. . . . . . প্রেমের হাতছানি
[শান্তশিষ্ট ডিগ্রী ফলাফল প্রার্থী ছেলেটি কোন দিন ভূলে ও ভাবেনি সে এভাবে প্রেমে জড়িয়ে পড়বে । মেয়েটির বার বার আহবানের জবাবে তার ৩য় চিঠি ছিল এটি , বেশ কয়েক বছর আগের বাস্তব কাহিনী ]
প্রেম করোনা , প্রেম করা ভাল না, ভাল ছেলে মেয়েরা প্রেম করেনা। নিখাদ প্রেম পাওয়া দুস্কর। প্রেম মানুষকে জ্ঞানহীন পশুর পর্যায়ে পৌছাতে পারে।
প্রেম অন্ধ, ইহা সামনে পাহাড়, পর্বত, গর্ত, আগুন, পানি, কিছুই দেখেনা, শুধু ঝাপিয়ে পড়তে জানে। শরৎ চন্দ্র বলেছেন ‘বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, ইহা দূরে ও সরিয়ে দেয়।’ প্রেম একজন আদর্শবান উজ্জল ভবিষ্যৎ সম্পন্ন ছেলেকে লিভার পঁচা মৃত্যু পথযাত্রী বানাতে পারে। কারন প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ধুমপান, হিরোইন, লালপানি, সিডাকসিন ফাইভ, এর খপ্পরে পড়েই এমনটি হয়। উসকো-খুসকো চুল , খোচা খোচা দাড়ি, উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টি, অসংলগ্ন কথাবার্তা, পোষাকের ভারসাম্যহীনতা- এগুলো প্রেমিক ব্যক্তির লক্ষন।
প্রেম সকালের শিশির বিন্দুর মত নির্মল নিষ্পাপ চরিত্রের যুবতীকে করে ঘর ছাড়া। সফল হলেত রাজ জোটক ( চমৎকার মিলন ), ব্যর্থ হলে গলায় কলসি বেধে পানিতে ডুব অথবা সাড়ে চার গজ রশি দিয়ে পুরনো বটবৃক্ষের শাখা কিংবা ঘরের ছাদের হুক। রশি যোগাড়ে ব্যর্থ হলে হয় শাড়ির আচল নাহয় পাঁচ টাকার পয়জন। প্রেমের স্বীকার হয়েই যুবতীরা ধর্ষন, অপহরন, হত্যা, গুম ও এসিডে আক্রান্ত হচ্ছে। এত কিছুর পর ও ছেলেমেয়েরা প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। কারন প্রত্যেকের জীবনে নাকি একবার হলে ও প্রেম আসে।
বিখ্যাত দার্শনিক সক্রেটিস বলেছিলেন- ‘যে ফুল ভালবাসেনা সে মানুষ হত্যা করতে পারে।’ ফুল তারাই ভালবাসে যাদের হৃদয়ে প্রেম আছে, হৃদয়ে যাদের প্রেম নেই তারা হয় দেবতা, না হয় পশু।
আসলে প্রেম তো ভাল । ইহা স্বর্গের পবিত্র উপহার। কিন্তু আধুনিক ছেলেমেয়েরা এই পবিত্র প্রেমকে বিকৃত অর্থবোধক করে দাঁড় করিয়েছে। তারা প্রেমকে নিজেদের জৈবিক চাহিদা মেঠাবার জন্যই ব্যবহার করে থাকে। এরশাদ সরকার যেমন সকাল সন্ধ্যা মন্ত্রী বদল করতেন ঠিক তেমনি আজকের যুবক যুবতীরা প্রেমিক-প্রেমিকা বদল করে থাকে। এজন্য সমাজে প্রেমে আসক্ত যুবক-যুবতীদের বাঁকা দৃষ্টিতে দেখা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন- ‘কামনা আর প্রেম এ দু’টো সম্পূর্ন আলাদা জিনিস। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন। ’
আসলে প্রেম করা দরকার মহান সৃষ্টিকর্তার সাথে। সৃষ্টি কর্তার প্রেমে যিনি দেওয়ানা তিনিই তো প্রকৃত প্রেমিক। এজন্য তাকে বলা হয় পাগল বা মজনু। তাঁরা আল্লাহর স্বত্তার সহিত একাকার হয়ে যান।
কোন একজন খোদা প্রেমিক বলিয়াছেন- যে পদার্থকে খোদা ভালবাসেন আমিও উহাকে ভালবাসি। আমি দোযখে নিক্ষিপ্ত হওয়াই যদি তাহার ইচ্ছা হয়, তবে আমি দোজকে যাওয়াকেই ভাল মনে করিব এবং তাহাতে সন্তুষ্ট থাকিব।
হযরত বেশার হাকী [রহ:] একটি ঘঠনা বর্ননা করিয়াছেন। ঘঠনাটি এ রকম - ‘আমি মুরীদ হওয়ার অনতিকাল পরেই একদিন আবাদান শহর অভিমুখে গমন করিতেছিলাম। পথিমধ্যে কুষ্ঠ ব্যাধিগ্রস্থ এক পাগল ব্যক্তিকে ধুলায় লুণ্ঠিত অবস্থায় জমিনের উপর পতিত দেখিতে পাইলাম। অসংখ পিপীলিকা তাঁহার গায়ে জড়াইয়া ধরিয়া তাঁহার মাংস খুলিয়া খাইতেছিল। তাঁহার অবস্থা দেখিয়া আমার মনে বড় দয়া হইল। আমি তাঁহার মস্তকটি ক্রোড়ে স্থাপনপূর্বক তাঁহার শিয়রে বসিয়া পড়িলাম। কিছুক্ষন পরে তিনি চেতনা প্রাপ্ত হইয়া আমাকে বলিতে লাগিলেন : এ কেমন অনধিকার চর্চা। আমার ও আমার প্রভুর মধ্যস্থলে অন্য ব্যাক্তির প্রবেশ, এ কেমন অবাঞ্জিত কার্য।
উপরোক্ত দৃশ্য দুটো মহাত্মা ইমাম গাজ্জালী [রহ:] এর কিমিয়ায়ে সা’দত গ্রন্থের পরিত্রান খন্ডে চিত্রিত হয়েছে। লবন যেমন পানিতে মিশে যায় তেমনি খোদা প্রেমিক ব্যক্তি ও স্বতন্ত্র অস্থিত্ব হারিয়ে ফেলেন। এ পর্যায়ে আশেক ও মাশুকের মধ্য খানে কোন পার্থক্যই থাকে না। দুনিয়াবী কোন আচরনের সহিত তাঁর কোন সম্পর্কই নেই। এজন্যই আল্লাহপাক তাঁর প্রেমে মজনুদের নামাজ রোজা মাফ করে দিয়েছেন। পুকুরের পাড়ে যে গাছ তার গোড়ায় পানি দিতে হয়না।
অবশ্য আল্লাহর প্রতি প্রেমের এই নমুনা কিছু কিছু সৃষ্টির প্রতি সৃষ্টির মাঝে ও পরিলতি হয়। ইউসুফ জুলেখা, শিরি-ফরহাদ, লাইলি মজনুর প্রেম এর উজ্জল স্বাক্ষর। এছাড়া দৈনন্দিন পরিবেশে এরকম শত শত ঘঠনা অহরহ ঘঠেই যাচ্ছে আমরা যার খবর রাখিনা।
প্রেম জিনিসটাই এরকম যে , কোন বাচ-বিচার করতে সে রাজি নয়। প্রেম জাত মানে না, গোষ্ঠী মানে না, বর্ণ মানেনা, ধর্ম মানেনা- ইহা উত্তপ্ত এক বিপ্লব। পৃথিবীতে যদি কোন স্বার্থক বিপ্লব থাকেতো সে এই ‘প্রেম’।
এই বিপ্লবের কর্কশ থাবা থেকে রেহাই পাবার উপায় হচ্ছে প্রেমের ফাঁদে পা না দেয়া।
আমি মনে করি বিয়ের আগে প্রেম করাই উচিত নয়। বিয়ের পর যে ঘরে আসবে বা যার ঘরে যাবে তার সাথে তখন থেকেই প্রেম শুরু করা যায়। অবশ্য সুযোগ থাকলে বিয়ের কয়েক মাস আগে থেকে পছন্দ-অপছন্দের স্বার্থে যোগাযোগ রাখাটা আমি অসমর্থন করিনা।
তবে কোন অবস্থাতেই সম বয়সী বা সহ পাঠিদের মাঝে প্রেম হওয়া উচিত নয়। কারন জরিপ করলে দেখা যাবে সিংহ ভাগ ব্যর্থ প্রেম সহপাঠি বা সমবয়সী দের মাঝেই ঘঠে থাকে। আর সেখান থেকে যেগুলো জোড়া-তালী দিয়ে মিলন সম্ভব হয় তার থেকে ও পরবর্তীতে অনেকের বিচ্ছেদ ঘটে যায়।
এর কারন এরা অপরিনত বয়সে হাওয়া হাওয়া গাছ তলায় কল্পনার ফাঁনুস উড়িয়ে অবিভাবকের পরামর্শকে বিষাক্ত মনে করে যে কাঁচা সিদ্ধান্ত নেয় তাই ওদের ভরাডুবির অতল গহবরে নিক্ষেপ করে।
পরিচিত কাউকে যদি প্রেমের সাম্পানে সওয়ারী হতে দেখা যায় এবং সে সওয়ারী যদি হয় একান্তই আপনজন- তাহলে মনে শঙ্খা জাগে, সে ভুল করল নাতো ! আর এই সাম্পানে যদি আহবান করে আমাকেও তখন দ্বিধা, দ্বন্ধ, আনন্দ, শঙ্খা, জল্পনা, কল্পনার এক মিশ্র অনুভুতি অন্তরে পয়দা হয় এবং চুড়ান্ত সিদ্ধান্তটা অনেকটা নির্ভর করে যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে তার সততা, একনিষ্টতা, সাহসিকতা, ইষ্পাত-কঠিন দৃঢ়তা এবং আন্তরিকতার উপর।