somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মন্ত্রিসভায় রাজাকার রেখে বিচার করা যায় না - কাদের সিদ্দিকী : মখাকে গ্রেফতার করুন আমি সাক্ষ্য দেব

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সরকারের ইশারায় শাহবাগের আন্দোলন হয়ে থাকলে এ আন্দোলনের চার পয়সার দামও নেই বলে মন্তব্য করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি ’৭১ এর চিহ্নিত রাজাকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে একজন রাজাকারকে বসিয়ে রেখে রাজাকারের বিচার করা যায় না। তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করে ’৭১ এর অপরাধের দায়ে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হোক। তার বিচার করুন-কেউ সাক্ষ্য না দিলে আমি আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দেব। আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ বলে রাজাকার আশিকুর রহমানের বিচার করবেন না তা হবে না। তারা ’৭১ এ পাকিস্তান সরকারের ডিসি ছিলেন। একজন রাজাকার কি অপরাধ করেছে, তারা কয়েক হাজার রাজাকারের চেয়ে বেশি অপরাধ করেছে। আমরা সব রাজাকারের বিচার চাই। সরকার প্রধান শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করলে রাজাকার মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবে আর আওয়ামী লীগ না করলে মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার হয়ে যাবে-এ ধারণা থেকে সরে আসেন। এ চিন্তা বড় বিপজ্জনক। আপনি আমাকে হত্যা করতে চান। আইয়ুব-ইয়াহইয়ার মতো সামরিক শাসকরা আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল পারেনি। আর আপনিতো শাড়ি পরা, চুরি পরা এক মহিলা। আপনি আমার কি করবেন। তিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে আওয়ামী লীগ পাতানো খেলা খেলছে বলেও মন্তব্য করেন।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের চতুর্থ জাতীয় কাউন্সিলের উদ্বোধনী ভাষণে গতকাল তিনি এসব কথা বলেন। কাউন্সিলে সংহতি প্রকাশ করে বিকল্পধারার প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেন, দীর্ঘদিন পর দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের চেষ্টা চলছে। এসব করে কেন খামোখা গৃহযুদ্ধের দিকে দেশকে নিয়ে যাচ্ছেন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না, এ দাবিতে আমরা অটল। দেশের মানুষও এ দাবির সঙ্গে একমত। তাই সংঘাত এড়াতে এ পথ থেকে ফিরে আসুন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন ও গীতা থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। এতে সভাপত্বি করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি সকালে শাহবাগ থেকে এসেছি। আজ শাহবাগে যে আন্দোলন হচ্ছে আমি সে আন্দোলনকে সমর্থন জানাই। তবে আওয়ামী লীগের ইশারায় এ আন্দোলন হলে এর চার পয়সারও দাম নেই। তিনি বলেন, শাহবাগে তরুণদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত হলে এতে সমর্থন জানাব। সাজানো হলে আর কেউ না দাঁড়াক আমি রুখে দাঁড়াব।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠন করেছে। এ আদালতের বিচারক তাদের, তদন্ত কর্মকর্তা তাদের, উকিল তাদের, আদালত তাদের। সব কিছুই তাদের। তারপরও একজন (মাওলানা আজাদ) কম অপরাধ করলেন-তাকে দেয়া হলো ফাঁসি। আরেকজন (কাদের মোল্লা) বেশি অপরাধী-তাকে দেয়া হলো যাবজ্জীবন। আমি বলছি না, মানুষ বলছে সরকার এখানে আঁতাত করেছে। আঁতাতের রায় তরুণ প্রজন্ম মেনে নেবে না বলেই তারা শাহবাগে প্রতিবাদ জানাতে এসেছে। কাদের মোল্লার সঙ্গে কারা কারাগারে বৈঠক করেছে মানুষ তা জানতে চায়।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে আওয়ামী লীগের বহু বড় বড় নেতা, বড় বড় কথা বলেছে। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হলে তারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধের ময়দানে বড় নেতাদের পাওয়া যায়নি। আমরা ছোট ছিলাম বলে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আজ যারা শাহবাগে জমায়েত হয়েছে, তারা ছোট বলেই তা করতে পেরেছে। আমি তাদের সমর্থন করছি। তাই বলে সাজেদা চৌধুরীর মতো একজন প্রবীণ রাজনীতিককে পানির বোতল ছুড়ে মারতে হবে তা মেনে নেব না।
বঙ্গবীর বলেন, যারা রাজাকার আমরা তাদের বিচার চাই। যারা রাজাকারদের রক্ষাকারী আমরা তাদের বিচার চাই। যারা কাদের মোল্লার সঙ্গে কারাগারে বসে বৈঠক করেছে কারা সবচেয়ে বড় রাজাকার, আমরা তাদেরও বিচার চাই। এদের সবার বিচার হতে হবে।
ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়ার দাবিতে জামায়াত যে আন্দোলন করছে, তা গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি জামায়াত নিষিদ্ধ হোক চাই। সেটা পাকিস্তানি জামায়াত। যারা বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে জামায়াত নামে রাজনীতি করতে চান তাদের জনসম্মুখে বলতে হবে ’৭১ এর গণহত্যার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা না বলা পর্যন্ত তারা এ দেশে রাজনীতি করতে পারে না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী যদি মনে করে তারা পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলাম, তাহলে বাংলাদেশে তাদের ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই। আর যদি দলটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী হয় তাহলে তাদের ব্যাপারটি জাতির সামনে খোলাসা করতে হবে। তাদেরও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইতে হবে।
শাহবাগ থেকে একদল উগ্র বাম ইসলামী রাজনীতি বন্ধের যে দাবি তুলেছেন তার বিরুদ্ধে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যতকাল পৃথিবীতে মুসলমান থাকবে ততকাল ইসলামী রাজনীতি থাকবে। আইন করে ইসলামী আন্দোলনকে বন্ধ করা যাবে না। ওলি আউলিয়াদের এ পুণ্যভূমিতে ইসলামী তরিকা থাকবে। ইসলামী আন্দোলন বন্ধ করতে বললে একজন মুসলমান হিসেবে আমি তা মেনে নেব না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময় অযথাই জিয়াউর রহমানকে আক্রমণ করে। এতে আমার রাগ ওঠে। ’৭৫ সালে মেজর শফিউল্লাহ ছিল সেনা বাহিনীর প্রধান। অথচ তাকে আওয়ামী লীগের লোকজন গাল দেয় না।
আজকের ইনুর (তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু) মতো মানুষকে মন্ত্রী বানানো হয়েছে। এই ইনু ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী জনতার বিপ্লবের পর ট্যাঙ্কের ওপরে উঠে লাফ দিয়েছিল। রাজনীতি লুটেরাদের হাতে চলে গেছে বলে-ইনুরা মন্ত্রী হতে পেরেছে।
তিনি বলেন, দেশ আজ এক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। সময় নাই, আর সময় নাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাড়াতাড়ি ওই জায়গা থেকে নামেন। জাতীয় নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসুন। নইলে আমার ভগ্নির কি যে দুর্দশা হবে তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই জানেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, একদল আছে, যারা বলে সব ধর্মীয় দল নিষিদ্ধ করতে হবে। এটা বলার আগে একটু চিন্তা করতে হবে। এ দেশে বহু ইসলামী দল আছে যারা জামায়াতবিরোধী।
তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এ দেশে হবে না। হতে দেয়া যাবে না। আমার দল এ ব্যাপারে একাট্টা। অন্যান্য দলও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনঢ়। সরকারকে তাই এ পথ থেকে সরে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ আল নোমান। অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা জানান, জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশিদ, নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকীর স্ত্রী বেগম নাসরিন সিদ্দিকী প্রমুখ।
কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতাকর্মীরা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে জড়ো হতে থাকেন।
সোয়া বারটার দিকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। এর আগে শিল্পীরা মঞ্চে গান পরিবেশন করেন। মঞ্চে ওঠার পর অতিথিদের গামছা দিয়ে বরণ করে নেন দলের কয়েকজন কর্মী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। এ সময় সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদারসহ দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে দ্বিতীয় অধিবেশনে বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটি নির্বাচন করা হয়।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের পরিচয়পত্রে বলা হয়, ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসম্বর তত্কালীন শাসক দলের অগণতান্ত্রিক আচরণ ও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে এ দলটি গঠন করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলো।

৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

যোগ্য কে???

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪১

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)




(সকল... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতান্ত্রিকভাবে লীগকে ক্ষমতার বাহিরে রাখা যাবে আজীবন।

লিখেছেন শাহিন-৯৯, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৩



লীগ সদ্য বিতাড়িত কিন্তু তাদের সাংগঠিক কাঠামো এখনো পূর্বের মতই শক্তিশালী শুধু ছোবল দিতে পারছে না, স্থানীয় নেতারা বিএনপির নেতাদের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে ইতিমধ্যে এলাকায় প্রবেশ করছে তবে মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরিয়ে ফেললেন মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৪১


মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী লম্বা রেইসের ঘোড়া মনে হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া হতে বেডরুমে যার নিয়োগ নিয়ে অস্বস্তি আছে তিনি খুব দ্রুত শিখে গেলেন কিভাবে মানুষের মাথা ঠান্ডা করতে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×