আমি প্রতিদিন ঘুড়ি উড়াই।
একটা শাদা কাগজ দিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে সবগুলো রং একটু একটু করে ছিটিয়ে দিই ঘুড়ির উপর। ঘুড়িটাকে এক টুকরো রংধনু মনেহয়। তারপর চলে যাই ঐ নীল পাহাড়ের চূড়ায়। ঘুড়িটার যখন আকাশ ছোঁয়া নেশা পেয়ে যায়, আমি তাকে ছেড়ে দিই। ঘুড়ি উড়তে থাকে, আমি তাকিয়ে থাকি। কেমন জানি ফাঁকা ফাঁকা লাগে কিছুক্ষণ। নিস্তেজ পড়ে থাকে নাটাই -আমার পায়ের কাছে, বিকেলের সূর্যের মতন। ঘুড়িটা বিন্দু হতে থাকে, এক সময় হারিয়ে যায় সাদা আর নীলের ভেতর অথবা ঘুড়িটাও সাদা-নীল হয়ে যায়।
তোমার উৎসুক দৃষ্টি শুধু দৃষ্টি হয়েই আমার মাঞ্জাহীন সুতার গায়ে গায়ে লেগে থাকে। আমি সব নাটাইয়ে পেচিয়ে নিয়ে রাতভর তাকিয়ে ভাবি- কেন প্রতিদিন ঘুড়ি উড়াই? নাটাই ভরে তোমার দৃষ্টি ধরে এনে আমার জাগ্রত চোখের পাড়ে সাজিয়ে রাখার জন্য নাকি তুমি ঘুড়ি উড়ানো ভালবাস বলে?
তুমি কি ঘুড়ি উড়ানো ভালবাস? তাহলে কেন একদিনও জানতে চাওনি আমি কেন ঘুড়িগুলো ছেড়ে দেই? ঘুড়িগুলো কেন রংয়ে রংয়ে ভরিয়ে দেই?
একদিন ঘুড়ি উড়াতে উড়াতে কেন জানি পেছনে ফিরে তাকাই। দেখি একটা পুরনো ঘুড়ি ফিরে আসছে। কত পুরনো জানি না। গায়ের সব রং ঘুলাটে হয়ে গেলেও স্পষ্ট ছিল নীল। ঘুড়িটা এসে তোমার চুলের উপর পড়ল। ভেবেছিলাম চমকে উঠবে। অথচ কি পরিচিত ভঙ্গিতে তুমি ঘুড়িটাকে কোলে তুলে নিলে। আদর করলে। ঘুড়িটা ঠাঁই পেল তোমার দু'বাহুর মাঝখানে। আমি নিথর দাঁড়িয়ে রইলাম। তুমি হেঁটে চললে ঘুড়িটাকে আদর করতে করতে। তাহলে কি প্রতিদিন তুমি পুরনো ঘুড়ি খুঁজে পাও কিংবা নীল পাহাড়ের চূড়ায় হাতড়ে বেড়াও বিন্দু হয়ে হারিয়ে যাওয়া ঘুড়ির রং।
আমার পায়ের নীচে জল জমতে থাকে। পাহাড়ের চূড়ার মাটিগুলো সব জল হয়ে যায়। আমি ডুবতে থাকি, নিশ্চুপে-নি:শব্দে। শুধু তুমি তাকিও না। আর না তাকালেও কিছু যায় আসে না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:০২