১।
" আজকালকার স্বামীরা যে বউয়ের কাছে বাধ্য না , সে সবাই জানে । তোর যে এত লাজ , ধরে তো রাখতে পারবিনা তারে । কি করতে হবে শোন , প্রথম রাতেই তাকে আটকে ফেলবি শরীরের এই মায়াজলে ......... "
পারো'দির কথাগুলো এখনও ঘুরছে মাধবীর মাথায় , দু'দিন পর বিয়ে । আর শুভ্রত যে তার চিরকালের স্বপ্ন ! তাকে খুশী না করলে যে এই দেহটা চীরজীবন কাল-নাগিনী হয়ে মস্তিষ্ক দংশন করবে । সে-ই যদি খুশি না হয় , তবে কি মুল্য এই শরীরের ? আর পারোদী তো আর না জেনে বলেন নি , কৃষ্ণদা প্রথমে যেভাবে তার থেকে দূরে সরে যায় , পরে তো নাকি ওই দেহ দিয়েই টেনে আনে তাকে ।
তবে পারো'দির কথাই যথার্থ ।
বিয়ে হল ; ফুলসজ্জায় মাধবী এইসব চিন্তা করেই নিজের লজ্জা কে দূরে ঠেলে দিলো । নাহ ! শুভ্রতই যে তার সব । তার কাছে লাজের কি ?
প্রথমে শুভ্রত মাধবীর এই রূপ দেখে হতভম্ভ হয়ে যায় । যেন তড়িৎ বিশ্লেষ্য ! শরীরের প্রত্যেক অঙ্গের কম্পন আলাদাভাবে বুঝিয়েছে । মাধবী এখন শিশুর মতন গুটিশুটি হয়ে ঘুমাচ্ছে । শরীরে পাতলা একটা চাদর । আবছা আলো-ছায়ায় তার নিষ্পাপতা যেন চুইয়ে পড়ছে ।
তাহলে সে একটু আগে যার কোলে ঢলে পড়েছিল , সে কোন মাধবী ছিল ?সে যাকে ভালবেসেছিল , সে কোন মাধবী ছিল ? আর সে নিজে কোন মাধবী কে চায় ? এই সদ্য ভূমিষ্ঠের মতন নিষ্পাপ মাধবী কে নাকি একটু আগের সেই সন্মোহিনী কে ?
এসব প্রশ্ন বারবার তার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল । অশান্তিতে সে আর এই নিষ্পাপিনীর বুকে মাথা ঠেকাতে পারলোনা । অবশেষে তার মাথা ঠেকল বসুন্ধরার বুকে ...
২।
=> না রে দোস্ত , আমি মাধবী কে এইভাবে চাইনি । তার সন্মোহনে ডুবে যেতে না , তার নিষ্পাপতা আর ভয় টুকু কে একটু একটু করে নিজের করে নিতে চেয়েছিলাম ...
=> তুই কি বলতে চাচ্ছিশ বৌদির মাঝে কোন কমতি ?
=> না না , বরং অর মাঝে একটু বেশী-ই আছে । কোন খুঁত অর মাঝে শত্রুও পাবেনা । তবে আমি ওকে জিতে নিতে পারিনি । তাই অর কাছে যেতে কেমন যেন অনধিকার চর্চার মতন লাগে ...
=> বিয়ের আজ প্রায় দু'বছর পরেও তর এই অবস্থা ! তোকে এমন অসহায় দেখে কেমন যেন খারাপ লাগছে । আমি এইভাবে তোকে দেখতে পারছিনা । আমি একজন কে চিনি । তুই ওর কাছে যা । ভালো লাগবে । নামেই ওর পরিচয় পাবি । অসাধারন মাল !!!
=> কিন্তু .........
ওই কিন্তুতেই আটকে যায় সে । তারপর মহীনির সাথে পরিচয় । ঘনিষ্ঠতাও বাড়ে ধীরে ধীরে । আর আজ সে মহীনির কাছ থেকে তা পেয়েছে যা সে মাধবীর কাছ থেকে চাইত । একটু একটু করে শুভ্রত সব সুখ নিয়েছে মহীনির কাছ থেকে । কিন্তু এখন কেন যেন মহীনি কে তার আর ভালো লাগছেনা । মহীনি
শুধু তার না । এই মেয়েকে খালি ও ই যে এইভাবে পেয়েছে তা কি ? আরও হাজারো কল্যাণ পুরুষ কি পায়নি তাকে , তাদের নিজের মতন করে ? মহীনির মাঝে সেই ভালবাসা নেই , নেই সেই নিষ্পাপতা , সেই হারানোর ভয় ! কে এই মেয়ে ?
এখন বারবার খালি শুভ্রত সেই কথা ভাবছে , যা মাধবীর মনে শুরু থেকেই ছিল __
=> " একমাত্র দেহই কি সব ? ভালোবাসার কি তাহলে কোন মুল্যই নেই ? "
৩।
বাগানে ঘাসের উপর বসে আছে মাধবী । খুব সুন্দর জোছনা করেছে । সে গুঙ্গুন করছে । হাল্কা নীল শাড়িতে তাকে যে কি অপরূপ লাগছে , কি রহস্যময়ী !!
পেছন থেকে শুভ্রত এসে তাকে বেলি ফুলের গাঁজরা পরিয়ে দিলো । অপরাধবোধে ভারী বুক নিয়ে সে মাধবীর কোলে গা এলিয়ে দিলো । যেন এই রহস্যময়ী জাদু দিয়ে তার বুক হাল্কা করে দিয়েছে । মাধবীকে বলল ,
=> মাধবী , ওই গানটা গাওনা , যেটা দিয়ে শুরু হয়েছিলো তোমার-আমার ।
মাধবী গাইতে শুরু করল
" তোমায় ভালবাসি , তাই ছায়ামেঘ আমি হব _ যখন , রদ্দুরে তুমি হাঁট ... "
=> মাধবী ?
=> হুম্ম ?
=> তুমি শুধু আমার ...
লজ্জা পাবেনা পাবেনা করেও লজ্জায় দূ'হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলল সে ।
{ পুনশ্চ : শুভ্রত আজ মাধবীর অন্য রূপ দেখল । সেই রূপ যার প্রেমে সে পড়েছিল বহু আগেই । আজ আবার নতুন করে সে মাধবী কে জানতে শুরু করল ।
সে মনে মনে বলল ,
=> " বাঙালি মেয়েরা আসলে খুব সরল । কিন্তু প্রয়োজনে তারা হতে পারে দেবী কিংবা মোহিনী-অর্ধাঙ্গিনী । মাধবী , আমাকে ক্ষমা করে দিও । তোমাকে ছাড়া আমি অস্তিত্বহীন । তুমি শুধুই আমার ... " }