সেনাবাহিনী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন উভয় নেত্রী। একজন প্রধানমন্ত্রী। এর আগেও একবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। অন্যজন বিরোধী দলের নেতা। দেশের মানুষ ভোট দিয়ে তাকে তিন বার প্রধানমন্ত্রী করেছিল। সবারই ধারণা মাস্টারপ্ল্যান ও নীল নকশা না হলে আগামী নির্বাচনেও তিনিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। তারা দু’জনেই সেনাকুঞ্জে গিয়েছিলেন। দেখা হয়েছে, কিন্তু কথা হয়নি তাদের। বাংলাদেশের মিডিয়ায় এটা আপাতত একটা বড় খবর।
বাংলাদেশের সব মানুষেরই এটা জানা আছে। এক নেত্রী মনে করেন, তার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন, তাই তিনি সে দেশের রাজকন্যা ও রাজরানী। অন্যজনকে তিনি সাধারণ মানুষ, একজন সামন্তের বৌ-মাত্র মনে করেন। ঘুঁটে কুড়োনির সঙ্গে সামন্তের বৌয়ের তফাত এমন আর কী? তার সঙ্গে কথা বললে রাজরানীর মান বাঁচে না।
বিগত ৩০ বছরে অনেকে তাদের সামনা-সামনি বৈঠকে বসতে বলেছেন। আশির দশকে আরেকজন সামন্ত ডাকাতি করে দেশটাকে লুফে নিয়েছিল। পূর্বোক্ত সামন্তের বৌ এই ডাকাত সামন্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। দেশের মানুষ কাতারবন্দী হয়েছিল তার পেছনে। সবাই বলেছিল, রাজার মেয়েও যদি আন্দোলনে যোগ দেন ডাকাতের দেশছাড়া হতে তাহলে আর বেশি দেরি হবে না। কিন্তু সেই যে বলছিলাম রাজকন্যার দেমাগের কথা! এক সামন্তের বৌয়ের সঙ্গে সামনা-সামনি বৈঠকের পরিবর্তে অন্য সামন্তের সঙ্গে গলাগলির পথই তিনি বেছে নিয়েছিলেন।
শেষ পর্যন্ত জয় হয়েছিল লড়াকু সামন্তের বৌয়েরই। দেশের মানুষ তার হুশিয়ারি শুনেছিল। নিজেদের অধিকার আর দেশের স্বাধীনতা রক্ষার তাগিদে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ডাকাত তখন ‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’ বলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিল। আর রাজার মেয়ে তখন করছিলেন কী? নাক সিঁটকিয়ে তিনি দেশের মানুষের কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। ডাকাতের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন।
দেশের মানুষ যে সামন্তের বৌয়ের দয়া-দাক্ষিণ্যের সমাদর করেছিল, সেটা পরিষ্কার। তা না হলে তারা ভোট দিয়ে তাকে তিন বার প্রধানমন্ত্রী করত না। তবে বাংলাদেশের মানুষের দয়ার শরীর। রাজকন্যাকেও তারা তখন দেশত্যাগী করেনি। তারা ভেবেছিল, আহা, বাপ-মরা মেয়েটা! সত্যি যে সে দেমাগি। কিন্তু বয়েসকালে দেমাগটা ঠাণ্ডা হয়ে আসবে, নিজের দেশ আর দেশের মানুষকে ভালোবাসতে শিখবে। দুই দুই দফায় ক্ষমা দেখিয়ে তারা বুঝে গেছে যে তারা ঠকেছে। এই রাজকন্যার শুধুই গরব সার।
আরও তারা বুঝে গেছে, রাজার মেয়ে হলে কী হবে, স্বভাবটা আসলে মেছুনীর মতো। সুযোগ পেলে কলাটা-মুলাটা শাড়ির আঁচলের নিচে লুকিয়ে ফেলাই তার স্বভাব। নিজের বিরুদ্ধে আগেকার দুর্নীতির মামলাগুলো নিজেই তিনি তুলে নিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বব্যাংক এখন হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে হাটের একেবারে মধ্যিখানে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এখন বিশ্বচোরের খেতাব পেয়েছে। দেশের মানুষের এখন আর সায় কিংবা সমর্থন নেই এই রাজকন্যের জন্য। এই রাজকন্যেকে বিদায় করাই তারা এখন ভালো মনে করছে। রাজকন্যের তখন মনে পড়ে যায়, একসময় এক সামন্ত ডাকাতকে তিনি সমর্থন দিয়েছিলেন। এখন তিনি সে ঋণের উসুল চান। সে সামন্তের সঙ্গে জোট বেঁধে তিনি সিংহাসন দখল করে থাকতে চান। ক্রুদ্ধ প্রজারা যাতে প্রাসাদে হামলা করতে না পারে সেজন্য প্রাসাদের ফটক তিনি আগল দিয়ে বন্ধ রাখতে চান। পটভূমিটা সামন্ত-যুগীয় হলেও বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে হুবহু মিলে যাচ্ছে নাকি?
রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ইতিহাসের দুশমন
সাড়ে চারশ’ বছর আগে প্রথম চার্লস নামে ইংল্যান্ডে এক রাজা ছিলেন। শেখ হাসিনার মতো তিনিও মনে করতেন, পিতৃপুরুষের সিংহাসনের ওপর তার জন্মগত অধিকার। হাসিনার মতো তিনিও সংবিধানের ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে সিংহাসন আঁকড়ে থাকতে চেয়েছিলেন, এমনকি সেনা-সামন্ত নিয়ে পার্লামেন্ট দখল করতেও গিয়েছিলেন, কিন্তু চার্লসের শেষ রক্ষা হয়নি। পার্লামেন্টের হুকুমে তার মাথা কাটা গিয়েছিল। শেখ হাসিনা সে ইতিহাস পড়েছেন কিনা কে জানে?
বাংলাদেশের মানুষ কাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখতে চায় ১৯ নভেম্বর সোমবার খালেদা জিয়ার বরিশালের জনসভায় আরও একবার তার প্রমাণ পাওয়া গেল। দেশের যেখানেই তিনি যাচ্ছেন, জনতা তাকে দেখতে, তার মুখে দুটো কথা শুনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে। আর রাজকন্যা? গায়ে গণতন্ত্রের নামাবলি এবং গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরে থাকলেও তিনি যে গণতন্ত্রের পরিবর্তে বাকশালী স্বৈরতন্ত্রী পন্থায় গদি আঁকড়ে থাকতে চান, দেশের মানুষ এখন সেটা বুঝে গেছে।
বাংলাদেশ এখন একটা গভীর সঙ্কটে আছে। শেখ হাসিনার পেশিশক্তি গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহী অবস্থান নিয়েছে। বিগত প্রায় চার বছর বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চলেছে। শাসক দলের ক্যাডাররাও তাতে শরিক হয়েছে। তারা হাজারে হাজারে বিএনপি ও অন্য গণতন্ত্রী দলগুলোর নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করেছে, গুম, খুন এবং জখমও করেছে অনেককে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আর সিলেট বিএনপির নেতা ইলিয়াস আলীকে তারা এখনও ছেড়ে দিয়েছে কি? শুনেছি, সিলেটের মানুষ এখন শপথ নিয়েছে, সবাই তারা ইলিয়াস আলী হয়ে যাবে। জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা এখন আর মুখ বুজে মার খেতে রাজি নয়। তারা ঠিক করেছে, মার খেতে হয় খাবে, প্রাণ দিতে হয় দেবে, কিন্তু পাল্টা মারও তারা দেবে, মরতে হয় দু-চারজন শত্রুকে সঙ্গে নিয়েই তারা মরবে। তাত্পর্যপূর্ণ এই যে, রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস যেখানে হচ্ছে, সাধারণ মানুষ, এমনকি পথচারীরাও সেখানে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসছে। এখন তারা জামায়াতের কর্মীদের সঙ্গেও যোগ দিয়ে পুলিশ আর শাসক দলের গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। পরিস্থিতি এখন সত্যি খুবই বিস্ফোরক। যে কোনো মুহূর্তে একটা অঘটন ঘটে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
ইস্যু খুবই সহজ
যে কোনো সুস্থ বুদ্ধির মানুষই বলবে, দুই পক্ষের নেত্রীরা মুখোমুখি বসে আলোচনার মাধ্যমে অতি সহজেই এ সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারেন। এক্ষেত্রে ইস্যুও মোটেই জটিল নয়। উভয় পক্ষই মুখে বলছে, তারা গণতন্ত্র চায়। জনসাধারণের গণতান্ত্রিক অভিমত কীভাবে প্রকাশ পাবে, সেটাই হচ্ছে ইস্যু। কিন্তু ওই যে বলছিলাম! রাজার মেয়ের শুধুই গরব সার! তার কথাই ওপরে থাকতে হবে। প্রাসাদের ফটক তিনি কিছুতেই খুলতে রাজি নন।
বিগত শতাব্দীর আশির দশক থেকেই বহু চিন্তাবিদ, বিশ্লেষক, কলামিস্ট শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে সংলাপের পরামর্শ দিয়ে আসছেন। খালেদা জিয়া কখনও অসম্মত হননি। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনা রাজি হলে তিনি সংলাপে বসতে রাজি আছেন। কিন্তু হাসিনা হিমালয়ের মতো স্থবির হয়ে তার অবস্থানে অনড় থাকছেন। সেনাপতির বৌয়ের সঙ্গে তিনি সংলাপে বসবেন না। বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীরা এখনও হাল ছাড়েননি। তারা এখনও সংলাপের পরামর্শে অটল আছেন। ড. কামাল হোসেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনবেত্তা। শেখ মুজিবুর রহমানের আইন উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সংবিধানের খসড়া প্রণেতা এবং তারপর মুজিব সরকারের বিদেশমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিরা যখন শেখ মুজিবকে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যায় তখন ড. কামাল হোসেন তার সঙ্গে গিয়েছিলেন। সাংগঠনিক দিক থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
বাংলা প্রবাদে বলে, বাপে যারে ভরম (সম্ভ্রম) করে পুতে (সন্তানে) তারে নরোম (অপদস্থ) করে। এ প্রবাদটির সত্যতা শেখ হাসিনা বহুবার প্রমাণ করেছেন। নানাভাবে অপদস্থ করে ড. কামাল হোসেনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তা সত্ত্বে সম্প্রতি তিনি উভয় নেত্রীকে দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের লক্ষ্যে সংলাপে বসার পরামর্শ দিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য একজন নেতৃস্থানীয় এবং শ্রদ্ধেয় আইনবেত্তা ব্যারিস্টার রফিকুল হকও সম্প্রতি সংলাপের কথা বলেছিলেন। হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান রফিকুল হককে শ্রদ্ধা করতেন। কিন্তু তাদের বিজ্ঞজনোচিত পরামর্শ শোনার পরিবর্তে হাসিনা তাদের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, রফিকুল হকের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন।
গুরু-লঘু এবং হিতাহিত জ্ঞানও বিদায় নিয়েছে
যে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী শেখ হাসিনা চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন, সে প্ল্যানের দুই কারিগর ছিল দিল্লি আর ওয়াশিংটন। ছোট তরফ ওয়াশিংটন পরে পস্তেছিল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সন্তান নোবেল শান্তি পুরস্কারবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অপমান না করা আর তার বিশ্ববিদিত গ্রমীণ ব্যাংকটি ধ্বংস না করার অনুরোধ ওয়াশিংটন নানাভাবে করেছে। সে অনুরোধ জানাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন কয়েকবার টেলিফোন করেছিলেন শেখ হাসিনাকে, দু’বার তো সশরীরে ঢাকা পর্যন্ত এসেছিলেন তিনি। কিন্তু হেঁদিপেঁচি বিদেশিদের কথায় রাজার মেয়ের দেমাগ কি ভাঙে?
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ওয়াশিংটনের জন্য আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এখন। কিন্তু রক্তারক্তি আর গৃহযুদ্ধের আগুনে ভস্মীভূত হলে বাংলাদেশ তাদেরও বিশেষ কোনো কাজে লাগবে না। জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে সরকার ও শাসক দলের সন্ত্রাস যে কোনো সময় গৃহযুদ্ধে পরিণত হতে পারে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা সেটা বোঝেন বলেই একটা মূল্যবান সত্ পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, রক্তারক্তি আর খুনাখুনি না করে সংলাপে বসলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ব্যস! আর যায় কোথায়! রাজবাড়ির পাইক-পেয়াদা আর হুকুম-বরদারদের মহলে সঙ্গে সঙ্গেই কিচিরমিচির শুরু হয়ে যায়। মতিয়া চৌধুরী বুঝতে পারছেন না যে, যতই তিনি মুখ খুলছেন, ততই তার অন্তঃসারশূন্যতা জানাজানি হয়ে যাচ্ছে। সংসদে অনুপস্থিত একটি বন্ধু রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে নিয়ে সংসদে সেদিন যেসব উক্তি করা হয়েছে, সেটা বাকি বিশ্বের সামনে বাংলাদেশের মুখে গোবর লেপে দেয়ারই শামিল।
বাংলাদেশের মানুষ এখন করবে কী? ভালো কথা যাদের ভালো লাগে না তাদের বেলায় যা করতে হয় সেটাই করতে হবে বাংলাদেশের মানুষকে। রাজপ্রাসাদের ফটক খুলতে যদি রাজকন্যা রাজি না হন তাহলে ফটক ভেঙে ফেলা ছাড়া উপায় কী? চোরা যেমন ধর্মের কাহিনী শুনতে চায় না, গণতন্ত্রবিরোধী বর্তমান সরকারও কোনো সত্ পরামর্শ শুনতে নারাজ।
তবু সরকার স্বীকার করছে, জামায়াতকে নিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছে তারা। খোদ প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন সে কথা। কী সমাধানের কথা সরকার ভাবছে, তারও কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে সরকারি দলের কথাবার্তায়। রেলওয়েতে নিয়োগ বাণিজ্য আর দুর্নীতির দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আবার পেছনের দরোজা দিয়ে তাকে স্মাগল করে মন্ত্রিসভায় ঢোকানো হয়। কিছুদিন তার গলা নিচু ছিল। এখন আবার বড়গলায় কথা বলতে শুরু করেছেন তিনি। সুরঞ্জিত বলেছেন, জামায়াতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। কী সে আইনি ব্যবস্থা? ইঙ্গিত দিয়েছেন মাহাবুবুল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, সবাই চাইলে সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার কথা বিবেচনা করবে।
সুখে থাকতে ভূতে কিলায়
সুখে থাকতে এদের ভূতে কিলায়। তারা সরকারে আছে। তাদের হাতে একদলীয় সংসদ আছে। যা খুশি তারা তা-ই করে। সংবিধান নিয়ে কী সব কাণ্ডকারখানা আর কেলেঙ্কারি তারা করেছে ভেবেই দেখুন। ইচ্ছা করলে জামায়াতে ইসলামীকে বেআইনি করতে তাদের তিন মিনিটও লাগবে না। কিন্তু পরে কী হবে ভেবে দেখার মতো বিজ্ঞতা কিংবা দূরদৃষ্টি সুরঞ্জিত-হানিফদের আছে কি? এখন তারা পুলিশ আর গুণ্ডা দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে পেটাচ্ছে, ধরে ধরে জেলে পুরছে। কিন্তু নিষিদ্ধ হলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। সামনা-সামনি সংঘাতে আসবে না, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ শুরু করবে। হুট করে কখন কোথা থেকে এসে যে পিঠে ছুরি মারবে কিংবা বোমার ঘায়ে উড়িয়ে দিয়ে হাওয়া হয়ে যাবে টেরই পাবেন না সুরঞ্জিত-হানিফরা। এমনকি কার সঙ্গে সংলাপ করতে হবে তাও খুঁজে পাবেন না তারা।
ষাট বছরের বেশি দিন হলো সাংবাদিকতা করছি। লক্ষ্য করেছি এশিয়া, আফ্রিকা আর ল্যাটিন আমেরিকার বহু দেশে জনসমর্থনহীন সরকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছে। সেসব দল গা-ঢাকা দিয়ে সন্ত্রাসী হয়ে গেছে। যুগ যুগ ধরে অস্ত্রবলে তাদের দলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে বুদ্ধিহীন শাসকরা। ড্যান মজীনা সেসব জানেন। হয়তো দেখেওছেন কোনো কোনো ক্ষেত্রে। সেজন্যই জামায়াতের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব তিনি দিয়েছেন সরকারকে। ইসলাম ধর্মের নায়করা বলে গেছেন, ‘নির্বোধ বন্ধুর চেয়ে বিজ্ঞ শত্রুও শ্রেয়তর।’ মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা অবশ্যই সেসব হিত কথায় কখনো কান দেন না। (লন্ডন, ২৫.১১.১২)
লেখক: সিরাজুর রহমান
সূত্র: আমাদের সময়, ২৯.১১.২০১২