‘মন্ত্রণালয় চালাচ্ছেন কমিউনিস্টরা, প্রশাসন চালাচ্ছে জাসদ’
দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক নইম নিজাম বলেছেন, বাংলাদেশের মিডিয়া এখন অনেকটাই স্বাধীন। তবে মালিকের কারণে কোনো কোনো মিডিয়া স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারছে না।
ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সাংবাদিক নইম নিজাম। ১৩ জুলাই নিউইয়র্ক ত্যাগের প্রাক্কালে এনার সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত এবং আওয়ামী লীগের ভেতরের কিছু অজানা তথ্য প্রকাশ করেন।
প্রশ্নঃ মিডিয়ার ব্যাপারে সরকারের তথ্য দফতরের ভূমিকা কী?
উত্তরঃ এক কথায় বলা যায় ‘উদাস সরকার’। তথ্যমন্ত্রী ও প্রেস সেক্রেটারি নিজেদের কাজ নিয়ে এত ব্যস্ত যে এ দিকে তাকানোর বা সময় দেয়ার মতো কোনো সময় তারা পাচ্ছেন না। এর ফলে অনেক সময় অনেক কিছু ঘটছে, সরকারকে তা বিব্রত করছে।
প্রশ্নঃ আপনাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনে সরকার, মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনামূলক সংবাদের জন্য কোনো ধরনের হুমকি-ধমকির সম্মুখীন হয়েছেন কি?
উত্তরঃ না, তেমন পরিস্থিতির উদ্ভব এখনো হয়নি। আমরা সাহসের সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছি। সব কিছু বস্তুনিষ্ঠতার সাথে প্রকাশ করছি।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?
উত্তরঃ তারা যে যার মতো যা খুশি তা করছে। জনগণের কথা ভাবছে না। ক্ষমতাসীন দলে এমন লোকজনকে মন্ত্রী করা হয়েছে যারা এক সময় ওসি-ডিসিকে স্যার ডাকতেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় ১৩ জন রয়েছেন কমিউনিস্ট পার্টির। জিয়ার খাল কাটায় ছিলেন এমনও কেউ কেউও মন্ত্রিসভায় রয়েছেন।
প্রশ্নঃ তাহলে দেশ চালাচ্ছে কারা?
উত্তরঃ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় চালাচ্ছে কমিউনিস্টরা এবং প্রশাসন চালাচ্ছে জাসদ। সংস্থাপন সচিব, এলজিআরডি সচিব, বাণিজ্য সচিব থেকে শুরু করে বেশ ক’জন সচিব জাসদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
প্রশ্নঃ এভাবেই রাজনীতি চলছে?
উত্তরঃ বলতে দ্বিধা নেই যে, কমিউনিস্ট ও জাসদ দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চলতে পারে না। আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের সাথে যারা পরিচিত এবং দীর্ঘ পথপরিক্রমায় যাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা রয়েছে, তারা সরকারে নেই। দলবিচ্ছিন্ন নেতাদের সরকারে অধিষ্ঠিত করায় ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ, ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নেতাকর্মীদের, রাজপথের সাহসীদের মূল্যায়ন না করলে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ ঘটতে পারে। এক-এগারোর অজুহাতে অনেককে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। অনেকে ষড়যন্ত্রের অসহায় শিকার।
প্র্রশ্নঃ তাহলে সরকার চালাচ্ছে কে?
উত্তরঃ খুবই স্পষ্ট করে বলা যায়, আওয়ামী লীগ এখন সরকার চালাচ্ছে না, সরকারই আওয়ামী লীগ চালাচ্ছে।
প্র্রশ্নঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সম্পর্কে নানা অভিযোগ উঠেছে দলীয় ফোরামে।
উত্তরঃ তিনি নিষ্ত্র্নিয় বলা চলে। দলের নেতাকর্মীরা দূরের কথা, এমপিরাও তাকে খঁুজে পান না। সন্ধ্যার পর উনি নিখোঁজ হয়ে যান বলেও বাজারে গুঞ্জন রয়েছে।
প্রশ্নঃ কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি। সেখানে কি ত্যাগীরা স্থান পেয়েছেন?
উত্তরঃ না, কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে অখ্যাত-অজ্ঞাতদের। চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী, সিলেটের মেয়র বদরুদ্দিন কামরান, খুলনার তালুকদার আবদুল খালেক, বরিশালের হীরন কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠিকমতো ঠাঁই পাননি। অখ্যাত ব্যক্তিদের ধরে এনে প্রেসিডিয়াম মেম্বার করা হয়েছে। এমনকি সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত করা হয়েছে কয়েকজনকে, যারা সে পদের যোগ্য নন। এদের অনেকেরই জেলাপর্যায়ের প্রবীণ নেতার সামনে দাঁড়ানোর মতো মানসিক বল নেই। তোফায়েল আহমেদের বিকল্প তো ইউসুফ হোসেন হুমায়ন হতে পারেন না। খায়রুজ্জামান লিটনের বিকল্প স্বপনের মতো সাংগঠনিক সম্পাদকেরা হতে পারেন না। স্বাধীনতার আগে ও পরে ছাত্রলীগের সব সভাপতি ও সেক্রেটারি এখন রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তৃতীয় শ্রেণীর মন্ত্রিসভা, চতুর্থ শ্রেণীর নেতা দিয়ে আওয়ামী লীগ চলতে পারে না।
প্রশ্নঃ দেশের বর্তমান অবস্থা দেশকে কোন দিকে নিচ্ছে?
উত্তরঃ দুই দলের মধ্যে যদি সমঝোতা না হয় তাহলে বাংলাদেশ এক কঠিন অবস্থার দিকে চলে যেতে পারে। এর খেসারত কম-বেশি সবাইকে দিতে হবে।
প্রশ্নঃ তাহলে বাংলাদেশের কি কোনো সম্ভাবনা নেই?
উত্তরঃ মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার যে সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে, বর্তমানের বাড়াবাড়ির কারণে তা থেমে যেতে পারে। এহেন আশঙ্কার অবসানে চাটুকার কমিউনিস্ট মন্ত্রী ও জাসদের আমলাদের কবল থেকে প্রশাসনকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় আগামী দিনে দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি রক্ষা করা যাবে না।
প্রশ্নঃ আবারো কেউ কেউ এক-এগারোর মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন।
উত্তরঃ দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে গণতন্ত্রের বিকল্প নেই। তাই কারোই এমন কাজ করা উচিত নয় যাতে অশুভ শক্তির আবির্ভাব ঘটতে পারে। এটি স্মরণ রাখা জরুরি যে, এবার তৃতীয় কেউ এলে কেউই রেহাই পাবেন না।
সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ১৫.০৭.২০১১