অনেকদিন পর এখানে এলাম নতুন একটি অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কীবোর্ড অ্যাপ সম্পর্কে লিখতে। শুধু একটি অ্যাপ নিয়ে লিখলে তা বিজ্ঞাপনী ধরনের পোস্ট হয়ে যেতে পারে, তাই অ্যান্ড্রয়েডে জনপ্রিয় আরো কিছু বাংলা কীবোর্ড অ্যাপস এর রীভিউ আকারেই লিখছি।
অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে বাংলা লেখার ক্ষেত্রে প্রথমেই আসবে মায়াবী কীবোর্ডের কথা। মায়াবীই অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মের জন্য সর্বপ্রথম অন-স্ক্রিন সফট কীবোর্ড যা ১৮ই মার্চ, ২০১১ সনে অবমুক্ত হয়। এটি বাংলা ভাষায় ফোনেটিক টাইপিং-এর অগ্রদূত অভ্র'র মত ফোনেটিক স্টাইলে বাংলা লেখার সুবিধা এনে দেয় অ্যান্ড্রয়েড ফোনেও। সাথে ওয়ার্ড সাজেশন, ফিক্সড কীবোর্ড লেআউট সহ একটি কীবোর্ড অ্যাপে সচরাচর যেসব সুবিধা থাকে তার সবকিছুই আছে এতে, কিন্তু এর একটি বিরক্তিকর বৈশিষ্ট্য হল, এটি বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে যা স্ক্রীনের অনেকখানি জায়গা দখল করে ফেলে এবং টাইপিং-এ অনেক বিঘ্ন ঘটায়। মূলতঃ একারণেই এটি পরবর্তীতে জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে, তবে এটি এখনো গুগল প্লেস্টোরে মোটামুটি ভালভাবেই টিকে আছে।
এরপরে বলবো প্রজন্ম নামের একটি অ্যান্ড্রয়েড কীবোর্ড অ্যাপের কথা যেটা সম্পর্কে এভাবে বলা যায় যে, "এলাম, দেখলাম, জয় করলাম তারপর হারিয়ে গেলাম!"। মায়াবী কীবোর্ডের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন থেকে মুক্ত, অনেক কম ফাইল সাইজের সম্পূর্ণ স্বচ্ছ একটি কীবোর্ড ছিল এই প্রজন্ম। স্বচ্ছ এজন্য বলা যে, এটিকে ডিভাইসের কোন অংশ ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়ার প্রয়োজন হয় না, যে অনুমতি নিয়ে অনেক খারাপ অ্যাপ অনেক সময় ব্যবহারকারীর তথ্যপাচার বা অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং-এর কাজও করে থাকে। এরকম স্বচ্ছ, বিজ্ঞাপনমুক্ত ও অনেক কম ফাইলসাইজের একটি অ্যাপ দিয়ে ফোনেটিক স্টাইলে বাংলা লেখার সুবিধা দেখে শুরুতে এটি খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, কিন্তু এটি দিয়ে দরকারী কয়েকটি ক্যারেক্টার ইনপুট দেয়া যেত না। অজানা কারণে প্রজন্ম কীবোর্ড নিয়মিত আপডেইট দিতে ব্যার্থ হয় এবং জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলে। এটি এখনো প্লেস্টোরে টিকে আছে এবং অনেকেই এটি এখনো ব্যবহার করেন। আমি নিজেও করতাম, এখনো মাঝে-মধ্যে ব্যবহার করি।
এরপরেই আসবে রিদ্মিক, রিদ্মিক এবং রিদ্মিক এর কথা। একটিই কীবোর্ড তবু তিনবার বলার কারণ এর গুরুত্ব বোঝাতে। সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপন মুক্ত, প্রায় সম্পূর্ণ স্বছ ও প্রায় সমস্ত ফীচার নিয়ে ২০ সেপ্টেম্বর,২০১২ তে অবমুক্ত হয় এটি এবং এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি ডাউনলোড হয়েছে এটি। ডাউনলোড সংখ্যা দেখেই বোঝা যায় কতখানি জনপ্রিয় এটি! সবই ভাল, তারপরও কীবোর্ড লেআউট পরিবর্তনের জন্য সোয়াইপ ফীচারটা আমার কাছে স্বাচ্ছন্দ্যকর লাগে না, তাই প্রজন্ম'র ওয়ানটাচ কীবোর্ড লেআউট পরিবর্তন সুবিধার কারণে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সেটিই ব্যবহার করেছি বেশি। এই একটি ব্যাপার বাদে রিদ্মিক-এর সবকিছুই পারফেক্ট!
এবার বলব, পার্বতী নামের আরেকটি কীবোর্ডের কথা, যেটাকে আমার কাছে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ফীচার সমৃদ্ধ মনে হয়েছে এবং শুরুর দিকে এর বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও নিয়মিত আপডেইটের মাধ্যমে এটি বর্তমানে অত্যন্ত স্ট্যাবল পর্যায়ে আছে বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। সবকিছু মিলিয়ে রিদ্মিক-এর চেয়েও পার্বতীকে একটু বেশি অগ্রসর বলা যায়, তবে ডাউনলোড সংখ্যার বিচারে এটি এখনো অনেক পিছিয়ে আছে যাকে এগিয়ে দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব বলেই আমি মনে করি।
সবশেষে বলব, আজন্ম নামের একটি অ্যান্ড্রয়েড বাংলা কীবোর্ড অ্যাপের কথা যেটি সম্পর্কে বলতে চেয়েই মূলত এই পোস্টের অবতারণা। খুব বেশি কিছু বলা যাবে না অবশ্য, কারণ নিজের ঢোল নিজে পেটানো খুব একটা ভাল দেখায় না । তাছাড়া এটি মাত্র ২/৩ দিন (২৬ ডিসেম্বর,২০১৬) হল অবমুক্ত হয়েছে এবং নতুন হিসেবে এর অনেক সীমাবদ্ধতাও আছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে কীবোর্ড লেআউটের মধ্যেই বিল্টইন সায়েন্টিফিক ক্যালকুলেটর সুবিধা এবং সেটি দিয়ে শুধু হিসেব-নিকেশই নয়, ফলাফল ইনপুট দেয়ারও ব্যবস্থা রাখার আইডিয়াটা কিন্তু চমৎকার একটি ব্যাপার হতে পারে অনেকের কাছে। আজন্ম দিয়ে সুপারস্ক্রিপ্ট/সাবস্ক্রিপ্ট ক্যারেকটার, গ্রীক বর্ণ ইনপুট দেয়ার ব্যবস্থাটাও বেশ কার্যকরী হতে পারে অনেকের কাছেই বিশেষ করে বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে। ফোনেটিক স্টাইলে বাংলা লেখার প্রায় সব সুবিধা সহ, নতুনদের জন্য সহজে যুক্তাক্ষর লেখার একটি লেআউটও আছে এতে। খুবই কম ফাইল সাইজের (৭/৮ শ কেবি) একটি অ্যাপের মধ্যে আরও যে কত কত ইউনিক ফীচার আছে, তা প্রথমে অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু সংগত কারণেই সেগুলো সম্পর্কে বেশি কিছু বলা থেকে বিরত থাকছি। আর আজন্ম কীবোর্ডটি কিন্তু সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপনমুক্ত এবং শতভাগ স্বচ্ছ ও নিরাপদ, অর্থাৎ এটি ইন্সটল করতে ডিভাইসের কোন অংশ ব্যবহার করতে অনুমতি দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
উপরে বলা সবগুলো কীবোর্ডই গুগল প্লেস্টোরে bangla keyboard লিখে সার্চ দিলেই পাওয়া যাবে, তবে আজন্ম একটু নতুন বিধায় স্ক্রল করে বেশ একটু ( ১২০ নম্বর সিরিয়ালের আশেপাশে) নীচে গেলে সেটাকে পাওয়া যাবে। শুধু mayabi বা ridmik বা projonmo বা parboti বা ajonmo লিখে সার্চ দিলে কীবোর্ডগুলোকে একবারেই পাওয়া যাবে তবে bangla keyboard লিখে সার্চ দিয়ে স্ক্রল করে বাছাই করাই ভাল অ্যাপগুলোর র্যাঙ্কিং উপরের দিকে তোলার জন্য। আমাদের দেশী অ্যাপগুলোর র্যাঙ্কিং বাড়ানো বাংলাদেশি সবারই দায়িত্ব হওয়া উচিৎ। আর উপরে বলা কোন অ্যাপই ইন্সটল করার পর আনইন্সটল না করাই ভাল; ব্যবহার না করলে না করুন, কিন্তু আনইন্সটল করার বিশেষ প্রয়োজন না থাকলে সেটিকে রেখে দেয়াই উত্তম, কারণ আনইন্সটল করলেও একটি অ্যাপের র্যাঙ্কিং-এর অবনমন ঘটতে পারে। তবে যদি কোন প্রোগ্রামকে আপনার কাছে অস্বচ্ছ বা ক্ষতিকর মনে হয় সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। রেটিং দেয়ার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের দেশীয় অ্যাপগুলোর রেটিং পাঁচ-তারকাই দেয়া উচিৎ আমাদের সবার।
এই পর্যায়ে এসে দুটি কৌতুকের কথা মনে পড়ল। প্রথমটি হল, পাগলকে সাঁকো নাড়াতে না বলার কৌতুকটি। দ্বিতীয়টি হল, নরকে বাঙালীদের জন্য আলাদা পাহারাদার না রাখার কৌতুকটি। কৌতুক এখন আর বলছি না, তবে আমার হঠাৎ করে মনে পড়া কৌতুক দুটি পাঠকদেরও মনে করিয়ে দেয়া উচিৎ হয়তো, তাই উল্লেখ করলাম।
যাই হোক, বেশি কিছু না বলতে বলতেও অনেক কিছুই বলা হয়ে গেল। এবার থামা উচিৎ। সবাই ভাল থাকুন।
আপডেইটঃ আজন্ম কীবোর্ডে এখন তিনটি ফিক্সড বাংলা লেআউট(জাতীয়, মুনীর ও প্রভাত) সংযুক্ত হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৮