জনপ্রিয় আন্দোলন থেকেও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে পারে : শাহবাগের বিক্ষোভ প্রসঙ্গে ড. পিয়াস করীম
শাহবাগের আন্দোলন প্রসঙ্গে বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. পিয়াস করীম বলেছেন, অনেক সময় দেখা গেছে একটা জনপ্রিয় আন্দোলন থেকেও ফ্যাসিবাদের উত্থান হতে পারে। তাই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে রাজনৈতিকভাবে এটি ব্যবহৃত না হয়। শুক্রবার মধ্যরাতে চ্যানেল আইয়ের সংবাদ পর্যালোচনাভিত্তিক অনুষ্ঠান আজকের সংবাদপত্রে তিনি এসব কথা বলেন।
বামঘেঁষা এই অধ্যাপক বলেন, আমরা যাতে ভুলে না যাই যে, আমাদের সামনে পদ্মা সেতুর মতো একটা ইস্যু আছে। আমরা যাতে ভুলে না যাই যে, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে আমাদের একটা ইস্যু আছে। আমরা যেন ভুলে না যাই যে, আমাদের জাতীয় সম্পদের ওপর আমাদের অধিকারের একটা প্রশ্ন আছে। আর এসব বিষয় যদি ধামাচাপা পড়ে যায়, তবে আমাদের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেহারা পাল্টে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই এবং শাহবাগের এ গণজাগরণ থেকেও ওই একই দাবি উঠে এসেছে। তবে একটা কথা আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, আমরা যেন আইনের শাসনের ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝেড়ে না ফেলি। পিয়াস করীম বলেন, শাহবাগের গণজাগরণে আমাদের গণতন্ত্রের চেতনা ও স্বাধীনতাবোধের একটা প্রবল ইতিবাচক বিস্ফোরণ ঘটেছে। তরুণদের নিয়ে আমাদের একটা ভাবনা ছিল যে, তারা ইন্টারনেট প্রজন্ম। তারা দেশকে নিয়ে ভাবে না, সমাজকে নিয়ে ভাবে না। আমাদের এ ধারণাকে পাল্টে দিয়ে তরুণরা প্রমাণ করেছে যে, তারা দেশকে নিয়ে ভাবে এবং স্বাধীনতাবোধের প্রতি তাদের একটা প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তাই আমি এ গণজাগরণকে সমর্থন জানাই এবং তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি। তিনি বলেন, এসব কিছুর মাঝেও আমাদের আইনের শাসনকে ধরে রাখতে হবে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের একটা কথা আছে, যে দেশ স্বাধীনতার জন্য তার গণতন্ত্রকে বিসর্জন দেয়, সে দেশ গণতন্ত্রও পায় না, স্বাধীনতাও পায় না। একইভাবে যে দেশ বিচার করতে গিয়ে আইনের শাসনকে বিসর্জন দেয়, সে বিচারও পায় না, আইনের শাসনও পায় না। সে জন্যই এটা আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলনকারী তরুণরা যেন এ কথাটা মনে রাখে। ড. পিয়াস করিম বলেন, গণজাগরণে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি হচ্ছে মূল ইস্যু। তবে এর পাশাপাশি আরেকটা গৌণ ও সুপ্ত উপাদান লুকিয়ে আছে—সেটা হচ্ছে আপসহীন ও আঁতাতহীন আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি। ড. পিয়াস করিম আরও বলেন, আন্দোলনে যারা গিয়েছে তারা কোনো রাজনৈতিক দলের লোক নয়। তারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ, যারা ন্যায় বিচার চায়, যারা ’৭১-এর অঙ্গীকারকে ধারণ করে। তারা যাতে কোনোভাবে রাজনৈতিক ব্যবহারের শিকার না হয়।