সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ১০টা বেজে গেছে। তাড়াতাড়ি চেকআউট করতে হবে নইলে আবার ৫৫০ রুপী গুনতে হবে। রাত ১১.৩০ এ ট্রেন অযথা সারাদিনের রুম ভাড়া দেয়ার কোন মানে হয়না, সারাটাদিন ঘুরতে ঘুরতে কেটে যাবে। ব্যাগ গুছিয়ে রিসিপশনে ম্যানেজার আংকেল কে জিজ্ঞেস করলাম "২ দিন পর আগ্রা থেকে কলকাতা আসার কোন টিকেট হবে কিনা?? উনি বললেন "আপ বেহঠিয়ে মে দেখকার বাতা তা হু"
(গতদিন সন্ধ্যায়ও আমি কয়েকটা যায়গায় খোজ করেছি কোথাও আগ্রা থেকে আসার টিকেট নাই, তারপরেও ব্যার্থ চেষ্টা 'যদি পেয়ে যাই'
আসতে যেতে অনেক বাংলাদেশী চোখে পড়ছে।
একটু পরে দেখি একজন ভেতর থেকে আসলো। হাটার স্টাইল দেখে দেশী বলে মনে হচ্ছে। চোখে এখনো ঘূম ঘূম ভাব......রিসিপশনে এসে দাড়িয়ে আছে, কাঊকে কিছু বলছে না। এরই মধ্যে আমি আংকেল কে বললাম "থাক না পেলে বাদ দেন, দরকার নেই"
আমার কথা শুনে লোকটা মনে হয় জান ফিরে পেল
জিজ্ঞেস করলো "আপনি কি বাংলাদেশী?
আমার উত্তর- আরে ভাই এই এলাকার আশেপাশে ২-৩ কিলোমিটার জুড়ে বাংলাদেশী ছাড়া আর কিছু নেই।
চাবি দিয়ে দিলা। সব ধরনের ফরমালিটিস শেষ।
উনি বুঝতে পারছে আমি চলে যাচ্ছি।
আবারো জিজ্ঞেস করলো "ভাই কি একলা ? দেশে যাইবেন গা?
হ্যা একলা, নারে ভাই আগ্রা যামু ...একটু ঘুইরা আসি...একলা একলা আর ভালা লাগেনা।
উনি বলে আমিও একলা, আগ্রা গেলে আইবেন কবে?
আজকা ১৯ তারিখ তো আজকা যামু, কালকা রাতে পৌছামু, পরশু দিনডা ঘুরুম...রাইতে আবার কলকাতার ট্রেন ধরুম। ২৪ তারিখ ঢাকা ফ্লাই করতে হইবো। যদিও আসার টিকেট এখনো পাই নাই।
যাওয়ার টিকেট কাটছেন?
হ ভাই গতকালকে কাটছি
এখন টিকেট পাওয়া যাইবো? তাইলে আমিও যাইতাম আপনার লগে...
কথাটা শুইনা কেমন জানি টাস্কি খাইলাম...!! আমার একটা সঙ্গি খুব দরকার ছিল। আসেন ফেয়ারলি যাই, গিয়া দেখি টিকেট আছে কিনা।
ফেয়ারলি আবার কই? ফেয়ারলি হচ্ছে বিদেশী কোটায় টিকেট কাটার যায়গা। আরে মিয়া আমি লইয়া যামু আমার লগে আহেন।
আমার চেকআউট কমপ্লিট করে উনাকে বগলদাবা করে সাথে নিয়ে চললাম "ফেয়ারলির" পথে...যাওয়ার সময় রাস্তার পাশেই সকালের নাস্তাটা সেরে নিলাম
"লুছি আর সবজি"
খাইতে একটুও মজা না, না পাইরা খাওয়া আর কি...!!
ফেয়ারলী পৌছে আবারো ২ ঘন্টা অপেক্ষার পর টিকেট পাওয়া গেল। আমার ঠিক পাশের সিটটা উনি পেয়েছে। মনে হচ্ছে আমার জন্য ঈদ এসে পরেছে।
উনাকে নিয়ে হাওড়া স্টেশন, হাওড়া ব্রীজ দেখালাম, আবারো স্টিমারে চড়লাম।
হাওড়া স্টেশন
সেই হাওড়া ব্রীজ (আগের পর্বেও ছবি দিয়েছি "পাঠকরা বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন, প্লিজ ডোন্ট বিরক্ত )
সারাদিন সময় যেহেতু হাতে রয়েই গেছে...এবার প্লান হচ্ছে "মান্না দে'র সেই কফি হাউস দেখা...আমি জানতাম বিকেল ৫টার আগে "কফি হাউস" খোলেনা। তারপরেও যদি "হাউসের" গেটের আশেপাশে চরনটা একটু রাখা যেতো তবেই আমি শান্তি। ভাবতেই খুব খারাপ লাগে, "কফি হাউস" কোথায় এটা কলকাতার বেশির মানুষই জানেনা। আবার অনেকে আছে কোনদিন নামও শোনে নাই। কলেজ স্ট্রিট ( কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি) এতটুকু আমি ঢাকা থেকে জেনে গিয়েছিলাম। যাইহোক হাওড়া থেকে "কলেজ স্ট্রিটের বাস ধরলাম। অনেক জ্যাম আর জল্পনা কল্পনা শেষে "কফি হাউস" খুজে পেলাম।
আহা কি শান্তি ...
বাহিরটা দেখতে এতো এমন হলেও ভেতরটা অনেক সুন্দর।
আমি ভেতরে ভেতরে যাই নাই তবুও ভেতরের একটা ছবি দিলাম।
সন্ধায় হট কফির সাথে সাথে মানুষের জম্পেশ আড্ডা।
দিনটি ছিল রবিবার। কম বেশ সব কিছুই মোটামুটি বন্ধ ছিল
দোকানপাট বন্ধ থাকলেও আমি অনেক ছবি তুলেছি, কিন্তু মোবাইল+ক্যামেরা একটার মধ্যে ছবি খুজে পাচ্ছিনা।
বইয়ের দোকান
নিচের এই ছবি গুলো গুগল থেকে নেয়া।
ট্রাম কার
আমার কথা যেমন এলেমেলো ঠিক তেমনই আমার গল্পও এলেমেলো।
আজকে আর ভাল লাগছে নাহ।
সবাই ভাল থাকবেন।
রোজা রাখবেন।
নামাজ পড়বেন।
দোয়া করবেন।
পর্ব-১
পর্ব-২
পর্ব-৩
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০১