দাজ্জাল
আমি মদীনার সবচেয়ে প্রাচীন অঞ্চলের সর্পিল গলিপথে প্রবেশ করি । ছায়াতে শিকড় গেড়ে দাঁড়িয়ে আছে ঘরের দেয়াল, পাথরের তৈরী; গলির উপর ঝুলে আছে ঘুল ঘুলি দেওয়া জানালা এবং ব্যলকনি.... গলিগুলি দেখতে গিরিসংকঠের মতই এবং কোন জায়গায় এত চিপা যে, দুজন মানুষের পক্ষেও একে অন্যের পাশ দিয়ে বিপরীত দিকে যাওয়া প্রায় অসম্ভব । এক সময় আমি নিজেকে দেখতে পেলাম প্রায় একশ বছর আগে একজন তুর্কি পণ্ডিত কর্তৃক স্থাপিত ধূষর পাথরের তৈরী কুতুবখানার সম্মুখে ।
এরই প্রাঙ্গনে, গেটের পেটানো ব্রোঞ্জের গ্রিলের পশ্চাতে রয়েছে এমন একটি নিরবতা – সেন একটি আমন্ত্রন! আমি পাথর বিছানো প্রাঙ্গন পার হয়ে প্রাঙ্গনের মাঝখানে যে একাকী গাছটি নিশ্চল দাঁড়িয়ে আছে তা পেছনে ফেলে প্রবেশ করি গম্বুজওয়ালা হল ঘরটিতে, যাতে রয়েছে সারি সারি কাঁচ ঢাকা বুক- কেস—হাজার হাজার হাতে লেখা বই—আর এসবের মধ্যে রয়েছে ইসলামী বিশ্বের জানা কিছু –কিছু দুর্লভ পাণ্ডুলিপি । এ ধরনের বই –পুস্তকই গৌরব দান করেজানা কিছু –কিছু দুর্লভ পাণ্ডুলিপি । এ ধরনের বই –পুস্তকই গৌরব দান করেছে ইসলামী তমদ্দুনকে, যা হারিয়ে গেছে গত কালকের হাওয়ার মতো!
আমি যখন যন্ত্রের সাহায্যে কাজ করা মলাটে ঢাকা এই পুস্তক এই পুস্তকগুলির দিকে তাকাই, তখন মুসলিমের অতীত ও মুসলিমের বর্তমান অসংগতি আমাকে অাঘাত করে এক যন্ত্রনাদায়ক ঘুষির মতো....।
-‘তোমাকে কি যেনো পীড়া দিচ্ছে বেটা? মূখে এই তিক্ততার ছাপ কেন বলোতো?
আমি এই কন্ঠস্বরের দিকে ঘুরে দাঁড়াই এবং দেখি একটি ঘুলঘুলি দেয়া জানলার মাঝখানে, হাঁটুে উপর একটি ফলিও ভলিউম নিয়ে কার্পেটের উপর বসে আছেন আমার পুরানো বন্ধু ছোট্ট অবয়বের শায়খ আবদুল্লাহ ইবনে বুলাইহিদ । ........................ইবনে সউদের রাজত্বে খোদ রাজা ছাড়া আর যে কোন মানুষের কথার চাইতে তাঁর কথার মূল্য অনেক বেশী । তিনি চঠ করে তাঁর বইটি বন্ধ করে ফেলেন এবং আমাকে কাছে টেনে নেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে, আমার দিকে তাকিয়ে । ...............................
................................................মাগরিবের সালাত ষেষ হওয়ার সাথে সাথে শায়খ ইবনে বুলাইহিদ নজদি বেদুইন ও শহরবাসীদের এক উত্সুক চক্রের কেন্দ্র হয়ে উঠেন, কারণ, এরা তাঁর পাণ্ডিত্য ও জাগতিক প্রজ্ঞা থেকে ফায়দা নিতে ইচ্ছুক । ................
............ব্যাপার কি ভাইয়া জিগ্গাস করে এক বেদুইন,’একি সত্যি যে আপনি নিজেই একজন ফিরিংগি ছিলেন? –যখন আমি মাথা ঝুকিয়ে সায় দেই, সে ফিস্ ফিস্ করে বলে...................ফিরিংগিরা আল্লাহ সম্পর্কে এত উদাসীন তার কারণ কী?
-‘এ এক লম্বা কাহিনী, ‘আমি জবাব দেই, ‘কয়েক কথায় এর ব্যাখ্যা করা যাবেনা । আমি এই মুহূর্তে তোমাকে যা বলতে পারি তা এই যে, ফিরিংগিদের দুনিয়া হয়ে উঠেছে ‘দজ্জালের’ দুনিয়া ---চোখ ঝলসানো প্রবঞ্চকের দুনিয়া । তুমি কি আমাদের নবীর এই ভবিষ্যতবানীর কথা শোননি যে আথেরী জমানায় দুনিয়ার বেশিরভাগ লোকই এই বিশ্বাসে ‘দজ্জালের’ অনুসারী হয়ে উঠবে যে, সেই আল্লাহ ! (চলবে)