্রিরা বাসে ব্যাক করছেন।
☯☯ আদম ব্যাপারীর দুর্দিন- চাঁদপুরে গিয়েছিলাম পাসপোর্ট রিনিউ করতে, হটাত দেখি রাস্তায় একজন লোককে সবাই টেনে নিয়ে যাচ্চে, স্যুট বুট পরা বিশাল ভদ্রলোককে যখন টেনে নিয়ে যাচ্ছে তখন একটু কৌতূহলী হলাম। দেখালাম সবাই মিলে তাকে টেনে সি এন জী তে উঠাইয়া নিয়ে যাচ্ছে, পরে জানতে পারলাম ঐ লোক একজন আদম ব্যাপারী, একজনকে বিদেশ নিবে বলে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আজ দুই বছর। এদ্দিন এলাকায় যায় নাই (বাড়ি ফরিদ্গঞ্জ থানা) । অনেক খোঁজ করার পর তার পাত্তা পাওয়া যায়, প্লান মাফিক অন্য একজন ভিসা কিনবে বলে ফাঁদ পাতা হয়, তারপর কট!! ব্যাপারীকেএলাকায় নিয়ে যাচ্ছে, পুলিশে দিবে বলে।
সো, আদম ব্যাপারী সাবধান, মানুষ জেগে উঠছে। পালানোর পথ পাইবেন না কইলাম।
ছবি -
১। ব্যাপারী সাবকে ধরে সি এন জী তে উঠাইতেছে-
২। চলছে গাড়ি জমের বাড়ি-
☯☯ আমাদের দুঃখী কলমদাদি-
কলমদাদির ব্যাপারটা ব্লগের সবাই কম বেশি জানেন। মানুষ কতটা নিচে নামলে এমন অসহয়া একজন মানুষের টাকা মেরে দিতে পারে!! অনেক ঘৃণা তাদের জন্য।
একদিন কার্জন হলে গিয়েছিলাম একটা কাজে, হটাৎ দেখি কলমদাদি রাস্তায় কলম বিক্রি করছেন। আমি তখন জানতাম ঐ ঘটনার পর দাদি আবার রাস্তায় নেমে এসেছেন। আমি তার মুখ থেকে কিছুটা শুনলাম সে কাহিনী। যারা এই প্রতারনার সাথে জড়িত আমি তাদের সবার বিচার চাই।
ইউটিউব ভিডিও -
না দেখা গেলে ভিডিও লিঙ্ক- http://www.youtube.com/watch?v=KBVvYciqi0o
☯☯ একজন অন্ধ গায়ক- ঢাকায় যারা থাকেন তারা এই অন্ধ গায়ককে হয়ত দেখে থাকবেন। আমি একদিন নীল ক্ষেত বই কিনতে গিয়ে ওনার গান শুনি। সহজ কথায় আবেগি গান সব সময় আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এই গানটিও ছুঁয়ে গিয়েছে। চলার পথে কেউ যদি এই লোকটিকে দেখেন একটু সাহায্য করে যাবেন প্লিজ।
ইউটিউব ভিডিও-
ভিডিও না দেখা গেলে সরাসরি লিংক- http://www.youtube.com/watch?v=609pqfbYtFQ
☯☯ পথের শিশু- আমরা যারা দেশের বাইরে থাকি তারা অবসর সময় অনেক কিছু পরিকল্পনা করি- দেশে গিয়ে এটা করব ওটা করব, কিন্তু বেশির ভাগ সময় দেখা যায় যে- বিভিন্ন কারনে এটা করা হয়ে উঠে না।
আমি যখন বাইরে ছিলাম তখন আমার একটা ইচ্ছা ছিল- প্রতি সপ্তাহে একজন গরিব শিশুকে দুপুরে খাওয়াব।
কিন্তু দেখা গেছে বিভিন্ন কারনে তা করা হয় না।
তবুও যখনই কোন গরিব পথ শিশুকে পেয়েছি সাধ্য অনুযায়ি কিছু করার চেষ্টা করেছি।
আসুন কিছু পথ শিশুর ছবি দেখি-
১। এই বাবুটাকে পেয়েছি বোটানিক্যাল গার্ডেনে। সে ক্লাশ ফোর এ পড়ে, স্কুল শেষে পার্কে ফুল বিক্রি করে। (আমার সাথে তোলা ছবি, ওর একা ছবিগুলা খুজে পাচ্ছি না, সঙ্গত কারনে ছবি থেকে আমার মুখ বাদ দেওয়া হইচে)
২। এই মেয়েটিকে পেয়েছি সায়দাবাদ। খুব অসহায় মেয়ে। ঘরে সৎ মা খুব জ্বালায়, একবার মাথায় বাড়ি দিয়ে ওকে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল তাই ভয়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে এসেছে। এখানেও অনেক বিপদে আছে মেয়েটি (বুঝে নিবেন)। আমি তাকে বললাম- আমার সাধ্য অনেক কম। আমি তোমাকে কিছু টাকা দেই তুমি বাড়ি ফিরে যাও। আমার মনে হয় সেটাই ভাল হবে। যাওয়া না যাওয়া তোমার ব্যাপার। মেয়েটি বাড়ি ফিরে গিয়েছে কিনা জানি না।
( নোট- আমি নিজের ঢোল পিটাচ্ছি না, সবাইকে জানাচ্ছি কারন তারাও যেন অনুপ্রানিত হন এবং নিজের সাদ্ধের ভেতর কিছু করার চেষ্টা করেন)
লেখকের কথা- প্রথম আলোর উট পাখির থিমটা আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আমরা আসলেই দেখেও না দেখার ভান করি, আমরা জানি আমাদের দেশ আস্তে আস্তে হেটে চলছে একটি ব্লাক হোলের দিকে যেখানে অপেক্ষা করছে সীমাহীন অন্ধকার। আমাদের দেশের নেতা নেত্রিরা অবিরাম মিথ্যা বলেই যাচ্ছেন, আর আমরা শুনেই যাচ্ছি আর ভাবছি বাহ! বেশ তো সুখেই আছি। ইয়াহু!!
কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন, আমরা বুঝেও বুঝতে চাই না, দেখেও দেখতে চাই না। একটু চোখ খুলুন দেখবেন শুধুই আঁধার ঘিরে ধরছে আপনাকে। এখনোই সময় আমাদের সচেতন হবার, আর বাংলা ব্লগগুলো হোক আমাদের সাধারন ব্লগারদের হাতিয়ার। জয় বাংলা ব্লগ।
অঃ টঃ আগামী বাংলা ব্লগ দিবসে আমি আসছি, আপনারা আসছেন তো??