প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে সম্পাদকদের প্রশ্নের জবাবে মনমোহন সিং
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং শীর্ষস্থানীয় সম্পাদকদের উদ্দেশে দেশটির প্রতিরক্ষা সামর্থø বৃদ্ধি করা প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছি, সীমান্তে রাস্তা বানাচ্ছি, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোকে বিদুøতায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রতিরক্ষাব্যয়কে জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি আমরা। ড. মনমোহন সিং ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী। দেশের ভেতরে-বাইরে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশের সরকার পরিচালনা করছেন তিনি। দেশটির মূলনীতি ঠিক করা নিয়ে কংগ্রেসের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর সাথে তাকে অনেকটা নৈমিত্তিকভাবেই আলোচনা-পরামর্শ করতে হয়। তবুও প্রাজ্ঞতা ও দক্ষতার ক্ষেত্রে ড. মনমোহনকে ভারতের আলোকিত প্রধানমন্ত্রীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতি সম্প্রতি তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন। এ সময় ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে সম্পাদকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। এতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। আমরা নয়া দিগন্ত-এর পাঠকদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্পাদকদের যেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। এর অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী
প্রশ্নঃ আপনি কি আমাদের ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ড. মনমোহন সিংঃ খোলামেলা বলতে কি প্রতিবেশী দেশগুলো আমাকে বেশ উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আপনি শ্রীলঙ্কার অবস্থাই ধরুন। এলটিটিইর পরাজয় ও ভেঙে পড়া এমন একটি বিষয় যা আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু তামিল সমস্যা তো শেষ হয়ে যায়নি। তামিলরা মনে করে শ্রীলঙ্কায় তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। তামিল জনগোষ্ঠীর যুক্তিসঙ্গত দাবিদাওয়া ও অভিযোগ রয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি আমাদের বক্তব্য হলো, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের নতুন পদ্ধতির দিকে তাদের এগোতে হবে যাতে তামিল নাগরিকেরা অনুভব করে যে, তারাও শ্রীলঙ্কার অন্যান্য নাগরিকের মতো সমান মর্যাদাসম্পন্ন। আর তারা যেন সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে তাদের জীবনযাপনে সক্ষম হয়। শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে হোথিড, সিংহলি, চভিনিজম এসব হলো বাস্তবতা। তবে আমাদের এই জটিল টানাপড়েন ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। কেননা শ্রীলঙ্কার নিজস্ব কিছু দিকও রয়েছে। তামিলনাড়ুর সরকার ও সংসদ শ্রীলঙ্কার তামিলদের ব্যাপারে যা হচ্ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো তামিলনাড়ুর সরকারকে আমাদের পক্ষে রাখতে হবে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সাথে আমার ভালো সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। শুরুতেই আমি তার সামনে প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলাম। তিনি আমাকে মধ্যপন্থার কথাই বলেছেন। এ ব্যাপারে প্রস্তাব যেটিই হোক না কেন, তা সংসদে পাস হতে হবে। দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টির যে জটিল ও বাস্তবতাজনিত কিছু বিষয় রয়েছে, সে সম্পর্কে জয়ললিতাকে পুরোপুরি সচেতন মনে হয়েছে।
আরেক প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে তৎপরতা চালানো ভারতীয় অন্তর্ঘাতী গ্রুপগুলোকে দমনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আমাদের সাহায্য করছে। আর এই কারণে আমরা বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে এতটা ইতিবাচক ও উদার। আমরা ধনী কোনো দেশ নই। এর পরও আমরা শেখ হাসিনা যখন এখানে এসেছিলেন সে সময় ১০০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব দিয়েছি। আমরা আরো একপক্ষীয় রেয়াত দেশটিকে দেয়া যায় কি না সে বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। আমরা তিস্তার পানি বণ্টন প্রশ্নে বাস্তব ও গ্রহণীয় একটি সমাধানের উপায় খঁুজে দেখছি। আমি নিজেই বাংলাদেশ সফর করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ সপ্তাহের শেষ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে যাচ্ছেন। সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তবে আমাদের এটিও স্মরণে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। আর তারা খুবই ভারতবিদ্বেষী। অনেক সময় তারা আইএসআই’র হয়ে কাজ করেছে। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট যেকোনো মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে। আমরা জানি না এসব সন্ত্রাসী আসলেই কেমন। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর লোকদের যতটুকু পারা যায় আমাদের থামাতেই হবে। বুঝতেই পারছেন আমরা অনিশ্চিত প্রতিবেশীদের নিয়ে সময় পার করছি। খুবই অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে আমরা রয়েছি। আমাদের মাথা উঁচু রেখে এসব পার হতে হবে।
প্রশ্নঃ জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি এখন কেমন?
মনমোহন সিংঃ সেখানকার অবস্থার ওপর আমরা কড়া নজর রেখেছি। আমি আশা করি, পাকিস্তান কাশ্মিরকে তার মতো থাকতে দেবে। কারণ পাকিস্তানের নিজস্ব অনেক সমস্যাও রয়েছে। সেখানে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছে। আমরা আঙুল কিছুটা নামিয়ে রেখেছি।
প্রশ্নঃ পাকিস্তানের পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন? আপনি পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কি কোনো চিন্তা করছেন?
মনমোহন সিংঃ পাকিস্তানের ব্যাপারে আমরা খুব বড় খেলোয়াড় নই। তবে আমাদের ভূমিকা যা-ই থাক না কেন, একই ভূখণ্ডের দেশ হিসেবে আমাদের কিছু অঙ্গীকার ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে বেশি কিছু করেনি। আমি এখনো মনে করি পাকিস্তানের আরো কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। এ কাজে তাদের ব্যস্ত রাখার প্রয়োজন রয়েছে আমাদের।
প্রশ্নঃ আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদে ভারতীয় কোম্পানিগুলো প্রবেশের সুযোগ লাভের কোনো সম্ভাবনা কি দেখছেন?
মনমোহন সিংঃ পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ট্রানজিট পাকিস্তান এখনো এ ব্যাপারে প্রস্তুত নয়। ওয়াগা পর্যন্ত আফগান ট্রাক আসতে পারে। আফগানিস্তানের এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহও রয়েছে। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ হলো আমাদের যানবাহনের নিরাপত্তা দেয়ার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা পাকিস্তানের রয়েছে কি না। মাঠের বাস্তব অবস্থা মোটেই ভালো নয়।
প্রশ্নঃ ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের সৈন্য প্রত্যাহার প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
মনমোহন সিংঃ এটি আমাদের স্বার্থকে বিঘ্নিত করবে। এটি আমাদের আঘাত করতে পারে। এখন কেউ বলতে পারেন না আফগানিস্তানে কী ঘটতে যাচ্ছে। গতকাল আমি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। আফগানিস্তানের যুদ্ধকে সেখানে জনগণ আর ব্যাপকভাবে সমর্থন করছে না। এটিই কিন্তু বাস্তবতা। আমরা যদি চার বছর পর পর নির্বাচন করতে পারি তাহলে নির্বাচিত রাজনীতিবিদেরা রাষ্ট্রনীতিবিদ (ঝয়থয়পঢ়শথষ) হতে পারবেন।
প্রশ্নঃ আফগানিস্তানে ভালো-মন্দ দু্ই ধরনের তালেবান আছে, এমন কথাও আসছে এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?
মনমোহন সিংঃ আমি আফগান সংসদে বলেছি যে সমঝোতা আলোচনার নেতৃত্ব আফগান সরকারের হাতে থাকা উচিত। আমার ধারণা কারজাই ও অন্যান্য রাজনীতিবিদ এর ওপর কাজ করছেন। আপনি ভালো খারাপ তালেবান এভাবে বিভাজন করতে হয়তো পারবেন না। তবে হাক্কানি গ্রুপ অনেক বেশি মাত্রায় কট্টর। পাকিস্তানের সাথে তাদের যোগসূত্র কেমন তা আমি বলতে পারব না তবে আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।
প্রশ্নঃ চীনের সামর্থেøর বিপরীতে আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ঠিক কোন পর্যায়ের?
মনমোহন সিংঃ আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা আমাদের নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সার্বিক সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের দিকে নজর দিয়েছি। বহু বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো আমরা দু’টি নতুন ডিভিশন সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছি। আমাদের সামর্থেøর মধ্যে থেকেই সীমান্ত এলাকার বিমানঘাঁটিগুলোকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা সীমান্ত সড়কগুলোকে উন্নত ও সহজ যোগাযোগের উপযুক্ত করার চেষ্টা করছি। একই সাথে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর গ্রামে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আমরা বিদুøৎ পৌঁছানের চেষ্টা করছি। এসব প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
প্রশ্নঃ কিন্তু জিডিপির অনুপাতে প্রতিরক্ষাব্যয় তো বছর বছর কমছে।
মনমোহন সিংঃ এটি হয়তো সত্যি। তবে সত্যি বলতে কি আমরা প্রতিরক্ষাব্যয় জিডিপির অনুপাতে কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিইনি। জাতীয়ভাবে আমাদের জিডিপির ৩ শতাংশের সমান প্রতিরক্ষা ব্যয় করতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর যদি সে পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ব্যয়কে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র তা নির্বাহ করতে পারবে।
প্রশ্নঃ তবে কি আমাদের চীনের সমপর্যায়ে যেতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময়ের প্রয়োজন পড়ে যাবে?
মনমোহন সিংঃ চীনারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। তারা ব্লু ওয়াটার নেভি পর্যন্ত বানিয়ে ফেলছে। এয়ারক্রাফট কেরিয়ারও তারা তৈরি করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং শীর্ষস্থানীয় সম্পাদকদের উদ্দেশে দেশটির প্রতিরক্ষা সামর্থø বৃদ্ধি করা প্রসঙ্গে বলেছেন, আমরা সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন করছি, সীমান্তে রাস্তা বানাচ্ছি, সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোকে বিদুøতায়নের পরিকল্পনা নিয়েছি। প্রতিরক্ষাব্যয়কে জিডিপির ৩ শতাংশ পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারি আমরা। ড. মনমোহন সিং ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী। দেশের ভেতরে-বাইরে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার এই দেশের সরকার পরিচালনা করছেন তিনি। দেশটির মূলনীতি ঠিক করা নিয়ে কংগ্রেসের চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর সাথে তাকে অনেকটা নৈমিত্তিকভাবেই আলোচনা-পরামর্শ করতে হয়। তবুও প্রাজ্ঞতা ও দক্ষতার ক্ষেত্রে ড. মনমোহনকে ভারতের আলোকিত প্রধানমন্ত্রীদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অতি সম্প্রতি তিনি নয়াদিল্লিতে ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ও সংবাদ সংস্থার সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময়ে মিলিত হন। এ সময় ভারতের অভ্যন্তরীণ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে সম্পাদকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তিনি। এতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পরিস্থিতি। আমরা নয়া দিগন্ত-এর পাঠকদের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলো নিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সম্পাদকদের যেসব প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি। এর অনুবাদ করেছেন মাসুমুর রহমান খলিলী
প্রশ্নঃ আপনি কি আমাদের ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলবেন?
ড. মনমোহন সিংঃ খোলামেলা বলতে কি প্রতিবেশী দেশগুলো আমাকে বেশ উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে। আপনি শ্রীলঙ্কার অবস্থাই ধরুন। এলটিটিইর পরাজয় ও ভেঙে পড়া এমন একটি বিষয় যা আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু তামিল সমস্যা তো শেষ হয়ে যায়নি। তামিলরা মনে করে শ্রীলঙ্কায় তারা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হয়েছে। তামিল জনগোষ্ঠীর যুক্তিসঙ্গত দাবিদাওয়া ও অভিযোগ রয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকারের প্রতি আমাদের বক্তব্য হলো, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের নতুন পদ্ধতির দিকে তাদের এগোতে হবে যাতে তামিল নাগরিকেরা অনুভব করে যে, তারাও শ্রীলঙ্কার অন্যান্য নাগরিকের মতো সমান মর্যাদাসম্পন্ন। আর তারা যেন সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে তাদের জীবনযাপনে সক্ষম হয়। শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে হোথিড, সিংহলি, চভিনিজম এসব হলো বাস্তবতা। তবে আমাদের এই জটিল টানাপড়েন ও বাস্তবতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। কেননা শ্রীলঙ্কার নিজস্ব কিছু দিকও রয়েছে। তামিলনাড়ুর সরকার ও সংসদ শ্রীলঙ্কার তামিলদের ব্যাপারে যা হচ্ছে তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো তামিলনাড়ুর সরকারকে আমাদের পক্ষে রাখতে হবে। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার সাথে আমার ভালো সহযোগিতার সম্পর্ক রয়েছে। শুরুতেই আমি তার সামনে প্রশ্নটি উত্থাপন করেছিলাম। তিনি আমাকে মধ্যপন্থার কথাই বলেছেন। এ ব্যাপারে প্রস্তাব যেটিই হোক না কেন, তা সংসদে পাস হতে হবে। দুই দেশের সম্পর্কের বিষয়টির যে জটিল ও বাস্তবতাজনিত কিছু বিষয় রয়েছে, সে সম্পর্কে জয়ললিতাকে পুরোপুরি সচেতন মনে হয়েছে।
আরেক প্রতিবেশী বাংলাদেশের সাথে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে তৎপরতা চালানো ভারতীয় অন্তর্ঘাতী গ্রুপগুলোকে দমনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার আমাদের সাহায্য করছে। আর এই কারণে আমরা বাংলাদেশের বিষয়টি নিয়ে এতটা ইতিবাচক ও উদার। আমরা ধনী কোনো দেশ নই। এর পরও আমরা শেখ হাসিনা যখন এখানে এসেছিলেন সে সময় ১০০ কোটি ডলারের ঋণপ্রস্তাব দিয়েছি। আমরা আরো একপক্ষীয় রেয়াত দেশটিকে দেয়া যায় কি না সে বিষয়টি নিয়ে ভাবছি। আমরা তিস্তার পানি বণ্টন প্রশ্নে বাস্তব ও গ্রহণীয় একটি সমাধানের উপায় খঁুজে দেখছি। আমি নিজেই বাংলাদেশ সফর করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এ সপ্তাহের শেষ দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে যাচ্ছেন। সুতরাং বলা যায়, বাংলাদেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো। তবে আমাদের এটিও স্মরণে রাখতে হবে যে, বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক। আর তারা খুবই ভারতবিদ্বেষী। অনেক সময় তারা আইএসআই’র হয়ে কাজ করেছে। সুতরাং বাংলাদেশের রাজনৈতিক পট যেকোনো মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে। আমরা জানি না এসব সন্ত্রাসী আসলেই কেমন। বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর লোকদের যতটুকু পারা যায় আমাদের থামাতেই হবে। বুঝতেই পারছেন আমরা অনিশ্চিত প্রতিবেশীদের নিয়ে সময় পার করছি। খুবই অনিশ্চিত আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশে আমরা রয়েছি। আমাদের মাথা উঁচু রেখে এসব পার হতে হবে।
প্রশ্নঃ জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি এখন কেমন?
মনমোহন সিংঃ সেখানকার অবস্থার ওপর আমরা কড়া নজর রেখেছি। আমি আশা করি, পাকিস্তান কাশ্মিরকে তার মতো থাকতে দেবে। কারণ পাকিস্তানের নিজস্ব অনেক সমস্যাও রয়েছে। সেখানে পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছে। আমরা আঙুল কিছুটা নামিয়ে রেখেছি।
প্রশ্নঃ পাকিস্তানের পরিস্থিতি কিভাবে দেখছেন? আপনি পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কি কোনো চিন্তা করছেন?
মনমোহন সিংঃ পাকিস্তানের ব্যাপারে আমরা খুব বড় খেলোয়াড় নই। তবে আমাদের ভূমিকা যা-ই থাক না কেন, একই ভূখণ্ডের দেশ হিসেবে আমাদের কিছু অঙ্গীকার ও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা সন্ত্রাসবাদের ব্যাপারে বেশি কিছু করেনি। আমি এখনো মনে করি পাকিস্তানের আরো কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে। এ কাজে তাদের ব্যস্ত রাখার প্রয়োজন রয়েছে আমাদের।
প্রশ্নঃ আফগানিস্তানের প্রাকৃতিক সম্পদে ভারতীয় কোম্পানিগুলো প্রবেশের সুযোগ লাভের কোনো সম্ভাবনা কি দেখছেন?
মনমোহন সিংঃ পাকিস্তানের ওপর দিয়ে ট্রানজিট পাকিস্তান এখনো এ ব্যাপারে প্রস্তুত নয়। ওয়াগা পর্যন্ত আফগান ট্রাক আসতে পারে। আফগানিস্তানের এ ব্যাপারে যথেষ্ট আগ্রহও রয়েছে। কিন্তু আমাদের উদ্বেগ হলো আমাদের যানবাহনের নিরাপত্তা দেয়ার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা পাকিস্তানের রয়েছে কি না। মাঠের বাস্তব অবস্থা মোটেই ভালো নয়।
প্রশ্নঃ ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানের সৈন্য প্রত্যাহার প্রসঙ্গে আপনার অভিমত কী?
মনমোহন সিংঃ এটি আমাদের স্বার্থকে বিঘ্নিত করবে। এটি আমাদের আঘাত করতে পারে। এখন কেউ বলতে পারেন না আফগানিস্তানে কী ঘটতে যাচ্ছে। গতকাল আমি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। আফগানিস্তানের যুদ্ধকে সেখানে জনগণ আর ব্যাপকভাবে সমর্থন করছে না। এটিই কিন্তু বাস্তবতা। আমরা যদি চার বছর পর পর নির্বাচন করতে পারি তাহলে নির্বাচিত রাজনীতিবিদেরা রাষ্ট্রনীতিবিদ (ঝয়থয়পঢ়শথষ) হতে পারবেন।
প্রশ্নঃ আফগানিস্তানে ভালো-মন্দ দু্ই ধরনের তালেবান আছে, এমন কথাও আসছে এ ব্যাপারে কিছু বলবেন?
মনমোহন সিংঃ আমি আফগান সংসদে বলেছি যে সমঝোতা আলোচনার নেতৃত্ব আফগান সরকারের হাতে থাকা উচিত। আমার ধারণা কারজাই ও অন্যান্য রাজনীতিবিদ এর ওপর কাজ করছেন। আপনি ভালো খারাপ তালেবান এভাবে বিভাজন করতে হয়তো পারবেন না। তবে হাক্কানি গ্রুপ অনেক বেশি মাত্রায় কট্টর। পাকিস্তানের সাথে তাদের যোগসূত্র কেমন তা আমি বলতে পারব না তবে আমরা তাদের নিয়ে উদ্বিগ্ন।
প্রশ্নঃ চীনের সামর্থেøর বিপরীতে আমাদের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি ঠিক কোন পর্যায়ের?
মনমোহন সিংঃ আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমরা আমাদের নৌ ও বিমান বাহিনীসহ সার্বিক সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের দিকে নজর দিয়েছি। বহু বছরের মধ্যে এই প্রথমবারের মতো আমরা দু’টি নতুন ডিভিশন সেনাবাহিনীতে যুক্ত করেছি। আমাদের সামর্থেøর মধ্যে থেকেই সীমান্ত এলাকার বিমানঘাঁটিগুলোকে উন্নত করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা সীমান্ত সড়কগুলোকে উন্নত ও সহজ যোগাযোগের উপযুক্ত করার চেষ্টা করছি। একই সাথে সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোর গ্রামে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে আমরা বিদুøৎ পৌঁছানের চেষ্টা করছি। এসব প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
প্রশ্নঃ কিন্তু জিডিপির অনুপাতে প্রতিরক্ষাব্যয় তো বছর বছর কমছে।
মনমোহন সিংঃ এটি হয়তো সত্যি। তবে সত্যি বলতে কি আমরা প্রতিরক্ষাব্যয় জিডিপির অনুপাতে কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ নিইনি। জাতীয়ভাবে আমাদের জিডিপির ৩ শতাংশের সমান প্রতিরক্ষা ব্যয় করতে আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। সশস্ত্রবাহিনীর যদি সে পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ব্যয়কে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র তা নির্বাহ করতে পারবে।
প্রশ্নঃ তবে কি আমাদের চীনের সমপর্যায়ে যেতে ১০ থেকে ১৫ বছর সময়ের প্রয়োজন পড়ে যাবে?
মনমোহন সিংঃ চীনারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। তারা ব্লু ওয়াটার নেভি পর্যন্ত বানিয়ে ফেলছে। এয়ারক্রাফট কেরিয়ারও তারা তৈরি করছে।