somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে দশজন যুবক দাও: ড. মাহাথির

০২ রা জুলাই, ২০১২ রাত ৯:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর ইতিহাসে মহানায়ক হওয়ার যোগ্যতা আছে কয়জনের? এমন প্রশ্নের উত্তরে অনেক নামই উঠে আসবে। তবে দেখা যাবে এদের অধিকাংশই মানুষের মন জয়ের চেয়ে দেশ জয়কেই বড় করে দেখেছেন। আবার তাদের দেশ জয়ের পেছনে সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেয়ে নিজের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের ইচ্ছেটাই ছিল বেশি। তারপরও যুগে যুগে এমন বহু নেতার জন্ম হয়েছে যারা নিপীড়িত জনগণের জন্য কাজ করে গেছেন। যারা পিছিয়ে পড়া জাতিকে আলোর পথ দেখিয়েছেন।

এমনই একজন নেতা হলেন মালয়েশিয়ার ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ। দেশ-কালের সীমানা ছাড়িয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে।

স্বপ্নযাত্রার পাঠকদের জন্য তাঁর জীবনের কিছু দিক ছোট করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

মাহাথিরের পূর্বপুরুষ চট্টগ্রামের!

চট্টগ্রাম জেলার উত্তরাংশে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাধীন চন্দ্রঘোনা ও কাপ্তাইগামী সড়কের সামান্য পূর্বে কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ গ্রাম মরিয়ম নগর। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে এ গ্রামের এক যুবক ব্রিটিশ শাসিত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। তিনি ছিলেন জাহাজের নাবিক। মালয়েশিয়ায় আলোর সেতার গিয়ে এক মালয় রমনীর সঙ্গে সম্পর্কে আবদ্ধ হন। তাদের ঘরেই জন্ম নেয় বিখ্যাত মাহাথিরের পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দার।

এ সূত্রে মাহাথিরের রক্তে মিশে আছে বাংলাদেশের রক্ত। সে কারণেই বাংলাদেশের জন্য মাহাথিরের রয়েছে আদালা ভালোবাসা।

মাহাথিরের জন্ম ও শৈশব:

মাহাথির মোহাম্মদের জন্ম ১৯২৫ সালের ২০ ডিসেম্বর। পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দারের নয় সন্তানের মধ্যে মাহাথির ছিলেন সবার ছোট।
মাহাথিরের পিতা ছিলেন অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ মানুষ। পিতার কাছ থেকে মাহাথির এ গুণটি পেয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই শৃঙ্খল জীবন পালন করেছেন মাহাথির।

মাহাথির তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন সেবেরাং পেরাক মালয় স্কুলে। কিন্তু তিনি চাইতেন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে। সমস্যা হলো, ইংরেজরা মালয় ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোতে সহজে সুযোগ দিত না। ভর্তি পরীক্ষা হতো খুবই কঠিন। তাই মালয় ছেলেমেয়েদের জন্য সুযোগ পাওয়া ছিল দুঃসাধ্য।

সেই ছোটবেলাতেই তিনি এ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথমদিকে স্থান করে নেন। আলোর সেতারের গভর্নমেন্ট ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শুরু করেন মাহাথির।

ভয়কে জয় করার গল্প:

শৈশবে তিনি কুকুরকে ভীষণ ভয় পেতেন। পথে কোনো কুকুর দেখলেই ভয়ে দৌড়াতে শুরু করতেন। এই ভয় তাকে অস্থির করে তুলতো। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে একদিন হঠাৎ তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন আর ভয় পাবেন না। সিদ্ধান্ত হলো- যখনই কুকুর দেখবেন তখন চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকবেন। সিদ্ধান্ত কাজে দিল।

এই সিদ্ধান্তটিকে তার জীবনের বড় প্রাপ্তি হিসেবে বার বার উল্লেখ করেছেন। কোনো সমস্যা এলে ভয় পেয়ে তা থেকে পালিয়ে না গিয়ে তাকে মোকাবিলা করা, সমস্যা উৎস খুঁজে বের করা পরিণত হয় তার স্বভাবে। এবং এই মন্ত্রই তাকে পৌঁছে দেয় সাফল্যের চূড়ায়।

মাহাথির থেকে ড. মাহাথির:

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মাহাথির অনুভব করেন সমাজের জন্য কিছু করার। তখন সিদ্ধান্ত নেন সমাজের জন্য কিছু করতে হলে হয় তাকে আইনবিদ অথবা ডাক্তার হতে হবে। মেধাবী মাহাথির খুব সহজেই বৃত্তি পেয়ে যান। প্রথম পছন্দ আইন হলেও সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বলা হয় ডাক্তার হওয়ার। কেননা মালয়েশিয়ায় তখন বেশ কয়েকজন আইনবিদ ছিলেন। সিঙ্গাপুরের কিং অ্যাডওয়ার্ড সেভেন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন মাহাথির। ১৯৪৭ সালে মাত্র সাতজন মালয় শিক্ষার্থী ছিলেন ঐ মেডিকেল কলেজে।

মেধাবী মাহাথির পড়াশোনা শেষ করে ফিরে আসেন নিজ দেশে।

রাজনীতিতে মাহাথির এবং নির্বাচন:

মাহাথির ১৯৫৬ সালে বিয়ে করেন সিতি হাসমাকে। স্ত্রী সিতি বুঝতে পারছিলেন মাহাথির ধীরে ধীরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। মেডিকেল কলেজে পড়া অবস্থাতেই তিনি দেখেছেন মাহাথিরের নেতৃত্ব প্রতিভা প্রখর।

বিয়ের এক বছর পর মাহাথির নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। পরে ১৯৬৪ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে কোটা সেতার দক্ষিণ এলাকা থেকে বিপুল ভোটে এমপি পদে তিনি নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হয়েই মালয়দের সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করেন।

যেহেতু তিনি ডাক্তার ছিলেন তাই মানুষের সঙ্গই তার পছন্দ ছিল। এ প্রসঙ্গে একবার তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াই। দেহরক্ষী আছে তবে তাদের অনেক দূরে থাকতে হয়। আমি মনে করি, যেসব নেতা জনগণ থেকে শারীরিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকেন, আমি তাদের মতো নই। আমি একজন সাধারণ মানুষ হয়ে থাকতেই পছন্দ করি। পছন্দ করি নিজে বাজার করতে। সবার সাথে মিশে কফি পান আমার পছন্দ।’

যাইহোক। যে দল থেকে নির্বাচন করেছিলেন সে দলের নীতির সঙ্গে বারবার মাহাথিরের দ্বন্দ হয়। দলের বিভিন্ন ভুল পরিকল্পনা ও অদক্ষতা মাহাথিরকে বিচলিত করে তোলে। এক পর্যায়ে দলীয় প্রেসিডেন্ট ১৯৬৯ সালে তাকে দল থেকে বহিস্কার করে। এরপরই শুরু হয় রাজনৈতিক নানা হয়রানি। মোড় ঘুরতে থাকে মাহাথিরের।

প্রধানমন্ত্রী মাহাথির:

দল থেকে বহিস্কার হওয়ার পর তিনি আবার চিকিৎসা পেশায় ফিরে যান। তবে বন্ধুদের সহযোগিতায় তিনি অবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে এমপি নির্বাচিত হয়ে শিক্ষামন্ত্রী হন।

শিক্ষামন্ত্রী হয়েই কারিগরি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে কার্যকর নানান পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন মাহাথির। মালয়েশিয়াকে বদলে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষা সংস্কার হচ্ছে মাহাথিরের প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ।

মাহাথির ১৯৭৫ সালে উমনো’র ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তুন হোসেন হন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ফলে মাহাথির হন উপ-প্রধানমন্ত্রী।

কয়েকবছর পর তুন হোসেন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে অবসরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে মালয়েশিয়ার চতুর্থ প্রধানমন্ত্রী হন ড. মাহাথির মোহাম্মদ।

অন্যরকম প্রধানমন্ত্রী:

মাহাথিরই পৃথিবীর একমাত্র প্রধানমন্ত্রী যিনি নিজের নাম লেখা ব্যাজ পরতেন। মাহাথির সঙ্গে ছোট্ট একটি নোটবুক রাখতেন। তার সব চিন্তা লিখে রাখতেন সেই নোটবুকে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোর সাজানো থেকে শুরু করে সরকারি রীতিনীতি পর্যন্ত সবকিছুই তিনি লিখে রাখতেন।

আধুনিক মালয়েশিয়ার স্বপ্নদ্রষ্টা মাহাথির দেশে গাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেন। প্রোটন সাগা নামের মালয়েশিয়ান গাড়ি তৈরি হয় জাপানি মিটসুবিশির সহায়তায়। এভাবেই ধীরে ধীরে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে থাকেন মাহাথির।

আমাকে দশজন যুবক দাও...

‘আমাকে দশজন যুবক দাও, তাহলে আমি সারা বিশ্বকে তোলপাড় করে দেব’- বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ। কিন্তু মাহাথিরের কাছে ব্যাপারটি ছিল - ‘ দশজন যুবক দেওয়া হলে মালয়ীদের সাথে নিয়ে আমি বিশ্বজয় করে ফেলবো।’

বাস্তাবে হয়েছেও তাই। মালয়েশিয়ার নতুন প্রজন্মকে তিনি স্বদেশপ্রেমে এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন যে, তারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন।

অবসরে মাহাথির মোহাম্মদ:

এক নাগাড়ে দীর্ঘ ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর ৭৭ বছর বয়সে ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবর ড. মাহাথির বিন মোহাম্মদ ক্ষমতা ও রাজনীতি থেকে বিদায় নেন। তবে তার এ বিদায় ছিল ব্যতিক্রমী। রাজনীতি ও ক্ষমতা থেকে নেতা-নেত্রীদের বিদায় ঘটে মৃত্যু, হত্যা, নির্বাচনে পরাজয় বা বিদ্রোহ-বিক্ষোভের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু মাহাথিরের বিদায় সেরকম নয়। এটি ছিল নতুন নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগ।

উপ-প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ্ আহমদ বাদাওয়াবীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে কেমন লাগছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কাঁধ থেকে দেশ পরিচালনার বোঝা সরাতে পেরে স্বস্তি লাগছে।’

সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির আরো বলেন, জনগণ আমাকে ভুলে গেলেও আমার কোনো দুঃখ থাকবে না। শেক্সপিয়ারের জুলিয়াস সিজার নাটকের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মন্দটাই মনে রাখে মানুষ। ভালোটা হাড়গোড়ের সঙ্গে মাটিতে মিশে যায়। জনগণ আমাকে মনে রাখল কি রাখল না তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×