তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি সই করতে (ভারতের সঙ্গে) এক যুগ ধরে দেন-দরবার চলছে মন্তব্য করে সেখানে গৃহীত প্রকল্পে চীনা বিনিয়োগে বাংলাদেশের আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। রোববার ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূতের তিস্তা অববাহিকা অঞ্চল পরিদর্শন এবং সেখানে প্রস্তাবিত প্রকল্পে বিনিয়োগের ইঙ্গিত প্রসঙ্গে মন্ত্রী সোমবার এ মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী মোমেন বলেন, তিস্তা নিয়ে আমরা ১২ বছর ধরে দেন-দরবারে আছি। তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের প্রস্তাব অনেক পুরোনো। সেটা চীন নতুন করে সামনে এনেছে। ওই প্রকল্পে তারা (চীন) আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবে জানিয়ে মন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা এখানো এ নিয়ে চীনের কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি। এটা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ভাল বলতে পারবে। একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে বিষয়গুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে আসে জানিয়ে মন্ত্রী প্রস্তাবিত তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের ইতিহাস তুলে ধরেন। বলেন, ১৯৮৮-১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে পরপর বড় রকমের বন্যা হয়।
তখন ফ্রান্সের একটা এক্সপার্ট গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছিল তৎকালীন প্রেসিডেন্টের নেতৃত্বে। তখন তারা তিস্তা এলাকায় একটি প্রজেক্ট প্রস্তাব করেছিল, কিভাবে বাংলাদেশে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়; এর ওপর একটা কমপ্রিহেনসিভ স্টাডি করেছিল তারা। সেই স্টাডির আলোকেই তিস্তা অঞ্চলে প্রকল্পের কথা বলা হয়েছিল। তখন অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে প্রকল্পটি গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তখন আমাদের টাকা-পয়সা ছিল না। রোববার চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং প্রস্তাবিত তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সবদিক দিয়ে উত্তর অঞ্চলের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, অর্থনীতি, প্রকৃতি ও পরিবেশ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ এলাকা ও সেচ প্রকল্প পরিদর্শন করে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে চীনা দূত বলেন, স্থানীয় জনগণের চাহিদা এবং কিসে তাদের ভালো হয় সেটা জানা জরুরি। সেটা আমার এবং চীনের অগ্রাধিকার। সত্যিকার অর্থে বিআরআই (চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ) একটি বড় প্রকল্প। আমাদের সব অংশীদারদের কাছ থেকে সব ধরনের অংশগ্রহণ দরকার। তিস্তা একটি বৃহৎ নদী, এটি খনন করতে পারলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানের পরিবর্তন হবে। এটি বাংলাদেশে আমার প্রথম কাজ। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের এরপরও এটি করবো আমরা। নদীটি খননের সম্ভবতা যাচাই করতেই তাদের দুইদিনের এই সফর জানিয়ে রাষ্ট্রদূত রোববার আরও বলেন, আমাদের প্রকৌশলীরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর পরিকল্পনা করবো কবে কাজ শুরু করা যায়। শুষ্ক মৌসুমে পানি সঙ্কট দূর করা, তীর ব্যবস্থাপনা, বন্যা নিয়ন্ত্রণে তিস্তা নদী ঘিরে ওই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেন, স্থানীয় জনগণের চিন্তা-ভাবনা, আবহাওয়া, প্রকৃতি-পরিবেশ সবই ওই মহাপরিকল্পনার পক্ষে। এটি বাস্তবায়নে ঢাকা-বেইজিং গভীর আলোচনা চলছে।
কোর্টেসি: মানবজমিন
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:০১