somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলের দেওয়াল কিংবা থেমে যাওয়া স্রোতের গল্প অথবা এক ঝাঁক শকুনির গল্প

১২ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একটি ছোট নদী।
নদীটির নাম ভালোবাসা কিংবা স্বপ্ন!

সে নদীর স্রোতে পা ডুবিয়ে বসে আছে একজন মানুষ, যার চোখে শুধু স্বপ্ন কিংবা স্বপ্নময় তেপান্তরের হাতছানি। তার মনে হয়ত কিছু আশা, কিছু হতাশা কিংবা কিছু না পাওয়ার বেদনা।
নদীটি তার অনেক প্রিয়, অনেক ভাললাগার নদী। সে সারাক্ষণ নদীর পাড়ে বসে থাকে। দু'পা নদীর জলে ডুবিয়ে নদীর স্রোত অনুভব করে, নদীর ভালোবাসা অনুভব করে। স্বচ্ছ সে পানির নিচে তার পা দেখা যায়। যুবক তাকিয়ে থাকে অদ্ভুত এক ভাললাগায়। তার মনে জন্ম নেয় অদ্ভুত এক কিশোর সুলভ আবেগ।

সে নদীর পানিতে দুই হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়, নদীর পানির শীতল স্পর্শে মৃদু কম্পন বয়ে যায় যুবকের শরীরে, কিছুটা তার ভগ্ন হৃদয়ে। সে কম্পনে তার ভগ্ন হৃদয় আরও মজবুত হয় আরও দৃঢ় হয় যেমন দৃঢ় কোন সুউচ্চ অট্টালিকার পিলার কিংবা যেমন দৃঢ় ভালোবাসার দেওয়াল!

মাঝে মাঝে সে নদীতে সে নেমে পড়ে, ভালোবাসার ছোঁয়া অনুভব করে আকণ্ঠ। দুই হাত দিয়ে এক আঁজলা পানি সে তার কাল লম্বা চুলে মেখে ভিজিয়ে দেয় আর ভাবে আমি অনেক সুখি অনেক অনেক সুখি, নদী তোমায় পেয়ে আমি অনেক সুখি! আমি তোমার আছি থাকব, কখন তোমায় ছেড়ে যাব না।
নদী যুবকের কথায় মিষ্টি হাসে, মৃদু ঢেউ উঠে তার পাড়ে। কুলুকুলু শব্দে হেসে উঠে সেই স্বপ্ন কিংবা ভালোবাসার নদী। যেন বলতে চায়- যুবক আমিও তোমায় ভালবাসি। তোমার ভালবাসায় আমি মুগ্ধ। আমাকে ছেড়ে কখনো যেও না তুমি।
যুবক মৃদু হেসে বলে- কখনই যাব না আমি, সত্যি আমি যাব না।

মনের খুশিতে যুবক কাগজের নৌকা ছাড়ে নদীর পানিতে, তারপর দুই হাত দিয়ে পানিকে মৃদু আন্দোলিত করে গতি সৃষ্টি করে কাগজের নৌকায় কিন্তু কিছু দূর গিয়েই নৌকা একপাশে কাত হয়ে যায়। তারপর সে কাগজ হারিয়ে যায় নদীর গর্ভে, যুবকের এই শিশু সুলভ কাজ দেখে নদী মৃদু হাসে, সে হাসি যেন ছড়িয়ে পড়ে নদীর দুই পাড়ে।
যুবক অবাক হয়ে শুনে নদীর হাসি, এত সুন্দর সুরেলা হাসি তাকে মুগ্ধ করে, অবাক হয়ে তাকায় নদীর জলে, তার দুইচোখে বিস্ময় ঠিকরে পড়ে। সে অনুরোধ করে নদীকে-আবার হাসতো প্লিজ।

নদী আর হাসে না, ছলনা করে যুবকের সাথে। যুবক ভয় দেখায়, আবার হাস নাহলে আমি চলে গেলাম। নদী অভিমান করে, তার দুই কুল নীরব নিস্তব্ধ হয়ে যায়, নদীর জলে আর ঢেউ উঠে না। নীরব নিস্তব্ধ এক স্রোতহীন নদী মনে হয় তাকে, যুবক মিনতি করে, পাগলের মত দুইহাত দিয়ে নদীর পানি আন্দলিত করতে চায়। কিন্তু কিছুই হয় না। নদী আর হাসে না। হাসবেই বা কেন? যুবক জানে না যে নদীর অনেক অভিমান? তবে কেন কষ্ট দেয় নদীকে?
যুবক নদীর পাড়ে বসে পড়ে, দুই পায়ের মাঝে মুখ রেখে বসে থাকে। স্থির চোখে তাকিয়ে থাকে নদীর দিকে, অপেক্ষা করে কবে অভিমান ভাংবে এই মিষ্টি নদীটির, আবার কখন হেসে উঠে মুখরিত করবে নদীর দুই কুল!

মাঝে মাঝে উদাস হয়ে যায় যুবক, মন চলে যায় অতীতের একটি দিনে।
বিস্তীর্ণ এক মরুভূমির মাঝে দিশেহারা হয়ে ঘুরছিল যুবক, পানির পিপাসায় প্রান ওষ্ঠাগত। যুবকের ঠোঁট পানির অভাবে ফেটে চৌচির, নিজের জিহ্বাটাকে মনে হচ্ছিল একটা শক্তপাথর।
ঠিক সেই সময় এই ছোট নদীটা তার চোখে পড়ে, নদীর শীতল পানিতে তার তৃষ্ণা মিটে, যুবকের শুকিয়া যাওয়া ঠোঁটে ফিরে আসলো সজীবতা, পাথরের মত শক্ত পাথর জিহবা প্রথমে কষ্টি পাথরের মত শীতল হয় তারপর আস্তে আস্তে মাখনের মত নরম।

পুরানো কথা ভেবে যুবকের দুচোখ কৃতজ্ঞতার অশ্রুতে সজল হয়ে পড়ে। টুপ করে এক ফোঁটা জল নদীর পাড়ে পড়ে বালিতে মিশে যায়। সেই অশ্রু ফোঁটা থেকে জন্ম নেয় ছোট একটি চারা গাছ, সে গাছ দেখতে দেখতে বড় হতে থাকে, একসময় সে হয়ে যায় একটি বিশাল মহীরুহ, সে বিশাল মহীরুহ ছোট নদীর পাড়ে সুশীতল ছায়া বিলিয়ে দেয় অকাতরে।

যুবকের এই কৃতজ্ঞতায় নদী খুশি হয়ে মান ভেঙে আবার হাসে, আবার তার জলে মৃদু ঢেউ খেলা করে, যুবকের মুখে হাসি ফোটে, কান্না ভেজা চোখে আনন্দ খেলা করে। যুবকের হাসি দেখে নদী মুগ্ধ হয়, খুশিতে নদীতে আবার স্রোত তৈরি হয়। আবার হাসির সুর ছড়িয়ে পড়ে নদীর দুইকুলে।
যুবকও কষ্ট ভুলে ছুটে যায় নদীর পাড়ে, কোমর পানিতে নেমে জলকেলি করে যুবক, নদী খুশি হয়। তার শীতল জল দিয়ে জড়িয়ে ধরে যুবকের পুরো শরীর। ফিসফিস করে নদী বলে- আমাকে ছেড়ে যেও না যুবক। অনেক অনেক ভালবাসি তোমায়!

যুবক আশ্বস্ত করে নদীকে, যমদূত ছাড়া আর কেউ পারবে না আমাদের আলাদা করতে। যেদিন আমি মারা যাব সেদিন তুমি আমার এই লাশটা তোমার স্রোতে ভাসিয়ে নিও দূরে বহু দূরের সমুদ্রে। পারবে না?
যুবকের কথা শুনে নদীর ভয় লাগে, সে কোন কথা বলে না। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে যুবককে। তাকে হারাতে দিবে না কোনদিন না!

আবার শুরু হয় তাদের ভালোবাসার যাত্রা।





সবশেষে-


এখনও যুবক বসে আছে সেই নদীর পাড়ে, ক্ষীণ দুর্বল শরীর এখন তার, তার ঠোঁট পিপাসার্ত, জিহবা পাথরের মত শক্ত, তার চোখে ঘোলা দৃষ্টি তাকিয়ে আছে একটা দেওয়ালের দিকে। একটা কাল পাথরের দেওয়াল। দেওয়ালের নাম ভুল দেওয়াল কিংবা পাপের দেওয়াল। সে দেওয়াল যুবক আর নদীর মাঝে সৃষ্টি করে দিয়েছে যোজন যোজন দূরত্ব।

আচ্ছা নদীটির কি স্রোত থেমে গেছে?
নদীটি কি আজও হাসে সেই কিশোরীর মত রিনিরিনি সুরে?
তার হাসির সুর কি নদীর পাড়ে ছড়িয়ে পড়ে সুষম তরংগের মত?

যুবক সেই মহীরুহের দিকে তাকায়, মহীরুহটি শুকিয়ে গেছে অনেক আগে, তার শুকনা ঢালে বাসা বেঁধেছে শকুনির দল, তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যুবকের দিকে। হাজার হাজার শকুনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে যুবকের মৃত্যুর জন্য। তাদের চোখে রাজ্যের লালসা।


যুবক শ্রান্তিতে চোখ বুঝে ফেলে। অনেক শ্রান্তিতে নদীর তপ্ত বালিতে এলিয়ে দেয় নিজের ক্ষীণ শরীর। শকুনির পালও এগিয়ে আসতে থাকে যুবকের দিকে। হেলেদুলে।


=================================

লেখকের কথা-
মন খুব খারাপ। শীতনিদ্রায় গেলাম কিছুদিনের জন্য। :)

ভাল থাকবেন সবাই, অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভ কামনা সব ব্লগারদের জন্য। :)




সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:১৫
৫৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×