রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "সোনার তরী" কবিতাটি পড়ি নাই এমন শিক্ষিত বাঙালি পাওয়ার অনেক কষ্টের হবে। এই কবিতার প্রতি পদে পদে কবি ঢেকে দিয়েছেন রহস্যের কুয়াসা। রূপক এই কবিতাটি পড়লেই মন উদাস হয়ে যায়। আজ অনেক দিন পরে এই কবিতার কথাটি মনে পড়ল। কেন পড়ল সে কাহিনী পরে আগে চলুন ঐ কবিতার অংশ বিশেষ একটু পড়ে নেই-
"সোনার তরী"-
লিখেছেন "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর"।
গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা -----
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা ।।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা -----
চারি দিকে বাকা জল করিছে খেলা ।
পরপারে দেখি আকা তরুছায়ামসী-মাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা ।
এ পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা ।।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে !
দেখে যেন মনে হয়, চিনি উহারে ।
ভরা পালে চলে যায়, কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙ্গে দু ধারে ------
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে ।।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন বিদেশে ?
বারেক ভিরাও তরী কূলেতে এসে ।
যেয়ো যেথা যেতে চাও, যারে খুশি তারে দাও ----
শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে ।।
যত চাও তত লও তরণী-' পরে
আর আছে ? ---- আর নাই, দিয়েছি ভরে ।
এতকাল নদীকূলে যাহা লয়ে ছিনু ভুলে
সকলই দিলাম তুলে থরে বিথরে -----
এখন আমারে লহ করুণা ক'রে ।।
ঠাই নাই, ঠাই নাই, ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি ।
শ্রাবণগগন ঘিরে ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূণ্য নদীর তীরে রহিনু পড়ি ------
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী ।।
ঢাকা এসে কি ঝামেলায় পড়ে গেলাম আল্লাহ ভাল জানে, এই ক্লাশ, এই এক্সাম, এই আত্মীয়ের বাসায় যাও, এই পুরানা ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করো। একটুও অবসর পাই না।
তারউপর আরেকটা ঝামেলা শুরু হল কদ্দিন বাদে বাদেই এইচ আর সি-(হেড অফিস) এ গিয়া বসে থাক্যা, কারন ওদের কাছে আমি কিছু আমার বকেয়া বেতন পাই।
যাই হোক আল্লাহর রহমতে তারা আমার পাওনা বেতনের বকেয়া কিছু টাকা চেকে করে দিয়েছে, ব্যাঙ্ক হল এইচ আর সি-র "ওয়ান ব্যাংক"। ওদের একটাই অফিস চিনি সেটা হল কাওরান বাজার।
তো আজ অনেক বৃষ্টি, দুপুর ১ টা বেজে গেছে। ব্যাংকের লেনদেন দুপুর ০২।৩০ তেই শেষ হয়ে যায়। তাই আর কি করা- বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বের হলাম, মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছে। ছাতা মাথায় দিয়েও কুল কিনারা পাচ্ছি না।
রিক্সা নিয়ে মেট্রো টাওয়ারের সামনে গেলাম, উদ্দেশ্য একটা সি এন জী নিয়ে কাওরান বাজার চলে যাব। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি, কোন সি এন জী নেই। ভাগ্যিস থ্রি কোয়ার্টার পরে বের হইচিলাম নয়ত জিন্স পরলে ভিজে শক্ত হয়ে যেত। হটাৎ দেখলাম একটা বাইক একটা লোককে ধাক্কা দিতে গিয়ে পড়ে গেল। বাইক ফেলে দুইজন মিলে ঝগড়া লেগে গেল। এগুলা ঢাকার কমন একটা চিত্র, সবাই কেমন অভ্যস্ত এসব দেখে দেখে।
হটাৎ দেখলাম একটা ছেলে, ৭-৯ বছর হবে। খালি গায়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। একটু মনোযোগ দিতেই দেখি ছেলেটা কাঁদছে, আর বাসের সামনে গিয়ে উঠতে চাইছে। বেশির ভাগ বাসের দরজা বন্ধ, কেউ তাকে নিতে চাইছে না। ছেলেটা পাগলের মত করে কাঁদছে। এভাবে প্রায় ৪/৫ টা বাসের দরজার সামনে গেল সে। কেউ তাকে বাসে উঠাতে রাজি নয়। ছেলেটি সমানে কেঁদে যাচ্ছে আর বৃষ্টিতে ছেলেটি ভিজছে।
একটা বাসের জানালা দিয়ে একটা আপু দুটা টাকার একটা নোট ছুড়ে দিল ছেলেটির দিকে, কিন্তু ছেলটী ফিরেও তাকাল না, আপুটা জানালা দিয়ে চিৎকার করে বলে উঠল- "এই পিচ্চি, টাকা নে।"
কিন্তু ছেলটী কাঁদতে কাঁদতে মাথা নাড়তে লাগলো, ছেলেটি বুঝাল তার টাকার দরকার নেই। খুব অবাক হলাম দৃশ্যটি দেখে। দুই টাকার নোট টা বৃষ্টির পানিতে ভেসে চলে গেল।
প্রথমেই আমার মনে হল এ ছেলেটি তার পরিবার থেকে হারিয়ে গেছে, তাই সে বাড়ি ফিরে যেতে চাইছে। একটু সামনে এগিয়ে গেলাম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। দূর থেক ছেলেটির চেহারা দেখে খুব কষ্ট হল। নিস্পাপ একটি ছেলে। এত আর্তনাদ করে কাঁদছে কেন ছেলেটি??
আমি ছেলেটির কাছে যেতে না যেতেই একটা বাসে ওকে তুলে নিল, তারপর বাসটী চলতে শুরু করল। আমার আর কথা বলা হল না ছেলেটির সাথে। তবুও আমি দূর থেকে খেয়াল করলাম। বেশ কিছু দূর গিয়ে বাসের কন্ট্রাক্টর হয়ত তার ভুল বুঝতে পেরেছিল। সে বাস থেকে ছেলেটিকে নামিয়ে দিল। এখন আমার আর ছেলেটির দূরত্ব অনেক। ছেলেটির সাথে কথা বলতে হবে কিন্তু ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি হাতে সময় নেই একেবারেই। দেরি হলে ব্যাংক আওয়ার পাব না, টাকা পাব না। টাকা না পেলে খুব সমস্যায় পড়ে যাব আমি।
একটা খালি সি এন জী খুজতে লাগলাম আমি। কথা বলা হল না ছেলেটির সাথে।
(আমাদের দিন দিন মানুষের প্রতি ভালবাসা কমে যাচ্ছে, আবেগ কমে যাচ্ছে, রোবট হয়ে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত)
=================================
▼ লেখকের কথা- "জানি সোনার তরী কবিতা আর ছেলেটির মাঝে কোন মিল নেই। তবুও ছেলেটির বাসে উঠার অকুল আর্তনাদ আমার কাছে সবার আগে সোনার তরী কবিতার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছে।
এলোমেলো এই লেখাটি অনেকটা দিণলিপির মত হয়েছে বলে দুঃখিত, আসলে ব্লগে আগের মত সময় দেওয়া হয় না, পড়াশোনার অনেক চাপ।
ভাল থাকবেন সবাই।