সন্ধ্যায় গেলাম মোবাইল দোকানের ওই দাদার কাছে তারপর সিদ্দিক ভাইকে নিউ মার্কেটটা ঘুড়ে দেখালাম।
"বাজার কলকাতা" থেকে শপিং করে খুব মজা পেয়েছি।
এখানে প্রত্যেকটা পণ্যের সাথেই কিছু না কিছু ডিস্কাউন্ট আছে।
আবার হোটেলে ফিরে ৯.৩০ এ দু'জনের ব্যাগ নিয়ে রওয়ানা দিলাম ষ্টেশনের দিকে.... ট্রেনের সময় ১১.৩০ দু"জনে ষ্টেশনে কিছুক্ষন হাটাহাটি করলাম। রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে এখন আর হোটেল খুজবো কোথায়? ষ্টেশনের ঠিক সামনেই অনেকগুলো খাবারের হোটেল রয়েছে (মানসম্মত নাহ) কি খাবো কি খাবো এইভেবে একটার মধ্যে ঢুকলাম... "সিদ্দিক ভাই হিন্দি বলতেও পারেনা, বোঝেও না"
আর কোথায় কি বলতে হবে সেটাও তার মাথায় কাজ করেনা। দোকানে ঢুকেই বলে, বীফ হবে বীফ? হায়রে এ আমি কাকে নিয়ে পড়লাম ?
"হিন্দুদের দোকানে কি গরুর মাংশ বিক্রি করবে? উনাকে আমি ভেতরে ঢোকার আগেও বলছি এটা মুসলিম হোটেল না। কোনায় একটা টেবিলে বসলাম। আশে পাশে সবাই খাচ্ছে, কিন্তু তাদের খাবার দেখে রুচিতে আসছে না। রুটির অর্ডার করলাম। এমন রুটি নিয়ে আসলো দেখে মনে হয় এগুলা খাওয়ার চেয়ে না খাওয়া ভাল। ম্যেনু চেঞ্জ, রুটি খাবো না ভাত দাও সাথে চিকেন... চিকেন মানে মুরগি এমন ভাবে রান্না করা মনে হচ্ছে তরকারির ঝোল আলাদা মাংশের পিছ গুলা আলাদা...। আহারে দেশে কত ভাল আছিলাম। অনেক কষ্ট করে তাড়াতাড়ি খেয়ে উঠলাম।
ষ্টেশন গিয়ে দাড়াতেই ট্রেন চলে আসছে।
যথারিতি আমাদের আসন খুজে পেলাম।
ঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লো আগ্রা হয়ে যোথপুরের উদ্যেশে।
মনটা কেমন জানি উদাস উদাস লাগছিল ।
আমাদের সাথের সিটগুলো পড়েছিল ৩ জন মেয়ে আর ২ জন ছেলের। এই ২জন ছেলেকে কোন এঙ্গেলেই মনে হয়না তারা ছেলে কথার স্টাইল অঙ্গভঙ্গি সব মেয়েদের মত। তারা একটা গ্রুপ। ডান্স পোগ্রাম করতে যাবে। এতো বক বক করা মানুষ খুব কম দেখছি। ১০ মিনিটের মধ্যে তারা ৫জন পুরো বগি হইহুল্লোয় গরম করে ফেললো। রাত তো অনেক। কয়েকজন কমপ্লেন জানালো তারা ঘুমাবে হাসাহাসি যেন একটু কম করা হয়। তাদের হাসি কি আর থামে?
ট্রেনে যত সময় যাচ্ছে তত অবাক হচ্ছি।
ভারতে দূরের জার্নি করবে বলে কম বেশি সবাই খাবার আর বিছানা পত্র নিয়েই ট্রেনে উঠে। আমাদের দেশে এমনটা হয়না।
আমার সিটটা স্লিপার, একদম উপরে। শুয়ে পড়লাম। ভোর বেলা ট্রেন যেন কোথায় থামলো ওই ৫জন নেমে পড়লো। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তারা সাথে থাকলে জার্নিটা হয়তো আরো অনেক মজা হত। সকাল ৭টায় ঘুম শেষ।
সকালের নাস্তা হল "ব্রেড আর আন্ডা"
সারাদিনই খাবার বিক্রি করতে থাকে।
খাবেন ভেজ বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, আলু পাকোরে, সমুচে...ইত্যাদি ইত্যাদি
ওদের ডাকাডাকিতে ঘুমানো মুশকিল।
আমার মনে হয় ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের চেয়ে খুব ধীর গতিতে চলে... চলছে তো চলছেই...............
ট্রেন থেকে তোলা ছবি। জায়গার নাম জানিনা।
সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়ে এলো।
দুপুরের খাবার সিদ্দিক ভাইয়ের খুব ইচ্ছা চিকেন বিরিয়ানি খাবে।
অকে ফাইন...২টা চিকেন বিরিয়ানি নেয়া হল।
হুম কলকাতার অন্যান্য খাবারের চেয়ে ট্রেনের এই চিকেন বিরিয়ানি ভাল টেষ্টি
এমন একখান পিছ দেয়া হইছিল.........
ভেবেছিলাম সন্ধ্যার মধ্যে আগ্রা পৌছে যাবো। কিন্তু নাহ ট্রেন লেট আগ্রা পৌছাতে রাত ১১-১২ বাজবে।
মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল...অচেনা শহর চিনিনা, জানিনা...
এতো রাতে কোথায় গিয়ে ঊঠবো?
ঘড়িতে রাত ১১টা বেজে ৩৭ মিনিট আগ্রা ষ্টেশন পৌছাল।
এখানে তো আর বাংলা কথা চলবে না।
আগ্রা ফোর্ট ষ্টেশন
ট্রেন থেকে নামার পরেই এক ট্যাক্সি ড্রাইভার আমাদের পিছু নিল।
যতই তাকে বোঝাচ্ছি আমাদের ট্যাক্সি লাগবেনা ততই সে আকুতি মিনতি করতে থাকে। রাত বিরাতে এই ট্যাক্সিওয়ালা কই নিয়ে যায় কে জানে?
এদিকে "সিদ্দিক" ভাই হিন্দি বোঝেনা তাকে নিয়ে আছি মহাবিপদে।
সে এই ড্রাইভারকে রিতিমত বকাবকি করছে... কিন্তু ড্রাইভারও তো বাংলা বোঝেনা। তাই যতই বকাযকা করো কোন লাভ নাই
ষ্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি... ট্যাক্সিওয়ালা "নাছোড়বান্দা" সেও আমাদের পাশে দাডিয়ে আছে ...............আর বার বার বলছে "২-৩টা হোটেল ঘুড়িয়ে দেখাবে যেটাতে ভাল লাগে উঠতে তাকে শুধু ২০ রুপী দিলেই হবে। আর যদি কোন হোটেল পছন্দ না হয় তাহলে তাকে কোন রুপি দিতে হবেনা।
এক দোকানদারকে বললাম "ভাইসাব এ লোক তো মেরা পিছেই পার গায়া ক্যায়া কারু? দোকানদারের জবাব... কোন সমস্যা নাই এরা কোন বাটপার নাহ, উনার ট্যাক্সির নাম্বার আছে যেতে পারেন।
নাহ তবুও যাবোনা এই বেটা কেন এতোক্ষন আমাদের পিছু ছাড়ছে না? ঘাড় তেড়ামি আমার মোটেও পছন্দ না (যদিও আমি নিজে একজন ঘাড় তেড়া)
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি রাত বেরেই চলছে। তখন ১২.৩০ বাজে প্রায়।
এর মধ্যে ট্যাক্সিওয়ালা একটা চালাকি করলো যেটা বুঝতে আমার ৫-৬ মিনিট সময় লেগে গেছে। সে তার গাড়িটা দিয়ে অন্য আরেকজন ড্রাইভারকে পাঠালো। যাই হোক আমারা উঠে গেলাম তার গাড়িতে একটা হোটেলে নিয়ে গেল ৬৫০ রুপি রুম ভাড়া "রুম মোটামুটি ভাল। এতো রাতে আর কে ঘুড়বে?
বেশি লিখতে ভাল লাগেনা...। আজকের মত এখানেই বিদায়।
ভূলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
অনেক ছবি গুগল থেকে নেয়া আবার কিছু আছে আমার নিজের তোলা।
গত সপ্তাহে ভিসার ডেট পেয়েছিলাম...। তাড়াহুড়ার কারনে বাপের নামের আগে MD দেই নাই ২-৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর এপলিকেশন ফরমটা রিজেক্ট হল। ভিষণ কষ্ট পাইলাম।
অফিসের কাজ কাম ফেলে আসছিলাম।
আবার ডেট পেয়েছি ১৭ তারিখ।
সবাই ভাল থাকবেন।
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
পর্ব-৪
ভেতরের ছবিটা উপরে কিভাবে গেল বুঝতে পারলাম না। এডিটে দেখলাম সব ঠিক আছে।
সবার কাছে ক্ষমাপার্থী
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮