রাস্ট্রীয় প্রয়োজনে রাজস্ববৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকার কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে সরকার প্রায় সময় বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজীয় ভোগ্য পণ্যের কাঁচামালসহ দ্রব্যাদির দাম বাড়িয়ে থাকে । নাগরিক সুযোগ সুবিধা না বাড়িয়ে পণ্যের দাম বাড়ালে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে ।
যুক্তির খাতিরে ধরেই নিলাম যে দাম বাড়ানো দরকার কিন্তু সেই দাম যে মার্কেট পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী মহল আরো ৮/১০ গুণ বাড়িয়ে আদায় করে সেটা সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা । বরঞ্চ আরো সহযোগীতা করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে । উদাহরণ স্বরূপ সরকারী প্রতিনিধিসহ যে বর্ধিত মূল্য নির্ধারণ করা হয় তাতে বিস্তর অসামাঞ্জস্য দেখা দেয় । ফলে পাবলিকের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখি ও কঠিণ হয় ।
সম্প্রতি সরকার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে । এই দাম বাড়ার ফলে বহুমুখি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে । শুধু সিএনজি চালিত অটোরিক্সা/টেক্সির ভাড়া বৃদ্ধি ও যাত্রী এবং পরিবহণ শ্রমিকদের সাথে কি ধরণের বচসা হতে পারে তা উল্লেখ করে গত ০২/০৯/১৫ইং ফেসবুকে আমার টাইম লাইনে একটি ষ্ট্যাটাস দিয়েছিলাম । আমি জানতাম [b]পরিবহণ মালিক+শ্রমিক+সরকারী প্রতিনিধি[/b] মিলে নতুন ভাড়ার তালিকা নির্ধারণ করবে । তাই সিএনজি গ্যাসের দাম বাড়ার পরিমাণের সাথে ভাড়া বাড়ার একটি হিসাব দিয়েছিলাম ।
আমার ঐ ষ্ট্যাটাসটি ছিল নিম্নরূপ:
ভাড়া আদায়ে লাগাম ধরে রাখুন ------------------------<
গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধির ফলে যাত্রী হয়রানি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে । প্রতিবারই দেখা গেছে মূল্যবৃদ্ধির ফলে যতটুকু ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ার কথা তার ৮/১০গুণ পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় । এতে যাত্রীর সাথে পরিবহণ শ্রমিকদের মারামারি পর্যন্ত হয় ।
এবার ইউনিট প্রতি গ্যাসের দাম ৫টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা যা গত সোমবার (০১/০৯/১৫ইং) রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হয়েছে ।
সেই মোতাবেক একটি সিএনজি অটো রিক্সা যদি সারাদিনে ১০ইউনিট গ্যাস ব্যবহার করে ১৫০০টাকা ইনকাম করে তাতে তার গ্যাস কিনতে ৫০টাকা বেশী লাগবে আগের তুলনায় ।
সেক্ষেত্রে সে ৭৫ টাকার একটি ভাড়ায় ৩টাকা বাড়তি নিলে তার গ্যাসের অতিরিক্ত টাকা আদায় হয়ে যায় । কিন্তু সে যদি ৭৫ টাকার ভাড়া অতিরিক্ত খরছের ৫/৬গুন বাড়িয়ে ৯০/১০০টাকা দাবী করে তখন যাত্রীর সাথে লাগে দ্বন্ধ ।
অনুরূপভাবে সিএনজি চালিত বাসের ক্ষেত্রে হিসাব করলে দেখা যাবে ১০ কিলোমিটারের জন্য যাত্রী প্রতি ১টাকা বাড়াবারও প্রয়োজন পড়বে না । কিন্তু ওরা বাড়াবে পরিমাণে অনেক বেশী । ওরা উঠা-নামায় ৩/৪ টাকা বাড়িয়ে দেবে আর সচেতন প্রতিবাদী যাত্রীদের সাথে লাগবে ঝগড়া ।
বিষয়টি সিরিয়াসলী এন্ড স্ট্রংলী মনিটরিং করতে সংশ্লিষ্ট মহলকে অনুরোধ করছি ।
গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিআরটিএ’র প্রস্তাবনা বিবেচনা করে ভাড়ার হার নির্ধারণ করেছেন।
আমি সিএনজি অটোরিক্সার কথা এখানে তুলে আনছি,
প্রথম দুই কিলোমিটার বা সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪০ টাকা। একই সাথে পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২ টাকা। বিরতির সময় প্রতি মিনিটের জন্য ভাড়া ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা করা হয়েছে।
আসুন দেখি ভাড়া ভাড়ার এই হার গ্যাসের দাম বাড়ার সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যতা রাখে ।
একটি সিএনজি চালিত টেক্সি দিনে ১৫০টাকার ৫ইউনিট সিএনজি কিনে । ধরে নিলাম একজন টেক্সি চালক দিনে ১০ইউনিট সিএনজি কিনে ৩০০টাকা দিয়ে । বর্তমান বাড়তি দামে তাকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশী ব্যয় করতে হবে । সে কিন্তু গড়ে ১৪/১৫শ টাকা ইনকাম করে । ধরি ১ ইউনিট সিএনজি দিয়ে সে ১০ কিলোমিটার যায় । তাহলে ১০ কিলোমিটারের জন্য তার আগের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় হবে মাত্র ৫টাকা । অর্থাৎ ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত সে বাড়তি নিতে পারে ৫টাকা । অতচ মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাহেব তাদের অনুমতি দিয়েছে প্রতি ২ কিলোমিটারের জন্য ১৫টাকা বাড়তি নিতে । তাহলে দাম বাড়ার চেয়ে কতগুণ অতিরিক্ত চাপিয়ে দেয়া হল যাত্রীদের উপর । বিআরটিএ নাকি তা প্রস্তাব করেছেন, বিআরটিএ কিসের ভিত্তিতে কার স্বার্থ সংরক্ষণ করার জন্য এই প্রস্তাব দিয়েছেন তার ব্যাখ্যা পেলে এই ভাড়ার গ্রহণযোগ্যতা তুলনা করা যেত ।
# এই ভাড়া নির্ধারণ অবশ্যই যুক্তি সংগত হয়নি
# এই ভাড়া নির্ধারণ অবশ্যই যুক্তি সংগত হয়নি
তাছাড়া ভাড়া আদায়ের এই তালিকা মিটারে নির্ধারিত হলেও চট্টগ্রামের সিএনজি চালিক টেক্সিগুলোর বেশীর ভাগে কোন মিটারই নেই । থাকলেও তা নষ্ট । এসব দেখার যেন কেউ নেই ।
ভোক্তা সাধারনের জীবনযাত্রার মান কঠিণ হওয়া মানে সরকারের উপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়া ।
আম জনতা যুগের পর যুগ শুধু দেখেই যাচ্ছে দাম বাড়ছে ৫ টাকা আর তাদের তা কিনতে হচ্ছে ১৫/২০ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে । আর কত দিন চলবে এভাবে ?