বাংলাদেশের ক্রিকেট বিষয়ক ফোরাম বাংলাক্রিকেট-ডট-কম এর জন্য লিখেছিলাম এই রম্যগদ্য। তার কপিটি এই বাংলা ব্লগেও দিলাম, ক্রিকেটপ্রেমী কেউ আমোদিত হবেন, এই আশায়।
স্বাগতম, হে ভারতীয় ক্রিকেট দল, বাংলাদেশের মাটিতে আপনাদের সুস্বাগতম। অনুগ্রহ করে আপনারা বাংলাদেশে আপনাদের পদধূলি দিয়েছেন, সেই জন্য আমরা বড়ই আহ্লাদিত। আপনারা পাড়ার বড় ভাই, গরীবের মাঠে এসে খেলবেন- এ যে আমাদের জন্য কি সম্মান তা বলে বুঝানো যাবে না। আপনাদের রাজবাড়ীতে গত বারো বছরে একবারও নেমতন্ন না পেলেও আমরা মাইন্ড খাইনা। আমাদের সীমান্ত-কন্যা ফেলানীকে কাঁটাতারে ঝুলন্ত অবস্থায় গুলি করে মেরে ফেললেও আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে খুশীতে বগল বাজাই আপনাদের “সরি” শুনেই। কারণ মানী লোকের মান আমরা বুঝি। সম্মানী লোকের সাথে কিভাবে সম্ভ্রম আর বিনয়ের সাথে ব্যবহার করতে হয়, তা আমরা জানি। আর আমরা জানি বড়লোকের চলাফেরা হয় বড়লোকের সাথে এবং ধনীর বাড়িতে ধনীর আগমনই শোভা পায়। আপনারা যে আমাদের ভাঙ্গা দুয়ারে এসেছেন, তাতেই আমরা আনন্দে আটখানা। আপনাদের আদর, আপ্যায়ন, আদর, সমাদরে আমরা কোন কমতি রাখবো না। দেশবাসীর পক্ষে বিনম্র চিত্তে, হে ভারতীয় দল, আপনাদের জানাই সশ্রদ্ধ সম্ভাষণ।
আপনাদের এবং আরও বিদেশী অতিথিদের সমাদরের জন্য আমরা চেষ্টার কমতি রাখি নাই। চট্টগ্রামে রাস্তার পাশের বস্তি ভেঙ্গে সব নোংরা আদমি লাথি মেরে ভাগিয়ে দিয়েছি। পচা আবর্জনা, নর্দমা এসব দেখে আপনাদের সুবাসিত মুড যাতে যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, সেজন্য যোজন যোজন পথ আমরা সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে ঢেকে দিয়েছি। আপনাদের মনের বলিউডি সৌরভ যাতে ফিকে না হয়, সে জন্যে ঢাকা শহর থেকে ভিখারি ঠেঙ্গিয়ে আমরা বিদায় করেছি। বাড়ীর মালিক আর গাড়ীর মালিক সবাইকে বলে দিয়েছি রঙ মাখিয়ে সব ফিটফাট করে ফেলার জন্য। এখন শুধু বাকি রেখেছি আপনাদের সফরের সময় লুঙ্গী পড়া নিষিদ্ধ করতে আর মানুষকে শার্ট-প্যান্ট ইন করে চলাফেরায় বাধ্য করতে। আপনারা চাইলে বিশ্বকাপের সময় মহিলাদের বিশেষ তারযুক্ত ব্রা পড়াও বাধ্যতামূলক করে দিতে পারি, যাতে সুউচ্চ বক্ষ-যুগল আমাদের উন্নয়নের গ্রাফটা ঠিক মতো তুলে ধরতে পারে। মোদ্দা কথা, আপনাদের স্বাগত জানানোর জন্য আমরা চেষ্টা-চরিত্রের কিছু বাকি রাখি নাই।
তবে কিনা ইয়ে, আমাদের ক্রিকেট দলের পোলাপান গুলোকে আমরা এখনো ঠিক মতো আদব কায়দা শিখিয়ে উঠতে পারি নাই। বুঝেনই তো এই যুগের বখে যাওয়া পোলাপান...বড্ড বেয়াদব। আদব সম্ভ্রম রেখে কথা কইতে জানে না। তাই আগে ভাগেই আপনাদের একটু ভেতরের খবর জানিয়ে রাখি। মাঠে যদি এরা কোন বেয়াদবী করে ফেলে, আমাদের মাফ করবেন।
আর বলবেন না...এদের নিয়ে আর পারি না। এই যে ধরেন সেদিনকার পোলা তামিম। বেয়াদবের এক শেষ। আপনাদের সম্মানের কপালে হিসি করে দিয়ে দেখবেন হয়তো ধুরুম ধারুম করে ব্যাট চালানো শুরু করবে। ২০০৭-এ জহির খান সাহেবের মতো মানীগুণী মানুষকে চোর মারার মতো “বাইন্ধ্যা ধইরা” পিটালো। এ ছেলে এই ক’বছরে আরও বখে গেছে। মাইরের উপর এর আর কোন কথা নাই। এই বখাটে ছেলের ব্যবহারে দয়া করে কিছু মনে নিবেন না। কথায় বলে, সঙ্গদোষে স্বভাব নষ্ট। বেয়াদব তামিমের লাই পেয়ে পেয়ে ইমরুলের মতো ভদ্র ছেলেও এই ক’বছরে বখে ভীমরুল হয়ে গেছে। এর সাথে আরও আছে জুনায়েদ, নাফিস এগুলা। ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো তিন নাম্বার পজিশনে ব্যাটিং করতে এসে ফাল দিতে এরাও কম যায় না।
ভারতকে “ধরে দিবানি” বলে আরেক বদমাশ মাশরাফী আপনাদের ২০০৭-এ ঠিক জায়গা মতো ভরে দিয়েছিল। অসভ্যের এক শেষ। তবে মানীর মান আল্লাহ রাখে...এই বদমাশ এবার মাঠের বাইরে। কিন্তু এই কলি কালে দুশমনের কি অভাব আছে। কোথাকার কোন কাইল্যা রুবেল, চিকনা সফিউল, পাতলা নাজমুল...সবগুলো বেত্তমিজ কিন্তু একসাথে গ্যাং বানিয়েছে। শোনা যায়, কোন এক ফিরিঙ্গি কোচ ইয়ান পন্টের পাল্লায় পড়ে এরা নাকি হয়েছে আরও ডেয়ারিং। বাটার-ফ্লাই নামের কি এক যেন বোলিং নিয়ে এরা দিনভর এখন কেবল “শ্রী শ্রী প্রজাপতেয় নমঃ” বলে চিল্লা ফাল্লা করে। বলে কিনা, “প্রজাপতি এবার রেডি, ভারতের সাঙ্গা হবে সাঙ্গা”।
আরও আছে বিশ্বসেরা রংবাজ মাগুরার পোলা সাকিব। দেখতে ভদ্র লাগে, আসলে কিন্তু মিচকা শয়তান। এইটাই হলো পালের গোদা। এর পিছে পিছে ঘুরে নাসিকা-উস্ফলিত রাজ্জাক, সারাক্ষণ যেন উইকেটের গন্ধ শুকে বেড়ায়। স্পিনের আসর বসিয়ে আপনাদের মান-সম্ভ্রমকে এরা নাচের বাইজী বানিয়ে নাচানোর ফন্দি ফিকির করতে পারে। একটু দেখে শুনে চলবেন কিন্তু।
সাঙ্গপাঙ্গের কিন্তু এখানেই শেষ না। একদল আছে ফিল্ডিং এর সময় চক্কর মারে। ফিরিঙ্গি কোচ জুলিয়ান ফাউন্টেইন নাকি এদের দিয়ে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বানিয়েছে। এই কালপ্রিট দলেই আছে শুভ্র নামের ফটকা মৌলভী। লেবাস দেখে কিন্তু ভুল করবেন না। দাড়িওয়ালা-টুপিপড়া এই জঙ্গি যদি ফিল্ডিং এর সময় বল হাতে পেয়ে ওটাকে বোমা মনে করে বসে, তাহলে আল্লাহ মালুম, আপনাদের উইকেট, টুইকেট উড়িয়ে কিন্তু জিহাদ শুরু করে দিতে পারে। দয়া করে প্লিজ রান নিবেন “খুব খেয়াল কইরা”।
পুরানা ফটকাবাজ আশরাফুল তো আছেই...সারাক্ষণ খালি “দে উপ্তা কইরা দে” বলে ফাকা আওয়াজ ছুড়ে। সম্ভ্রান্ত লোকজনের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, এত দিনেও ঠিক মতো শিখে নাই। আর আছে উইকেটের পিছনে মুশফিক নামের ধাইন্যা মরিচ। সারাদিন খালি প্যাক-প্যাক, প্যাক-প্যাক করতেই থাকে। আদব-কায়দার কোন বালাই নাই।
হঠাৎ ফোনের রিং...ক্রিং ক্রিং ক্রিং ক্রিং। ভারতীয় অতিথিবৃন্দ, একটু প্লিজ, ফোনটা রিসিভ করি। হয়তো আপনাদের জন্য আরও নতুন আদর-আপ্যায়নের আয়োজনের খবর আসছে।
-হ্যালো?
-হ্যালো বাবু ভাই? আমি মুশফিক, ধাইন্যা মরিচ।
- আমার নাম্বার পেলেন কোথায়? আপনি অনেক দিন বাঁচবেন, আপনার কথাই লিখছিলাম
-হ্যাঁ, শুনলাম আপনি নাকি ভারতকে স্বাগতম জানিয়ে লেখা লেখতেছেন, তাই নাম্বার জোগাড় করে ফোন দিলাম
- হ্যাঁ, তা তো লিখছি। আপনার কিছু দরকার?
- হ্যাঁ, সেই স্বাগতমের লেখায় একটা জিনিস একটু লিখবেন। আমাদের সাথে ভারতের খেলা কিন্তু এবার শনিবার। ওদের একটু কইয়্যা দিয়েন, “ভারতের কপালে এবার শনিই আছে”।
ফোন রেখে দিলাম। দেখলেন তো কান্ড। কি আর বলার আছে। আমাদের মতো নম্র-ভদ্র মানুষের মধ্যে এই সব বেত্তমিজ পোলাপান যে কিভাবে পয়দা হলো, সেই চিন্তায় আছি।
হে সম্মানিত ভারতীয় ক্রিকেট দল, বাংলাদেশে আপনাদের স্বাগতম। আপনাদের ভ্রমণ আনন্দদায়ক হোক। বিশ্বের সবচেয়ে মালদার, সম্ভ্রান্ত ক্রিকেট দলকে আমাদের মাঝে পায়ে আমরা যারপরনাই আবেগে আপ্লুত। স্রস্টা আপনাদের সহায় হোন। এই বাংলাদেশী বেয়াদব, বখাটে ক্রিকেট গ্যাং এর হাত থেকে আপনাদের জানমাল, মানসম্ভ্রম রক্ষার দায়িত্ব উপরওয়ালার হাতে ছেড়ে দিলাম। আপনাদের আদর সমাদরের সব দায়িত্ব আমাদের। তবে ইজ্জতের নিশ্চয়তা দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত। ইজ্জত মাঠে মারা গেলে অনুগ্রহ করে ক্ষমা করবেন।