এবং ও যখন জিগ্গাসু চোখে আমার দিকে তাকালো, আমি তখন শায়খ ইবনে বুলাইহিদের সম্মতি নিয়ে বর্ণনা করি বাইবেলের সর্বশেষ গ্রন্থে উল্লিখিত ‘দাজ্জ্লের’ আবির্ভাব সম্পর্কিত ভবিষ্যতবানী- যার ইকটি চোখ হবে অন্ধ, কিন্তু তার থাকবে আল্লাহর দেয়া রহস্যময় ক্ষমতা । পৃথিবীর দূর অঞ্চলে যা বলা হচ্ছে তা-ও সে শুনতে পাবে তার কান দিয়ে এবং অসীম দুরত্বে যা কিছু ঘটছে তার এক চোখ দিয়ে দেখতে পাবে । নে উড়ে কয়েকদিনের মধ্যে ঘুরে আসবে পৃথিবী; মাটির নীচ থেকে নিয়ে আসবে সোনা-রূপার ভাণ্ডার; তার হুকুমে বর্ষণ হবে, তরুলতা উত্পন্ন হবে, সে হত্যা করবে এবং নতুন জীবন দান করবে । যার ফলে, ঈমান যাদের দুর্বল তারা তাকে বিশ্বাস করবে খোদ আল্লাহ বলে এবং ভক্তিতে তার সামনে সিজদায় যাবে – কিন্তু যাদের ঈমান মজবুত তারা আগুনের হরফে তার কপালে যা লেখা আছে তা পড়তে পাবেঃ ‘আল্লাহ্কে অস্বীকারকারী’ এই কথা এবং এভাবে তারা জানতে পারবে যে মানুষের ঈমান পরীক্ষা করার জন্য দাজ্জাল একটা ছলনা ছাড়া আর কিছুই নয়......’
এবং যখন আমার বেদুইন বন্ধুটি দু’চোখ বিস্ফোরিত করে আমার দিকে তাকায় এবং গুনগুন করে বলে, ‘আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় মাগি’, তখন আমি ইবনে বুলাইহিদের দিকে ঘুরে বলিঃ
-‘হে শায়খ , এই রূপক কাহিনীটি কি আধুনিক সভ্যতার একটি যথোচিত বর্ণনা নয়? এ সভ্যতা হচ্ছে ‘এক চক্ষু’ঃ অর্থাত্এ কেবল জীবনেন একটি দিক; তার বৈষয়িক উন্নতির দিকে তাকায় এবং জীবনের রুহানী দিক সম্পর্কে বেখবর । এর কারিগরী তেলেসমাতির সাহায্যে মানুষকে দিয়েছে তার স্বাভাবিক সামর্থের বাইরে অনেক দূরের বস্তুর দেখার ও শোনার ক্ষমতা, দিয়েছে ধারণাতীত গতিতে অসীম দুরত্ব অতিক্রম করার সামর্থ্য । এই সভ্যতার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দ্বারা বর্ষানো হয় বৃষ্টি এবং জন্মানো হয় তরুলতা এবং মাটির নীচ থেকে উদঘাটিত করা হয় অপ্রত্যাশিত ঐশ্বর্যের ভাণ্ডার । এই বিজ্ঞানের ওষুধ জীবন দেয় তাকে যার মৃত্যু মনে করা হয় অবশ্যম্ভাবী, অন্যদিকে এর যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং বৈজ্ঞানিক ধ্বংসলীলা ধ্বংস করে দেয় জীবনকে আর এর বৈষয়িক অগ্রগতি এতই চোখ ঝলসানো যে, দুর্বল ঈমানের লোকেরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, নিজের অধিকারেই এ হচ্ছে একজন ‘খোদা’ কিন্তু যারা তাদের স্রষ্টা সম্পর্কে সচেতন রয়েছে তারা স্পষ্টতই বুঝতে পারে যে, ‘দাজ্জালের’ পুজা করা মানে আল্লাহকে অস্বীকার করা .....।’
-‘তুমি ঠিকই বলেছ মুহাম্মদ, তুমি ঠিকই বলেছ’, উত্তেজিত ভাবে আমার হাঁটুর ইপর থাবা মারতে মারতে চীত্কার করে ওঠেন বুলাইহিদ,---‘দজ্জাল’ সম্পর্কিত ভবিষ্যত বানীর প্রতি এভাবে তাকানোর কথা কখোনো আমার মনে হয়নি কিন্তু তুমি ঠিকই বলেছ ! মানুষের অগ্রগতি এবং বিজ্ঞানের উন্নতি যে আমাদের আল্লাহরই একটা রহমত, এটা উপলব্ধি না করে অজ্ঞতা বশতঃ মানুষ বেশি মাত্রায় ভারতে শুরু করেছে যে এ থোদই একটা লক্ষ্য এবং পুঁজা পাওয়ার যোগ্য ।
...................................এবং এভাবে ‘দজ্জাল’ আবির্ভূত হয়েছে স্বরূপে-.....
( মুহাম্মদ আসাদ রচিত ‘The Road to Macca,’ শাহেদ আলী অনূদিত” মক্কার পথ’ বই থেকে সংকলিত, সংক্ষেপিত)